এই চোরটা ভীষণ অভিমানী। কথায়-কথায় ওর চোখে জল এসে যায়। কিন্তু এখানে কথা বলার কেউ নেই, দোষ দেবারও কেউ নেই। দোষ দিতে গেলে নিজেকেই দিতে হয়। চোর নিজের কপালকে দোষ দিয়ে একটা নিশ্বাস ফেলল লম্বা করে।
বৃষ্টি-বাদলার রাত, কনকনে হাওয়া বইছে সমানে। এইরকম দুর্যোগ মাথায় করে চুরি করতে বেরিয়েছে এই চোরটা। বেচারা এ-গলি সে-গলি করে এই বাড়িটার পেছনদিকে এসে হাজির হয়েছিল। বাড়ির পেছনে আছে একটা ভাঙাচোরা জলের পাইপ। সেই পাইপ বেয়ে কত কষ্ট করেই না উঠেছে তিনতলায়। তিনতলায় একটাই মোটে ঘর।
এই ঘরে ঢোকার আগে চোর বেচারা কত কিছু আশা করেছিল। ভেবেছিল ঘরে ঢুকেই দেখবে, ঘরের লোক ভুল করে স্টিলের আলমারির গায়ে চাবিটা লাগিয়ে রেখে ঘুমে অজ্ঞান হয়ে আছে। আলমারি খুললেই পাওয়া যাবে থরে থরে সাজানো টাকা আর গয়না! পাশে থাকবে একটা খালি সাইডব্যাগ। টাকা আর গয়না সেই ব্যাগে ঢুকিয়ে টুক্ করে কেটে পড়লেই হলো।
কিন্তু ঘরে পা দিতেই ওর স্বপ্ন ফেটে চৌচির হয়ে গেল। ঘরে একটার বদলে চার-চারটে আলমারি আছে, তবে সব কটা আলমারিই বইয়ের। একপাশে পেল্লায় একটা টেবিল আর দুটো চেয়ার। ঘরটা নেহাতই একটা পড়ার ঘর।
এই ঘরটা ছাড়া তিনতলায় আর কোনো ঘর নেই। এখান থেকে দোতলায় নামার সিঁড়ির দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। তার মানে আবার সেই কষ্ট, রেনওয়াটার পাইপ বেয়ে নীচে নামতে হবে। তেমন কিছু চুরি করতে পারলে এই কষ্টটা কষ্ট বলেই মনে হতো না চোরের। কিন্তু পড়ার ঘর থেকে ও কী চুরি করবে?
শুকনো মুখে নীচে নামার সময় বৃষ্টি নামল তেড়ে। শীতের বৃষ্টি ছুরির মতো গেঁথে যাচ্ছিল গায়ে। চোরের আর নামা হলো না, ও ছুটে এসে আবার ঢুকে পড়ল পড়ার ঘরে। এ ঘরে কেউ নেই, এখানে আরো কিছুক্ষণ বসে বৃষ্টি ধরার জন্যে অপেক্ষা করা যেতে পারে অনায়াসে!
দরজাটা ভাল করে ভেজিয়ে দিয়ে ঘরের আলো জ্বালল চোর। তারপর একটা চেয়ারে বসে টেবিলের ওপর পা তুলে দিয়ে চারদিকের বইয়ের আলমারিগুলো দেখতে লাগল। প্রতিটি আলমারিই বইপত্তরে ঠাসা। বইগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে নিজের ছাত্রজীবনের কথা মনে পড়ে গেল চোরের। ইশ! তখন একটু মন দিয়ে পড়াশুনো করলে আজ আর এত কষ্ট করে চুরি করতে হতো না।
বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছিল। নেহাত সময় কাটাবার জন্যে চোর মাস্টার-কি দিয়ে এক-এক করে সব কটা বইয়ের আলমারির তালা খুলে ফেলল। তারপর এ-বই সে-বই টানতে টানতে হঠাৎ ওর চোখ গেল চকচকে একটা চটি বইয়ের দিকে। বইটার নাম “তেপান্তরের মায়াকান্না' ।
এই তো সেই বই। বইটা হাতে তুলে নিতেই ছেলেবেলার কত কথা হুড়মুড় করে মনে পড়ে গেল চোরের। দারুণ বই, কিন্তু বইটা ও শেষ করতে পারেনি। স্কুলের পড়া তৈরির সময় 'তেপান্তরের মায়াকান্না' পড়ার জন্যে ওর বাবা ওকে কাঁদিয়ে ছেড়েছিলেন। কী মার, কী মার! তারপর লুকনো বইটা ও আর কোনোদিনই খুঁজে পায়নি।
কী যেন নাম ছেলেটার? দারুণ সাহসী। মায়াকান্নার রহস্য ভেদ করার জন্যে একা-একা গিয়ে হাজির হয়েছিল তেপান্তরের মাঠে। কী সাংঘাতিক-সাংঘাতিক সব কাণ্ড ঘটে গিয়েছিল সেই মাঠে, ছেলেটা কিন্তু একটুও ঘাবড়ায়নি। দারুণ বুদ্ধি খাটিয়ে ছেলেটা যখন বিরাট এক চোরের দলকে ধরে ফেলেছে প্রায়, ঠিক সেই সময়েই বইটা বেহাত হয়ে গিয়েছিল।
কতকালের পুরনো সেই দুঃখটা হঠাৎ চোরের মাথায় চাড়া দিয়ে উঠল। আস্ত একটা গোয়েন্দা গল্পের বই না পড়তে পারার দুঃখ একরকম, আর অর্ধেক-পড়া বই কেউ কেড়ে নিলে তার দুঃখ আর একরকম। বইটা তখন ও সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও উদ্ধার করতে পারেনি। এতকাল বাদে সেই বই হঠাৎ হাতে এসে যাওয়ায় পুরনো গল্পের নেশা চেপে ধরল চোরকে।
বৃষ্টি বোধহয় আরো বেড়ে গিয়েছিল। গ্যারেজের টিনের চালে শব্দ উঠছিল চড়চড় করে। জানলার ফাঁক দিয়ে অল্প-অল্প শীতের হাওয়া ঢুকছিল ঘরের মধ্যে। গোয়েন্দা গল্প পড়ার আদর্শ পরিবেশ। চোর চেয়ারের ওপর আয়েশ করে বসে 'তেপান্তরের মায়াকান্না' পড়তে শুরু করে দিল মাঝখান থেকে। মাঝখান পর্যন্ত সব ঘটনা ওর মনে আছে, বাকিটা পড়ে নিলেই হলো। চটি বইয়ের অর্ধেক পড়তে কতক্ষণই বা সময় লাগবে। এর মধ্যে বৃষ্টিও ধরে যেতে পারে।
কয়েক পাতা পড়তে না পড়তেই দুর্দান্ত সব ঘটনায় চোরের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। গল্পের বইয়ের অল্পবয়েসী ছেলেটার সাহস, বুদ্ধি আর গায়ের জোর সত্যিই তারিফ করার মতো। ভয়ংকর সব চোরের ডেরায় একা ঢুকে পড়েছে ছেলেটা, পায়ে-পায়ে বিপদ।
যে-কোনো মুহূর্তে ও ধরা পড়তে পারে, আর ধরা পড়লেই মৃত্যু।
জায়গাটা এত ভয়ের যে, এই চোরটাই বই পড়তে-পড়তে কয়েকবার চমকে উঠে পেছন দিকে তাকাল। না, পেছনে অন্য কোনো চোর নেই। পড়ার ঘরের দরজাটা আগের মতোই ভেজানো। আগের মতোই বাইরে বৃষ্টি পড়ছে ঝমঝম করে।
চোর আবার গল্পের বইয়ের মধ্যে ডুবে গেল। ডোবা মানে এমনই ডোবা যে, টেরই পেল না বৃষ্টি ধরে গেছে কখন! শুধু বৃষ্টিই ধরেনি, একটু-একটু করে ভোরের আলোও ফুটতে শুরু করেছে আকাশের গায়ে।
এ-বাড়িটা টিকলুদের। টিকলু সপ্তাহে তিনদিন ভোর পাঁচটায় উঠে ব্যাডমিন্টন খেলতে যায়। ঘুম ভাঙার নিয়মটা খুব মজার। সপ্তাহে তিনদিন কোনো এক সময়ে উঠলে বাকি তিনদিনও ঠিক সেই সময়ে ঘুম ভেঙে যায়। আজ টিকলুর ব্যাডমিন্টন খেলতে যাবার দিন নয়, কিন্তু ঠিক পাঁচটায় ঘুম ভেঙে গেল ওর। ঘুম ভেঙে গেলে টিকলু বিছানায় শুয়ে থাকতে পারে না একদম। ও দরজা খুলে বেরিয়ে এল বারান্দায়। আর বারান্দায় বেরুতেই দেখতে পেল ছাতে যারার সিঁড়িতে ঝকঝকে এক ফালি আলো পড়ে আছে। ছাতের ঘরটা ওর পড়ার ঘর। কাল রাত্তিরে ঠিক তাহলে ও-ঘরের আলো নেভাতে ভুলে গেছে।
মা'র বকুনির ভয়ে পড়ার ঘরের আলো নেভাতে গেল টিকলু। পড়ার ঘরের দরজাটা ভেজানো, ভেতরে আলো জ্বলছে! দরজা খুলতেই অবাক হয়ে গেল টিকলু। এক ভদ্রলোক চেয়ারে বসে টেবিলের ওপর পা তুলে দিয়ে খুব মন দিয়ে বই পড়ছেন। এতই মন দিয়ে পড়ছেন যে পেছনে একবার তাকালেন না পর্যন্ত। ভদ্রলোক কে? বাবার বন্ধু কি? রাত্তিরে এখানে ছিলেন? এইসব ভাবতে-ভাবতে টিকলু পায়ে-পায়ে এগিয়ে গেল। আরে! ভদ্রলোক 'তেপান্তরের মায়াকান্না' পড়ছেন। বইটা টিকলুর দারুণ প্রিয়। পাশে দাড়িয়ে টিকলু ফিসফিস করে বলল,
“গল্পের শেষটা বলে দেব?”
ওর কথা শুনে চোর ভীষণ চমকে গিয়ে লাফিয়ে উঠল। কাউকে চমকে দিতে পারলে টিকলু খুব মজা পায়।
ও মজার গলায় আবার বলল, “বলে দেব গল্পের শেষটা?”
চোর এখন গল্পের সাঙ্ঘাতিক জায়গায়। এত জমে গেছে যে এখানে চুরি করতে ঢোকার কথা ওর আর মনেই নেই। প্রায় হাতজোড় করে টিকলুকে বলল, “লক্ষ্মীটি বোলো না। গোয়েন্দা গল্পের শেষেই তো আসলে মজা।”
টিকলু আর কিছু বলল না, কেননা এর মধ্যেই ওর চোখে পড়েছে খোলা আলমারিতে সাজানো টিনটিনের বইগুলো। টিনটিনের বই পড়তে ভীষণ ভালবাসে টিকলু কিন্তু পরীক্ষা এসে গেছে বলে এখন ওর গল্পের বই ছোঁয়া বারণ। গল্পের বইয়ের আলমারিতে তালা পড়েছে, খোলা হবে পরীক্ষার পরে। সেই আলমারি হঠাৎ খোলা দেখে টিকলু ছুটে গিয়ে টিনটিনের একটা বই তুলে নিল।
পড়ার ঘরের দুই চেয়ারে এখন দু'জন পড়ুয়া। একজন পড়ছে ‘তেপান্তরের মায়াকান্না', আর একজন পড়ছে ‘টিনটিন ইন টিবেট্’। এদিকে ভোরের আলো বাড়তে বাড়তে দিব্যি সকাল হয়ে গেল। টিকলুর মা আর বাবা উঠে পড়েছেন ঘুম থেকে। একটু পরে খোঁজ পড়ল টিকলুর। কোথায় গেল ও? টিকলুর মা একবার ভাবলেন, ও বোধহয় ব্যাডমিন্টন খেলতে গেছে। তারপরেই খেয়াল হলো, আজ তো ওর ব্যাডমিন্টন খেলতে যাবার দিন নয়। তাহ'লে ও গেল কোথায়? এ ঘর ও ঘর খোঁজ করতে-করতে টিকলুর মা উঠে এলেন ছাতে। পড়ার ঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা গেল টিকলু বই পড়ছে একমনে। কিন্তু ভেতরে ঢুকতে গিয়েই পিছিয়ে এলেন। আরে। এই সাত-সকালে ওর মাস্টারমশাইও এসে গেছেন!
চোর দরজার দিকে পেছন ফিরে বসে 'তেপান্তরের মায়াকান্না” পড়ছিল। টিকলুর মা তাকেই টিকলুর মাস্টারমশাই ভেবে নেমে এলেন নীচে। তারপর হাসতে-হাসতে টিকলুর বাবাকে বললেন, “টিকলুর মাস্টারমশাইয়ের কাণ্ড দেখেছ, এই ভোরবেলাতেই পড়াতে চলে এসেছেন।”
বাবা একটু হেসে বললেন, “যাক তোমার ছেলের তাহলে পড়াশুনোয় বেশ মন গেছে দেখছি। মাস্টারমশাইয়ের ক্ষমতা আছে বলতে হবে। ওইরকম বাঁদর ছেলে টু শব্দ না করে পড়তে বসে গেল ভোরবেলায়।”
টিকলুর মাস্টারমশাই দারুণ ভাল ছাত্র, তবে একটু খেয়ালি। কোনোদিন একটানা তিন ঘণ্টা পড়ান, কোনোদিন আধঘণ্টা৷ আসার সময়ের ঠিক থাকে না কখনো। তবে এর আগে কোনোদিন এত ভোরে পড়াতে আসেননি। এইসব ভেবে টিকলুর মা মাস্টারমশাইয়ের ওপর ভীষণ খুশি হয়ে বিশুর হাত দিয়ে মস্ত ব্রেকফাস্ট পাঠিয়ে দিলেন পড়ার ঘরে। বিশু এ বাড়ির নতুন কাজের লোক। একটু সাদাসিধে, তবে খুব কাজের!
বিশুর পায়ের শব্দে ‘তেপান্তরের মায়াকান্না'র পাঠক আর একবার চমকে উঠেছিল, কিন্তু কোনোরকমে সামলে নিল নিজেকে।
এবার বলি, ব্রেকফাস্টে কী-কী ছিল। কর্নফ্লেকস, দুধ, ডিমের পোচ, টোস্ট আর কলা। সবশেষে একজনের কফি আর একজনের জন্যে চা।
চোরের বুক ধড়ফড় করছিল সমানে। বাইরে খটখটে সকাল। এ-বাড়ি সে-বাড়ির সব লোক উঠে পড়েছে। পালাবার আর কোনো পথ নেই। ধরা পড়তেই হবে। আর ধরা পড়লে কী হবে, সে-কথা যে-কোনো একটা বাচ্চা চোরও জানে।
চোরের শুধু ভয়ই করছিল না, খিদেও পেয়েছিল প্রচণ্ড, বিশেষ করে সামনে এত খাবার-দাবার দেখে। কী আর করবে বেচারা? কথায় বলে পেটে খেলে পিঠে সয়। তাই পিঠে সওয়াবার জন্যে সব খাবার খেয়ে নিল চোর। টিকলু টিনটিনের বইয়ের সঙ্গে আঠার মতো লেগে আছে, চোর একবার ওকে মিনমিন করে বলল, “কই তুমি তো খাচ্ছ না।”
কিন্তু সে-কথা টিকলুর কানেই গেল না।
দোতলার দৃশ্য অন্যরকম। টিকলুর বাবা তাঁর কারখানায় যাবেন বলে তৈরী হয়েছেন। টিকলুর মাও তৈরী, মা যাবেন গড়িয়াহাটে বাজার করতে। ড্রাইভার গাড়ি বার করেছে।
টিকলুর বাবা চক্চকে দুটো একশো টাকার নোট একটা সাদা খামে ভরে টিকলুর মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “মাস্টারমশাইয়ের মাইনেটা দিয়ে দাও।”
টিকলুর মা খামটা নিয়ে পড়ার ঘরের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে ডাকলেন, “টিকলু, এই টিকলু।”
টিকলু টিনটিনের দুর্ধর্ষ অ্যাডভেঞ্চারের জালে এমন ভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল যে, মায়ের ডাক ওর কানেই গেল না প্রথমে। তারপর যখন শুনতে পেল, তখন ওর বুক কেঁপে উঠল ধক্ করে। সর্বনাশ! মা এখন ওকে টিনটিন পড়তে দেখলে মেরে শেষ করবেন। টিকলু কোনোমতে বইটা লুকিয়ে রেখে মুখ কালো করে বেরিয়ে এল ঘর থেকে।
কিন্তু মা ওকে বকার বদলে গাল টিপে আদর করে বললেন, “লক্ষ্মী ছেলে, আজ যে দেখছি পড়াশুনোয় খুব মন বসেছে! শোনো, আমি তোমার বাবার সঙ্গে বেরুচ্ছি, বাজার করে ফিরব। শাস্ত হয়ে থাকবে, আর এই খামটা মাস্টারমশাইকে দিয়ে দিও।”
মার খাওয়ার বদলে আদর খেয়ে টিকলু এতই অবাক হয়ে গিয়েছিল যে, মায়ের সব কথা ওর কানেই ঢুকল না ভাল করে। কিন্তু ঘরের মধ্যে যে লোকটা বসে আছে সে সব শুনে নিল।
মা চলে যেতেই টিনটিনের ভয়ংকর সব কাণ্ডকারখানা আবার ভিড় পাকিয়ে ফেলল টিকলুর মাথার মধ্যে। ও একছুটে ঘরে ঢুকে খামটা চোরের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে ‘টিনটিন ইন টিবেট'-এ ডুবে গেল আগের মতো।
মিনিট-পনেরো বাদে চোর খামটা পকেটে ভরে দুগগা-দুগগা বলে সিঁড়ি ভেঙে নীচে নেমে এল।
তারপর জোর পায়ে হেঁটে মিশে গেল রাস্তায় ভিড়ের মধ্যে। বেশ কিছুটা দূরে যাবার পর চোরের সে কী আনন্দ, আর কেউ ওকে ধরতে পারবে না। তার ওপর পকেটে আছে দু'টো কড়কড়ে একশো টাকার নোট। মনে-মনে টিকলুর মাকে অনেক ধন্যবাদ জানাল চোর। সকালে কী দারুণ খাইয়েছেন। এত ভাল খাবার ও বহুকাল খায়নি!
ওদিকে টিকলুদের বাড়িতে আসল মাস্টারমশাই আসার পরে পুরো ব্যাপারটাই জানাজানি হয়ে গেল। টিকলুর মা চোখ গোলগোল করে বললেন, “কী সাংঘাতিক কাণ্ড, বাড়িতে চোর ঢুকেছিল আর তুই তার সঙ্গে অতক্ষণ ধরে দিব্যি গল্প করে গেলি?”
টিকলু আমতা-আমতা করে বলল, “গল্প করব কেন? ও তো বই পড়ছিল।”
“বই! কী বই?”
টিকলু এবার ঝলমলে মুখ করে বলল, “তেপান্তরের মায়াকান্না। দারুণ বই, বইটা তুমি পড়েছ মা?”
মা ওকে এক ধমক লাগিয়ে বললেন, “চুপ কর।”
তখন ধমক লাগালেও পরে কিন্তু টিকলুর মা 'তেপান্তরের মায়াকান্না” পড়েছিলেন। আহা! চমৎকার বই। এত ভাল বই নাকি চট করে পাওয়াই যায় না। খুব ভাল বই পড়লে আর কাউকে পড়াতে ইচ্ছে করে তো, টিকলুর মা তাই এখন টিকলুর বাবাকে বইটা পড়াবার জন্যে ঝুলোঝুলি করছেন। টিকলুর বাবা ভীষণ ব্যস্ত মানুষ, তবে কথা দিয়েছেন, সামনের রোববারেই বইটা পড়ে ফেলবেন।
0 মন্তব্যসমূহ