Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

রাতের অশরীরী ।। শুভঙ্কর ভট্টাচার্য

 

আজকে যে ঘটনাটি তুলে ধরছি তা আমার সাথে ঘটা একদম সত্যি ঘটনা। অশরীরী উপস্থিতি যে পৃথিবীতে আছে, তা আমার সাথে অনেক বছর আগে ঘটা এই ঘটনা থেকেই প্রমাণিত।

বীরভূমের একটি স্কুলে শিক্ষকের চাকরি পাওয়ায় মনটা খুব ভালো হয়ে যায় । স্কুলটি র নাম  ছিল  পীরদহ হাইস্কুল । অনেক দিন চেষ্টা করে চাকরিটা পাওয়াতে মনটা অনেক নিশ্চত হল, চাকরিটা পাওয়ায় জন্য রিটায়ার হওয়া বাবার পাশে দাঁড়াতে পারলাম জেনে নিজেকে বেশ ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছিল।

স্কুল থেকে খবর পাঠানো হয়েছিল যে স্টেশনে আমাকে নিয়ে যেতে লোক আসবে। স্কুলটি স্টেশন থেকে  কাছেই। সেই মত এক শনিবার হাওড়া স্টেশন থেকে বীরভূমে যাওয়ার রেল গাড়ি ধরি। ঠিক করে ছিলাম রবিবারে পীরদহতে পৌছে সারাদিন গায়ের চারপাশ টা দেখে নেব আর সবার সাথে পরিচয়ও সেরে নেবো । 

শনিবার সন্ধ্যা সাতটায়  হাওড়া থেকে গাড়ি তে চেপে বসি। গাড়ি তে ওঠে  দেখি আমার কামরাতে দুই একটি-যাত্রী  , তাই কথা বলার তেমন মানুষ না পেয়ে  কিছু সময় বসে খেয়ে শুয়ে পরি । 

হঠাত ঘুম ভাঙে একজনের ডাকে । ঘুম থেকে উঠে দেখি এক অচেনা লোক আমাকে বলছে " আপনিই তো শুভঙ্কর ভট্টাচার্য  , পীরদহ হাইস্কুলের নতুন মাস্টার "। আমি চারপাশ চেয়ে দেখলাম গাড়ি তে তখন একটা লোকও নেই , রেলগাড়ি দুরন্ত গতিতে মাঠ- ঘাট, নদী ফেলে নিজের গনতববে এগিয়ে চলেছে ।ট্রেনের খুব অল্প আলোতে  আমি এক ঝলক লোকটিকে একবার ভালো করে দেখলাম ,  লোকটির বয়স  আনদাজ ষাটের কাছাকাছি হবে , লোকটির মুখটা ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছে না, কারন ওর মুখটা চাদর দিয়ে ঢাকা, কিন্তু শরীরের গঠন আর গায়ের চামরা দেখে লোকটির বয়স বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয়না ।

লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলাম " তুমি আমাকে চিনলে কি করে?" লোকটি চাদরে চাপা দেওয়া মুখের ভেতর থেকে  কেবল খড়খড়ে গলাতে হাসলো , আর বললো  "আমাকে স্কুল  থেকে আপনাকে নিতে পাঠানো হয়েছে । "

আমি এবার জিজ্ঞাসা করি ট্রেন তো এখানে কোনো স্টেশনে থামার কথা নয় তাহলে তুমি কিভাবে ট্রেনে উঠলে?"   লোকটি এবার বেশ গম্ভীর গলায় বলে " আমি বা আমরা যখন যেখানে খুশি যখন তখন ট্রেনে উঠতে পারি তার জন্য ট্রেন না থামলেও চলে, হা হা ।" 

লোকটির এই আজগুবি কথা শুনে আমি যার পর নাই অবাক হলাম, এসব কি কথা বলছে এই লোকটা, মাথার কোনো সমস্যা আছে নাকি !"

ঠিক এমন সময় আমি যে ট্রেনে বসে আছি তার পাশ দিয়ে অপর দিক থেকে একটি ট্রেন আসাতে আমাদের কামড়ায় এক দমকা হাওয়া ঢুকে পড়ে আর তাতেই আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির চাদর এক ঝটকায় উড়ে যায়, আর তাতেই আমি দেখি , সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি র মুখটার কি বিকট অবস্থা , যেন কোনো ভয়ংকর দুর্ঘটনাতে মুখটা একেবারে থেতলে গেছে, আমি শুরুতে ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়ে ভাবি মুখের এমন অবস্থার পড় কেউ কি বাঁচতে পারে ! লোকটি কয়েক মুহূর্তেই চাঁদর দিয়ে আবার নিজের মুখটা ঢেকে নেয় । 

আমি লোকটি কে জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছি ঠিক এমন সময় সেই লোকটি বলে,        "আমরা আর ঘন্টা খানেকের মধ্যেই পীরদহ স্টেশেনে পৌছাবো।  লোকটি নিজের থেকেই  বললো " আমি বুঝতে পারছি আপনার আমার সম্পর্কে অনেক জিজ্ঞাসা রয়েছে, আমার নাম রনেশ  আমি পীরদহ হাইস্কুলের দারোয়ান "। 

এরপর আর লোকটির সাথে কোনো কথা  বলার কেন জানিনা আমার আর সাহস হলোনা। পীরদহ স্টেশনে যখন পৌছালাম তখন  সকাল হয়ে গেছে । লোকটি স্টেশন আসতেই হনহন করে গাড়ি থেকে আমাকে কিছু না বলেই নেমে পারলো । 

আমিও তারাতারি দরজার কাছে গেলাম ।গিয়ে দেখি কেউ কোথাও নেই । একটি লোক কাছে এসে আমাকে আমার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন ।আমার নাম শুনেই তারা তারি  আমার হাতের থেকে মালপত্র নিয়ে বললেন " মাস্টার বাবু আসুন , আমি বিনোদ, স্কুল থেকে  আপনাকে নিতে এসেছি ।স্টেশনের বাইরে গাড়ি অপেক্ষা করছে । আমি আগের রাতের লোকটির পরিচয় দিয়ে তার সম্পর্কে বিনোদের কাছে জানতে চাইলে বিনোদ খুবই অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করে " আপনি  রনেশ  কি করে দেখবেন ও তো আজ থেকে এক বছর আগেই মারা গেছে ।

আমি লোকটি ওরফে রনেশের শারীরিক গঠন সম্পর্কে বলতেই , বিনোদ বেশ ভয়ার্ত কন্ঠে বলে " আসলে রনেশ আমাদের পীরদহ স্কুল কে নিজের প্রানের থেকেও বেশি ভালো বাসতো , স্কুলের শিক্ষক, ছাত্র ছাত্রী দের ভীষণ খেয়াল রাখতো । আজ থেকে এক বছর আগে, রনেশ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে, গাড়ির ধাক্কা তে মারা যায়, একসিডেনটে মুখের অবস্থা এমন হয়েছিল যে চেনাও যাচ্ছিল না । কিন্তু আপনার কথাতে  বোঝা যাচ্ছে, রনেশ এখনও মৃত্যুর পরেও পীরদহ স্কুল কে ভীষণ ভালোবাসে , তাই আজ স্কুলের নতুন শিক্ষক কে নিজের দায়িত্বে পৌছে দিল । আসলে আপনি যে ট্রেনে এলেন, ওই ট্রেনে মাঝে মাঝেই মাঝরাতের পর ডাকাতি হয় , তাই আপনার যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তাই ও অশরীরী রুপে আপনাকে রক্ষা করতে এসেছিল । " 

বিনোদের এইসব কথা শুনে, আর আগের রাতে রনেশকে দেখে কথা বলার সব  ভাষা হারিয়ে ফেলি, সত্যিই এই পৃথিবীতে অশরীরীর উপস্থিতি আছে ।

এরপর তিন বছর আমি পীরদহতে চাকরি করি কিন্তু  রনেশকে আর কোনোদিন দেখিনি। 

সত্যিই এর কোনো উত্তর আজও আমার কাছে নেই ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ