আজ শনিবার বিল্টু তাই বিকালে খেলার মাঠে । খেলতে খেলতে ভুলেই গেছে যে তার সন্ধেবেলা টিউশন পড়া আছে । মনে পড়তেই দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বোনকে নিয়ে ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে দৌড় দিল । মায়ের চিৎকার তার কানে ঢুকলো বলে মনে হল না । "টর্চটা নিয়ে যা রে" বলে, মা পিছু পিছু দৌড়ালো। বিল্টু ক্লাস নাইন আর বোন রিমি ক্লাস ফাইভ । আর নাইন মানে একটু পাকা পাকা ভাব।
মা টর্চটা দিয়ে দিলো কারণ রাস্তায় একটা বাঁশতলা পড়ে, ওখানটা খুব অন্ধকার। রাস্তার টিম টিম আলোতে কিচ্ছু দেখা যায় না । ইতিমধ্যেই আকাশে একটু মেঘও দেখা যাচ্ছে । স্যারের বাড়িতে ঢুকে গেছে, পড়াশোনাও শুরু করেছে, তার কিছু পর থেকেই ঝড় জল শুরু হয়ে গেল। যথারীতি লোডশেডিং।
ঝড় বৃষ্টি থামার পর বাড়ি আসতে হবে, স্যার বললেন "একটু এগিয়ে দেব"?
"না না স্যার কোন অসুবিধা নেই "। ওই যে বললাম পাকা পাকা ভাব।
এদিকে মা চিন্তা করছে। বাবাও ফেরেনি। কি যে জ্বালা।
"চল বিনি চল, ঠিক চলে যাব ।আমি আছি না, নো চিন্তা"।
স্যারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেই না বাঁশতলায় এসেছে, ঘুটঘুটে অন্ধকার, ঝিঁঝি পোকার ডাক। গা ছমছম করছে । রিমি তো দাদার গায়ে গায়ে লেপটে আছে ।হটাৎ যেন শুনতে পেল "কে রে, কে যায়"?
"দাদা"!
"কিছু হবে না তাড়াতারি আয়"।
টর্চটাও জোর নেই, চার্জ শেষ বোধহয়। বুক ঢিপ ঢিপ করছে বিল্টুর কিন্ত বলা যাবে না। হঠাৎ দেখল বাঁশঝাড় থেকে দুটো হাত কে যেন দোলাচ্ছে আর মুখটা তো পুরো কালো, চোখগুলো সাদা রঙের। বিল্টু "কে কে" বলে চিৎকার করল ,তারপর আস্তে আস্তে গলা বুজে গো গো করতে শুরু করল ।ভূত ভূত বলে কুপোকাত।
রিমি দেখল ভূতের কখনও হাত দুলছে কখনও পা দুলছে । মাথাটাও নড়ছে। এমন সময় একটা আলো দেখতে পেল রিমি।
"দাদা, এ দাদা আলো দেখা যাচ্ছে। ভয় পাস না"।
"কে বিল্টু"? বাবার গলা ।
শান্তি নেমে এল। রিমি বলল, "এ দাদা চোখ খোল বাবা এসেছে"।
বাবা বিল্টুকে তুলে বাড়ি নিয়ে এল, তারপর গরম দুধ খাইয়ে একটু সুস্থ করল মা।
পরের দিন সকালে ওই বাঁশতলায় গিয়ে বিল্টু দেখল বাঁশগাছের ডগে একটা কাকতাড়ুয়া ঝুলছে।,বোধহয় ঝড়ের সময় মাঠ থেকে উড়ে এসে বাঁশগাছের ডগে আটকে গেছে । তখন বিল্টু নিজের মনেই লজ্জা পেল। "এটাকেই ভূত ভাবছিলাম! ছিঃ"।
0 মন্তব্যসমূহ