বর্ষার মরসুম চলেছে। কদিনের বৃষ্টিতে মাঠ ঘাট খানা খন্দ সব জলে থৈ থৈ করছে। সঙ্গে মাছের আমদানি।
বামুন পাড়ার ভবেশ চারিদিকে ঘুরে দেখেছে। তাল তলার জলায় বড় বড় মাছ এসেছে। গুপ গাপ করে জলাতে ঘাই দিচ্ছে।
ভবেশ, রবি আর মানিক তিনজনে মতলব করল রাতে ওরা ছিপ ফেলে মাছ ধরবে তাল তলার জলাতে।
প্রকাণ্ড জলা। তার মাঝ বরাবর রয়েছে ইট বেছানো রাস্তা। সেই রাস্তা থেকে একটু আল বেয়ে ঢুকলে রয়েছে, একখান বড় তাল গাছ।
ধু ধু ফাঁকা জলা। জল ভরে থৈ থৈ করছে। চাঁদের ঝোছনায় চারিদিক ঝকমক করছে। সবে রাত এগারোটা পেরিয়েছে। ওরা ছিপ কলসি নিয়ে হাজির হল সেখানে।
ইটের রাস্তার ওপর থেকেই এক জায়গাতে ছিপ ফেলল তারা।
দেখছে দূরে মাছেরা ঘাই করছে তবু ছিপের কাছে আসছে না।
এমন সময় একটা হালকা বাতাস তাল গাছের দিক থেকে তাদের দিকে ধেয়ে এল। সঙ্গে এল মাছের আঁশটানি গন্ধ। একটু পরে সেই গন্ধ চলে গেল।
তার পর শুরু হল ঢেলা পড়া! ছিপের কিছুটা দূরে কে যেন ধুপ ধাপ করে ঢেলা ছুড়ে ফেলছে! গুপাগুপ করে জলে তার শব্দ হচ্ছে!
তার পরেই ছিপে মাছ পড়তে শুরু করল। বড় বড় শিঙ্গি মাগুর ছিপে হচ্ছে। আর তারা কাঁটা থেকে ছাড়িয়ে কলসির মধ্যে রেখে দিচ্ছে।
মাঝে মাঝে সেই আঁশটে গন্ধের বাতাসটা ওদের কাছে একবার করে আসছে আর চলে যাচ্ছে।
বেশ কতগুলো মাছ তাদের ধরা হয়ে গেছে। ভবেশ কলসিটিকে চাগিয়ে দেখতে গেল ঠিক কতটা হয়েছে আন্দাজ করার জন্য।
হাতে তুলতেই দেখে, এ কী! এত হালকা কেন? মাছ কোথায়? ভাল করে নেড়ে দেখল সে! ভেতরে একটিও মাছ আছে বলে মনে হল না তার!
ঠিক তখনই দেখল ছিপে মাছ খেয়েছে! ছিপ তুলতে গিয়ে তার নজর তাল গাছের উপর পড়ল।
ধড়াস করে উঠল তার বুকের ভেতরটা! তাল গাছের মাথায় কে যেন বসে! পরক্ষণেই দেখল আর সে নেই।
এদিকে ছিপে একটা বড় মাছ গেঁথেছে। তাকে তুলতে সময় লাগছে।
হঠাৎ রবি দেখতে পেল কে যেন তাল গাছ বেয়ে নেমে আসছে! তার মাথাটা নীচের দিকে আর পা দুটো উপরের দিকে!
সে মুখে কিছু বলতে পারল না। হুত হুত করে হাতের আঙুল বাড়িয়ে ওদের দুজনকে দেখাল হেই দৃশ্য!
তা দেখে তারা ছিপ কলসি ফেলে মারল দৌড়! এক্কেবারে বাড়িতে গিয়ে সে দৌড় থামল। সে রাতে ভাবনায় ঘুম হল না কারোর।
সকালে দিনের আলোয় তারা সেখানে গিয়ে দেখল, ছিপ কলসি সব তেমন পড়ে আছে। তারা ও সব কেউ ছুঁলো না। ও গুলোতে ভূতে ধরে আছে যে!
সেই থেকে রাতে মাছ ধরার নাম আর কেউ করে না।
0 মন্তব্যসমূহ