পটল ডাঙ্গার পটল পড়েল এমনিতে বেশ ঘড়েল লোক। নানা ধরনের ব্যবসা-পাতি করে। মুদিখানার দোকান—- সরষের তেলের হোলসেলার, মাদুর আড়তদারি, ইদানীং বাড়ি জমির দালালি থেকে প্রমোটারি, বন্ধকী কারবার কি ব্যবসা তার নেই।
অবশ্য সকালেই ঘরের দেয়ালে ঝুলন্ত কালী, কেষ্ট, লক্ষ্মী গণেশ, সন্তোষী মা আরও হরেক দেবদেবীর ছবিতে প্রণাম করে সেই যে মিথ্যা কথা বলতে শুরু করলো দিনভোর ওই চলবে।
আর দুনম্বরী ছাড়া কারবার ও করে না সে। এই করে কাড়ি কাড়ি টাকাও রোজগার করেছে।
এ হেন পটল পড়েল যে পট্ করে পটল তুলবে একথা স্বয়ং পটলও কোন দিন ভাবেনি।
কয়েকদিনের জ্বর, জ্বর তো হয়ই। তাই বলে ডাক্তার ডেকে এনে একগাদা টাকা খরচ করে তিন চার রকমের বিস্বাদ পিল খাওয়ার কোন মানেই হয় না।
সেদিন ঘরে শুয়ে আছে পটল পড়েল। হঠাৎ মনে হলো এই ধরাধামে সে আর নাই। তিন চারটে কালো ছায়ামূর্তি তাকে হ্যাঁচকা টানে বিছানা থেকে শূন্যে তুলে দিলো।
শরীরটা পড়ে রইল। মানে হল তার দেহ থেকে একটা বাতাসের ঝলক বের হয়েছে আর ওই তিন-চারটা ছায়া মূর্তি তাকে বগলদাবা করে জানলা দিয়ে গলে বের হয়ে বাগানের নারকেলগাছের মাথা টপকে উপরে আরও উপরে উঠে গেল চি চি করছে পটলচন্দ্র।
ছেড়ে দে বাবা।
ওই তিন মূর্তি বলে—অনেক খুঁজে তোমাকে পেয়েছি। ব্যবসাদার তার উপর নেতা। এমন লোককেই দরকার।
পটলচন্দ্র ব্যবসা বেশ চালু করে দেখলো এযুগে দেশসেবক—সমাজসেবক, জনদরদী নেতা হতে পারলে অনেক সুবিধা। পিছনে একটা দল আর লড়াকু বেশ কিছু ছেলে এসে জুটবে।
যারা পটলচন্দ্রের হয়ে ভোটে লড়বে। দরকার হলে দাদন বোম টপকাতে পারবে। তাদের ভয়ে ভোটাররা ঘর থেকে বেরই হবে না। সে সব ভোট পড়বে তারই বাক্সে। ছেলেরাই ছাপ্পা দিয়ে সেই কাজ করতে পারবে।
পটলচন্দ্র নেতা হলে তার তেলে ভেজাল মেশালে এর তার জমি হড়াক দেওয়ার সুবিধা হবে। দশজনে মানবে। ভাই বেশ কিছু টাকা খর্চা করে পটলচন্দ্র নেতা ও হয়েছিল। ইচ্ছা ছিল এবার আরও আমদানী হবে। কিন্তু এভাবে ওই ভূতদের পাল্লায় পড়ে ইহলোক ছেড়ে যেতে হবে তা ভাবেনি।
পটল শুনেছিল মরার সময় যমদূত এসে এসকর্ট করে নিয়ে যায়। কিন্তু এরা তো তেমন নয়। শুধোয় পটলা । —কোথায় নে চল্লে বাবারা ?
তখন ওরা আকাশ পথে চলেছে। মেঘের রাজ্য। মাথার উপর আকাশ বেশ নীল। বলে তারা,
—চলো দেখতেই পাবে ।
এসে হাজির হয়েছে তারা এক জঙ্গলের মধ্যে ।
এ এক বিচিত্র জঙ্গল, গাছগুলো সিড়িঙ্গে লম্বা। বাতাসে চিমসে গন্ধ। গাছের পাতাও বিশেষ নাই।
নীচে বেশ ফাঁকা — গাছের ডালে, পাথরের উপর বসে আছে লম্বা ঠ্যাং ঝুলিয়ে ভূতের দল। কেউ লম্বা টিকটিকির মত, কেউ বেঁটে কেউ গোবদা, কারও মাথা ন্যাড়া। চকচক করছে।
ওদিকে ক্যানেস্তা—আস্ত গরুর চামড়া গাছে টাঙিয়ে দড়ি বেঁধে টান টান করে কে দুটো হাড় দিয়ে শুম শুম করে পেটাচ্ছে। একটা শাকচুন্নি নাকি সুরে বিকট চীৎকার করে সানাই এর মত একটা সুরকে বেসুর বিকট করে তুলেছে। বাদ্যি বাজনাই বাজছে।
এদিকে বিরাট আগুন জ্বেলে বনের মোষ, গণ্ডার, জাতীয় কোন জীবদের ঝলসানো হচ্ছে। মাংস পোড়ার তীব্র গন্ধ । ওদিকের একটা লম্বা চালা নামেই চালা। ছাউনি নেই । উপর আকাশ দেখা যাচ্ছে। ওখানে একজন বসে আছে মড়ার খুলি গাদা করা একটা স্তূপের উপর।
ছায়া মূর্তি তিনটে এবার ওখানে রূপ নেয়——দীর্ঘ রোমশ চেহারা ওদের, গলায় হাড়ের মালা—ওরা মাথা নীচু করে। ভূতদের সেই প্রধানকে বলে – মানুষের জগত থেকে এক পাটোয়ারী নেতাকে এসেছি, এ খুব কাজের লোক। ভেজাল তেল খাইয়ে বত্রিশজনাকে আমাদের জগতে পাঠিয়েছে। এর তৈরী বাড়ি ভেঙ্গে সেবার সাতাশ জন এসেছিল আমাদের জগতে—ওরা সবাই আপনাকেই ভোট দেয়।
এবার সেই খুলির গাদায় সমাসীন ভূতের প্রেসিডেন্ট লাল চোখ মেলে চাইল । ওর গলায় গেটেকয়েক মুণ্ডু মালা, হাড় গলায় বলে সে।
—হ্যাঁ। এ ভোটের সময় সাতজনকে লাশ বানিয়ে এখানে পাঠিয়েছিল—এখানে তারা এখন ওই ধড়ফড়ের দলে ভোটের কাজ করছে। একে দিয়ে কি হবে?
পটল পড়েল চমকে উঠেছে। এত লোককে সে খতম করে ভূতের জগতে পাঠিয়েছে তা জানা ছিল না। এখন তারা তো এখানেই আছে, এবার তার সন্ধান পেলে তারা কি করবে কে জানে। লোকগুলো যারা তাকে নিয়ে এসেছে তারাই বলে,
—ভোটে কৌশলে কি করে জিততে হয়, কি করে ভোট বানচাল করে ক্যানডিডেটকে জেতাতে হয়, এসব কৌশল এ খুব ভালো করেই জানে সর্দার।
সর্দার লাল চোখ মেলে পটলাকে আগাপাশতলা দেখে বলে—পারলে থাক। ওকে সব ব্যাপার টাপার বুঝিয়ে বলে দে। আমার গদি যেন থাকে। নাহলে ব্যাটাকে ভূতের রাজ্য থেকে পাণ্ডভূতদের ডেরায় জমা করে দিবি। ওরা ওকে চুবিয়ে শেষ করে দেবে।
—ভূতরাও মরে?
লোকটা হি হি করে মুলোর মত দাঁত বের করে হাসছে। বলে—মরে না। তাইতো দুনিয়ার দুষ্টু লোক মরে দুনিয়াটা হালকা হয়, আর এখানে সবগুলো এসে কায়েম হয়। তারাই তো আমার গদি ধরে টান দিয়েছে। নাহলে সাবেকী ভূতরা গদির লোভ করতো না। হালফিল যেগুলো আসছে সেগুলো এসেই আন্দোলন, মিছিল — গদি দখল এসব শুরু করেছে। ভূতের জগতের শাস্তি তারাই শেষ করেছে। এবার তাই ভূতের রাজার গদি আমাকে রাখতেই হবে ওই ছুছন্দরদের হাত থেকে। তাই তোমাকে এনেছি।
পটল পড়েলের মাথা খুবই সাফ। বলে সে বাকী ভূতদের কটা দল?
সিঁটকে একটা ভূত বেশ পুরোনো গোছের। সেই বোধহয় ভূতের প্রসিডেন্টের সহকারী, সে ছোট গাদার উপর বসে একটা আধপোড়া ছাগলের দাবনা কামড়াচ্ছিল। বললে সে— দল এখন তিনটে। মোটকা—সিটকে আর ইদানীং পেত্নীরাও স্ত্রী স্বাধীনতার দাবী শুরু করেছে তাদের লীডার নাকি এবার ভূতরাজ্যের প্রধানা হবে। খুব কড়া দজ্জাল পেতনী সে।
পটল পড়েল ঘাবড়ে যায়।
মেয়েদের ব্যাপারে পটল চিরকালই একটু এড়িয়ে চলে তাদের। তার স্ত্রীর কথা মনে পড়লে এখনও রক্ত হিম হয়ে আসে।
সুশীলা যে তার নাম কে রেখেছিল জানেনি পটল। তবে যেমন দজ্জাল স্বভাব—তেমনি তার গলা। ভোর থেকে সেই গানবাদ্য শুরু হতো, কাজের মেয়ে, প্রতিবেশী, পাড়াপড়শী যায় পটল চন্দ্রের ষোড়শ বাপাত্ত না করে, জল গ্রহণ করতো না। টাকা পয়সা সব থাকতো তার জিম্মায়, সুশীলা নিজে এসে গুদামে সরষের তেলে পোড়া মবিল মেশাত, বাড়ি তৈরীর সময় সিমেন্টের বদলে বালিই দিত—ফলে লাভ হতো প্রচুর। আর ওই সব দুর্ঘটনা ঘটতো—পটলকেই পুলিশে টানতো, কোনমতে ফিরে আসতো।
সেই সুশীলাই ওষুধে ভেজাল মেশাতো – সেই ভেজাল ওষুধ খেয়ে নিজেই মরেছিল। অবশ্য পটল পড়েল বেঁচে গেছল তার হাত থেকে। সেই থেকে মেয়েদের ব্যাপারে পটল একটু বুঝে সমঝে চলে।
সেই ভূতের রাজা বলে,
—ভোটে জেতাতেই হবে।
পটল শোনায়—প্রভূ য্যানারা এসেছেন ত্যানারা পৃথিবীর বিশেষ করে ইন্ডিয়ার সেরা ভোট কারবারী।
আমার দলবলও কম নেই। যাও – ওসব ধানাই-পানাই বুঝিনা, জেতাতে না পারলে তোমার হাল খারাপ করে দেব। পটল পড়েল এবার প্রমাদ গণে।
এর মধ্যে দেখেছে ভূতের অন্য দলের ভোটের মিটিং, মিছিল, মাথার খুলি ---হাড়—তারপর আস্ত কঙ্কালের দল হাড়ের হাত তুলে ঘন ঘন শব্দে কলধ্বনি করে দুটী গোভূত গরুর মত মুখ দিয়ে চোঙ্গা ফুকছে—ভূতের রাজা ভূতের ফান্ডের লক্ষ লক্ষ ভূতের জান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। ভাণ্ডারের সব খাদ্য অন্য রাজ্যের ভূতদের বিক্রী করেছে। গোভূতের দল শিং নেড়ে তাদের হাম্বাস্বরে বলে— আমাদের খাদ্য সব লুটে নিয়েছে।
—ওই রাজাকে তাড়াও। ভোট দেবে না। আমাদের ভোট দাও ৷
পটল পড়েন দেখে প্রতিপক্ষের ভূত গোভূত— মামদো- ভূত সকলেই আছে। ওদের দলও কম নয়। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে হলে বোম চাই। ভূতের রাজ্যে এখনও বোমবাজী শুরু হয়নি। পটল গিয়ে ওই ভূতের রাজাকেই বলে ৷
–ন্যাপ্যা ঘন্টাকে চাই প্রভু। ওদের মিটিং বানচাল করতে হবে আর ভোটের দিন বুখও ক্যাপচার করতে হবে। ওরা মালমশলা নে আসবে।
ভূতের রাজা আবার অনুচর পাঠায়।
সেদিনই সেই ভূতের দল ন্যাপা মন্টাকে ক্যাপচার করে আনে। আর মশলাও ভূতের রাজ্যে মেলে না। বোম এর মশলা সমেত ওদের আনে ভূতের দল!
এবার পটল পড়েল স্বমূর্তি ধরেছে। প্রথমে রাম নাম কীর্তন শুরু করে। ভূতরা নাকি রাম নামে পালায়।
কিন্তু ইদানীং টি ভি আর স্যাটেলাইট এর দৌলতে ভূতের জগতেও রামায়ণ দেখানো হচ্ছে। তারা রাম নামের ইমিউন অর্থাৎ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জয় করেছে। ওতেও কাজ হয় না। তারপরই পটলের চ্যালারা দুতিনটে আড়াইপো সাইজের বোমা ছুঁড়তে বাস ভূতের মিছিল ফরসা।
এ দলের রাজা বলে— সাবাস। রাজা আমিই আছি—আমিই থাকবো। গদি কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। লড়ে যা তোরা। এই নীলভূতের দল ওই সাদা ভূতদের দলকে কোণঠাসা করেছে। তাদের সব অভিযানও নস্যাৎ করে দেয় বোমার জোরে।
নীল ভূতের রাজা বলে- পটলকে এবার এখানে মন্ত্রী করে নেব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
ওদিকে এবার পেত্নীর দলও বসে নেই। তারা এবার বিশাল মিছিল করছে। পেত্নী —শাকচুন্নি — নাককাটি — একানড়ে বিবিধ পেত্নীর দল ঝাঁটা-বটি হাড়সুদ্ধু (ও দিয়ে গেণ্ডুয়া খেলা যায়) এসব নিয়ে শোভা যাত্রা করে আসছে। নীল ভূতের রাজা হুকুম দেয়।
—পটল ওদের ঠেকাতেই হবে। ওরা সাংঘাতিক। ওরা এই গদি কেড়ে নিলে আর ফিরে পাবো না। ওরা রাজ্য রসাতলে দেবে।
ওদিকেও আয়োজনের ত্রুটি নাই। পুরুষ ভূতদের দলে দুটো দল হয়ে গেছে। নীল ভূত আর সাদাভূতের দল। পুরুষরা অনেক দিন থেকে দলবাজি করছে তাই তাদের মধ্যে দলাদলিটা বেশী। লোভও ওদের বেশী। কিন্তু মেয়েরা সবে রাজনীতিতে এসেছে।
ভূতের রাজ্যেও মেয়েরা এতদিন অর্থাৎ পেত্নীরা এতদিন ভুতেদের সংসার সামলেছে। ঘর সংসার করেছে আর ভূতরা যত্র তত্র মানুষের সঙ্গে ইয়ার্কি করেছে। মর্তলোকে এসে ভালো বাড়ি—হানাবাড়িতে বাস করে লোককে ভয়ভীত দেখিয়েছে ঘাড় মটকে রক্ত খেয়েছে। আর পেত্নী কুলই ভূতদের ঘর সংসার সামলেছে।
এবার তারাও জেগে উঠেছে।
এই দুনিয়া থেকে কিছু হালফিলের তেজস্বিনী নারী মরার পর ও ওই ভূতলোকে গিয়ে এবার পেত্নী আন্দোলন শুরু করেছে। ভূতদের সংসারেও তাই নিয়ে অনেক অশান্তি মাথা তুলেছে কিন্তু এ লড়াই থামেনি।
এবার পেত্নীরাই গদি দখলের লড়াই-এ সামিল হয়েছে। এরা শুনেছে নীল ভূতদের রাজার কাণ্ড।
সে নাকি মর্তলোক থেকে হালফিল ভোট-এর সূক্ষ্ম কলাকৌশল জানা স্পেশালিষ্ট মায় মর্তলোকের ভোট জেতার ব্রহ্মাস্ত্র বোমাও আনিয়েছে।
পেত্নীরা বলে—কি হবে ?
ওদের লীডাররা বলে,
—চলতো। তোদের ব্রহ্মাস্ত্র চোপা, আর ঝাঁটা। ঠিকমত ওই দুটোর ব্যবহার করলে পুরুষরা পালাতে পথ পাবে না।
ওরা মহাকলরবে বাদ্যভাণ্ড নিয়ে আসছে।
নীল ভূতের রাজার হুকুম —ওদের রুখতে হবে। মিছিল বানচাল করতেই হবে।
পটলা, মন্টা ন্যাপাদের নিয়ে মালপত্র নিয়ে রেডি। প্রসেসন এগিয়ে আসছে। সামনে পেত্নীদের ফেস্টুন। মড়ার খুলি—হাড়-টাড় আঁকা ওদের দলীয় পাতাকাও রয়েছে।
ন্যাপা টপকা! পটলা হুকুম দিতে গিয়ে থেমে যায়। ওর কথা আটকে যায়। হাঁটু কাঁপছে।
ন্যাপা বলে ভীত কণ্ঠে, পটলদা, সামনে কে দেখছো?
পটলের চোখ তখন ছানাবড়া হয়ে উঠেছে। সামনে বীরদর্পে এগিয়ে আসছে পটলের স্বর্গতা অর্দ্ধাঙ্গিনী সেই ডেঞ্জারাস মহিলা সুশীলা।
এখানে এসে সুশীলা এই প্রেতলোকে যে নারীমুক্তি আন্দোলনের নেত্রী হয়েছে আর সেইই ভূতরাজ্যের ভোটে দাঁড়িয়েছে তা জানা ছিল না।
সুশীলাও দেখেছে সামনে তার মর্তলোকের স্বামী পটলচন্দ্রকে। হাতের ঝাঁটা তুলে নামিয়ে এনে পটলের পিঠে সপাটে এক ঘা বসিয়ে গর্জে ওঠে,
—মুখপোড়া—মর্তে হাড় মাস ভাজা ভাজা করে এসেছো ভূতের রাজ্যেও হাড় মাস জ্বালাতে? আমার দলের বিরুদ্ধে কাজ করে পার পাবে? এই ধর এটাকে ওর চ্যালা দুটোকেও।
পেত্নী বাহিনী ঘিরে ফেলেছে।
বীভৎস সব চেহারা। ইয়া মুখোশ সাইজের দাত —
তেমনি গোলগোল চোখ, মাথার চুলগুলো শণের নুড়ির মত।
সুশীলা বলে—এত শীঘ্রী তোমার আসার কথা তো নয়, পটল সচ্যালা তখন হাঁপাচ্ছে। বলে,
—ওই ভূতের রাজা ধার এনেছে ভোটের জন্য। ওর হয়ে কাজ করতে হবে!
—করাচ্ছি! এ্যাই—ওর দলের কাজের বলে।
—ওই জীব কটাকে তুলে ভূতলোক থেকে মর্তলোকে ফেলে দিয়ে আয়। লক্ষ্য রাখবি, খবরদার যেন এদিকে এখন না আসে ওরা।
তারপর কয়েকটা পেত্নী ওদের গালিভারের বেঁটে মানুষদের শূন্যে তুলে ধরার মত আশমানে তুলে মর্তলোকের দিকে নেমে এলো।
..... নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ মেলে পটল পড়েল। দেখে ঘরেই শুয়ে, আছে, ছেলে – ছেলের বউ সকলেই রয়েছে। ডাক্তারবাবু ইনজেকশান দিচ্ছেন।
বলে,
-কেমন আছেন?
পটলবাবুর ঘোর তখনও কাটেনি। এদিক ওদিক চেয়ে
—আমি কোথায়?
—বাবা! ছেলের ডাকে পটল পড়েল চাইল ।
বাড়িতেই রয়েছে সে। তবু মনে পড়ে এক বিচিত্র জগতের কথা। সেখানে ভোট—সেই সুশীলার কথা-- ওদের আন্দোলন, ভোটের লড়াই এর কথা মনে পড়ে। ভয় হয়—এ জগতটাতো বিষিয়ে তবু মানুষের বিশ্বাস আছে মৃত্যুর পর শান্তি মেলে, কিন্তু যা দেখেছে তাতে হতাশই হয়েছে। মর্তলোকের এই তীব্র অশান্তির ঢেউ মৃত্যুলোকের শান্তিকেও বোধহয় বিঘ্নিত করেছে। মানুষের ভাগ্যে শাস্তির স্পর্শ আর জীবলোক— ভূতলোকেও বোধহয় নেই।
0 মন্তব্যসমূহ