Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

সবচেয়ে ভালো বন্ধু ।। দিলীপকুমার মিস্ত্রী

 

রিমঝিম দিদিমণি ক্লাসে ঢুকতেই ছাত্রছাত্রীরা আনন্দে নেচে উঠল। কারণটা আর কিছুই নয়,দিদিমণির মুখ থেকে তাদের গল্প শোনার আনন্দ। দিদিমণি রোজই ক্লাস শেষ করে তাদের একটি করে গল্প শোনায়। তাই ক্লাস ফাইভের ছেলেমেয়েদের কাছে সবচাইতে প্রিয় তাদের স্কুলের রিমঝিম দিদিমণি।

আজ আন্তর্জাতিক শিশু দিবস। দিদিমণি ক্লাসে ঢুকেই সবাইকে সে-কথা সংক্ষেপে বলল। তারপর বলল,

আজ আর বাংলা ক্লাস হবে না। গল্পও হবে না। তার বদলে আজ আমরা একটা মজার খেলা খেলব। শুধু খেলা নয়,যাকে বলে কম্পিটিশন। শিশু দিবসের দিনে,আমি তোমাদের সকলের জন্য  এনেছি একটি করে টেস্টি-লজেন্স। কিন্তু খেলায় যে ফার্স্ট হবে, তাকে আমি খুব সুন্দর একটি পেন আর একটি মজার গল্প বইও উপহার দেব। তোমরা কে কে খেলায় নাম দিতে চাও, ডান হাতটি উপরে তুলে আমাকে দেখাওতো দেখি !

ক্লাসের সবাই তাদের ডান হাত উপরে তুলে ধরল। দিদিমণি তা দেখে খুব খুশি হল। সে একগাল হেসে বলল,তোমরা সবাই খুব লক্ষী ছেলেমেয়ে। আজকে যে খেলাটা, মানে যে কম্পিটিশনটা হবে, তার নাম- সবচেয়ে ভালো বন্ধুর খোঁজ। তোমরা সবাই নিজের হাত নামিয়ে বসে পড়। আমি একটিমাত্র প্রশ্ন রাখব। তোমরা এক-একজন আমার টেবিলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাবে।  যার উত্তর সবচেয়ে বেশি যুক্তিযুক্ত বলে আমার মনে হবে, তাকেই প্রথম ঘোষণা করে পুরস্কৃত করা হবে। কী,তোমরা রাজী তো ?

ক্লাসের ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে ঘাড়-কাৎ করে, উচ্চস্বরে উত্তর দিল, হ‍্যাঁ, রাজী।

দিদিমণি চটজলদি সকলের জন্য প্রশ্নটি ছুঁড়ে দিল,তোমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুটি কে ?

প্রথমে লাস্ট বেঞ্চ থেকে দিব‍্য আসবে। তারপর, এক-এক করে,সবাই উত্তর দিতে আসবে এখানে। প্রথমে নিজের নামটা বলবে, তারপর উত্তরটা দেবে, কেমন!

দিব‍্য বসে বসে ভাবছিল,সে সব শেষে বলবে। কিন্তু দিদিমণির ডাক পেয়ে তাকে উঠতেই হল। সে গোবেচারার মতো গুটিগুটি পায়ে দিদিমণির পাশে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করল।

আমি দিব‍্য সরকার। আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হচ্ছে রিমঝিম দিদিমণি।

তার কথা শুনে, ক্লাসের সবাই হো হো করে হেসে উঠল। দিদিমণি হাতের ঈশারায় তাদের থামিয়ে, দিব‍্যকে তার কথা চালিয়ে যেতে বলল। দিব‍্য আবার বলতে লাগল।

দিদিমণি আমাদের রোজ ভালো ভালো গল্প শোনায়। পড়া শেখায়। পড়া না পারলেও কখন মারে না। ছুটির পর, দিদিমণি মাঝে মাঝে আমাকে আদর করে। তাই দিদিমণি আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।


আমার নাম ছুটি রায়। আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু আমার বাবা।

ক্লাসের মধ্যে আবার হাস‍্যরোল উঠল। দিদিমণি আবার সবাইকে চুপ করিয়ে, ছুটিকে বলতে বলল। ছুটি বলতে লাগল।

আমাদের ফ্ল্যাটে,আমার কোনো খেলার সাথী নেই। মা সবসময় কাজ নিয়ে থাকে।  বাবা অফিস থেকে ফিরলে, আমি বাবার সঙ্গেই খেলা করি। ছুটির দিনগুলোতে বাবা আমাকে স্কুটিতে চাপিয়ে পার্কে নিয়ে যায়। বাবা আমাকে গল্প বলে। আর কখ্খোনো মারে না। মা তো মাঝেমধ্যেই মারে,বকে। তাই বাবাই আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।

আমি বিশাল ভট্টাচার্য। আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু আমাদের পোষ‍্য টম। সে রোজ আমার সঙ্গে খেলা করে। আমাকে আদর করে। আমাদের বাড়ি পাহারা দেয়। ওর মতো ভালো বন্ধু আর হয়না।

আমি রেহান টিকাদার। আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু আমাদের খাঁচায় পোষা একটি টিয়া। সে রোজ সকালে,রে-হা-ন রে-হা-ন বলে ডেকে আমার ঘুম ভাঙায়। আমি যখন বাড়িতে থাকি,সে আমার সঙ্গে কত কথা বলে। গান গেয়ে শোনায়, নাচ করে দেখায়। আমার টিয়ার মতো বন্ধু তোমরা আর কোথাও খুঁজে পাবে না।

 আমি শবনম সুলতানা। আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু দুজন। আমাদের পোষা গাই বিলকিস আর তার ছোট্ট বাচ্চা আজান। বিলকিস আমাকে রোজ অ্যাত্তো দুধ খেতে দেয়, পিঠে চড়ায়। আর আজান,আমার সঙ্গে কতো খেলা করে। কাছে গেলে, ওরা দুজনেই আমাকে খুব আদর করে। ওদের মতো ভালো বন্ধু,তোমরা আর কোথাও খুঁজে পাবে না।

এরপর, ভূষণ রোহিত চন্দনা অর্জিত রাই প্রিয়াঙ্কা তমোনাশ; এক-এক করে বত্রিশজন তাদের মনের কথা বলে গেল। সবশেষে এল মালতি। সে বলতে লাগল,

আমার নাম মালতি মান্ডি। আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হল আমাদের চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো। তারা আমাকে ফুল দেয়,ফল দেয়, ছায়া দেয়, বাতাস দেয়,রান্নার জ্বালানি দেয়। বাবা একদিন বলেছিল, ওরা নাকি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশ থেকে খারাপ গ‍্যাসও টেনে নেয়। আবার বৃষ্টিকেও ডেকে আনে। কিন্তু তার বদলে ওরা কখনোই কিছু চায়না। ওরা আমৃত্যু  আমাদের শুধু দিয়ে যায়। কখনো একটু রাগও করেনা। তাই গাছ আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।

মালতির বলা শেষ হয়েছে। ক্লাসের ভেতরটা একেবারেই নিশ্চুপ। সকলে চুপটি করে বসে দিদিমণির মুখে তাকিয়ে রয়েছে।  দিদিমণি সবার মনের অবস্থাটা বুঝতে পেরে বলতে লাগল,

তোমরা সবাই খুব ভালো, খুব সুন্দর বলেছ। তোমাদের সবার বন্ধুরাই খুব ভালো। তবু আমি যদি মালতিকে ফার্স্ট ঘোষণা করি,তোমরা সবাই কী খুব রাগ করবে ?

সবাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল, না, না, না।

সকলের মুখে এমন উত্তর শুনে, দিদিমণির মুখখানা আহ্লাদে আটখানা। সে বলল,

আমি জানি, তোমরা সবাই আমার খু-ব লক্ষী ছেলেমেয়ে। আমি মালতিকে কেন ফার্স্ট করছি তা কী তোমরা জানো ? জানো না। কারণ, মালতি ঠিকই বলেছে, গাছ শুধু ওর নয়,আমাদের সকলের সবচাইতে ভালো বন্ধু। গাছ জীবনভর আমাদের শুধু দেয়। বিনিময়ে কিচ্ছু চায় না। গাছ না থাকলে, তার সাহায্য না পেলে, আমরা কেউ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারবো না। তাই গাছই মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। মালতির তো বটেই।

দিদিমণির কথা শেষ হতেই ক্লাসের সবাই আনন্দে তালি বাজাতে শুরু করল। মনে হতে লাগল, তাদের করতালি যেন আকাশ ছুঁতে ঝড়ের বেগে ছুটছে।

দিদিমণির মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে চক্ চক্ করছে। এবার সে সবাইকে থামিয়ে বলল,

আসলে তোমরা সবাই ফার্স্ট হয়েছ। তাই তোমাদের সকলকে আমি আজ একটি করে গল্পের বই,পেন আর লজেন্স দিয়ে পুরস্কৃত করব।

গল্পটি শেয়ার করে আরো সব বন্ধুদের পড়ার সুযোগ করে দাও।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ