Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

অন্ধকার সিঁড়ি ।। মানবেন্দ্র পাল

 

সে আজ বেশ কিছুদিন আগের কথা। এই কলকাতা শহরেই আমার জীবনে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল যা মনে পড়লে এখনও ভয়ে গায়ে কাটা দেয়।

তখন আমার বয়েস কতই বা হবে? একুশ-বাইশ? বি. এ. পাস করে চাকরির জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কোথাও চাকরি পাই না। তখন একদিন পিসেমশাইয়ের বাড়ি গিয়ে দেখা করলাম। পিসেমশাই একটা বড়ো কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টার। সব শুনে তিনি আমায় ওঁর অফিসে দেখা করতে বললেন। তার কথা মতো একদিন ওঁর অফিসে যাবার জন্যে প্রস্তুত হলাম।

দিনটা খুবই বাজে ছিল। একে পৌষ মাসের শেষ, তার ওপর অসময়ে দুতিনদিন ধরে চলছে টিপ টিপ করে বৃষ্টি। হাড়-কামড়ানো কনকনে ঠাণ্ডা। দুদিন পর বৃষ্টিটা সেদিন ছেড়েছিল। কিন্তু আকাশটা ছিল গোমরা মুখের মতো মেঘলা করে। মাঝে মাঝেই ঝোড়ো বাতাস। ঠাণ্ডা বাতাসে মুখচোখে যেন উঁচ বিঁধছিল। কান দুটো যেন কেউ বরফের ছুরি দিয়ে কেটে দিচ্ছিল। সেই অবস্থায় বেরোচ্ছিলাম, আমার ছবছরের ভাইপোটা সোয়েটার, কোট, মাংকি-ক্যাপ পরে সামনে এসে দাঁড়ালো। মাংকি-ক্যাপ পরে তাকে কেমন দেখাচ্ছিল সেটা জাহির করার জন্যে সে আমার সামনে এসে হাত-মুখের নানা ভঙ্গি করতে লাগল। আমি ওকে আদর করে বেরোতে যাচ্ছিলাম, ও বললে, তোমার মাংকি-ক্যাপ নেই কাকু?

তা তো বটে। আমার মাংকি-ক্যাপটা তো ট্রাঙ্কে পচছে। বড়ো একটা ব্যবহার করা হয় না। আজকের ওয়েদারেও যদি ওটা ব্যবহার করা না হয় তাহলে আর কবে হবে? আমি তখন আবার ফিরে গিয়ে মাংকি-ক্যাপটা বের করে সাইডব্যাগে নিলাম। খুব দরকার হলে পরব।

পিসেমশাইয়ের অফিসটা পার্ক স্ট্রীট আর ফ্রি স্কুল স্ট্রীটের মুখে। মস্ত বাড়ি। আর পুরনো। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। দিব্যি ঘষা-মাজা। শুধু খুব উঁচুতে ১৮৮০ লেখা দেখে বোঝা যায় বাড়িটা ঐ সময়ে তৈরি। বাড়িটার নিচের তলায় সব দোকান। আর পার্ক স্ট্রীটের দোকান মানেই বড়ো বড়ো কৈতাদুরস্ত ব্যাপার। বাড়িটার ওপরতলাগুলোতে যে নানা ধরনের অফিস রয়েছে রাস্তা থেকেই তা বোঝা যায়। ওদেরই মধ্যে ছতলায় পিসেমশাইয়ের অফিস।

কিন্তু ঢুকব কোন দিক দিয়ে বুঝতে পারলাম না। আষ্টেপৃষ্ঠে শুধু দোকানআর দোকান।

অনেক খোঁজ করে বাড়ির প্রায় পিছন দিকে লিফটের সন্ধান পেলাম। কিন্তুহ্যায়! লোডশেডিং চলছে! লিট অচল। কাজেই সিঁড়ির দিকে এগোলাম। ডান দিকে একটু এগিয়েই সিঁড়ি। এই সিঁড়ি ভেঙে দুতলায় উঠতে হবে।

লিফট যখন বন্ধ তখন সিঁড়িতে ভিড় হবার কথা। কিন্তু আমি ছাড়া দ্বিতীয় প্রাণী নেই দেখে অবাক হলাম। অবশ্য অবাক হবার কিছুই ছিল না। কেননা এই বিশ্রী আবহাওয়ায় কেউ বাড়ি থেকে বেরোয়নি। নিতান্তই দায়ে পড়ে যারা এসেছিল তারা নিশ্চয় লোডশেডিং হবার আগেই ওপরে উঠে গেছে। যাই হোক সিঁড়ি দিয়ে উঠতে আরম্ভ করলাম।

সিঁড়ি যে এত অন্ধকার তা প্রথমে বুঝতে পারিনি। খুব সাবধানে পা ফেলে ফেলে ওপরে উঠতে লাগলাম। সিঁড়িগুলো কাঠের আর বেশ চওড়া, তাই রক্ষে। হোঁচট খাবার ভয় ছিল না। প্রথমটা অন্ধকারে উঠতে বেশ অসুবিধে হচ্ছিল। পকেট থেকে দেশলাই বের করে লাঠি জ্বালতে জ্বালতে উঠছিলাম। তারপর অন্ধকার ক্রমে চোখ-সওয়া হয়ে গেল। পনেরো-কুড়ি ধাপ ওঠার পরই খানিকটা সমতল মেঝে। এটুকু বেশ হাঁটা যায়। তারপর আবার খাড়া সিঁড়ি। বুঝলাম সমতল মেঝেগুলো এক-এক তলা বোঝায়।

আমি ধীরে ধীরে উঠছি। বাঁদিকে লিফটের অন্ধকার খাদ। অবশ্য পড়ে যাবার ভয় নেই। লোহার শিকের জাল দেওয়া। ডান দিকে নিরেট দেওয়াল। দেওয়ালটাকে মনে হচ্ছিল যেন পাহাড়ের গা। কোথাও কোনো ফাঁক-ফোকর নেই।

আমি উঠছি তো উঠছিই।

সিঁড়িটা একে অন্ধকার তার ওপর নির্জন। ভাবলাম এরকম জায়গায় তো কাউকে ভুলিয়ে এনে দিব্যি খুন করা যায়।

ভাবতেই গায়ে কেমন কাঁটা দিয়ে উঠল।

এমনি কতক্ষণ উঠেছি, হঠাৎ খেয়াল হলো কতলা উঠলাম তা তো হিসেব করিনি। দুতলা পার হয়ে যাইনি তো? একথা মনে হতেই আবার নামতে লাগলাম। কী গেরো! নামছি তো নামছিই। শেষে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে, দম নিয়ে আবার উঠতে শুরু করলাম।

এবার খুব হিসেব করে সিঁড়ি ভাঙতে লাগলাম।এই হলো দোতলার মেঝে।

আর কিছুক্ষণ পরএই হলো তিনতলার মেঝে।এ-ই চারতলা-উঃ! এরই মধ্যে হাঁপিয়ে গিয়েছি।

কিন্তু এতক্ষণেও কাউকে সিঁড়ি ভাঙতে দেখছি না কেন? কেউ না উঠুক, নামবেও না? তবে কি অন্য দিক দিয়ে আর কোনো সিঁড়ি আছে? আমি কি তবে ভুল করে পরিত্যক্ত কোনো সিঁড়ি দিয়ে উঠছি?

এ কথা মনে হতেই মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠল।


হঠাৎ এই সময়ে সিঁড়িতে জুতোর শব্দ পেলাম। কেউ যেন ভারী ভারী পা ফেলে ওপর থেকে নেমে আসছে। অবাক হয়ে তাকাতেই দেখি সুট-টাই-পরা একটা সাহেব নামছে। তার টুপিটা নেমে এসেছে কপালের নিচে পর্যন্ত। দুহাত কোটের পকেটে গোঁজা।

কলকাতায় এখন বড়ো একটা সাহেব-মেম চোখে পড়ে না। আজ হঠাৎ সামনে সাহেব দেখে অবাক হলাম।

সাহেব তখন একেবারে আমার ঘাড়ে এসে পড়েছে। অথচ পাশে যথেষ্ট নামার জায়গা।

যেহেতু আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক সেজন্যে সাহেব দেখে ভয় পেলাম না। রীতিমতো বিরক্ত হয়ে বললামসাহেব, লোকের ঘাড়ে এসে পড়ছ যে! দেখে শুনে নামো।

সাহেব আমার দিকে ফিরে তাকালো। উঃ! কী ভয়ংকর দৃষ্টি! আর চোখ দুটো? তা কি মানুষের চোখ? আমি কোনোরকমে পাশ কাটিয়ে দৌড়ে তিন ধাপ ওপরে উঠে এলাম। তারপর আন্দাজে তলা হিসেব করে ওপরে উঠতে লাগলাম। কিন্তু মনটা কিরকম বিভ্রান্ত হয়ে গেল। হঠাৎই মনে হলো এই মাত্র যাকে দেখলাম সে যেন ঠিক স্বাভাবিক মানুষ নয়। এমন কিএমন কি বোধহয় মানুষও নয়। মানুষ নয়কেননা, যে পায়ের শব্দটা সামনে থেকে পেয়েছিলাম, আমার পাশ দিয়ে যাবার সময় সে শব্দটা আর পাইনি। সাহেবটা যেন বাতাসে ভর করে নেমে গেল।

এ কথা মনে হতেই আমার গা-টা কেঁপে উঠল। আর তখনই মনে হলো এই অন্ধকার সিঁড়িতে আরও কিছু মারাত্মক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।

ভাবতে ভাবতে মাত্র পাঁচ-ছ ধাপ উঠেছি, হঠাৎই আমার পা দুটো যেন সিঁড়ির সঙ্গে আটকে গেল। আমার দুচোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম। দেখি মাত্র কয়েক ধাপ ওপরে একটা লোক দেওয়ালে ঠেসান দিয়ে সিঁড়িতে দুপা ছড়িয়ে ঘাড় কাৎ করে বসে রয়েছে। আর গলা থেকে রক্ত পড়ছে।

এ দৃশ্য দেখেই আমি ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু আমার চিৎকার শুধু নিশ্চিদ্র দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে এল।

এ তো রীতিমতো খুন! আর এ খুনটা যে সাহেবটাই করে গেছে তাতে সন্দেহ মাত্র রইল না।

আমি ভাবতে লাগলাম এই মুহূর্তে আমার কর্তব্য কী। এখানে দাঁড়িয়ে থাকা কাজের কাজ নয়, উচিতও নয়। সাহেবটা তো পালিয়েছে। এখন লোক ডেকে একে হাসপাতালে দেওয়া উচিত।

এ কথা মনে হতেই আমি তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলাম। আমার পায়ে যে এত জোর তা আমি ভাবতেও পারিনি। আমি কখনো কখনো একসঙ্গে দু তিন ধাপ সিঁড়ি ডিঙিয়ে নামছিলাম।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একতলায় এসে পৌঁছলাম। দিনের আলো দুচোখ ভরে দেখলাম। আমি এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে খুন-খুনবলে চিৎকার করতে করতে দোকানগুলোয় খবর দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে হৈ হৈ করে লোক বেরিয়ে এল। তারা আমার ভয়ার্ত মুখ দেখে বিপদের গুরুত্ব বুঝতে পারল। উন্মত্ত উত্তেজনায় জিজ্ঞেস করলকোথায় খুন?

আমি আঙুল তুঙ্গে সিঁড়িটা দেখিয়ে দিলাম। ওরা হৈ হৈ করে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে লাগল।

এবার আমি কি করব ভাবতে লাগলাম। নাঃ, এখানে থাকা উচিত নয়। এখুনি পুলিশ আসবে। কে প্রথম দেখেছিল তাই নিয়ে খোঁজ-তল্লাশ হবে। আমি শুধু শুধু জড়িয়ে পড়ব। তার চেয়ে কেটে পড়াই ভাল।

এই ভেবে তাড়াতাড়ি পার্ক স্ট্রীট ক্রশ করে সামনের ফুটপাথে গিয়ে দাঁড়ালাম।

এর পরেই হলো আমার মতিভ্রম। বাড়ি চলে গেলেই হতো। তা নয়, কেবলই মনে হতে লাগল খুনটা নিয়ে শেষ পর্যন্ত কী হলো দেখলে হয়।

এই ভেবে আবার রাস্তা পার হতে এগোচ্ছিমনে হলো এটা বোধ হয় ঠিক হচ্ছে না। কারণ আমাকে দেখলেই কেউ না কেউ চিনে ফেলবেই। আর তখন জেরার মুখে পড়তে হবে কখন কী অবস্থায় খুন হতে দেখেছিলাম, খুন করে কাউকে পালাতে দেখেছিলাম কি না! আমিই যে খুন করিনি তার প্রমাণ কী?

তবু ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত কী হলো জানার জন্যে এমনই কৌতূহল যে আমি আবার রাস্তা পার না হয়ে পারলাম না। তবে হঠাৎ আমার মাংকি-ক্যাপটার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। আমি ব্যাগ থেকে টুপিটা বের করে মাথা, মুখ, গলা ঢেকে নিলাম। চোখ দুটো শুধু বেরিয়ে রইল।

সিঁড়ির মুখে গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য। কিন্তু আশ্চর্যডেডবডিটা কোথাও নেই, খুনীকে ধরা তো দূরের কথা। পুলিশও আসেনি। অথচ লোকগুলো মারমুখো। কাউকে যেন খুঁজছে।

একটু কান খাড়া করে থাকতেই শুনলাম একজন আর একজনকে বলছেকোথায় খুন? সব মিথ্যে।

আমি অবাক হলাম। কেউ খুন হয়নি? কিন্তু আমি যে দেখলাম একজন সিঁড়িতে পা ছড়িয়ে দেওয়ালে মাথা গুঁজে পড়ে রয়েছে!

তারপরেই যে কথাগুলো কানে এল তা শুনে রক্ত হিম হয়ে গেল। সবাই উত্তেজিত হয়ে বলছেসব মিথ্যে। সেই ধাপ্পাবাজ ছোকরাটাকে একবার পেলে হয়।

আমি তখন বেপরোয়া হয়ে একজন বুড়ো গোছের লোককে জিজ্ঞেস করলাম কী ব্যাপার মশাই?

সে বললেএকটা ছোকরা হঠাৎ ওপর থেকে নেমে এসে রটিয়ে দিলসিঁড়িতে একজন খুন হয়েছে। শুনে সবাই ছুটল। কিন্তু কোথাও কিছু নেই।

মনে মনে ভাবলাম তাহলে তো কেউ খুন হয়নি। তাহলে কি দেখলাম?

কিন্তু তা নিয়ে তখন মাথা ঘামাবার আর সময় ছিল না। উত্তেজিত এক দল লোক কেবলই চেঁচাচ্ছেকোথায় সেই ধাপ্পাবাজটা? ধরো তাকে। নিশ্চয় বেশিদূর পালাতে পারেনি।

আর একজন বললেধরতে তো লোক ছুটেছে। কিন্তু চিনবে কি করে?

খুব চেনা যাবে। একজন উৎসাহী মস্তান চেঁচিয়ে উঠল। আমি দেখেছি তার কপালে মস্ত একটা আঁচিল আছে।

সর্বনাশ! তাড়াতাড়ি মাংকি-ক্যাপটা ভালো করে টেনে সরে এলাম। পালাতে হবে।

কিন্তু পালাব কোথায়? গলির মুখ থেকে ফুটপাথ পর্যন্ত ভিড়। তারা বলছেধাপ্পা দেবার কারণ কি? নিশ্চয় কোনো বদ মতলব আছে। পাকড়াও। কিন্তু কোন দিকে গেল?–ঐ দিকে-ঐ দিকে।

আমার হাত-পায়ের তখন প্যারালিসিসের রুগীর মতো অবস্থা। এখনও যে একেবারে ওরে মধ্যে থেকেও ধরা পড়িনি তা শুধু এই মাংকি-ক্যাপটার জন্যে।

কিন্তু লোকগুলো যেভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে যেন আমাকেই সন্দেহ করছে। মাংকি-ক্যাপটা যদি একবার তুলে নেয়, তাহলেই গেছি।

এই শীতেও সোয়েটার ভিজিয়ে ঘামছি। কি করে পালাব? চারিদিকে ক্ষিপ্ত লোক।

আমার চোখ-মুখের যা অবস্থাআমি বেশ বুঝতে পারছিলাম কেউ ভালো করে নজর করলেই ধরে ফেলবে আমিই সেই।

হঠাৎ দেখলাম কয়েকজন লোক আমার দিকেই আসছে। কি করবকোথা দিয়ে কেমন করে পালাব ভাবছি এমনি সময়ে কারেন্ট এসে গেল। আমি তাড়াতাড়ি লিফটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। একটু পরেই লিফট চালু হলো। আমি লিফটে উঠে পড়লাম। আমার সঙ্গে এবার উঠল আরও কয়েকজন ভদ্রলোক। সোজা চলে গেলাম ছতলায় পিসেমশাইয়ের নিশ্চিত হেপাজতে।

ঘটনাটা এখানেই শেষ হওয়া উচিত ছিল। তা যে হয়নি সে শুধু আমার কপালদোষে।

সাত দিন কেটে গেছে। এই সাত দিন ধরে শুধু একটা কথাই মনে হয়েছেসে দিন অন্ধকার সিঁড়িতে যা দেখেছিলাম তা সবই কি ভুল? সেই যে সাহেব যার কপাল পর্যন্ত ঢাকা টুপি, হিংস্র ভয়ানক চোখসেই যে ঘাড়-কাৎ-করে-পড়ে-থাকা মৃতদেহসব ভুল?

শেষ পর্যন্ত আবার সেই সর্বনেশে কৌতূহল ঘাড়ে চেপে বসল। ঠিক করলাম আবার একদিন ঐ সিঁড়ি দিয়ে উঠব। দেখি তেমন কিছু চোখে পড়ে কিনা।

যেমনি ভাবা তেমনি কাজ।

আবার একদিন সেই সিঁড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। আজ লোডশেডিং নয়। চারিদিকে আলোয় আলো। লিফটও চলছে। কিন্তু আমি সিঁড়ি দিয়েই উঠতে লাগলাম।

সিঁড়ি আজও নির্জন। লিফট থাকতে কে আর কষ্ট করে সিঁড়ি ভাঙে। শুধু আমিই একা উঠছি। সিঁড়ির প্রতিটি বাঁকে আলো।

একতলা-দোতলা-তিনতলা করে উঠতে লাগলাম। পাঁচতলার কাছে যেতেই থমকে দাঁড়ালাম। কি করে, কেমন করে যেন মনে হলো এই সেই জায়গাটা। ভালো করে বোঝার জন্যে দেওয়ালটার দিকে এগোচ্ছি আর ঠিক তখনই সব আলো নিভে গেল।

আমি নিশ্চিত জানি এটা লোডশেডিং ছাড়া কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয়, কিন্তু তবু কেন যেন সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। এক মুহূর্তে মনে হলো আমি অন্ধকার সমুদ্রের মধ্যে দিশেহারা হয়ে দাঁড়িয়ে। আর ঠিক তখনই একটা কনকনে হাওয়া বদ্ধ সিঁড়িতে আর্তনাদ করে আছড়ে পড়ল। তারপরেই একটা বরফের মতো কঠিন ঠাণ্ডা হাত যেন আমার মুখটা চেপে ধরবার চেষ্টা করল। আমি চিৎকার করতে গেলাম, কিন্তু পারলাম না।

তারপর কি করে যে নিচে নেমে এসেছিলাম বলতে পারব না।

বাইরে তখন শেষ-পৌষের মিষ্টি রোদ ঝলমল করছে।

পরে পিসেমশাইয়ের কাছে শুনেছিলাম, আমি একাই নইঐ দৃশ্যটা আরও দু চারজন দেখেছে। তবে একটি বিশেষ দিনে, বিশেষ সময়ে। আমার দুর্ভাগ্য সেই বিশেষ দিন আর বিশেষ সময়েই আমি সেদিন অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলাম। কিন্তু পরের একদিনকার ঘটনাটাঐ যে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া, বরফের মতো ঠাণ্ডা হাতব্যাপার কী! না, বুদ্ধিতে সব কিছুর ব্যাখ্যা চলে না।

গল্পটি শেয়ার করে অন্যদেরও পড়ার সুযোগ করে দাও।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ