Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

চোরাই বাড়ী ।। হেমেন্দ্রকুমার রায়

 

রূপকথায় শুনেছি পুকুর-চুরির কথা। কিন্তু বাড়ী-চুরির কথা কখনো শুনেছ?

সত্য-মিথ্যা জানি না, কিন্তু কয়েক বৎসর আগে শুনেছিলুম একটি বিচিত্র ঘটনার কথা। কলকাতার দক্ষিণ অঞ্চলে এক ধনী ব্যক্তির প্রকাণ্ড একখানা বাড়ী ছিল। কোন কারণে তাঁকে দীর্ঘকালের জন্যে সপরিবারে বিদেশে যাত্রা করতে হয় এবং সেই সময়ে তিনি বাড়ীখানা দেখাশোনা করবার জন্যে একজন কর্মচারী নিযুক্ত করে যান।

কিছুকাল পরে ভদ্রলোক আবার কলকাতায় আসেন, কিন্তু নিজের বাড়ীর বা কর্মচারীর আর কোন খোঁজ পান না! বিপুল বিস্ময়ে তিনি দেখলেন, যেখানে আগে তার বাড়ী ছিল, সেখানে এখন পড়ে আছে একটা খোলা মাঠ। যেন গোটা বাড়ীখানা মাথায় করে কোথায় অদৃশ্য হয়েছে আলাদীনের বিখ্যাত দৈত্য!

তারপর জানা গেল ব্যাপার হয়েছিল এই : ভদ্রলোকের বিদেশযাত্রার পর তাঁর দ্বারা নিযুক্ত সেই সুচতুর কর্মচারী সমস্ত বাড়ীখানা ভেঙে-চুরে তার মালমশলা বিক্রি করে বেশ দু পয়সা কামিয়ে চম্পট দিয়েছে কোন নিরাপদ ব্যবধানে!

কিন্তু আমি তোমাদের আজ এর চেয়েও আশ্চর্য এক সত্য ঘটনার কথা বলব। চোরাই মালের কথাই শুনি, কিন্তু চোরাই বাড়ীর কথা কে কবে শুনেছে? ঘটনাটি ঘটেছিল ইয়াঙ্কিস্থানে অর্থাৎ আমেরিকায়।

দুই ॥

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ঘটনা। স্থান- নিউইয়র্ক।

গোয়েন্দা স্টুপস নিজের আফিসে বসে আছেন, এমন সময়ে বেজে উঠল ফোনের ঘণ্টা।

শোনা গেল তাঁর স্ত্রী বলছেন, “সিনেমা থেকে ফিরে এসে দেখি আমাদের বাড়ীতে চোর ঢুকেছে। তুমি শীগগির এস।

পুলিশের আস্তানায় চোর বাঘের ঘরে ঘোঘের আবির্ভাব। স্টুপস বাড়ীমুখো হ'তে দেরি করলেন না।

যদিও চোরের পাত্তা পাওয়া গেল না, তবে এটা বেশ বোঝা গেল যে, সে অত্যন্ত ব্যস্তভাবে তাড়াতাড়ি সরে পড়েছে। কারণ স্টুপসের কয়েকটা মেডেল আর মিসেস স্টুপসের একটা ফারের (পশুলোমের) জামা ছাড়া সে আর কিছু নিয়ে যেতে পারেনি।

স্টুপস বললেন, “আমার পাল্লায় পড়ে জেল খাটতে হয়েছে অনেক পাজীকেই। নিশ্চয়ই তাদের কেউ প্রতিশোধ নেবার জন্যে আজ আমার বাড়ীতে এসেছিল।

জনৈক প্রতিবেশী বললে, “সন্ধ্যার পর আমি এই বাড়ীর সুমুখ দিয়ে একটা লোককে খোঁড়াতে খোঁড়াতে যেতে দেখেছি। অন্ধকারে তাকে চিনতে পারিনি, তবে আমি ভেবেছিলুম সে আমাদের পাড়ার সেই খোঁড়া লোকটা।

দুই চারিদিন যেতে না যেতেই আবার এক কাণ্ড!

বিখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ বার্গেস কেলির বাড়ীতে এক চুরি হয়ে গেল। যে-সে চুরি নয়, একেবারে সাড়ে সতেরো হাজার টাকা দামের মাল উধাও! তার মধ্য ছিল দামী পোশাক, মেয়েদের হাতঘড়ি, জড়োয়া গয়না প্রভৃতি।

জানলা দিয়ে চোর বাড়ীর ভিতরে ঢুকেছিল। মেঝের উপরে পাওয়া গেল চোরের কাদামাখা জুতোর দাগ। ছোট আকারের জুতো।

ডাক্তার-গৃহিণী বললেন, “দিন দুই আগে একটা নতুন লোক আমাদের বাগানে কাজ করতে এসেছে। তার উপরেই আমার সন্দেহ হয়।"

লোকটাকে ধরে এনে তার জুতোর মাপ নেওয়া হল। কিন্তু দেখা গেল, চোরের জুতোর চেয়ে তার জুতো মাপে বড়। সে বেচারা ছাড়ান পেল।

কিন্তু এমন একটা-দুটো চুরি নয়, শহরে আর শহরতলীতে হঠাৎ লেগে গেল যেন চুরির হিড়িক। এখানে-ওখানে যেখানে-সেখানে হচ্ছে চুরির পর চুরি, পুলিশ কিছুতেই কিন্তু কোন কিনারা করে উঠতে পারছে না!

এই উপদ্রবে ছয় মাস ধরে বিব্রত হয়ে অপরাধ-বিভাগের বড়-কর্তা হোলগার ক্রিস্টোফারসেন তাঁর সহকারী গোয়েন্দাদের ডেকে বললেন, “কোনদিকেই আমরা এক পা এগুতে পরছি না, অথচ কতকগুলি ব্যাপার বেশ স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত যেসব মাল চুরি গেছে, তার বেশির ভাগই হচ্ছে ফার', জড়োয়ার গহনা, ক্যামেরা, রেডিও বা গৃহস্থালীর অন্যান্য উপকরণ। তার উপরে আছে আসবাবপত্তর পর্যন্ত। সন্ধ্যার সময়ে বাড়ীর লোক যখন বাইরে থাকে, চোরের আবির্ভাব হয় তখনই।

পাওয়া গেল আরো কোন কোন সূত্র। নানা স্থানেই চোরের পদচিহ্ন আবিস্কৃত হয়েছে এবং জানা গিয়েছে যে, চোরের পায়ের মাপ হচ্ছে ছোট। প্রথমটা সন্দেহ হয় চোর হয়তো বয়সে বালক। কিন্তু তারপরেই বোঝা যায়, বালকেরা কখনো এমন পাকা অপরাধীর মতো চুরি করতে পারে না। তার আঙুলের ছাপ পেলে পুলিশের কাজ যথেষ্ট সহজ হয়ে আসত, কিন্তু তা পাবার কোন উপায় নেই, কারণ চোর আসে হাতে দস্তানা পরে। অতি চতুর চোর!

ক্রিস্টোফারসেন বললেন, “অল্পদিনের মধ্যে এ-রকম চুরি হয়ে গেছে পঞ্চাশটিরও বেশি। চোর বড় কম টাকার জিনিস নিয়ে যায়নি।

কিন্তু কেবল কি এইরকম চুরি? চারিদিক থেকে খবর পাওয়া যায়, ঘর-বাড়ী তৈরির মালমশলাও যে কোথায় অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, কেউ তা ধরতে পারছে না! মূল্যবান ভিনিসিয়ান' পর্দা, খচিত লিনোলিয়াম’, দরজার কড়া- এমন কি দরজা ও সার্সি-বসানো জানলার ফ্রেমপর্যন্ত চুরি যেতে আরম্ভ হয়েছে। প্লাম্বার' ও ছুতোরদের যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক উপকরণ এবং আরো আগড়-বাগড়ও বাদ যায়নি!

গোয়েন্দাদের দৃঢ় ধারণা হ', জন-কয় কালা-বাজারের ব্যবসায়ীই করছে এই সব কাণ্ড!

প্রায় বছরখানেক যায়, চোর বা চোরের দল তবু ধরা পড়ে না। তারপর ঘটল একটা বিশেষ ঘটনা। দৈবঘটনা বলাও চলে।

।। তিন ।।

গার্টচুড ব্রাকস্মা একটি বালিকার নাম, বয়স তার চৌদ্দ বৎসর। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময়ে তার ঘুম পেল। ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে সে শুয়ে পড়ল। বাড়ীতে তখন সে ছিল একলা।

বাড়ীর বাইরে ঘরের জানালার তলায় হঠাৎ একটা সন্দেহজনক শব্দ হ'ল। বালিকা চমকে শুধালো, “কে?” আর কোন সাড়া নেই।

বালিকা ভয় পেয়ে ছুটে নিজের বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়ে সামনের এক প্রতিবেশীর বাড়ীতে গিয়ে হাজির। প্রতিবেশীর নাম হ্যারি টাকার।

বালিকা বললে, “আমাদের বাড়ীতে চোর এসেছে!

চারিদিকে চুরি হচ্ছে বলে সবাই তখন তটস্থ। টাকার বললে, “চল, তোমার সঙ্গে গিয়ে আমি দেখে আসি।

কিন্ত কেউ নেই কোথাও। এদিকে-ওদিকে তাকাতে তাকাতে টাকার দেখল, একখানা ফোর্ড গাড়ী রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। সে আগে গাড়ীখানার নম্বর টুকে নিল ১৪০-৮২১ এবং তারপর তাড়াতাড়ি নিজের মোটর বার করে ফোর্ডের অনুসরণ করল।

একটু পরেই আগের গাড়ীখানা পথের এক দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। গাড়ীর ভিতর থেকে নেমে ভালো সাজপোশাক-পরা একটি তরুণী দোকানের মধ্যে প্রবেশ করল। খানিকক্ষণ পরে সে দোকানের কাজ সেরে আবার গাড়ীর উপরে এসে উঠল। গাড়ী আবার সচল- পিছনে পিছনে টাকারের গাড়ীও!

কিন্তু একটা বড় রাস্তার মোড়ে ফোর্ড গাড়ীখানা এগিয়ে যেতেই ট্রাফিক পুলিশের লাল আলো জ্বলে উঠল। টাকারকে বন্ধ করতে হল নিজের গাড়ীর গতি। ফোর্ড গাড়ী অদৃশ্য।

টাকার কিন্তু নাছোড়বান্দা! পথ খোলা পেয়েই সে জোরে ছুটিয়ে দিল নিজের গাড়ী। খানিকক্ষণ পরেই আবার দৃশ্যমান হল আগের গাড়ীখানা। চালকের সামনে বসে আছে একজন পুরুষ এবং তার পাশেই দেখা গেল সেই তরুণীটিকে তাদের হাবভাব সন্দেহজনক।

টাকার ভাবল, আর দেরি না করে পুলিশকে খবর দেওয়া উচিত। অনুসরণ ত্যাগ করে সে তৎক্ষণাৎ নেমে পড়ে এক ডাক্তারখানায় ঢুকে ফোনের সাহায্যে যথাস্থানে সব খবর দিল।

ফোর্ডের নম্বর পেয়েই গোয়েন্দারা বেরিয়ে পড়ল বিপুল উৎসাহে। এতদিন পরে বোধহয় অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে হয়রান হবার দায় থেকে নিস্তার পাওয়া গেল!

এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায়, তারপর এক জায়গায় ছুটোছুটি করতে করতে বেজে গেল রাত দুটো। গোয়েন্দাদের উৎসাহ একটুও শ্রান্ত হয়ে পড়ল না। নিজেরাও না ঘুমিয়ে তারা লোকের পরে লোকের ঘুম ভাঙাতে লাগল। অবশেষে ১৪০-৮২১ নম্বর ফোর্ডের চালকের বা মালিকের নাম জানা গেল লিওনার্ড!

চার ॥

রাত দুটো। চারিদিকে নিবিড় অন্ধকার এবং নীরবতা। নির্জন পথ-ঘাট।

গোয়েন্দারা লিওনার্ডের ঠিকানা পেয়েছে। সেইই হচ্ছে ১৪০-৮২১ নম্বর ফোর্ডের চালক।

যথাস্থানে গিয়ে খানিকক্ষণ দরজার কড়া নাড়ানাড়ির পর একজন লোক চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুমের ঘোরেই বেরিয়ে এল।

গোয়েন্দারা প্রশ্ন করলো, “এখানে লিওনার্ড নামে কেউ আছে?”

– “না

আবার ভেঙে পড়ল গোয়েন্দাদের মন। তবু একজন জিজ্ঞাসা করলে, “আপনি লিওনার্ড নামে কারুকে চেনেন কি?”

– “না চিনি না। তবে শুনেছি আগে এই বাসায় লিওনার্ড নামে একজন লোক বাস করত।

আবার উৎসাহিত হয়ে গোয়েন্দারা প্রশ্ন করলে, “সে এখন কোথায় জানেন কি?”

– “ঠিক জানি না। তবে শুনেছি সে পার্কার কংক্রিট কোম্পানীতে কাজ করে।

গোয়েন্দাদের একজন বললে, “আজ দেখছি রাজ্যের লোকের ঘুম ভাঙাতে হবে!

নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে ডাকাডাকি করবার পর স্বয়ং পার্কারেই আবির্ভাব হ'ল।

– “আপনি লিওনার্ডকে চেনেন?”

–“হ্যাঁ

– “তার ঠিকানা জানেন?”

লিওনার্ডের ঠিকানা দিয়ে পার্কার জিজ্ঞাসা করলেন, “ব্যাপার কি?

লিওনার্ডকে নিয়ে কি কোন গণ্ডগোল হয়েছে?”

—“সেইটেই জানবার কথা। তার কি ফোর্ড গাড়ী আছে?”

–“আছে

মহা আনন্দে গোয়েন্দাদের মন নেচে উঠল। তারপর লিওনার্ডের ঠিকানায় গিয়ে হাজির হতে বিলম্ব হ'ল না।

একখানি ছোট্ট নতুন বাড়ী। তার সামনেই খোলা জমির উপর রয়েছে একখানা ফোর্ড মোটর।

গোয়েন্দাদের একজন বললেন, “ঐ দেখ সেই ফোর্ডখানা।

আর একজন বাড়ীর সদরদরজায় ধাক্কা মারতে মারতে চেঁচিয়ে ডাকতে লাগলেন, “লিওনার্ড! লিওনার্ড!

স্তব্ধ অন্ধকার বাড়ীর ভিতরে জ্বলে উঠল একটা আলো। তারপর দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালো একটি ছিপছিপে হালকা চেহারার লোক, পরনে তার রাতের পোশাক। চোখে ঘুমের আমেজ।

– “তোমার নাম কি লিওনার্ড?”

গোয়েন্দারা বাড়ীর মধ্যে ঢুকে একখানা ঘরের ভিতরে গিয়ে দাঁড়ালেন। রকম-বেরকম আসবাব ও জিনিস দিয়ে ঘরখানা অতিরিক্তরূপে সাজানো।

চেয়ারের উপর থেকে একটা দামী ফার' বা পশুলোমের জামা তুলে নিয়ে একজন গোয়েন্দা জিজ্ঞাসা করলেন, “এটা তুমি কোথায় পেলে?”

অম্লানবদনে ও সপ্রতিভভাবে লিওনার্ড বলল, “চুরি করে এনেছি।

টেবিলের উপরে ছড়ানো রয়েছে সোনার ঘড়ি ও পিন প্রভৃতি। সেইদিকে অঙ্গুলি নির্দেশ ক'রে গোয়েন্দা বললেন, “ওগুলো?”

-“ওগুলোও চোরাই মাল। তোমরা এক বছর ধরে যাকে খুঁজে বেড়াচ্ছ, আমিই হচ্ছি সেই চোর।

এমন সময়ে একটি দীর্ঘতনু তরুণী ঘরের ভিতরে এসে দাঁড়ালো।

– “আমার বউ। আমি যখন চুরি করতে বেরুই, আমার বউ তখন গাড়ী চালায়।

গোয়েন্দাদের প্রশ্নের উত্তরে লিওনার্ড দস্তুরমত গর্বের সঙ্গে জানাল, “আমার এই বাড়ীর তিনখানা ঘরের ভিতরে যত-কিছু জিনিস আছে, সব চুরি করা। এমন কি, এই বাড়ীখানার আগাগোড়াই আমি তৈরি করেছি চোরাই মালমশলা দিয়ে। সমস্ত ব্যাপারের জন্যে আমার নিজে পকেট থেকে খরচ হয়েছে সতেরো টাকা আট আনা মাত্র!টাকাটা অবশ্য আমেরিকান ডলারেই বলেছিল লিওনার্ড।

এমন স্পষ্টবাদী ও অদ্ভুত চোরকে দেখে গোয়েন্দারা যে চমৎকৃত হয়ে গেলেন, সে কথা বলাই বাহুল্য। চুরির ইতিহাসে অনেকরকম আজব চোরের কথাই পাওয়া যায়। কেউ কেউ সৌখিন চোর, সখের খাতিরে চুরি করে। কেউ বা দুর্লভ আর্টের উপকরণ সংগ্রহের জন্যে চুরি করে। আবার এমন চোরও দেখা গিয়েছে, যারা চুরির টাকা দান করে দীন-দুঃখীদের সাহায্য করবার জন্যে। কিন্তু নিজের হাতে চুরি-করা মালমশলা দিয়ে একখানা গোটা বাড়ী প্রস্তুত করে সাজাতে পেরেছে, এমন চোরের কথা কখনো শোনা যায়নি!

লিওনার্ড ধরা পড়বার পর পুলিশের অনুসন্ধানের ফলে প্রকাশ পেল আরো অনেক তথ্যই।

লিওনার্ভের বয়স একচল্লিশ বৎসর। এর মধ্যে আরো চারবার চুরি ক'রে ধরা পড়ে সে জেলখানার ভিতরেই বাস করেছ মোট বিশ বৎসর।

এবারে ধরা পড়বার আগে এক বৎসরের মধ্যে সে চুরি করে সফল হয়েছে মোট আটষট্টি জায়গায়!

ধরা পড়বার ভয়ে সে বাড়ীর ভিতরে বাইরের কোন লোককেই ঢুকতে দিত না! পাছে ইলেকট্রিক কোম্পানীর লোক মিটার দেখবার জন্যে বাড়ীর ভিতরে আসে, তাই সে লুকিয়ে অন্য বাড়ীর তারের সঙ্গে তার সংযোগ করে নিজের বাড়ীর আলো জ্বালত এবং এই গুপ্ত তারটি সে স্থাপন করেছিল মাটির তলায়!

হিসাব করে দেখা গেল, লিওনার্ড যে সব জিনিস চুরি করেছে, তার মূল্য প্রায় লক্ষ টাকা! এর উপরেও আরো কত টাকার জিনিস ইতোমধ্যেই সে কালাবাজারে বিক্রি করে ফেলেছিল, হিসাবে তা প্রকাশ পায়নি।

বাড়ীর তিনখানা ঘরের ভিতরে এত চোরাই মাল ঠেসে রাখা হয়েছিল যে, সেগুলো স্থানান্তরিত করার জন্যে দরকার হ'ল প্রকাণ্ড লরী। এ-ঘরে সে-ঘরে যেখানে-সেখানে ছড়ানো ছিল জড়োয়ার জিনিস।

পুলিশ তদন্তে এসেই যে পশুলোমের জামা, সোনার ঘড়ি ও পিন পায়, লিওনার্ড সেগুলো চুরি করেছিল ধরা পড়বার দিনেই।

লিওনার্ড বলল, “চুরি-বিদ্যা বড় বিদ্যা নয়। চোর হয়ে আমি ভুল করেছি।

শহরে বসতবাড়ীর বড় অভাব। মাথার উপরে কোন আচ্ছাদন না পেয়ে শেষটা আমরা স্থির করলুম যে, চোরাই মাল দিয়ে নিজেদের বাড়ী নিজেরাই তৈরি করব। আমি যে-সব চোরাই মাল জোগাড় করেছি, তার কোনটাই খেলো বা বাজে নয়, সব পয়লা নম্বরের।

আমি অনেক জড়োয়া গয়না চুরি করেছি বটে, কিন্তু প্রায়ই সেগুলো হাতুড়ির ঘা মেরে চুরমার করে ফেলতুম। এর কারণ চোরাই জড়োয়ার জিনিস বাজারে বেচতে গেলে বিপদের সম্ভাবনা। একবার এক দাসীকে আমি একখানা হীরা দান করেছিলুম, তার দাম হাজার ডলার।

গোয়েন্দা স্টুপসের বাড়ীতে আমি চুরি করতে ঢুকেছিলুম না জেনেই। কিন্তু যেই টের পেলুম সেটা পুলিশের বাড়ী, তখনি সরে পড়তে দেরি করিনি। ওখান থেকে চুরি-করা পশুলোমের জামা আর মেডেলগুলো আমি রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি। পুলিশের বাড়ী অপয়া, কারণ সেইদিন থেকেই আমাকে নানারকম দুর্ভাগ্যের ধাক্কা সামলাতে হয়েছে।

রাত্রে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও আমি দুঃস্বপ্নে শুনেছি পুলিশের পায়ের শব্দ। যাক, এখন আমার সমস্ত দুশ্চিন্তা দূর হ', -কখন ধরা পড়ি ব'লে আর আমাকে ভেবে মরতে হবে না!

আদালতে লিওনার্ডের বিরুদ্ধে আনা হল পাঁচটি অভিযোগ। ঐ পাঁচটি মামলার জন্যে তার উপরে মোট বিশ বৎসরের কারাবাসের হুকুম হল।

পুলিশ লিওনার্ডের চব্বিশ বছরের বউকেও আদালতে হাজির করেছিল। কিন্তু যখন এই ঘটনার বিবরণ লেখা হয়, তখনও তার বিচার শেষ হয়নি। সেই মামলার ফলাফলের উপরেই নির্ভর করছে চোরাই বাড়ীর ভবিষ্যৎ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ