১
এক মালী আর তার বৌ ঘরে ছেলেপিলে নেই, সেই দুঃখেই দু-জনে মন-মরা।
মালী ফুল-বাগানের ফুল তোলে। মালীবৌ এ-বাড়ি ও-বাড়ি ফুল জোগায়। ফুলের জোগান দিতে গিয়ে মালীবৌ পথে এর-ওর ছেলেপিলে দ্যাখে আর মনে মনে ভাবে- আমারও যদি অমন একটা ছেলে থাকত। মালীবৌ মনের কথা মালীকে বলে। মালীও মনে-মনে ভাবে- “বটেই তো... কিন্তু তাদের এ মনের কথা বোঝেই বা কে, আর তা বলেই বা কাকে!
একদিন মালীবৌ এ-বাড়ি ওবাড়ি ফুলের জোগান দিয়ে ফিরে আসছে, ফুল-বাগানের সামনে আসতেই দ্যাখে- চড়ুই-পাখীর মুখে দুধের মতো শাদা-ধবধবে একটা প্রজাপতি। চড়ুই-পাখির ঠোঁটের দু-পাশে প্রজাপতির পাখা-দুখানি থরথর করে কাঁপছে- যেন হাওয়ায় দোলা গন্ধরাজের দুটি পাপড়ি! দেখে মালীবৌ- ’আহা রে!’ বলে ছুটে গেল। চড়ুই-পাখি আচমকা তাড়া খেয়ে মুখের শিকার মাটিতে ফেলে পালিয়ে গেল। মালীবৌ প্রজাপতিটিকে। হাতের তেলোয় তুলে নিয়ে ঘরে এল।
মালীর ঘরে এসে প্রজাপতি মাথা নেড়ে জেগে উঠল। তারপরই ফুড়ুৎ করে উড়ে মালীবৌর কানের গোড়ায় গিয়ে ফিস্-ফিস্ করে বলতে লাগল- তুমি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছ। বলো, আমি তোমার কী করতে পারি ?
কানের গোড়ায় প্রজাপতি কথা কয়, আবার সে কি করতে পারে জিজ্ঞেস করে! এ কী ব্যাপার!- মালীবৌ অবাক হয়ে বলল- তুমি হলে প্রজাপতি, তুমি আবার আমার কী করবে ?
প্রজাপতি বলল- আমি প্রজাপতি নই, আমি ফুলপরী। ফুলবাগানে থাকি। দিনের বেলায় আমাদের বের হতে নেই। আজ ভোরবেলা ফুলের গন্ধ শুঁকতে বের হয়েছিলেম, তাতেই চড়ুইপাখীর মুখে পড়ে বিপদ ঘটেছিল। তুমি এসে আমার প্রাণ বাঁচালে। তোমার জন্যে কিছু করব, সে আর বেশি কি! -বলল, তুমি কী চাও।
ফুলপরীরা সত্যিই ফুল-বাগানে থাকে, আর দুধের মতোই তাদের শাদা-ধবধবে রং, তার উপর তারা যা-খুশি করতেও পারে। মালীবৌ ছোটোকাল হতেই শুনে আসছে। সেই ফুলপরী তার জন্যে কিছু করতে চায়, মনের সাধ জানাবার এমন সুযোগ আর হবে কবে! ফুলপরীর পরিচয় পেয়েই তাই সে তাড়াতাড়ি বলে উঠল- তুমি আমার কিছু করতে চাও তো করো, যেন আমি ছেলে কোলে পাই।
ফুলপরী বলল- বেশ। ফুল-বাগান থেকে একটা টাটকা ফুল তুলে আনো দেখি।
ফুলপরীর কথায় মালীবৌ ফুল-বাগানে ছুটে গেল। সেখানে চোখের সামনে আর-কোনো টাটকা ফুল না পেয়ে যুঁইফুলের গাছ থেকে তাড়াতাড়ি একটা ফুলের কুঁড়ি ছিঁড়ে নিয়ে এল।
ফুলপরী যুঁইফুলের কুঁড়িটির উপর খানিকক্ষণ মুখ বুলাতে লাগল। তারপর মালীবৌকে বলল- নাও, এবার এ ফুলটা খেয়ে ফেলো। এতেই তোমার ছেলে হবে। কিন্তু একেই যুঁইফুল, তাতে আবার তার কুঁড়ি, ছেলেটি হবে কিন্তু নেহাৎ ছোট্ট। ছোটো হোক আর বড়ো হোক, ছেলে তো। ছেলের আশায় মালীবৌর আর-কিছুই খেয়াল রইল না। সে যুঁইফুলের কুঁড়িটিকে তাড়াতাড়ি মুখে দিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলল।
দশমাস দশদিন পরে মালীবৌর সত্যিই এক ছেলে হল, আর সে ছেলে দেখতেও হল সত্যিই নেহাৎ ছোট্ট- যেন টিকটিকির ছানাটি! দু-আঙ্গুল, এ ছেলেকেই পেয়ে মালী আর মালীবৌ আহ্লাদে আটখানা!
২
মাসের পর মাস, বছরের পর বছর যায়, মালীর ঘরে মালীর ছেলে দিনে-দিনে বড়ো হয়ে উঠল। কিন্তু বড়ো হয়েও দু-আঙ্গুলের উপর দু-আঙ্গুল বেড়ে তার আর বাড়তি নেই, টাক্কুর মেরে সে চার আঙ্গুলে বাঁটুল হয়েই রইল।
চার-আঙ্গুল ছেলেটি-বিক্রমে তার বাপ-মা অস্থির। মা-বাপের সঙ্গে আড়ি করে দুর্বাঘাসের মধ্যে সে লুকিয়ে থাকে, টু করে নিজে ধরা না দিলে সেখান থেকে তাকে খুঁজে পায় কার সাধ্য! খাবার-টাবারের ভাণ্ড চোখে পড়লে চুপি-চুপি তারই মধ্যে লুকিয়ে থেকে দু-হাতে খাবার সাবাড় করে, কে তাকে তখন দ্যাখে!
একদিন মালীর ঘরে তালপিঠে হবে, মালীবৌ তালের গোলা গুলে বাটিতে রেখে বাইরে গিয়েছে, চার-আঙ্গুলে বাঁটুল ঘরে এসে সেই গোলা দেখে নেচে উঠল। বাটির ভেতর হ’তে তালের গোলা তুলে খাবে ভেবে যেই সে তার কাঁধের উপর ঝুকেছে, অমনি ডিগবাজি খেয়ে চিৎপাত হয়ে বাটির মধ্যে পড়ে গেল। তখন তার ওঠারও সাধ্যি নেই, চ্যাঁচাবারও উপায় নেই, বাটির মধ্যে পড়ে শুধু হাত-পা ছড়াতে লাগল। মালীবৌ ফিরে এসে দ্যাখে, সর্বনাশ! বাটির ভেতর হতে তাড়াতাড়ি ছেলেকে টেনে তুলে সে যাত্রা তার প্রাণরক্ষার উপায় হল।
এরপর বাঁটুলকে চোখে-চোখে রাখারও দরকার। কিন্তু কাউকে দিনরাত আগলানো কি সোজা! চার-আঙ্গুল ছেলেটিকে বেড়াল দেখলে ইদুরছানা ভেবে ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ে, চিল-শকুন দেখতে পেলে উড়ে এসে ছোঁ মারে, এ-ও তো এক মুস্কিল!
একদিন মালী ফুল-বাগানে কাজ করছে আর চার-আঙ্গুলে বাঁটুল তার কাছে বসে আছে,
হঠাৎ শোঁ-শোঁ ক'রে উড়ে এসে একটা চিল ছোঁ মেরে তাকে নিয়ে গেল।
মালী লাফিয়ে উঠে হেঁই-হেঁই করে চিলের পেছন-পেছন ছুটে গেল। কিন্তু আকাশের পাখিকে
ধরে কে ? বাঁটুলকে মুখে
করে নিয়ে চিল আকাশে উড়ে গেল।
৩
চিল চার-আঙ্গুলে বাঁটুলকে ইদুরছানা ভেবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শিকার খেতে গিয়ে দ্যাখে বিপদ! নদীর পারে বটগাছের ডালে চিলের বাসা। চিল উড়ে বাসায় গিয়ে যেমনি বসেছে, অমনি বাটুল দু-হাতের দশ-আঙ্গুলে তার গলা টিপে ধরুল। মুখের গ্রাস ছেড়ে দিয়ে চিল তখন চ্যাঁ-চ্যাঁ করে চেঁচিয়ে অস্থির। সঙ্গে-সঙ্গে চার-আঙ্গুলে বাঁটুলও টুপ করে নদীতে পড়ে গেল।
নদীর জলে তখন এক রাঘব-বোয়াল সাঁতরে যাচ্ছিল। বাঁটুল নদীর মধ্যে তার মুখের কাছে পড়ল। রাঘব-বোয়াল বাঁটুলকে কামড়ে ধ'রে গপ করে গিলে ফেলল।
রাজবাড়ির জেলে রোজ নদীতে মাছ ধরে, আর সেই মাছ রাজবাড়িতে জোগায়। এ-দিন নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে তার জালে পড়ল রাঘব-বোয়াল। জেলে সেই রাঘব-বোয়াল রাজবাড়িতে দিয়ে এল।
রাজবাড়ির রসুইঘরের বুড়ি বাঁদী রাঘব-বোয়াল কাটতে গিয়ে দ্যাখে, তার পেটের মধ্যে টিকটিকির মতো একটা জ্যান্ত মানুষ! তখনই রাজবাড়িতে হৈ-হৈ পড়ে গেল। খবর পেয়ে রাজা-রানি ছুটে এলেন। চার-আঙ্গুলে বাঁটুলকে দেখে তাঁরা অবাক! এমন মানুষও পৃথিবীতে আছে ? রাজা-রানি আদর করে বাঁটুলকে রাজপুরীতে ঠাঁই দিলেন।
এদিকে মালী আর মালীবৌ ছেলের জন্যে কেঁদে-কেটে অস্থির।
ছেলের খোঁজে তারা দেশ-বিদেশে ঘুরতে লাগল। ঘুরতে-ঘুরতে চার-আঙ্গুলে বাঁটুল যে-রাজার রাজ্যে রয়েছে সেখানে এসে উপস্থিত। আর সেখানে এসে তারা রাজার মালীর ঘরে অতিথি হল।
রাজার মালী রোজ রাজবাড়িতে যায়। চার-আঙ্গুলে বাঁটুলকে সে রোজই দ্যাখে। মালী আর মালীবৌর কাছে সকল কথা শুনে সে বাঁটুলের খোঁজ ব’লে দিল। ছেলেকে দেখার জন্য তখন মালী আর মালীবৌকে থামিয়ে রাখা দায়।
কিন্তু রাজবাড়িতে গিয়ে ছেলের সঙ্গে কথাবার্তা বলাও তো সহজ নয়। মালী রাজার মালীকে ধরে পড়ল, যা হোক একটা উপায় তাকেই করে দিতে হবে। রাজার মালী রোজ রাজবাড়িতে যায়, আর ওৎ পেতে থাকে কখন বাঁটুলকে একলা পায়। একদিন হঠাৎ তাকে একলা পেয়ে খপ, ক'রে হাতের মুঠায় ধরে বাড়িতে নিয়ে এল। সেখানে এসে বাঁটুল বাপ-মাকে দেখতে পেয়ে মহাখুশী।
অনেকদিন পরে বাপ-মায়ের সঙ্গে বাঁটুলের দেখা। কথায়-কথায় রাত্রি হয়ে গেল। তখন সকলেরই ভাবনা হল, কি করে বাঁটুল রাজবাড়িতে ফিরে যায়। সন্ধ্যার পর রাজবাড়ির দেউড়ি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর দরজা দিয়ে কাক-প্রাণীরও ঢোকার উপায় থাকে না। তার উপর যেভাবে বাঁটুলকে আনা হয়েছে, রাজা টের পেলে রাজার মালীর গর্দান থাকবে না।
রাজার মালী আর বিদেশি মালী দু-মালীতে মিলে যুক্তি করতে লাগল। যুক্তি করে তারা খানিকটে সুপারির বাকড়া জোগাড় ক'রে আনল, আর তার খানিকটে পাতলা পর্দা তুলে একটা ফানুস তৈরি করল। সেই ফানুসে বাঁটুলকে চড়িয়ে বাজবাড়ির দেয়ালের কাছে গিয়ে দুজনে গাল ফুলিয়ে ফুঁ-এর পর ফুঁ দিতে লাগল। দুজনের ফুঁ-এর হাওয়ায় ফানুস শুদ্ধ বাঁটুল হুস করে উপরে উঠে দেয়াল ডিঙিয়ে রাজবাড়ির ভেতরে গিয়ে পড়ল।
সারাদিনের পাহারা সেরে রাজার কোটাল সবে খাটিয়া পেতে দেয়ালের পাশে জিরোতে বসেছেন, ফানুসশুদ্ধ বাঁটুল পড়-তো-পড় হুড়মুড় করে কোটালের মাথার উপর গিয়ে পড়ল। কে রে ? বলে কোটাল লাফিয়ে উঠলেন। তারপরই মাথায় হাত দিয়ে বাঁটুলকে পেয়ে চটে লাল!
কোটাল তক্ষুনি সেপাই-শান্ত্রীকে ডেকে হুকুম করলেন, এত বড়ো আস্পর্দ্দা এ বেয়াদবের! কাল রাজাকে ব'লে গর্দান নেওয়াব। এখন একে নিয়ে কয়েদ করে রাখ।
কিন্তু চার-আঙ্গুল তো মানুষ, তাকে কয়েদ করা যায় কোথায় ? ভেবে-ভেবে একজন সেপাই একটা ইদুরের কল এনে তার ভেতর বাঁটুলকে পুরে রাখল।
৪
রাজকন্যার পোষা বেড়াল, রাজকন্যার সঙ্গে বসে রোজ দুধ-ভাত খায়, তারপর পাড়া-বেড়াতে যায়। আজ কয়েদখানার পাশ দিয়ে যেতে-যেতে বেড়াল দ্যাখে- একটা ইদুরের কল, আর তার মধ্যে ইদুরের মতো নড়ে কী! দেখে বেড়ালের পেটের খিদে চেগে উঠল। ইদুরের কলের উপর সে জোরে-জোরে কয়েকটা থাবা মারতেই কলের জাল ছিঁড়ে গেল, আর তার মধ্য হতে বের হয়ে এল চার-আঙ্গুলে বাঁটুল। ইদুরের বদলে মানুষ দেখে বেড়াল তখন এক-পা দু-পা করে পিছিয়ে দে-ছুট!
কিন্তু বেড়ালের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েও বাঁটুলের হ’ল মুস্কিল। কারু নজরে পড়লে রক্ষা নেই। তার উপর কোটাল শাসিয়ে রেখেছেন- ভোর হলেই রাজার বিচারে গর্দান যাবে। এখন সে যায় কোথায় ?
রাজবাড়ির পুরুতঠাকুর রাজবাড়ির ভেতরেই থাকেন। তিনি রোজ ভোরবেলা কমণ্ডলু নিয়ে গঙ্গাস্নানে যান। কমণ্ডলুতে ভরে যে-গঙ্গাজল আনেন তা দিয়ে পূজাআচ্চা ক'রে খালি কমণ্ডলুটি ঠাকুরঘরেই রেখে দেন। ভেবেচিন্তে বাঁটুল ঠাকুরঘরে গিয়ে পুরুঠাকুরের কমণ্ডলুটির মধ্যে শুয়ে রইল।
নিত্যকার মতো সেদিনও পুরুতঠাকুর কমণ্ডলু নিয়ে গঙ্গাস্নানে গেলেন। তারপর কমণ্ডলুটি ঘাটে রেখে জলে নামলেন। বাঁটুল তখন কমণ্ডলু হতে বেরিয়ে পড়ল। আর ঘাটের পাশে একটা কাঁকড়ার গর্ত দেখে তার মধ্যে লুকিয়ে রইল।
ঘাটে যখন লোকজন থাকে না তখন এক শেয়াল কাঁকড়া খেতে নদীর পারে আসে। আর সেখানে এসে কাঁকড়ার গর্তে লেজ ঢুকিয়ে বসে থাকে। কাঁকড়া দাঁড়া দিয়ে তার লেজ যেমনি আঁকড়ে ধরে, শেয়াল অম্নি একটানে লেজটাকে গর্তের বাইরে তোলে, তারপর কাঁকড়া ধরে মেরে খায়। এদিনও কাঁকড়ার লোভে শেয়াল নদীর পারে এসে কাঁকড়ার গর্তে লেজ ঢুকিয়ে দিল। বাঁটুল শেয়ালের লেজ সামনে দেখে দু-হাত দিয়ে তা টেনে ধরুল।
লেজে শিকার বেঁধেছে মনে করে শেয়াল একটানে লেজটি গর্ত হতে টেনে তুলল। কিন্তু লেজের দিকে তাকিয়ে দ্যাখে কাঁকড়া তো নয়, কি-এক জানোয়ার তার লেজ ধরে ঝুলছে! মানুষের মতো মুখ, মানুষের মতো হাত-পা, হুবহু মানুষই! হোক চার-আঙুল লম্বা, মানুষকে ভয় না করে কে ? মানুষ দেখে শেয়ালও ভয়ে-ভয়ে লেজ গুটিয়ে দৌড় দিল।
দৌড়াতে-দৌড়াতে শেয়াল বন-বাদার পেরিয়ে নলখাগড়া ঝোপের পাশে তার বাসায় গিয়ে হাজির। বাঁটুল তখনও দু-হাতে তার লেজ ধরে ঝুলছে। নলখাগড়া ঝোপের মধ্যে লম্বা-লম্বা ঠ্যাংও’লা কাবলি-মশা দেখে সে শেয়ালের লেজ ছেড়ে দিল। সঙ্গে-সঙ্গে তিড়িং করে লাফ মেরে একটা মশার পিঠে চড়ে বসল।
কাবলি-মশা দিনের বেলা ঝোপ-জঙ্গলে থাকে, রাত্রি হলে রাজবাড়িতে হাতি-ঘোড়ার রক্ত খেতে যায়। বাঁটুল যে-মশার পিঠে চড়ে বসল, সেও সঙ্গী-সাথী নিয়ে রাত্রিতে রাজবাড়িতে হাতি-ঘোড়ার রক্ত খেতে গেল। খাওয়া-দাওয়ার পর আর-আর মশারা সুড়সুড় করে উড়ে নলখাগড়া-বনে এল। কিন্তু যে-মশার পিঠে বাঁটুল, পিঠের বোঝায় একেই একেই তার দম বন্ধ, তার উপর পেট-বোঝাই করে রক্ত খেয়ে তার আর নড়াচড়ার উপায় রইল না। কষ্টেসৃষ্টে উড়তে উড়তে সে রাজবাড়ির পেছনে মালীর বাগানে এসে হাঁপিয়ে পড়ল। তখন সেই ফুল-বাগানের মধ্যে একটা ফুলগাছের আড়ালে সে হাত-পা এলিয়ে পড়ে রইল।
৫
ভোরবেলা রাজার মালী ফুল তুলতে ফুলবাগানে এসেছে। মালী এ-ফুল তোলে ও-ফুল তোলে, একটা ফুলগাছের কাছে যেতেই দ্যাখে, সেখানে চার-আঙ্গুলে বাঁটুল!
রাজার মালী তক্ষুনি ছুটে ঘরে গিয়ে বিদেশি মালীকে ডেকে আনল। সেও এসে বাঁটুলকে সেখানে দেখে অবাক! বাঁটুলের মুখে সকল কথা শুনে মালীর আর মালীবৌর সে রাজ্যে আর ছেলেকে রাখতে সাহস হল না। বাঁটুলও গর্দান যাবার ভয়ে অস্থির। রাজার মালী ফুলের চুবড়ির ভেতর চার-আঙ্গুলে বাঁটুলকে লুকিয়ে রাজ্যের সীমানা পার করে দিয়ে এল। ছেলেকে নিয়ে মালী আর মালীবৌ ঘরে ফিরে গিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।
**********
সেই হতে বাঁটুল মালীর ঘরেই আছে। এখন তার আশী বছর বয়স। কিন্তু এ-বয়সেও তাকে দেখতে যে চার-আঙ্গুল সেই চার-আঙ্গুলে বাঁটুলই!
0 মন্তব্যসমূহ