এক যে ছিল সওদাগর, তার নাম ধনেশ্বর। সওদাগরের ছিল অনেক ধনরত্ন, ঘোড়াশালে ঘোড়া আর দুয়ারে বাঁধা হাতী। এক সময় সওদাগরকে ধরল জুয়াখেলার নেশায়। বাজি ধরে একে-একে সওদাগর তার সমস্ত ধনরত্ন হারালো। সর্বস্বান্ত হয়ে শেষে এক ছেলে আর এক মেয়ের হাত ধরে পথে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটির নাম কাজল রেখা, ছেলেটির নাম রত্নেশ্বর। মেয়েটি বড়ো।
একদিন এক সন্ন্যাসী এসে সওদাগরকে একটি শুক পাখি আর একটি অপরূপ আংটি দিয়ে বলল, এ শুকটি হল ধর্মমতী শুক। এই শুক পাখির কথা মতো চললে তোমার দুঃখ ঘুচে যাবে। বলে সন্ন্যাসী চলে গেল। দুঃখের সাগরে পড়ে একদিন সওদাগর শুককে বলল, বল পাখি কিসে আমার দুঃখ ঘুচবে। আমার রত্নমন্দির গেল, হাতী গেল, ঘোড়া গেল, জল খাওয়ার ঘটিটুকুও নেই। এখন বল কেমন করে ছেলে-মেয়ে দুটোকে বাঁচাই।
ধর্মমতী শুক বলল, এবার তোমার দুঃখ শেষ হবে। তুমি বাজারে গিয়ে আংটিটা বেচে এসো। সে টাকায় নৌকা গড়ো এবং বাণিজ্য করতে যাও।
শুকের কথা মিথ্যা নয়। সওদাগর আংটি বেচে নৌকা গড়ল। বাণিজ্যে গেল, তারপর অনেক ধনরত্ন নিয়ে ঘরে ফিরল। টাকার দুঃখ ঘুচল সওদাগরের কিন্তু আর এক দুঃখ গেল না। সুন্দরী কাজল রেখার বর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। সওদাগর শুককে আবার একদিন মনের দুঃখের কথা খুলে বলল।
শুক বলল, কাজল রেখার বিয়ে হবে মরা এক রাজকুমারের সঙ্গে। এ মেয়েকে আর ঘরে না রেখে বনবাসে দিয়ে এসো। তোমার এ দুঃখ ঘুচতে এখনও অনেক দেরি। শুকের কথা শুনে সওদাগর হায়-হায় করে কাঁদতে বসল এবং তারপর সন্ন্যাসীর উপদেশ মনে করে একদিন শুকের নৌকা ভাসিয়ে কাজল রেখাকে বনবাসে দিতে চলল।
নৌকা চলল উজান বেগে। অনেক দূরে এসে পড়ল। এক মহাবন, জনমানবের চিহ্ন নেই। সওদাগর সে বনে নৌকা থামিয়ে কাজল রেখাকে নিয়ে বনের মধ্যে ঢুকল। কাজল রেখার ভয় করতে লাগল। সে ভাবতে লাগল বাবা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। বনের ভিতর দিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে তারা অনেক দূর এসে পড়ল। মাথার উপর দুপুরের রোদ তখন ঝাঁ-ঝাঁ করছে। কাজল রেখা আর চলতে পারে না। তৃষ্ণায় তার গলা শুকিয়ে গেছে। এমন সময় সামনে দেখা গেল একটি পুরানো মন্দির। তার কপাট বন্ধ। সওদাগর মেয়েকে নিয়ে সেই মন্দিরের সিঁড়ির উপর বসে পড়ল। কাজল রেখা বলল, বাবা একটু জল খাব। সওদাগর গেল জলের সন্ধানে। কাজল রেখা চারিদিকে ঘুরে-ঘুরে দেখতে লাগল। দেখতে-দেখতে কপাটে লাগল তার হাতের ছোঁয়া। অমনি কপাট খুলে গেল। কাজল রেখা মন্দিরের ভেতরটা দেখতে ঢুকল। যেই ঢোকা অমনি কপাট বন্ধ হয়ে গেল। শত টানা-টানিতেও সে দরজা আর খোলে না। ভয় পেয়ে কাজল রেখা কাঁদতে লাগল। কিছুক্ষণ পর সওদাগর এদিকে জল নিয়ে এসে মন্দিরের ভেতর কাজল রেখার কান্না শুনতে পেল। তখন দরজা ধাক্কা দিয়ে সওদাগর ডাকল কাজল কপাট খোল।
কে খুলবে সে কপাট। সওদাগর সেটাকে ভাঙবার চেষ্টা করল, পারল না। কাজল রেখা বন্দিনী হয়ে থাকল।
সওদাগর জিজ্ঞেস করল, কাজল মন্দিরের ভেতর কী আছে?
কাজল রেখা কাঁদতে-কাঁদতে বলল, এক মৃত রাজকুমার, সর্বাঙ্গ তার ছুঁচ ফুটানো। তার মাথার কাছে জলন্ত ঘি-এর বাতি। তার কথা শুনে সওদাগর চমকে উঠলো। মনে পড়ল শুক পাখির কথা। সওদাগর বলল, মাগো, কাজল রেখা, ওই মৃত রাজকুমারই তোমার স্বামী। যেমন করে পারিস তোর স্বামীকে বাঁচিয়ে তুলিস। তুই রইলি তোর কপাল নিয়ে, এই বলে সওদাগর মহা-দুঃখে ঘরে ফিরে গেল।
কাজল রেখা সেই মরা রাজকুমারের মাথার কাছে বসে কাঁদতে লাগল। কিছুক্ষণ পর মন্দিরের কপাট খুলে গেল। কাজল রেখা দেখল মন্দিরে একজন সন্ন্যাসী ঢুকছে। কাজল রেখা গিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ে মাথা ঠুকতে লাগল। সন্ন্যাসী তাকে আশীর্বাদ করে বলল, তোমার কোনো ভয় নেই মা। ওই মরা রাজকুমারকে আমিই বনের মধ্যে এনে রেখেছি। ও জন্ম থেকেই অমনিভাবে মরে আছে। আমার মন্ত্রের জোরে ও বড়ো হয়ে উঠেছে। এখন তোমার হাতের ছোঁয়ায় ও প্রাণ পাবে। কাজল রেখা অবাক হয়ে সন্ন্যাসীর দিকে চেয়ে রইল।
সন্ন্যাসী কতগুলো পাতা ছিঁড়ে কাজল রেখার হাতে দিয়ে বলল, তুমি রাজকুমারের গায়ের ছুঁচগুলো সব তুলে ফেলো, সবশেষে তুলবে চোখের ছুঁচ। তারপর চোখে এই পাতার রস ঢেলে দেবে। তা হলেই রাজকুমার বেঁচে উঠবে। কিন্তু খবরদার, নিজে যেচে তোমার পরিচয় দিতে যেও না। তাহলেই রাজকুমার আবার মরে যাবে। তোমার বাপের সেই শুক পাখিটি এসে রাজকুমারকে যত দিন না তোমার পরিচয় দেয়, ততদিন তোমার দুঃখের শেষ হবে না। এই বলে সন্ন্যাসী চলে গেল।
তারপর কাজল রেখা সন্ন্যাসীর কথামতো একভাবে বসে-বসে রাজকুমারের গায়ের ছুঁচ তুলতে লাগল। খাওয়া নেই, ঘুম নেই। এভাবে কেটে গেল সাত দিন, সাত রাত। যথন দু'চোখের দুটো ছুঁচ তুলতে বাকী তখন কাজল রেখা গেল স্নান করতে। মনে-মনে ভাবলো স্নান করে শান্ত-পবিত্র হয়ে শেষ ছুঁচ তুলে রাজকুমারের প্রাণ দেব।
মন্দিরের অল্প দূরে মস্ত এক সরোবর। কাজল রেখা স্নানে নামল। অমনি ঘাটে একজন লোক একটি মেয়েকে নিয়ে এসে হাজির হল। সে বলল, আমার মেয়েটিকে দাসী রাখবে মা? পেটের জ্বালায় ওকে বেচতে বেরিয়েছি। কাজল রেখা ভাবল, হায়, এক বাপ তাকে দিয়েছে বনবাসে, আর এক বাপ এসেছে নিজের মেয়েকে বেচতে। মেয়েটির দুঃখে কাজল রেখার চোখে জল এল। সে হাতের কাঁকন দিয়ে মেয়েটিকে কিনে নিল। কাঁকন দাসীর বাপ মেয়ে বেচে চলে গেল।
কাজল রেখা কাঁকন দাসীকে বলল, তুমি ওই মন্দিরের মধ্যে যাও। ওখানে একজন মরা রাজকুমার আছে, চোখে তার ছুঁচ ফুটানো। তাকে দেখে ভয় পেও না। তার মাথার কাছে কতকগুলো পাতা আছে। তুমি গিয়ে তার রস করে রাখো, আমি এসে সে রস তার চোখে দেব। তাহলে রাজকুমার বেঁচে উঠবেন।
কাঁকন দাসীর মন কুটিল। সে মন্দিরে গিয়ে রাজকুমারের চোখের ছুঁচ তুলে ফেলল, চোখে দিল সেই পাতার রস। অমনি রাজকুমার যেন ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠল। কাঁকন দাসীকে বলল, তুমি যেই হও, আজ তুমি আমার প্রাণ দিয়েছ, তোমার চেয়ে বড়ো আপন আমার আর কেউ নেই। আজ থেকে তুমি হলে আমার রাণী।
এমন সময় কাজল রেখা স্নান শেষ করে ফিরে এল। রাজকুমার তাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, এ-কে? কাঁকন দাসী বলল, ওকে আমার কাঁকন দিয়ে কিনেছি, ওর নাম কাঁকন দাসী।
কাজল রেখার কান্না পেল। তবু সন্ন্যাসীর কথা মনে করে সে নিজের পরিচয় দিল না। সে দিন হতে কাঁকন দাসী হল রাজরাণী। আর কাজল হল কাঁকন দাসী। তারপর রাজপুত্র একদিন ফিরে চলল নিজ রাজ্যে। কাজল তাদের সঙ্গে গেল দাসীর মতো। দেশে ফিরে রাজকুমারের নাম হল ছুঁচ রাজা।
কাজল রেখা রাজ বাড়িতে দাসীর মতো থাকে, দাসীর মতো খায়। জল তোলে, বাসন মাজে, নকল রাণীর সেবা করে। তবু রাণীর মন পায় না। এমন করে দিন কাটতে লাগল। এদিকে রাজকুমারের কেমন সন্দেহ হয়। নকল রাণীর ব্যবহার বড়ো খারাপ। দাসী-চাকরাণীর মতো তার কথাবার্তা, চালচলন। আর কাজল রেখার গুণের সীমা নেই। যেমন রূপ তেমনি তার মিষ্টি স্বভাব। ওদের দু'জনকে পরীক্ষা করার জন্য রাজকুমার একদিন নকল রাণীকে বলল, আমি দেশ ভ্রমণে যাব, তোমার জন্য কী আনব বলো। নকল রাণী দাসী-চাকরাণীর মতোই বলল, বেতের বাসন, বেতের কুলো, তেঁতুল কাঠের ঢেঁকি, পিতলের নথ আর কাঁসার মগ। রাজকুমার তো অবাক। তারপর সে কাজল রেখাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার জন্য কী আনব, বলো। কাজল বলল, আমার কিছুর দরকার নেই। আপনার ঘরে আমি খুব সুখে আছি। কিন্তু রাজকুমার খুব পীড়াপীড়ি করাতে সে বলল, তবে আমার জন্য একটি ধর্মমতী শুক পাখি কিনে আনবেন।
রাজকুমার দেশ ভ্রমণে গেল। নকল রাণীর জিনিস পাওয়া গেল সহজেই। কিন্তু কাজল রেখার ধর্মমতী শুক পাখি আর কোথাও পাওয়া যায় না। খুঁজে-খুঁজে সে গেল ধনেশ্বর সওদাগরের দেশে। ঢোল শহরৎ করে জানিয়ে দিল, যত টাকা লাগে ধর্মমতী শুক পাখি তার চাই।
ধনেশ্বর সওদাগর সে কথা শুনে চমকে উঠল। কে চায় এ ধর্মমতী শুক পাখি? নিশ্চয়ই কাজল রেখা। সওদাগর রাজকুমারকে শুক পাখি দিয়ে বিদায় দিল। রাজকুমার খুশি মনে নিজ রাজ্যে চলল।
ঘরে ফিরে রাজপুত্র মন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতে বসল। কেমন করে পাওয়া যায় রাণী আর দাসীর পরিচয়।
মন্ত্রী বলল, আপনি যখন ছিলেন না, তখন দু’জনকেই আমি রাজ্যের কাজ-কর্মের কথা জিজ্ঞেস করেছি। দেখেছি রাণীর বুদ্ধি নেই। কিন্তু দাসী খুব বুদ্ধিমতী।
রাজপুত্র ভাবতে লাগল।
মন্ত্রী বলল, আপনি আর একটা পরীক্ষা করুন। আপনার বন্ধুদের খেতে নিমন্ত্রণ করুন। দুজনকেই রাঁধতে দিন, কে কেমন রাঁধে তাতেই জানতে পারবেন দু’জনের গুণ। তাই করা হল। দুজনকেই রাঁধতে দেওয়া হল। নকল রাণী রাঁধল চালতার টক, টক ঝাল আর কচু শাক। আর দুঃখিনী কাজল রেখা রাঁধল পরমান্ন, পঞ্চাশ তরকারি, দুধ-ক্ষীরের ছড়াছড়ি।
ছুঁচ রাজা সব দেখল। তারপর আবার একটা পরীক্ষা করল। লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন কাজল রেখা ও নকল রাণীকে ডেকে বলল, আমার বন্ধুরা আসবে, যে যত সুন্দর করে পারো আলপনা আঁকো। নকল রাণী আঁকলো কাকের ট্যাং, বকের ঠ্যাং, ধানের ছড়া, হাঁড়ি-পাতিল। আর কাজল রেখা আঁকলো, সকলের আগে বাপ-মায়ের চরণ, মঙ্গল কলস, লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ, আরও কত দেব-দেবী বিদ্যাঘর, কত নদ-নদী, পর্বত। শেষে আঁকলো মন্দিরের মাঝখানে সেই মরা রাজকুমার। শুধু আঁকল না নিজেকে। আলপনা এঁকে কাজল ঘি-এর বাতি জ্বালিয়ে দিল।
সকলে নকল রাণীর আলপনা দেখা শেষে অবাক হয়ে এসে দাঁড়ালো কাজল রেখার আলপনার সামনে। সবাই বুঝতে পারল, এ কোনো ভদ্র ঘরের মেয়ে না হয়ে যায় না। সবাই কাজল রেখার প্রশংসা করতে লাগল। এতে নকল রাণী জ্বলতে লাগল আর কাজল রেখা ঘর বন্ধ করে মনের দুঃথে কাঁদতে লাগল। কান্না শুনে শুক পাখি বলল, কেঁদো না কাজল। তোমার দুঃখের দশ বছর কেটেছে, বাকী দু’বছর ধৈর্য ধরো। তোমার দুঃখের শেষ একদিন হবেই।
কিন্তু কোথায় দুঃখের শেষ, নকল রাণীর অত্যাচার আরও বেড়ে গেল। সে অনেকরকম যড়যন্ত্র করে ছুঁচ রাজার মন বিষাক্ত করে তুলল। একদিন বিরক্ত হয়ে আদেশ দিল, যাও দাসীকে বনবাসে দিয়ে এসো।
হায়, আবার বনবাস। নৌকা চলল কাজল রেখাকে নিয়ে কত দেশ, কত নদী পার হয়ে। কাজল রেখা চলল কাঁদতে-কাঁদতে।
পথের মাঝখানে ছুঁচ রাজার এক বন্ধু বলল, তোমার কান্না থামাও কনে। আমি তোমায় বিয়ে করব। আমি কাঞ্চনপুরের এক কোটিপতির ছেলে। চলো আমার সঙ্গে, তোমার কোনো ভয় নেই।
কাজল বলল, না। রাজকুমার আমাকে বনবাসে দিতে বলেছেন, বনবাসেই দাও।
এদিকে নৌকা গিয়ে পড়ল সমুদ্রে। কিন্তু এমনই কপালের দোষ, সমুদ্রেও যেন চরা পড়ে গেল। নৌকা চড়ায় বসে পড়ল। তখন দাঁড়ি-মাঝিরা বলল, এ মেয়েটা পোড়া কপালী, ডাইনী, ওকে এ চরে রেখে পালাই চল। কাজল রেখাকে সে চরে নামিয়ে রেখে তারা চলে গেল। চরে শুধু নল-খাগড়ার বন। কাজল রেখা সে নল খাগড়ার রস খেয়ে বেঁচে থাকলো।
তারপর একদিন খুব বড়ো একটা ঝড় উঠল। সে ঝড়ের ঝাপটায় কোথা থেকে ভেসে এল এক সওদাগরের নৌকা। সকালে ঝড় যখন থামল, তখন নৌকা থেকে নেমে এল রত্নেশ্বর সওদাগর, কাজল রেখার ভাই। ছোটোবেলাতেই কাজল রেখার সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি। তারপর বারো বছর অতীত হতে চলল। ধনেশ্বর সওদাগর মারা গেছে। রত্নেশ্বর এখন সওদাগর। দেখল চরের উপর এক অপরূপ সুন্দরী কন্যা। ভাই-বোন কেউ কাউকে চিনতে পারল না। রত্নেশ্বর ঘরে ফিরবার সময় দুঃখিনী কাজল রেখাকে চর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গেল। ঘরে ফিরে কাজল রেখা সব চিনতে পারল। বাপ-মা দুজনেই মারা গেছেন। তাদের কথা মনে করে কাজল রেখা মনের দুঃখে চোখের জল ফেলতে লাগল।
রত্নেশ্বর জিজ্ঞেস করল, কার কন্যা তুমি, কোথায় তোমার ঘর? তোমার পরিচয় বলো। কাজল কাঁদতে-কাঁদতে বলল, আমার সে পরিচয় আমি বলতে পারি না। ছুঁচ রাজার দেশে ধর্মমতী শুক পাখি। সেই জানে আমার পরিচয়। তাকে যদি আনতে পারো তাহলেই জানতে পারো সব।
রত্নেশ্বর লোক-লস্কর পাঠালো ছুঁচ রাজার দেশে। এদিকে ছুঁচ রাজার তখন শুধু পাগল হতে বাকি। কাজল রেখাকে বনবাসে পাঠিয়ে তার দুঃখের সীমা নেই। নকল রাণীর ব্যবহারে তার জীবন জ্বলে পুড়ে ছাই। এমন সময় শুক পাখির খোঁজে এল সওদাগর রত্নেশ্বরের লোক-লস্কর। নকল রাণী টাকার লোভে শুক পাখিটি বিক্রি করে দিল। রত্নেশ্বরের লোক ফিরে চলল, শুক পাখি নিয়ে। তাদের পেছনে পাগলের মতো ছুঁচ রাজাও চলল।
শুক পাখি কাজল রেখার দুঃখের কথা বলবে, সে কথা শোনার জন্য কত লোক ছুটে আসল। তারা জানতো, কাজল রেখা জলপরী। সাধু রত্নেশ্বর তাকে কোনো সমুদ্র থেকে ধরে এনেছে। জলপরীর পরিচয় শোনার জন্য দেশের লোক ভেঙে পড়ল। তাদের সকলের পেছনে বসে রইল ছুঁচ রাজা।
সবার সামনে সোনার খাঁচায় করে ধর্মমতী শুককে আনা হল। ধর্মমতী শুক তখন বলতে লাগল, কেমন করে কাজল রেখা ছুঁচ রাজার প্রাণ দান করেছে, কেমন করে কাঁকন দাসী তাকে ঠকিয়ে নিজে রাণী হয়ে বসেছে। ভাই-বোনের পরিচয় দিয়ে বলল, আজ থেকে কাজল রেখার দুঃখের দিন শেষ হল। এই বলে শুক পাখি উড়ে শূন্যে চলে গেল।
রত্নেশ্বর ছুটে বড়ো বোন কাজলের হাত মুঠো করে ধরলো। দু’জনে দু’জনের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল। তারপর ছুঁচ রাজার সঙ্গে কাজলের বিয়ে হয়ে গেল। দেশে ফিরে ছুঁচ রাজা নকল রাণী কাঁকন দাসীকে মাটিতে পুঁতে ফেলল।
(আজকের ভাষায়)
অলংকরণ- অমর লাহা
0 মন্তব্যসমূহ