বাবা আজ কাজ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এল। বাড়িতে ঢুকে আলতো হাসি মুখে রনির দিকে তাকাল। রনির বোধগম্য হল না। সে বাবার পিছু নিল।
বিকেল পেরিয়ে প্রায় সন্ধ্যা। চারিদিকে শঙ্খধ্বনি হতে শুরু করেছে। মাও ইতিমধ্যে একটা লাল পেড়ে শাড়ি পরে সন্ধ্যারতি সম্পূর্ণ করল। রনিকে ঠাকুর ঘরে ডেকে নিল ঠাকুর প্রণামের জন্য। প্রদীপ জ্বেলে দিয়ে তাকে আশীর্বাদ করল। আশীর্বাদ করল বাবা, পিসিমা, পাশের বাড়ির কাকিমাও।
আস্তে আস্তে বন্ধুরা আসতে শুরু করেছে। রনির ছোটোবেলার বন্ধু গোপাল বেশ কয়েকদিন যাবৎ অসুস্থ ছিল। সেও এসেছে দেখে খুব ভালো লাগছে।
সব বন্ধুদের একসঙ্গে পেয়ে রনি খুশিতে ভরপুর। সারা সন্ধেটা বেশ হৈ-হুল্লোড়, গল্প, ছাদে উঠে এক রাউন্ড ক্রিকেট খেলা হয়ে গেল। কিন্তু রাত বাড়তে থাকায় মা খাবার জন্য সকলকে ডেকে নিল।
রনি বলল, আর একটু খেলি না মা।
মা বলল, রাত হচ্ছে, ওদের তো বাড়ি ফিরতে হবে।
তখন আর রনি দেরি করেনি।
সমস্ত কাজ গুছিয়ে উঠতে রনির মায়ের শুতে যেতে একটু দেরি হল। শুতে যাওয়ার সময় রনির ঘরে উঁকি মেরে দেখে এখনও আলো জ্বলছে। মা এগিয়ে যায়, দরজার কাছে গিয়ে দেখে রনি এতক্ষণ ধরে সব গিফট খুলে-খুলে দেখছে।
মা রনির মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল রনিবাবু আজ ভীষণ খুশি। কাছে গিয়ে বলল, কী কোন গিফটটা বেশি ভালো লেগেছে?
রনি মাকে বলল, সবই বেশ ভালো হয়েছে মা। বলতে বলতে মাকে সব উপহারগুলো দেখাতে লাগল। তবে তোমাদের দেওয়া সাইকেলটা আমার বেস্ট গিফট। হঠাৎ রনির মায়ের চোখ পড়ল ঘরের মেঝেতে, যেখানে রনি উপহারের মোড়কগুলো ফেলছিল। দেখল একটি হাতে আঁকা কার্ড। মা সেটি হাতে তুলে নিয়ে দেখল, কার্ডটা তুলির মাধুর্যে এবং আন্তরিকতায় ভরপুর। যেন এক সুন্দর সকালের শুরু- পূর্ব আকাশে রক্তিম সূর্য উঠছে, আর সেই আলো পড়েছে জলে এবং গাছের পাতার উপর। পাখিরা নীল আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। কার্ডের ভেতরে লেখা রয়েছে-
জন্মদিনে দিলাম তোমায় ছোট্ট উপহার,
সেটি হল শুভেচ্ছা আর খুশির বাহার।
মা কার্ডটা রনিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, না রনি, তোমার বেস্ট গিফট এটাই। এটা ফেলে দিয়েছ কেন?
রনি মুখটা একটু কুঁচকে বলল, ওটা তো একটা হাতে আঁকা কার্ড। ওটাকে আমি রেখেই বা কি করবো!
মা রনির পাশে বসল। তোমার বন্ধু গোপাল কত আন্তরিকতা, কত ভালোবাসা দিয়ে নিজের হাতে এঁকে, নিজে ছড়া লিখে তোমাকে এটা দিয়েছে। ছবিটা এঁকেছে দেখেছ? সূর্য উঠছে, মানে, জীবনের আর একটা নতুন বছরের শুরু হল তোমার। আর সেটা হবে এরকম প্রাণোজ্জ্বল। তাহলে এটা হল না তোমার বেস্ট গিফট?
রনি মায়ের থেকে কার্ডটা নিয়ে খুব ভাল করে দেখল। তারপর মাকে বলল, সত্যিই এটা আমার বেস্ট গিফট! মা, আসলে এর মানেটা আমি বুঝিনি। এটা খুব যত্ন করে তুলে রাখব। এই বলে ছবিটা সে বুকে চেপে ধরল।
প্রকাশিত- ছেলেবেলা । বৈশাখ ১৪১৬
অলংকরণ- আলো রায়
0 মন্তব্যসমূহ