দীপু ঠামির কোল ঘেঁষে বসে লুডো খেলছিল। মেনকামাসি এসে তাড়া দিল, -ও ঠাকমা, তোমার গরম জল যে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি চান করে নাও। ঠামি বললেন, -দীপুসোনা, আমি চট্ করে স্নানটা সেরে আসি। ততক্ষণ মেনকামাসি তোমাকে তেল মাখিয়ে দেবে। কিন্তু তেল মাখতে দীপুর মহা আপত্তি। মেনকামাসিও বলল, তার রান্না নামতে একটু দেরি আছে। এই মিনিট পনেরো। তারপর এসে দীপুকে তেল মাখাবে ও। শেষটায় ঠামি বললেন, -ঠিক আছে, তুমি ততক্ষণ তোমার ছবির বইগুলো দ্যাখো। নয়তো আমার অ্যালবামটাও দেখতে পারো।
-অ্যালবামটা দেখি।
-বেশ তাই দ্যাখো। ততক্ষণে আমার চান হয়ে যাবে।
ঠামি কাপড়-জামা গুছিয়ে নিয়ে স্নানের ঘরে চলে গেলেন। দীপু নিবিষ্ট মনে অ্যালবামের পাতা ওল্টাতে লাগল। কয়েকটা ছবি দেখেই চিনে ফেলল। আরে! এ তো মা! সারা গায়ে অনেক গয়না পরা। কপালে চন্দনের আলপনা। পাশে ওটা কে ? মাথায় টোপর পরা, গায়ে চাদর জড়ানো। আসলে বাবার তখন গোঁফ ছিল, তাই একদম চেনা যাচ্ছে না। দীপু অবশ্য ঠিক বুঝে গেল। টোপর পরা বাবার ছবি দেখে খুক্ খুক্ করে কিছুক্ষণ হাসল। তারপর আবার পাতা ওলটাতে লাগল। বাঃ, কী সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে ঠামি। কাকু, কাকিমা। মার হাতে শঙ্খ, মুখে হাসি। সামনে ঠামি, হাতে বরণডালা। পরের ছবিটায় মা শঙ্খ বাজাচ্ছে। ঠামি মনে হয় কাকিমাকে সন্দেশ খাইয়ে দিচ্ছে। কাকুর মুখে মুচকি হাসি। পরের পাতায় দীপুর জন্মদিনের ছবি। কদিন আগেই তোলা হয়েছে ছবিটা। কেক কাটছে দীপু। চারদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে নিনো, আর্য, কোয়েল, রাই, অঙ্কিত। ওরা সব দীপুর বন্ধু। পরের ছবিটায় দাদু দীপুর হাতে একটা বই তুলে দিচ্ছেন। দীপু একটার পর একটা উল্টে যেতে লাগল। হঠাৎ একটা ছবি দেখে থমকে গেল ও। ফুটফুটে একটা বাচ্চা। গলায় ফুলের মালা। কপালে চন্দন। মাথায় একটা টোপর, -ঠিক মা-বাবার বিয়ের ছবিটায় বাবার মাথায় যেমন টোপর, সেইরকম। কে বাচ্চাটা ? ওরও কি বিয়ে হচ্ছে ? কিন্তু ওর বউ কোথায় ? তাছাড়া বাচ্চাটা তো মনে হয় কার যেন কোলে বসে আছে, -কাকুর মতো কে যেন। সামনে মস্ত বড়ো থালায় অনেক খাবার সাজানো। পাশে হাসি-হাসি মুখে কে যেন বসে আছে। কী সুন্দর দেখতে! মা তো নয়। তবে কি বাচ্চাটার মা ? আর একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন, চোখে চশমা, অনেকটা বাবার মতো দেখতে। দীপু তন্ময় হয়ে ছবিটা দেখতে লাগল।
স্নানঘরের দরজা খুলে ঠামি ঘরে এলেন। মাথায় তোয়ালে জড়ানো। তোয়ালে খুলে ডাকলেন একবার, -ও মেনকা, তোয়ালেটা একটু নিয়ে যাও, ধুতে হবে। তারপর নাতির দিকে তাকিয়ে বললেন, সব ছবিগুলো দেখা হয়ে গ্যাছে ?
দীপু সে কথার উত্তর না দিয়ে বলল, -ঠামি, এটা কি আমি ?
ঠামি ছবিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, না, ওটা তুমি নও। ওই মুকুট পরা খোকাটা হল টিকু।
টিকু যে বাবার ডাকনাম তা দীপুর ভালো করেই জানা আছে। সে অবাক হয়ে বলল, বাবা অতটুকু ছিল ?
-বা, থাকবে না ? সবাই অতটুকু থাকে। তারপর আস্তে-আস্তে বড়ো হয়ে যায়।
-বাবা কার কোলে বসে আছে ? আর মুকুট পরে আছে কেন ?
-ও তো বাবার মামা, আমার ভাই! তুমি যাকে মামাদাদু বলো। টিকুর মামা টিকুকে কোলে নিয়ে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে। এটা তো ওর অন্নপ্রাশনের ছবি।
-অন্নপ্রাশন ? সেটা কী ?
-মুখে-ভাত। এর আগে তো ও শুধু দুধ, সেরেলাক এই সব খেত। অন্নপ্রাশনের দিন ওর মামা ওকে প্রথম ভাত খাইয়ে দিল। আর সে জন্যই তো ওকে কপালে চন্দন দিয়ে মাথায় টোপর পরিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দীপু খুব মন দিয়ে অ্যালবামটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ছবিটা দেখল, অনেক নতুন মানুষ রয়েছে ফটোটায়। -এ কে ? দীপু মুখ তুলে ঠামির দিকে তাকাল।
-কোথায় ? কার কথা বলছিস, দেখি। ঠামি অ্যালবামটা হাতে নিলেন।
-এই যে ঝলমল শাড়ি আর অনেক গয়না পরা হাসি হাসি মুখ, একদম রানির মতো, মামাদাদুর পাশে বসে আছে, এ কি মা ?
-দূর তোর মা তখন জন্মায়নি! কেন তুই চিনতে পারছিস না ?
-না তো! একে কি আমি চিনি ?
-চিনিস তো। এই যে তোর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
-তুমি! দীপু অবাক হয়ে ঠামির দিকে তাকাল। ঠামির মাথা ভর্তি পাকা চুল, ঘাড় ছাড়িয়ে ছড়িয়ে রয়েছে। গলার চামড়া কুঁচকে গিয়েছে। চোখের পাশে অনেক আঁকিবুকি। তুমি ওরকম ছিলে!
-ছিলামই তো। সবাই ওরকম থাকে। তোর বাবাই যে কতটুকু খোকা ছিল দেখছিস না ?
-তুমি অত গয়না পরে সেজেছিলে ?
-বা, আমার খোকার মুখে-ভাত হচ্ছে, আর আমি সাজব না ? আর এ কে বল্ দেখি ? চিনতে পারছিস ?
দীপু আবার ফটোর দিকে তাকাল। ছোট্টো বাবার দিকে তাকিয়ে হাসছেন চশমা চোখে এক ভদ্রলোক, অনেকটা বাবার মতো দেখতে। নাকি কাকুর মতো ? দীপু ঘাড় নেড়ে বলল, চিনতে পারছি না তো!
-চিনতে পারছিস না ? তোকে রোজ হাত ধরে পার্কে বেড়াতে নিয়ে যায় কে ? স্কুল ছুটি হলে স্কুল বাস থেকে নেমেই বাড়ির গেটে কাকে দেখতে পাস্ ?
-দাদু! দীপুর গলায় দারুণ বিস্ময়।
দাদু বসে আছেন সামনের ঝুল-বারান্দায়। মাথায় কাঁচাপাকা চুল। গায়ে চাদর জড়ানো। রোদে পিঠ দিয়ে ইজি চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। দীপুর সবিস্ময় কণ্ঠে ‘দাদু’ শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে বললেন, কী হল দাদাই ? দীপু একমুখ হেসে বলল, তোমার ছোটোবেলার ছবি দেখছি।
-তাই নাকি ? কত ছোটোবেলার ?
-যখন তুমি বাবার মতো ছিলে। দেখবে ? অ্যালবামটা দুহাতে আঁকড়ে ধরে দীপু দাদুর কাছে নিয়ে গেল। ঠামি বললেন, দেখিস্, ফেলে দিস না। পায়ের ওপর পড়লে দারুণ লাগবে।
-দেখি, দেখি! দাদু হাত বাড়িয়ে অ্যালবামটা নিলেন। ছবিটার দিকে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর ঠামির মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, কোথায় পেলে এ ছবিটা ? এ ছবিটা তো আমি তুলিনি, কারণ ফটোর মধ্যে আমিও রয়েছি যে!
ঠামি হাসলেন, ঠিক খুঁজে পেয়েছি। সেদিন দিদির বাড়িতে গেলাম না ? ওর কাছে ছিল। ওর কাছ থেকেই নিয়ে স্টুডিও থেকে কপি করিয়ে নিলাম।
-কী কাণ্ড! একবারে নদীর স্রোতের প্রায়।
দীপু অবাক হয়ে বলল, তার মানে ? দাদু বললেন, চলিয়া যায়।
-কে চলিয়া যায় দাদু ?
-সময়। সময় চলিয়া যায়, নদীর স্রোতের প্রায়। এই তো সেদিনের কথা, আমাদের ছোট্টো টিকু মাথার টোপর, কপালে চন্দন পরে মামুর কোলে বসে ভাত খেল। আর আজ তার ছোট্টো খোকা সেই অন্নপ্রাশনের ছবি নিয়ে আমাদের দেখাচ্ছে।
দীপু চুপটি করে কী যেন ভাবছিল। ঠামি বলেন, কী এত ভাবছ, দীপু সোনা ? চলো চটপট তেল মাখিয়ে চান করিয়ে দিই। তোমার মা আজ তাড়াতাড়ি ফিরবে বলে গিয়েছে। এসে দেখবে দীপুবাবু চানটান করে একদম রেডি। ঠামি তেলের শিশি নিয়ে এসে দীপুর জামার বোতাম খুলতে লাগলেন।
-আচ্ছা ঠামি, দীপু মুখ তুলে জিজ্ঞেস করল, আমার মুখে-ভাত হয়েছিল ?
-তোমার ? নিশ্চয়ই হয়েছিল। তবে তুমি তো তখন বিলেতে ছিলে, তাই আমরা তোমার কাছে ছিলাম না।
-বিলেতে ? কেন ?
-তোমার বাবা তো তখন বিলেতেই একটা হাসপাতালের ডাক্তার ছিল। মাকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। তুমি ওখানেই জন্মেছিলে। আমরা বলেছিলাম মুখে-ভাতের সময় কলকাতায় চলে আসতে। কিন্তু তোমার বাবা মোটে ছুটিই পেল না।
-তা তোমরা চলে গেলেই পারতে।
-আমরা! ঠামি হাসলেন। ওরে বাবা, বিলেতে যাওয়া কি সোজা কথা ? পাশপোর্ট, ভিসা, সেজন্য লাইন দিয়ে ফর্ম আনা। এত সব কি আর এই বুড়ো বয়সে পেরে উঠি ? তাই আর সেখানে যাওয়াই হল না।
দীপু একটু অভিমানের সুরে বলল, তাহলে নিশ্চয়ই আমার অন্নপ্রাশন হয়নি। কই তোমার অ্যালবামে তো আমার মুখে-ভাতের ছবি নেই।
-আসলে তোমার ছবি নিশ্চয়ই বাবার ক্যামকর্ডারে আছে। মাকে জিজ্ঞেস কোরো।
আজকে সত্যি, আগে-আগে চলে এলেন মা। কলেজের পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। তাই ছেলেমেয়েরা কিছুদিন আসবে না। দীপু তখন খাবার টেবিলে ঠামির পাশে খেতে বসেছে। ঠামি এক চামচ করে দীপুকে খাইয়ে দিচ্ছেন, আর নিজেও এক গ্রাস করে খাচ্ছেন। দাদুও বসেছেন আর একপাশে আলাদা।
-বাঃ, খেতে বসে গিয়েছ ? লক্ষ্মী ছেলে! মা খুব খুশি, বললেন, তা নিজে-নিজে খাচ্ছো না কেন ? দীপু গম্ভীর হয়ে বলল, আমার তো মুখে-ভাত হচ্ছে। তাই ঠামি আমার মুখে ভাত দিয়ে দিচ্ছে।
-মুখে-ভাত ? মা একটু অবাক হয়ে বললেন, সে তো রোজই হয়। ঠামির হয়, দাদুর হয়, বাবার হয়, আমার হয়, তোমারও হয়। ভাত-ডাল, মাছ, তরকারি সবকিছু মুখে দিয়ে মুখে-ভাত হয়।
-কিন্তু মাথায় মুকুট পরে, কপালে চন্দন লাগিয়ে কি মুখে-ভাত হয়েছে আমার ?
-মুখে ভাত নিয়ে কথা বলতে হয় না। বিষম লাগবে। ঠামি বললেন, তোমাকে তো টোপর কিনে দেব বললাম।
মা বললেন, তোমার তো মুখে-ভাত হয়েছিল ছোট্টবেলায়।
-তবে আমার ফটো নেই কেন, অ্যালবামে ?
-আচ্ছা বিকেলবেলা বাবা অফিস থেকে ফিরলে আমরা সবাই মিলে তোমার মুখে-ভাতের ছবি দেখব টিভিতে কেমন ?
বিকেল হতেই দীপুর আর তর সয় না। খাওয়া-দাওয়ার পর মা একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঠামি-দাদুরও চোখ ঢুলে এসেছে। দীপুর আর ঘুম আসে না। কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে বিছানা থেকে টুক করে নেমে পড়ল। উঃ বড়োরা এত ঘুমোতেও পারে। খানিকক্ষণ এঘর-ওঘর করে শেষটায় মার পাশ ঘেঁষেই শুয়ে পড়ল। কিন্তু তবু ঘুম এল না।
ভাগ্যিস একটু পরেই টুং করে দরজাঘন্টি বাজল। বাবা এসে গ্যাছে, বলেই দীপু লাফিয়ে নামল খাট থেকে। মাও চোখ খুললেন সঙ্গে-সঙ্গে। কোথায় যাচ্ছ দীপু ?
-বাবা এসে গ্যাছে। দরজা খুলতে হবে না ?
-বাবা এত তাড়াতাড়ি আসে নাকি ? তাছাড়া দরজা তুমি খুলতে পারবেও না। আমি খুলে দিচ্ছি।
সত্যি তো, দরজার ওপরের ছিটকিনিটাও লাগানো আছে। ওটা দীপু খুলতে পারত না। মা দরজা খুলতেই মেনকামাসি ঢুকে এল। বিকেলবেলা মেনকামাসির কিছু কাজ থাকে। দীপুকে দেখে বলল, একী, দীপুদাদা, এত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়েছ ? মা বললেন, ঘুমোয়ইনি মোটে।
-সেকী ? কেন ?
-ওর মুখে-ভাতের ছবি না দেখালে ও ঘুমোবে না।
-তা দেখালে না কেন ?
-সে তো ক্যামকর্ডার টিভির সঙ্গে ফিট করে দেখাতে হবে। সে ওর বাবা না হলে হবে না। আসুক অফিস থেকে।
মেনকা একগাল হেসে বলল, ও বাবা, টিভিতে দেখা যাবে ? আমিও দেখব কিন্তু।
-হ্যাঁ, হ্যাঁ আমরা সবাই মিলে দেখব।
যা হোক বাবা এসে গেলেন ঠিক সময়েই। টিভির সামনে সবাই বসল গোল হয়ে। মেনকাদিদি আর মা দুজনে মিলে চা আর জলখাবার এনে রাখল সবার সামনে। দাদু বললেন, মনে হচ্ছে দাদাইয়ের মুখে-ভাত আজকেই হচ্ছে।
এরপর বাবা উঠে টিভিতে ক্যামকর্ডারের প্লাগ লাগিয়ে, সুইচ টিপে সব ঠিকঠাক করে দিলেন। প্রথমেই দেখা গেল মার কোলে সান্টাক্লসের মতো টুপি পরা দীপুকে। পাশে হাসিমুখে বাবা দাঁড়িয়ে। মায়ের পরণে শাড়ি, কিন্তু তার ওপর উলের কার্ডিগান। বাবা পরে আছেন কোট-প্যান্ট। ছোট্ট দীপুর গায়েও উলের পোশাক, তবে তার ওপর একটা বেনারসীর চাদর। মা একটু হেসে বললেন, এটা আমার বিয়ের ওড়নাটা। ওখানে তো তখন প্রচণ্ড শীত। কাজেই তোমাদের পাঠানো ওই ছোট্ট ধুতি-পাঞ্জাবি পরানো যায়নি। তাই এই ওড়না জড়িয়ে দিয়েছিলাম। আর টোপরও পাওয়া যায়নি। কাজেই সান্টা-ক্লসের মতো টুপি।
এবারে সোনালি চুলওলা একজন সাহেব এসে টেবিলে সাজানো কাচের বাটি থেকে চামচে করে কী যেন খাইয়ে দিল দীপুকে। মেনকাদিদি বলল, কী খাওয়াল ?
-পায়েস। দীপু বলল, আমাকে পায়েস খাওয়াল, ও কে মা ? মা বললেন, বাবার বন্ধু, আঙ্কেল ডেভিড। তোমার তো আর মামা নেই। ডেভিডকেই বলা হয়েছিল, তুমি ওর মামা হয়ে পায়েস খাইয়ে দাও। সামনে অনেক কিছু খাবার সাজানো। সেগুলো বেশির ভাগই মনে হল নানানধরণের কেক। একটা ডিশ দেখিয়ে মা বললেন, এটা পোলাও। এটারই দুটো দানা তোমার মুখে প্রথমে দেওয়া হয়েছিল।
-কেন ? দীপু বলল, মাত্র দুটো দানা কেন ? মা হেসে বললেন, ওই দুটো দানাই তো তুমি মুখ থেকে বার করে ফেলে দিচ্ছিলে।
বেশ কজন সাহেব-মেম হাসিমুখে নানান কথা বলে যাচ্ছেন। সবার হাতেই ক্যামেরা। শাড়ি পরা কয়েকজন মহিলাও আছেন। মা সবাইকে চিনিয়ে দিচ্ছেন, শুভশ্রী, পারমিতা, মনীষা। দীপু অবশ্য কাউকেই চেনে না। কাকুরা কেউ ধুতি-পাঞ্জাবী পরেনি। দীপু বলল, শঙ্খ নেই তো ? বাবা বললেন, শঙ্খ ওখানে কোথায় পাব ? ঠামি বললেন, কেমন লাগছে তোর মুখে-ভাতের ছবি ? ভালো না ?
-মুখে ভাত ? দীপু গম্ভীর মুখে বলল, এটা তো একটা বার্থডে পার্টির ছবি। এরকম ছবি তো কত আছে আমার।
-কেন তোর পছন্দ হয়নি ?
-না, একদম না। বাবার মুখে-ভাতের ছবি অনেক ভালো।
অলংকরণ- অমর লাহা
প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা ।। এপ্রিল-২০১৩
0 মন্তব্যসমূহ