Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

কথামালার গল্প ।। বৃদ্ধা ও কবিরাজ


 

এক বৃদ্ধার চোখের তেজ খুবই কমে গিয়েছিল, ফলে সে কিছুই দেখতে পেত না।  তার বাড়ির কাছেই থাকতেন এক কবিরাজ। বৃদ্ধা তার কাছে গিয়ে বলল, কবিরাজ মশাই, আমার চোখের দোষ হয়েছে, বলতে গেলে আমি কিছুই দেখতে পাই না। আপনি আমার চোখ ভালো করে দিন। আপনি যদি আমার চোখ ভালো করে দিতে পারেন তবে আমি আপনাকে অনেক পুরস্কার দেব, কিন্তু চোখ যদি ভালো না হয় তাহলে আপনি কিছুই পাবেন না।

কবিরাজ বৃদ্ধার কথায় রাজী হয়ে পরদিন সকালেই তার বাড়ি গেলেন। বৃদ্ধার বাড়ির চতুর্দিকে বহু দামী দামী জিনিসপত্তর ছিল। ওই সব জিনিস দেখে কবিরাজের খুব লোভ হল। তিনি ঠিক করলেন রোজ বৃদ্ধাকে দেখতে আসবেন এবং একটি করে জিনিস চুরি করে নিয়ে যাবেন। সুতরাং বৃদ্ধার চোখ যাতে তাড়াতাড়ি ভালো না হয়ে যায় সেইজন্যে তিনি আজেবাজে ওষুধ দিতে থাকলেন আর রোজ একটা করে জিনিস নিয়ে যেতে থাকলেন।

এইভাবে একে একে সমস্ত জিনিস নিয়ে যাওয়ার পর ভালো ওষুধ দেওয়াতে বৃদ্ধার চোখ ভালো হয়ে গেল। চোখ ভালো হয়ে যেতে বৃদ্ধা দেখতে পেল যে তার বাড়িতে যে সমস্ত দামী দামী জিনিস ছিল তার একটিও নেই। খবর নিয়ে সে জানতে পারল যে ওই কবিরাজই ওগুলো নিয়ে গেছেন।

এরপর একদিন কবিরাজ বৃদ্ধাকে বললেন, আমার চিকিৎসায় আপনার চোখ ভালো হয়ে গিয়েছে। আপনি বলেছিলেন চোখ ভালো হয়ে গেলে পুরস্কার দেবেন- তাহলে এবার সেই পুরস্কার দিন।

কবিরাজের ব্যবহারে বৃদ্ধা খুবই রেগে গিয়েছিল তাই সে কোনো উত্তরই দিল না। এইভাবে কয়েকবার তাগাদা করেও কবিরাজ বৃদ্ধার কাছ থেকে কিছুই আদায় করতে না পেরে আদালতে তার নামে নালিশ করলেন।

আদালতে বৃদ্ধার ডাক পড়ল। বৃদ্ধা আদালতে বিচারকের সামনে হাজির হয়ে কবিরাজকে সরাসরি চোর না বলে বলল, ধর্মাবতার, কবিরাজ মশাই আমার নামে যে অভিযোগ করেছেন তা সত্যি বটে। কিন্তু কবিরাজ মশাইয়ের সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছিল যে আমার চোখ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেলে আমি ওঁকে পুরস্কার দেব। উনি বলছেন আমার চোখ ভালো হয়ে গিয়েছে- কিন্তু আমি এখন যা দেখতে পাচ্ছি তাতে মনে হয় আমার চোখ সম্পূর্ণ ভালো হয়নি। কারণ চোখ খারাপ হওয়ার আগে আমি আমার ঘরে যে সমস্ত জিনিস দেখতে পেতাম- এখন সে সব দেখতে পাচ্ছি না। এবার হুজুর আপনিই বিচার করুন ওঁর চিকিৎসায় আমার চোখ ভালো হয়েছে কিনা।

বিচারক বৃদ্ধার কথার আসল মানে বুঝতে পেরে বৃদ্ধাকে হেসে বিদায় দিলেন আর কবিরাজকে যথেষ্ট বকুনি দিয়ে বিচারালয় থেকে চলে যেতে বললেন।


অলংকরণ- আলো রায়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ