একদিন এক গরিব কাঠুরে নদীর ধারে একটি গাছ কাটছিল। হঠাৎ তার হাত থেকে কুড়ুলটা নদীর জলে পড়ে গেল। হায় হায় করে উঠল কাঠুরে। জন্মের মতো হারালাম কুড়ুলটা! এখন আমি কাঠ কাটব কী করে! আর কাঠ না কাটলে আমি খাব কি! এই বলে সে কাঁদতে শুরু করল।
তার কান্না শুনে নদীর দেবতার মনে দয়া হল। তিনি কাঠুরের সামনে হাজির হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কীসের জন্য এতো কাঁদছ ?
কাঠুরে তখন তার সমস্ত দুঃখের কথা দেবতাকে জানাল।
কাঠুরের কথা শুনে দেবতা নদীর জলে ডুব দিয়ে একটা সোনার কুড়ুল তুলে এনে বললেন, এইটা কি তোমার ? কাঠুরে বলল, না প্রভু, এটা আমার নয়।
দেবতা এবার জলে ডুব দিয়ে একটা রুপোর কুড়ুল তুলে এনে বললেন, তাহলে এটা কি তোমার ?
কাঠুরে বলল, না প্রভু, এটাও না।
আবার দেবতা জলে ডুব দিলেন এবং এবার তুলে আনলেন কাঠুরের কুড়ুলটা। জানতে চাইলেন, তবে কি এইটা তোমার ?
নিজের কুড়ুল দেখতে পেয়ে কাঠুরে আনন্দে বলে উঠল, হ্যাঁ হ্যাঁ ওটাই আমার কুড়ুল। প্রভু আমি খুবই গরীব, আমি যে কুড়ুলটা ফিরে পাব সে আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। আপনার দয়াতেই ফিরে পেলাম। আপনি আমাকে জন্মের মতো কিনে নিলেন।
জলদেবতা কাঠুরের কুড়ুলটা ফেরত দিয়ে বললেন, তুমি নির্লোভ, সত্যবাদী আর ধার্মিক। আমি তোমার উত্তর শুনে খুবই খুশি হয়েছি। এই নাও তার পুরস্কার। এই বলে, তিনি সোনার, রুপোর আর কাঠুরের কুড়ুলটাও তাকে দিয়ে দিলেন।
কাঠুরে বাড়ি ফিরে এই অলৌকিক ঘটনার কথা সকলকে জানাল। সকলেই তার কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল।
সেই পাড়াতেই থাকত এক লোভী কাঠুরে। সে ওই ঘটনার কথা শুনে পরদিনই কুড়ুল নিয়ে সেই নদীর তীরে হাজির হল। তারপর গাছে কয়েকটা কোপ দিয়ে হঠাৎ যেন হাত ফসকে পড়ে গেছে এমন ভান করে কুড়ুলটা জলে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল।
আগের দিনের মতোই জলদেবতা জল থেকে উঠে এসে তার কান্নার কারণ জানতে চাইলেন।
সে তখন মনগড়া দুঃখের কাহিনি বলে কুড়ুলের জন্য শোক প্রকাশ করল।
জলদেবতা আগের দিনের মতোই জল থেকে সোনার কুড়ুল তুলে এনে বললেন, এটা কি তোমার কুড়ুল ?
লোভী কাঠুরে সঙ্গে সঙ্গে, হ্যাঁ হ্যাঁ ওটাই আমার বলে কুড়ুলটা ধরতে গেল।
জলদেবতা লোভী কাঠুরের উত্তর শুনে রেগে গেলেন। বললেন, তুই লোভী, তুই মিথ্যাবাদী, তুই এই কুড়ুল পাবার উপযুক্ত নোস। এই বলে সোনার কুড়ুলটা জলে ফেলে দিয়ে অদৃশ্য হলেন।
লোভী কাঠুরে গালে হাত দিয়ে বসে পড়ল নদীর ধারে। হায় হায় লোভ করতে গিয়ে আমি আমার নিজের কুড়ুলটাও হারালাম বলে কাঁদতে থাকল।
অলংকরণ- আলো রায়
0 মন্তব্যসমূহ