Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

প্রতিমা ।। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস

 

 



কণার বায়নায় এবছর বাবাকে রাজি হতেই হল, মূর্তি এনে নিজেদের বাড়িতে সরস্বতী পুজো করার জন্য। অন্যদিনের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি বই কাগজের দোকানে-দোকানে মালপত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজ শেষ করে মেয়েকে নিয়ে বাজারে গেলেন তারকবাবু।

সপ্তম শ্রেণীর মেয়ে বোঝে না পুজোর হ্যাপা বইবার ক্ষমতা তার বাপের নেই। তবু মনে মনে ভাবেন সরকারি বদান্যতায় বছর-বছর বই, স্কুলের ইউনিফর্ম, ব্যাগ যখন কিনতে হচ্ছেই না, তখন এটুকু চেষ্টা করা যাক।

বাজারও তখন গোটাতে শুরু করেছে। কিন্তু শেষ হয়েও শেষ হয় না কিছু মানুষের জন্য। যাদের কমা দরেও মাল বিক্রি না করলে উপায় নেই। আর যাদের কমা দরে না কিনলেও উপায় নেই। তারকবাবু মেয়ের হাত ধরে চললেন যেদিকে ঠাকুর নিয়ে কুমোরপাড়ার ছেলেরা বসে।

বড়ো-বড়ো ক্লাবের প্রতিমা আগে-ভাগে বায়না করে রেখে পুজোর আগের দিন বাড়ি থেকে ধুমধাম করে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে খোঁজ-খবর করে ছোটোখাটো ক্লাব আর গৃহস্থ বাড়ির লোকেরা। বড়ো-ছোটো সুন্দর প্রতিমাদের নিয়ে গেছে সবাই। একটু খুঁতওয়ালা প্রতিমা দু'চারটে দাঁড়িয়ে আছে কম পুঁজির ব্যবসায়ী বিপিনের কাছে।

কণা খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখে, তারকবাবুর বুক ঢিপ-ঢিপ করে। মেয়ে না রাগে ফেটে পড়ে এবার। অনেক বছরের শখ ওর যে প্রতিমা পুজো করবে।

বিপিনও বিরক্ত হচ্ছে, নেবে না তো নেবে না। এত খুঁত খুঁজে-খুঁজে দেখা কেন!

হঠাৎ কণা একটা ছোটোখাটো প্রতিমা কোলে তুলে নেয়। তারকবাবু দেখেন প্রতিমার চোখদানের সময় শিল্পীর মন ছিল না মোটেই। অথবা শিল্পী যখন বিশ্রাম নিচ্ছিল বাড়ির ছোটোরা কেউ হাত পাকানোর কাজ করেছে প্রতিমার চোখে। তবুও কণা ওই মূর্তি বুকে আঁকড়ে নেমে যাচ্ছে আটচালা থেকে।

বিপিনের সঙ্গে দামদস্তুর করতে-করতেও তারকবাবুর বুক টনটন করে ওঠে। কণাকে যে ওর ঠাকুমা উঠতে-বসতে ট্যারা বলে মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে ওর মা প্রায়ই বলে, ট্যারা মেয়েকে পার করব কি করে।

Topic : অনুভবের গল্প, একটি মেয়ের গল্প, সরস্বতী পুজোর গল্প, Story of feeling,  Story of a girl, Story of Saraswati Pujo

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ