Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

কাক বৃত্তান্ত ।। সৌমেন দাস

 


 

 

 

আমাদের বাড়ির সামনে একটা মস্ত শিমূল গাছের মগডালে বসে একটা কাক সমানে হাঁক পাড়ছিল। রং তার যেমন কালো, ডাকও তেমনই বিদঘুটে। কান-মাথা ধরার উপক্রম হল আমার। ডাক তো নয়, যেন এক-একটা এটম বোমা। ফাটিয়েই চলেছে এক নাগাড়ে। বাড়ির রেলিংয়ে বসে আমিও ওই হতচ্ছাড়া কাকটাকে তাড়ানোর ফন্দি আটছিলুম।

এমন সময় ঘন-ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে চমকে পাশে তাকিয়ে দেখি গবাদা। কখন যে এসেছে বুঝতে পারিনি। দেখি আমার মতোই তার দৃষ্টিও ওই কুৎসিত কাকটার দিকে।

আমি বলে উঠলুম, "একী গবাদা, তুমি কখন এলে?"

আমার দিকে না তাকিয়েই গবাদা উত্তর করলে, "অনেকক্ষণ! "বলেই দাঁত খিঁচিয়ে বলে উঠলে, "ইডিয়ট, রাস্কেল, উল্লুক!"

থতমত খেয়ে আমি বললুম, "ওকী, খামোকা আবার গালাগালি করো কেন?"

গবাদা আগের মতোই না ফিরেই জবাব দিলে, "আরে তোকে না! এই পাজি কাকটাকে!"

অবাক হয়ে আমি বললুম, "কেন, কাকটা তোমার কি ক্ষতি করলে আবার?"

চোখমুখ লাল করে গবাদা বললে, "কি ক্ষতি করেছে! গেল হপ্তার বুধবারে আমার ঘেঁচু মামার ছেলের অন্নপ্রাশন হল। তোকে বলেছি বোধহয়। তা ওই কাকটার জন্য সেদিনের পুরো খাওয়াটাই আমার বানচাল হয়ে গেল। ব্যাটাচ্ছেলেকে একবার হাতের সামনে পাই, মগজে একেবারে ডুগডুগি বাজিয়ে ছেড়ে দেব।"

বুঝলুম, গবাদা বেজায় চোটে গেছে। তাকে শান্ত করতে বিনীত গলায় আমি বললুম, "তুমি কিন্তু মিছিমিছি রাগ করছো গবাদা। আচ্ছা, সেই কাকটা যে এই কাকটাই সেটা তুমি বুঝলে কি করে শুনি?"

একটুও না দমে গবাদা উত্তর করলে, "আলবাত, এই কাকটাই! দেখছিস নে! সেই একই রং, একই নাক আর তেমনই হাড় জ্বালানো বিশ্রীরকমের তাকানি! বুঝলি ফটকে! একবার দেখাতেই ব্যাটাকে ঠিক চিনিছি!"

গবাদাকে শান্ত করবার আর অন্য কোনো উপায় না দেখে বলে উঠলুম, "আচ্ছা এবার বলো তো সেদিন আসলে এমন কি ঘটনা ঘটেছিল, যার জন্য তুমি এত রেগে আছো?"

"শুনবি-" এই বলেই গবাদা বলতে আরম্ভ করলে।

"সেদিন সকাল থেকেই মস্ত আয়োজন ঘেঁচু মামার বাড়িতে। একি আর যে সে নেমন্তন্ন বাড়ি রে! ঘেঁচু মামার ছেলের অন্নপ্রাশন বলে কথা। বিস্তর আয়োজন। লুচি, পোলাও, কোরমা, মাছ, মাংস, মিষ্টি, দই। লোককুটুম্বও জমেছিল ঢেড়। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধুই যেন মশার ঝাঁকের মতো লোক থৈ-থৈ করছে। ভাঁড়ারের দায়িত্ব ছিল আমার উপর। কাজেই বুঝতেই পারছিস, একটা মাছি গলবারও সাধ্যি নেই। একে-একে সমস্ত আইটেমই যখন প্রায় ভাঁড়ারের ঘরে শেষ পর্যন্ত এসে পড়েছে, তখন ঘেঁচু মামা এসে বলে গেলেন, "কি রে গবা, পাহারা দিতে কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো? দেখিস খুব সাবধান! ভারী মান-সম্মানের ব্যাপার কিন্তু! গোল বাঁধিয়ে ফেলিস নে যেন!"

বীরের মতো বুক ফুলিয়ে আমি বললুম, "তুমি কোনো চিন্তা কোরো না মামা! আমি যখন আছি তখন গোলমালের কোনো প্রশ্নই নেই!"

হেসে মামা বললেন, "বা:! বা:! বেশ! বেশ!"

কিন্তু সত্যি বলছি ফটকে, কাণ্ডটা যে এমন আচমকা ঘটে যাবে বুঝতেই পারিনি মাইরি। আমি যেই একটু পিছন ফিরেছি কি, অমনি হঠাৎই একটা দস্যি কাক জানলা গলে এসে সটাং বসে পড়লে একেবারে মাংসের গামলার উপর। ব্যাটা যে ওরকম তক্কে-তক্কে ছিল, তা বুঝবো কি করে বল!"

আমি আর কি করি, হাতের সামনে বিশেষ কিছু না পেয়ে গোবরগোলা বালতিটা ছুঁড়ে দিলুম কাকটার দিকে। আর সঙ্গে-সঙ্গে কাকটা গেল উড়ে। তারপর সে এক দক্ষ যজ্ঞ অবস্থা! ফলস্বরূপ, গোবরের জল ছিটকে সমস্ত খাবার গেল নষ্ট হয়ে। লোক-কুটুম্ব, চাকর-বাকর, এমনকি ঘেঁচু মামার পোষা প্রিয় মেনি বিড়ালটা পর্যন্ত কাণ্ড দেখতে ছুটে এল। ঘেঁচু মামা অবিশ্যি এলেন সবার শেষে। কি একটা কাজে ব্যস্ত ছিলেন বোধহয়!

ব্যাপার-স্যাপার দেখেই মামা তো একেবারে রেগে মেগে অস্থির। আমার কোনো কথাই শুনলেন না! সোজা একদিন উপোস থাকার শাস্তি দিয়ে বসলেন।

আর পণ্ড হয়ে যাওয়া দুপুরের ভোজের আয়োজনটা হল সেদিন রাতে।

তোকে কি বলব ফটকে! সারারাত পেটে কিল মেরে শুয়ে রইলুম বিছানায়। আর ওদিকে তখন জোর খাওয়া-দাওয়া চলছে। একজন কে যেন বেশ রসিয়ে-রসিয়ে ঘেঁচু মামাকে বলছে শুনলুম, "উঃ!আয়োজনটা বড়ো জব্বর করেছেন কিন্তু ঘেঁচুবাবু। যেমন দুর্দান্ত আইটেমগুলো, আর তেমনই রান্নার স্বাদ, আহা!মুখে যেন এখনো লেগে আছে।"

খিদের চোটে আমার তখন এদিকে প্রাণ যাওয়ার জোগাড় হল। মনে হল একসঙ্গে শয়ে-শয়ে নেংটি ইঁদুর পেটের ভিতর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। একবার এপাশ করছি, আর একবার ওপাশ!

ঠিক তখনই হঠাৎ জানলার দিকে চোখ পড়তেই দেখলুম, সেই বিটকেল কাকটা জানলার কার্নিশে বসে মুচকি-মুচকি হাসছে। আর জিভ বের করে ঠোঁট চাটছে। রেগেমেগে যেই আমি তেড়ে গেছি, কাকটা অমনি দু'বার ভেংচি কেটে পালিয়ে গেল ধাঁই করে। তারপর থেকেই কাক দেখলেই আমার মাথায় আগুন চড়ে যায়।"

গবাদার কথা শেষ হতে না হতেই অপ্রত্যাশিতভাবে একটা বিশ্রীরকমের কাণ্ড ঘটল। হঠাৎ গাছের উপর থেকে কাকটা মল ত্যাগ করবে তো করবে একেবারে সোজা গবাদার মাথার উপর।

ব্যাস!আর গবাদাকে সামলাই কে? কাকটাকে সে এই মারে সেই মারে! বললে বিশ্বাস হবে না, আমি স্পষ্ট দেখলুম ,বজ্জাত কাকটা আমাদের দিকে তাকিয়ে আরেকবার ভেংচি কেটে ফিক করে হাসলো যেন!

 

Topic : মজার গল্প, Funny Story, হাসির গল্প, Laughter story, The story of the crow, কাকের গল্প, নতুন বাংলা গল্প, Bengali Story, :ছোটোগল্প,

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ