Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

রূপকথা নয় ।। কার্তিক ঘোষ

 








এটা ঠিক কোনো রূপকথা নয় ভাই...
ছোটোবেলা মানে যেমনটি ছিল তাই।
মাটির একটা ঘর,
সে-ই সামলাতো বৃষ্টি-বন্যা-ঝড়।
আমার মতোই মা ছিল দারুণ ভীতু,
বাবাও ছিল না থিতু!

বড়োবাজারের দোকানে দোকানে কাজ-
মনে পড়লে তো চোখে জল আসে আজ!
পুজোতে কখনও ছোটো হতো জামা, প্যান্ট হতো ঢলপলে...
খালি পায়ে কাদা-জলে
হেঁটেই যেতুম ইসকুলে রোজ রোজ।
মা-ও রাখত না খোঁজ!

বাড়ির পাশেই কানা নদীটাও ছিল খুব ডাকাবুকো,
এখন কেমন রোগাটে চেহারা, হাড় জিরেজিরে সুকো!
তবুও আমার বন্ধু বলতে ছিল না তেমন কেউ-
উঠোনেই ছিল কাঁঠাল গাছটা, ডাকত নদীর ঢেউ।
সেই নদীতেই ইলিশ উঠত- ট্যাংরা, বোয়াল মাছ...
ধান জমিতেও রঙিন খলসে দেখাত কেমন নাচ!

পড়ার তেমন চাপ তো ছিল না, অংকে ছিলুম কাঁচা-
বাবা বলতেন, বাছা...
পয়সা কোথায় মাস্টার রাখি, মন দিয়ে যদি পড়ো
তাহলেই হবে বড়ো!

তখন কোথায় এতসব গাড়ি, বাঁধানো রাস্তাঘাট...
মাইলের পর মাইল হাঁটলে তবে তো একটা হাট!
ট্রেন বলতে তো চাঁপাডাঙা থেকে কু ঝিক ঝিক গাড়ি,
মায়ের সঙ্গে তাতেই গিয়েছি পানপুরে মামাবাড়ি।

শীতকাল এলে দারুণ কষ্ট, কোথা লেপ, সোয়েটার...
গামছা জড়িয়ে রোদে বসতুম- মায়ের তো মুখ ভার!
তবু রাত হলে ভাই
বাবার জন্যে জেগে থাকতুম, মনে পড়ে আজও তাই...
বাবা নাকি রোজ ফুটপাথে শোয়, বিছানা বলতে থলি
পাশেই তো ছিল চোর বাজারের গলি!

গ্রামেতে তেমন বন্ধু বলতে সুধা ছিল শুধু একা...
ইসকুলে যেতে মাঝে মাঝে হতো দেখা!

ওদেরই তখন পাকা বাড়ি গ্রামে, রেডিও, কলের গান,
বই না চাইলে কথায় কথায় শুধু শুধু অভিমান!

বই মানে সেই ক্ষীরের পুতুল, নয়তো শকুনতলা-
লেখা নয় যেন বলা!
কখনও বলত, এইটা পড়েছ? বলো তো একটু দেখি...
টুনটুনি আর রাজার গল্প- এখনও পড়োনি সে কী!
পাগলা দাশুর গল্প পড়েছ? আগে পড়ো এইগুলি...
তারপরে তুমি পড়বে না হয় ঠাকুরমায়ের ঝুলি।

সত্যি বলতে হারিয়ে গিয়েছে কবেই সে সব দিন,
বকুলতলার মাঠ-নদী-গ্রাম- সবার কাছেই ঋণ!
এই বয়সেও ভুলিনি সে সব, মনে পড়ে মাঝে মাঝে...
ডাকের সাজেই ছোটোবেলা যেন এখনও কেমন সাজে!
দেখেছ তোমরা কেউ?
মিষ্টি ভোরের আজানের সুরে শিউলি ফুলের ঢেউ...

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । জানুয়ারি ২০১৯

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ