Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

দৈত্য রাখাল ছেলে ও চাঁদ বুড়ির গল্প ।। সুভাষ মণ্ডল


 

বিশু নামে এক রাখাল ছেলে ছিল। তার লেখাপড়ার খুব ইচ্ছে ছিল। গরিব বলে পড়াশুনা করা সম্ভব হল না। সে নদীর ধারে জমিদারের গরু চরাতো। একদিন দুপুরের প্রচণ্ড রোদ্দুরে একটা গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়ল।

ঘুম থেকে উঠে দেখল একটা বাছুর নেই। বাছুর খুঁজে না নিয়ে গেলে জমিদারবাবু মারবে। তাই সে তাড়াতাড়ি গরুগুলোকে জমিদারের গোয়াল ঘরে রেখে ফিরে এল। জঙ্গলে তন্ন-তন্ন করে খুঁজল বাছুরটা। কোথাও খুঁজে পেল না।

এদিকে সূয্যি ডুবে অন্ধকার নেমে এল। গভীর রাতে হিংস্র জন্তুর গর্জন শুনে সে একটা গাছের উপরে উঠে বসল।

সেই গাছে ছিল বিশাল এক দৈত্য। দৈত্য হুংকার দিয়ে বলল, কে রে তুই? আমার ভয়ে কেউ এই গভীর জঙ্গলে আসেনা। তোর এত বড় সাহস। তুই আমার আস্তানায় এসেছিস। আজ তোর ঘাড় মটকে খাব।

বিশু ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে দৈত্যের পা জড়িয়ে ধরে বলল, আমাকে মেরো না দৈত্যবাবা। আমি গরিব রাখাল ছেলে বিশু। জমিদারের বাছুরটা জঙ্গলে হারিয়ে গেছে। সেই বাছুরটাকে খুঁজতে এসেছি।

দৈত্য বলল, তুই যদি আমার একটা কাজ করতে পারিস তাহলে আমি তোর বাছুর খুঁজে দেব।

বিশু হাতজোড় করে বলল, আমায় কি করতে হবে?

দৈত্য বলে, তোকে চাঁদের দেশে নিয়ে যাব। সেখানে চাঁদের বুড়িকে সেবা দিয়ে সন্তুষ্ট করে তাদের রত্ন ভাণ্ডারের ঠিকানাটা জানতে হবে। পারবি এই কাজ করতে?

বিশু বলে হ্যাঁ, পারব। দৈত্য গম্ভীর স্বরে বলল, না যদি পারিস তাহলে তোর মৃত্যু হবে। হাঃহাঃহা।

দৈত্যের অট্টহাসিতে আকাশ, বাতাস, বনভূমি থর-থর করে কাঁপতে লাগল। দৈত্য মুহূর্তের মধ্যে বিশুকে উড়িয়ে নিয়ে গেল চাঁদের দেশে। চাঁদের দেশটা দেখে অবাক হল বিশু। যেদিকে তাকাই শুধু আলোয় আলো।

দৈত্য একটা পাহাড়ের আড়াল থেকে বলল, ওই যে চাঁদের বুড়ি চরকায় সুতো কাটছে। বুড়ির কাছে যা। যদি জিজ্ঞেস করে চাঁদে কি করে এসেছিস, তাহলে বলবি পৃথিবীর সুনামি ঝড়ে উড়ে এসেছি।

বিশু চাঁদের বুড়ির পাশে গিয়ে বুড়ির পা টিপতে লাগল।

চাঁদের বুড়ি চমকে উঠে বলল, কে রে বাছা?

বিশু বলে, আমি গরিব রাখাল ছেলে। পৃথিবীতে একটা কুঁড়ে ঘরে থাকি।

চাঁদের বুড়ি বলল, এখানে কি করে এলি?

বিশু বলে, সুনামির ঝড়ে উড়ে এসেছি।

চাঁদেরবুড়ি হেসে বলে, আমার জোছনা মেয়েটা প্রায়ই পৃথিবীতে বেড়াতে যায়। তার মুখে সুনামির ঝড়-এর কথা শুনেছি। বাচ্চা, তোর সেবায় আমি খুব খুশি হয়েছি। তুই যা চাইবি আমি তোকে তাই দেব।

বিশু বলে, মাসি আমি চাঁদের রত্ন ভাণ্ডার দেখতে চাই।

চাঁদপুরী অবাক হয়ে বলে, তুই ভালো ছেলে। সত্যি কথা বল। এই খবর জানতে কে তোকে পাঠিয়েছে?

বিশু মাথা চুলকে বলে, দৈত্য বাবা পাঠিয়েছে।

চাঁদপুরী ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, শয়তান দৈত্যটা পৃথিবী ধ্বংস করার জন্য অরন্যের গাছ কেটে লোপাট করেছে। গাছ না থাকলে পৃথিবীতে বৃষ্টি হবেনা। অক্সিজেনের অভাব হবে। এর ফলে পৃথিবী ধ্বংস হবে।

বিশু ভয়ে ভয়ে বলে, তাহলে দৈত্যর হাত থেকে বাঁচার উপায় কি মাসি?

চাঁদবুড়ি বলে, ওই যে দূরে সাদা পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে ওই পাহাড়ের গুহায় প্রচুর ধনরত্ন আছে। এই খবরটা দৈত্যকে বলবি। তারপর যা করার আমি করব। এই কথা বলে চাঁদবুড়ি বন-বন করে চড়কা ঘুরিয়ে সুতো কাটতে থাকে। বিশু দৌড়ে গিয়ে দৈত্যকে রত্ন ভাণ্ডারের খবর দেয়। দৈত্য লাফাতে লাফাতে পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করে। চাঁদপুরী চুপি চুপি গিয়ে গুহার মুখ পাথর দিয়ে বন্ধ করে দেয়। দৈত্য আর বেরোতে পারে না। সেই গুহার মধ্যে মারা যায়।

চাঁদবুড়ি আদর করে বলে, আমার মেয়ে জ্যোৎস্না বাছুরটাকে জমিদারের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। এবারে জোছনার সঙ্গে পৃথিবীতে ফিরে যাও। আর রাখালের কাজ করতে হবে না। পৃথিবীর মানুষকে এই ছড়াটা শোনাবে, 'একটি গাছ একটি প্রাণ ঘরে ঘরে গাছ লাগান। নিজে বাঁচুন, সবাইকে বাচান।' আর নিজে গাছের চারা বিক্রি করবে। প্রচুর টাকা পাবে। লেখাপড়া করে করে মহাজ্ঞানী হবে। তখন সবাই আদর করবে, ভালোবাসবে।

 

অলংকরণ- প্রণব হাজরা

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । এপ্রিল ২০১৪

 

Topic : Rupkothar Golpo, Fairy Tales, Best Story for Children or Kids, Monster, Shepherd Boy & Chand Buri's Story, দৈত্য রাখাল ছেলে ও চাঁদ বুড়ির রূপকথা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ