Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বুদ্ধি বেচার দোকান ।। সিদ্ধার্থ সিংহ

 



এক বামুনের ছেলে ছিল বেজায় গরিব। তবুও তার বাবা-মা এর তার কাছে ধারদেনা করে তাকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। যাতে লেখাপড়া না শেখার জন্য তাঁদের ছেলের তাঁদের মতো অবস্থা যেন না হয়।

কদিন যেতেই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বুঝতে পারলেন, ছেলেটার লেখাপড়ায় খুব মাথা। যদি এইভাবে চালিয়ে যেতে পারে, তাহলে এর হবে। শুধু তাই নয় বলা যায় না হয়তো একদিন সবাইকে ছাপিয়ে যেতে পারে। কিন্তু হলে হবে কি! ওই যে গরিবি! রোজ রোজ স্কুলে গেলে বাবার হাতে হাতে কাজ তুলে দেবে কে? আর কি কেউ আছে! বাবা সারাদিন রাত খাটলেও একা হাতে গরম লোহা পিটিয়ে পিটিয়ে কখানাই বা আর বঁটি, হাতা, খুন্তি বানাতে পারেন। আর তা বেচে ক'পয়সাই বা হাতে পান।  যা পান তা দিয়ে কি তাদের সংসার চলে! অর্ধেক দিন তো উনুনই ধরে না। না খেয়েই কাটাতে হয়। তাই উপায়ান্তর না দেখে শেষে বেচারাকে লেখাপড়া ছাড়তে হল। সে তখন ভাবল, তার বন্ধু তো কম নেই! তার মধ্যে থেকে দু চারজনের কাছ থেকে সামান্য কিছু টাকা ধার করে একটা ব্যবসা শুরু করবে।

সেইমতো জোগাড়ও করল কিছু টাকা। কিন্তু এত কম টাকায় কি আর কোনো ব্যবসা করা যায়! অবশেষে সে অনেক ভেবে চিন্তে বাজারে একটা ঘর নিয়ে দোকান খুলে বসল, বুদ্ধি বেচার দোকান।

প্রথমদিকে দোকানের ধারে কাছেও কেউ আসত না। এলেও সাইনবোর্ড দেখে চলে যেত। এই ভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন এক শেঠের অত্যন্ত বোকা-সোকা একটা ছেলে এসে তাকে বলল, এই আমাকে পাঁচ টাকার বুদ্ধি দাও তো।

বামুনের ছেলে তাকে একটা কাগজে লিখে দিল, ঝগড়া থেকে দূরে থাকবে।

শেঠের ছেলে তার বাবাকে কাগজটা দেখাতেই শেঠ তো রেগে টং। তিনি তখনই মালটা ফেরত দেওয়ার জন্য বুদ্ধি বেচার দোকানে দৌড়ে এলেন।

বামুনের ছেলে বলল, ঠিক আছে ফেরত নিচ্ছি। কিন্তু একটা শর্ত আছে, এই বুদ্ধিটা আপনার ছেলে কখনো কাজে লাগাতে পারবে না। লাগালেই আমি যদি জানতে পারি, তখন কিন্তু এক লক্ষ টাকা খেসারত দিতে হবে, ঠিক আছে?

শেঠ বললেন, ঠিক আছে, তাই হবে।

'দিন পরেই বাজারের এর দোকানের সামনে দুই রাজকন্যা চাকরানির মধ্যে তুমুল ঝগড়া লেগে গেল। শেঠের ছেলে তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ঝগড়া দেখে সে সেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ল। ব্যস, ফল যা হওয়ার তাই হল। শেঠের ছেলের ডাক পড়ল রাজপ্রাসাদে। সাক্ষী দেওয়ার জন্য। শেঠ জানেন, তার ছেলে হাবা-গোবা, সাক্ষী দিতে গিয়ে একটু বেফাঁস কিছু বলে ফেললেই হল, আর রক্ষা নেই। রাজার হুকুমে মুহূর্তের মধ্যেই তার ছেলের মুণ্ডু থেকে ধর আলাদা হয়ে যাবে। কিংবা চড়ানো হবে শুলে। ফলে ছেলেকে বাঁচানোর জন্য তখন হন্তদন্ত হয়ে বামুনের ছেলের দোকানে গিয়ে হাজির হলেন। বললেন, না পাঁচ টাকা নয়, এই নাও পাঁচশো টাকা। ছেলেকে কি করে বাঁচাব বুদ্ধি দাও।

বামুনের ছেলে সব শুনে টুনে মুচকি হেসে বলল, আপনার ছেলেকে বলুন পাগলের ভান করতে।

পাগলের কথার কি কোনো দাম আছে? না, তার সাক্ষ্যের? ফলে শেঠের ছেলে সে যাত্রায় রেহাই পেয়ে গেল। কিন্তু সমস্যা হল, তাহলে তো এবার থেকে তার ছেলেকে বাকি জীবনটা পাগল সেজেই থাকতে হবে! না হলে মিথ্যে বলার দায়ে গর্দান যাবে। এর থেকে বাঁচার কি কোনো উপায় নেই! তাই তখনই তিনি ছুট লাগালেন বুদ্ধি বেচার দোকানে।

সমস্যা শুনে বামুনের ছেলে বলল, এবার যে পরামর্শটা দেব, তার দাম কিন্তু দশ হাজার টাকা।

সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন শেঠ। তখন বামুনের ছেলে বলল, রাজার মেজাজ যখন ভালো থাকবে, তখন আপনার ছেলে যেন সত্যি কথাটা বলে দেয়।

শেঠের ছেলে তাই-ই করল।

সেটা শুনে রাজা তো অবাক! জরুরি তলব দিয়ে ডেকে পাঠালেন বামুনের ছেলেকে। সে আসতেই রাজা বললেন, এই যে বাপু, পাঁচ হাজার টাকার একটা বুদ্ধি দাও তো দেখি।

রাজার সামনেও একটু ঘাবড়ে না গিয়ে বামুনের ছেলে বলল, ভাবনা চিন্তা না করে কোনো কিছু করা উচিত নয়।

কথাটা এত ভালো লেগে গেল যে, রাজা তাঁর প্রাসাদের সব জিনিসের গায়ে ওটা লিখে লটকে দিলেন। এমনকি জানলা, দরজা, কাপ-ডিশের গায়েও।

এর কিছুদিন পরেই রাজার খুব অসুখ হল। খবর পেয়ে বদ্যি এলেন ওষুধ নিয়ে। রাজা তখন দেওয়ালের গায়ে লটকে থাকা লেখাটা পড়ছেন আর ভাবছেন।

রাজাকে ওভাবে লেখাটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে দেখে বদ্যির কি মনে হল কে জানে! ভেউ-ভেউ করে কান্না জুড়ে দিলেন। আর তারপর নিজে থেকেই এক ঘোরতর ষড়যন্ত্রের কথা ফাঁস করে দিলেন তিনি। রাজাকে মারার জন্য মন্ত্রীমশাই স্বয়ং তাকে দিয়ে জোর করে ওষুধে বিষ মিশিয়ে ছিলেন।

ফলে যা হয়- তাই হল। বদ্যি রেহাই পেয়ে গেলেন আর তার সঙ্গে সঙ্গেই গর্দান গেল মন্ত্রীমশাইয়ের। আর সেই মন্ত্রীমশাইয়ের জায়গায় নতুন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিল, না নিল নয় নিলেন- বুদ্ধি বেচার দোকানের একছত্র মালিক, সেই বামুনের ছেলে।

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা।। জুলাই ২০১৯

 

Topic : সামাজিক গল্প, Social story, ছোটোদের বুদ্ধিমত্তার গল্প, story of children's intelligence, children bast story

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ