Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

ভুতু - ভুলু ।। পৃথা বল

 




ভুতুদের বাড়ির পিছনের গলিতে একটা ত্রিপলের ঘরে বাঘা থাকে ওর ভাইবোনদের নিয়ে। তুতু, ভুলু, ভুতু সবাই মিলে খেটেখুটে ঘরটা বানিয়ে দিয়েছে বাঘাকে। বাঘার সেই ত্রিপল ঘেরা ঘরটা এখন বন্ধুদের গল্প-গুজব আর আনন্দ করার জায়গা হয়ে গিয়েছে।

সেদিন সকালবেলা হাঁটতে-হাঁটতে ভুতু আর ভুলু বাঘার ঘরে এসে ঢুকল। তুতু বলল, নতুন ঘরে কেমন আছিস বাঘা?

বাঘা তখন শুয়ে ছিল। ওদের দেখে উঠে দাঁড়াল। বলল, আয় তুতু, ভুলু ঘরে এসে বস।

ভুলু বলল, নারে বাঘা এখন বসব না। আজ ক'দিন ধরে বাবা আমাদের পড়তে বসাচ্ছে। আমরা লেখাপড়া শিখছি। লেখাপড়া শিখে বাবার মতো গোয়েন্দা কুকুর হতে চাই। আজ বাড়ি যাই কেমন?

যাবার সময় ভুল বলল, আমাদের বাড়িতে একদিন আসিস বাঘা। ভুতু, হাঁসু আমরা সবাই মিলে বাড়ির সামনে কি সুন্দর একটা পুল বানিয়েছি, গিয়ে দেখে আসিস।

পরদিনই বাঘা গেল তুতু, ভুলুদের বাড়ি। বাড়ির সামনে তক্তা দিয়ে বানানো পুলটা পার হয়ে বাঘা এসে ঢুকল ওদের বাড়ির ভিতরে। ভিতরে এসে বাঘা দেখে, তুতু, ভুলু বই নিয়ে পড়াশোনা করছে, আর ওদের বাবা পড়াচ্ছে। বাঘারও মনে খুব ইচ্ছা হল পড়াশোনা শেখার, কিন্তু কোথায় যাবে, কার কাছে ও লেখাপড়া শিখবে। এসব ভাবতে ভাবতে বাঘা ফিরে এল ওর সেই ত্রিপলের ঘরে।

বিকেলবেলা ব্যাঙাদাদা এসেছে বাঘার ঘরে। হাঁসু, ভুতু, তুতু, ভুলু সকলেই এসেছে। ভিতর থেকে তবলার আওয়াজ আসছিল। কে তবলা বাজাচ্ছে? ব্যাঙাদাদা জিজ্ঞেস করে। ভুতু বলে, তুতু ভুলু ভালো তবলা বাজায়। ওর তবলার তালে তালে হাঁসু প্যাক প্যাক নাচও করে। আর একজন আসে, সে চালের উপর বসে বসে সুন্দর গান গায়।

ব্যাঙাদাদা বলে, কে সে? ভুতু এগিয়ে এসে বলে, তাকে দেখতে চাও? ওই যে এসে গেছে। আমাদের কোকিল মিশ গো। ও ভেতরে আসে না। চালের উপরে বসে-বসেই তবলার তালে তালে আপন মনে গান গায়। তারপর চলে যায়। প্রথমে কুহু-কুহু করে ডাকে। তারপর গান ধরে।

বাঘা বলে, মনে হয় ও আমাদের বন্ধু হতে চায়।

বাঙাদাদা বলে, হ্যাঁ ও রোজ বন্ধু হতেই আসে। গান করে তোমাদের মন ভোলায়। কথাটা বলেই ব্যাঙাদাদা হেঁড়ে গলায় গান গাইতে লাগল।

   বাঘাদের এই আস্তানাতে

   শিল্পী কোকিল গান তো গায়

   হাঁসু ভালো নাচতে পারে

   ওর নাচ দেখতে সবাই চাই।

   তা ধিন ধিন তা

   হাঁসু খোকা ডানা মেলে

   নাচে তাতা ধিন তা।

ভুতু বলে, ব্যাঙাদাদা তুমিই ঠিক। কোকিল আমাদের বন্ধু হতে চায়। ব্যাঙা ভুতুকে বলে, চলো আমরা কোকিলকে ডেকে কিছু বলি।

গান শেষ হলে ব্যাঙাদাদা কোকিলকে বলল, ও কোকিল মিস, আমরা বন্ধুরা তোমার কাছে গান শিখব কেমন! রোজ তুমি এসে গান গাইবে আর আমরা তোমার গান শুনে-শুনে গাইবার চেষ্টা করব। কিছুদিন পরে আমরাও গান গাইতে পারব তোমার মতো।

হাঁসু প্যাক-প্যাক লাফিয়ে উঠে বলে, হ্যাঁ-হ্যাঁ ব্যাঙাদাদা ঠিকই বলেছ। আমাদের বন্ধুরা হাঁসুর মতো কেউই নাচতে জানে না। তুতু, ভুলু তবলা বাজাতে পারে, কিন্তু গান জানে না। কী করেই বা জানবে বলো?

আমাদের পশুপাখিদের কোনোকিছু শেখার স্কুল নেই। তুতু, ভুলুরা ওদের বাবার কাছে একটু-একটু পড়াশোনা শিখছে। ওর বাবা তো গোয়েন্দা কুকুর। চোর-ডাকাত ধরে। আমরা ওসব কিছুই পারি না। আমরা কোথায় গিয়ে লেখাপড়া, গান এসব শিখব বলো?

পরদিন বিকেলে কোকিল এসে বাঘার ঘরের চালের উপরে বসেছে। কোকিল ডানা দুটো ছড়িয়ে, ঠোঁট ফাঁক করে গান শুরু করল। কাঠকুটুস ঝুনঝুনি নিয়ে পাশে গিয়ে বসল। ভুতু, হাঁসু, বাঘা সকলেই বাইরে দাঁড়িয়ে একমনে কোকিলের গান শুনতে লাগল। কিছুক্ষণ শোনার পর ব্যাঙাদাদা বলল, সকলেই গান ধরো কোকিলের সঙ্গে। গান গাইতে গাইতেই শেখা যায়, বুঝলে।

ঠিক তখনই কোকিল মিস গান থামিয়ে এগিয়ে এসে বলল, না ব্যাঙাদাদা, যে কেউ গান গাইতে পারে না। গানের গলা যদি থাকে তবেই গান হয়। যে গ্যাঙর-গ্যাঙ ডাকে, যে ম্যাঁও-ম্যাঁও, যে ভৌ-ভৌ করে চিৎকার করে তাদের গলায় কোনদিন গান হয় না। সব পাখিরাও গান গাইতে জানে না। তাই বলি, তোমরা গান শিখতে যেও না। বরং গান না শিখে পড়াশুনা শেখো। সেটা বরং কাজে লাগবে।

কোকিলের কথা শুনেই ভুল বলে, কোকিল মিস ঠিকই বলেছে। আমার বাবা সে জন্যই তো আমাদের পড়াশুনো শিখিয়েছে। কাল থেকে আমি তোদের সকলকে মুখে-মুখে ছড়া পড়াব। তারপর বই দেওয়া হবে সকলকে। ব্যাঙাদাদা বলে, কে দেবে বই? তুতু বলে, কেন আমাদের গ্রামের মাস্টার কুড্ডাসাহেব আছেন। তিনি তো বহু আগে থেকেই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখতে বলেছেন। চল আমরা সবাই মিলে কুড্ডাসাহেবের কাছে যাই। সকলে হই-হই করে উঠল।

বিকেলবেলা সব বন্ধুরা এসেছে বাঘার আস্তানাতে। পড়াশোনার কথা শুনে আনন্দে সকলে ছটফট করছে। ভুলু এসেই বলল, বন্ধুরা, সকলে শোনো। আমাদের গ্রামের মাস্টার কুড্ডাসাহেবকেই আমরা এখানে ডাকব। বলব, আমরা পশুরা লেখাপড়া শিখতে চাই। আমাদের এই ত্রিপলের ঘরে এসে আপনি আমাদের লেখাপড়ার প্রথম পাঠটা শেখাবেন।

কথাটা শুনে ভুতু ভুলুকে জড়িয়ে ধরে বলল, হ্যাঁ ভুলু, আমরা তোদের সঙ্গে পড়াশোনা শিখব।

বাঘা বলল, আমরা সকলেই পড়াশোনা শিখব।

পরদিন সকালবেলা ভুতুকে সঙ্গে নিয়ে ভুলু চলল মাস্টার কুড্ডাসাহেবের বাড়ি। মাস্টার ঘরেই ছিলেন, ভুলু এসে প্রণাম করে বলল, স্যার, আমাদের গ্রামের কিছু পশু বিড়াল, হাঁস, মুরগি এরা লেখাপড়া শিখে শিক্ষিত হতে চায় আপনার মতো।

কুড্ডাসাহেব হেসে বললেন, বাহ! খুব ভালো কথা। কিন্তু যারা শিখবে তারা কোথায় বসে পড়াশোনা করবে?

ভুতু বলল, ওই যে বড়ো রাস্তার পিছনের গলিতে একটা ত্রিপলের ঘর আছে, আপনি ওখানেই বসে আমাদের লেখাপড়া শেখাবেন।

খুশি হয়ে কুড্ডাসাহেব বললেন, বেশ! আমি নিশ্চয়ই যাব সেখানে।

পরদিন সকাল দশটায় গাড়ি নিয়ে হাজির হল কুড্ডাসাহেব।

বন্ধুরা সকলে সুন্দর লাইন করে লক্ষ্মী ছেলেমেয়ের মতো বসে রয়েছে। কোনো সাড়া-শব্দ নেই। মাস্টার এসেছেন। সকলের কি আনন্দ। ভুলু আর ভুতু বইগুলো তুলে এনে টেবিলের ওপরে রাখল।

সুট-বুট, টাই পরা মাস্টার চেয়ারে বসলেন। বসেই বললেন, তোমরা তো খেলাধুলায় খুবই ভালো।  বাজনা বাজাতেও জানো। তবলাও পেটাতে পারো। শুধু লেখাপড়াটা শেখা হয়নি। যেটা সবচেয়ে আগে দরকার। আজকাল সকলকেই শিক্ষিত হতে হবে। আর তার জন্য আমি সকলের হাতে আজ বই তুলে দেব। ভুলুর বাবা কত বড়ো পুলিশ কুকুর। সেদিন রেলস্টেশনে অত মানুষের মধ্যে থেকে একজন অপরাধীকে ধরে এনেছে, কত বড়ো কাজ এটা। এ কাজ কুকুর ছাড়া মানুষেরাও পারে না। তাই তোমাদের সকলকেই নানাভাবে শিক্ষিত হতে হবে।

পরদিন সকলেই তৈরি হচ্ছে। ভুলু, ভুতুদের পাঠশালায় যাবে। বই বগলে ভুতু, হাঁসু, চ্যাঁও, ম্যাঁও, ভুলু সকলেই চলেছে পাঠশালার পথে। গ্রামের পথে সকলেই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। সকলের মনে কৌতুহল। পশুদের এই পাঠশালাটা কোথায়? কারণ সকলেই চায় তাদের ছেলেপুলেরাও  লেখাপড়া শিখুক।

দশটা বাজতেই কুড্ডাসাহেবের গাড়ি এসে দাঁড়াল। গাড়ি থেকে মাস্টারমশাই একটা সাইনবোর্ড বার করলেন। মাস্টারমশাই আর বাঘা দুজনে মিলে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে টাঙিয়ে দিল। তাতে লেখা- ভুলু-ভুতুর পাঠশালা।

একটু পরেই পাঠশালা বসে গেল।

মাস্টারমশাই ছড়া বলছেন-

   পড়িতে এসেছি ভাবিব এখন

   শুধুই পড়ার ভাবনা।

   একথা-সেকথা কব না এখন

   এদিকে-সেদিকে চাব না।

   ভৌ ভৌ আর ম্যাঁও-ম্যাঁও ডাক

   এসব কিছুই কব না।

পাঠশালার ভিতর থেকে ছড়া পড়ার গমগমে আওয়াজ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।

 

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । জুলাই ২০১৯

 

Topic : Children Funny story, মজার গল্প, পশুপাখিদের গল্প, Story of the animals, Best story of kids

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. To allow you to out additional, we’ve put collectively evaluations for every of the highest 5 South Korea on-line on line casino. With a execs and cons listing and a small evaluation for every site, you’ll know much more about which site is best for your on-line on line casino wants. The elegantly appointed Hyatt Regency Hotel and Casino offer its visitors various upscale dining options such because the Omi Market Grill weekend buffet 벳익스플로어 that lets visitors get pleasure from a luxurious meal whereas overlooking the Pacific Ocean.

    উত্তরমুছুন