তোমাদের আশেপাশে কত কি রকমের জীবজন্তুই না দেখতে পাও তোমরা। ছোট্ট পিঁপড়ে, প্রজাপতি, আরশোলা থেকে গরু, ছাগল, ইঁদুর, কুকুর, বিড়াল আরো অনেক প্রাণী। ধরো এই নিরীহ অবলা প্রাণীগুলোকে তোমাদের চোখের সামনে যদি কেউ মেরে ফেলে, তাহলে তোমাদের মনে কি একবারও কষ্ট হবে না, ওইসব প্রাণী বন্ধুর জন্য? এ সময় কিন্তু গোটা পৃথিবী জুড়ে পরিবেশ দূষণ নামে যে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়েছে তার ফলে বিষিয়ে যাচ্ছে বাতাস, মাটি, জল। ঘরবাড়ি বানানোর জন্য আমরা কেটে চলেছি গাছপালাদের। তার ফলেই নিজেদের বাসা বা থাকার জায়গা হারিয়ে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য জীবজন্তু। তবুও আমরা হারাতে পারছি না এই পরিবেশ দূষণ নামের দানবটিকে।
দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল দেশে আমাজন নদীর তীরে গড়ে ওঠা ঘন জঙ্গলে প্রতি এক হেক্টর জায়গার মধ্যেই আছে ৪২৫ ধরনের গাছপালা। এই মহাদেশের অন্তর্গত পেরু দেশের জাতীয় উদ্যানে প্রায় ১৩০০ প্রজাতির প্রজাপতি আছে। গোটা ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকাতেও নেই এতগুলো প্রজাতির গাছ আর প্রজাপতি। কিন্তু গাছপালা ধ্বংস হওয়াতে এই গাছপালা আর প্রজাপতির বেশিরভাগই হারিয়ে যাওয়ার পথে। দক্ষিণ মেরুর ম্যাকমার্ডো উপত্যকাতে রাশি রাশি বরফের মধ্যেও এতদিন বাস করত তিন হাজার প্রজাতির ছত্রাক বা ফাংগাস এবং শিরদাঁড়া না থাকা প্রাণী। পরিবেশ দূষণের শিকার হয়ে আজ সেগুলির মধ্যে বেশিরভাগই লুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে। প্রাণী হিসাব করে দেখেছেন জলে-স্থলে-আকাশের প্রায় ১০০ লক্ষ প্রজাতির প্রাণী আছে।
সমুদ্রের গভীরে, আগ্নেয় পর্বত, গলন্ত পাথর বা ম্যাগমার মধ্যে প্রায় ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও বেঁচে থাকে অনেক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া। এগুলির মধ্যে বেশিরভাগই এখন শেষ হয়ে যাওয়ার পথে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের একটি বিশেষ প্রতিবেদনে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে মিষ্টি জলের মধ্যে যে কয়টি প্রজাতির মাছ আছে সেগুলোর মধ্যে প্রায় কুড়ি শতাংশ মাছই এখন লুপ্ত। এশিয়াতে ভিয়েতনাম ও লাওস দেশের সীমান্তে পাওয়া যেত গরুর মতো দেখতে একটি বিশেষ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী সাওলা বা স্পিগুলহর্ণ। সেই প্রাণীটিও আজ প্রায় হারিয়ে গেছে।
এরকম অবস্থা ক্যাশোয়ারি আর তাক নামের দুটি উড়তে না পারা পাখি, ক্লাউডেড লেপাড, ডোডো আর মোয়া পাখি এবং ম্যানড্রিল বেবুনের মতো প্রাণীগুলো।
প্রতি বছর প্রায় ভারতবর্ষের অর্ধেকটার মতন জায়গা জুড়ে থাকা বনাঞ্চলকে কেটে ফেলেছি আমরা। তাহলে সেই বনে নিরিবিলিতে বাস করা প্রানী বন্ধুরা কোথায় গিয়ে বাঁচবে বলতো? শুধু তাই নয় জাভা দ্বীপের গন্ডার, ফিলিপাইনের ঈগল, হাওয়াই দ্বীপের কাক, স্পিক ম্যাকাও, চীনের নদী অববাহিকার ডলফিন এর মতো প্রায় ৩০০টির মতো বহুমূল্য প্রাণীজাতি হারিয়ে যাচ্ছে এই গ্রহের বুক থেকে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন আজ থেকে প্রায় ১০ কোটি বছর আগে আজকের মেক্সিকো দেশের কাছে ইউকাতান উপদ্বীপে একটি বিশাল উল্কাপিণ্ড আছড়ে পড়াতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছিল টিরানোসরাস রেক্স-এর মতো সব রকম প্রজাতির অতিকায় ডাইনোসর বা সরীসৃপরা। আমরা যদি পরিবেশের উপর এভাবে অত্যাচার করতে থাকি তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে ওই সরীসৃপের মতোই সব প্রাণীও হারিয়ে যাবে পৃথিবীর বুক থেকে।
ডাঙাতে সবচেয়ে জোরে ঘণ্টায় প্রায় ৬০ মাইল বেগে দৌড়োয় চিতাবাঘ। বছর তিরিশেক আগে প্রায় ৪৪টি আফ্রিকী দেশে ঘুরে বেড়াতো ৩০ হাজার চিতা। নখ, দাঁত, চামড়ার লোভে দুষ্টু কিছু চোরা শিকারী বা পোচার শেষ করে দিচ্ছে এই চিতাদের। এখন আফ্রিকার ২০টি দেশে মাত্র ৯ হাজারটির মতো চিতা বাঘ বেঁচে আছে।
উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত 'মিডওয়ে আতোল' নামক একটি দ্বীপে একসময় বাস করত প্রায় ৭ ফিট লম্বা ডানাওয়ালা 'লেস্যান' প্রজাতির অ্যালবাট্রস পাখি। ওই দ্বীপটির চারপাশে মানুষের ফেলে দেওয়া নানা প্লাস্টিকের জিনিসপত্র পেটে যাওয়াতে অ্যালবাট্রস পাখিদের প্রায় বেশির ভাগই এখন মারা যাচ্ছে। বেআইনিভাবে জাল ফেলার জন্য এবং জাহাজ থেকে পেট্রোল, ডিজেল, রাসায়নিকের মতো নানা ক্ষতিকর পদার্থ ফেলার জন্য জলে থাকা বহু প্রাণীর এখন জীবন সংশয় ঘটছে। প্রতিবছর মারা যাচ্ছে প্রায় কুড়ি মিলিয়ন টন এর মতো সামুদ্রিক মাছ, সামুদ্রিক পাখি, কড্, টুনা ও তরোয়াল মাছ, হাঙরের মতো প্রাণী।
মেক্সিকো উপসাগর, উত্তর আমেরিকার মিসিসিপি নদীর জলে দূষণের ফলে সেখানে কোনো প্রাণী আর নেই বললেই চলে। একই অবস্থা ইউরোপের উত্তর সাগর, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড সমুদ্রতীর, চিল্কা হ্রদ আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইংল্যান্ড জর্জেস সমুদ্রতীরের। জাপান আর ফ্লোরিডার সমুদ্রতীরে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে হাজারে হাজারে মাছ, কচ্ছপ আর কাঁকড়াকে। অথচ এরা তো কোনো দোষ করেনি! বলো তোমরা! পরিবেশটা তো এদের!
প্রকাশিত- ছেলেবেলা । মাঘ ১৪১৫
Topic : Our animal friends are getting lost, Animals and the environment are being destroyed due to pollution, দূষণের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রাণী ও পরিবেশ
0 মন্তব্যসমূহ