Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বোম্বাগড়ের রাজার বিচার ।। ঝুমা সাহা

                                  


 

তিতিল পাঁচ বছরের মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে। সরস্বতী বিদ্যামন্দিরের কেজি টু-তে পড়ে। পড়াশোনায় তার খুব মনোযোগ। সুকুমার রায়ের প্রায় সব ছড়াগুলো সে মুখস্ত বলতে পারে। 'বোম্বাগড়ের রাজা' তার সবচেয়ে বেশি প্রিয়।

এইতো সেবার, সেদিন রাতে শুতে যাওয়ার সময় মা বলল, তুই শোবার ঘরে যা। আমি একটু রান্নাঘরটা গুছিয়ে আসছি। রাতে শুতে গিয়ে তিতিল 'বোম্বাগড়ের রাজা' ছড়াটাই পড়ছিল। হঠাৎ তার সামনে সুকুমার রায় এসে হাজির। তিতিলের আশ্চর্য চমকপ্রদ এক ভাব।

সুকুমারবাবু তিতিলের মাথায় হাত বুলিয়ে

ছড়া কেটে বলেন, তিতিল খুব মিষ্টি মেয়ে, দুষ্টু তো নয় মোটে। আমার ছড়া পড়ে তিতিল, হাসে রাঙা ঠোঁটে।

তিতিল একরাশ খুশির আমেজে আপ্লুত হয়ে ওঠে। স্বয়ং সুকুমার রায় তাকে নিয়ে ছড়া বানিয়েছেন।

এরপর সুকুমার রায়ই তিতিলকে বলেন, বলো তুমি আমার কাছে কি চাও? তিতিল বলে, বোম্বাগড় সত্যিই আছে? সুকুমার কাকু বলেন, হ্যাঁ নিশ্চয়ই আছে। তিতিল বলে, সুকুমার কাকু আপনি আমাকে একটিবার বোম্বাগড়ে নিয়ে যাবেন? সুকুমারবাবু এরপর সত্যিই সত্যিই তিতিলকে বোম্বাগড়ে নিয়ে যান।

তিতিল সেখানে দেখে- সত্যিই বোম্বাগড়ের রাজা ছবির ফ্রেমে আমসত্ত্ব ভাজা বাঁধিয়ে রাখে। হ্যাঁ সেখানে রানীর মাথায় সত্যিই অষ্টপ্রহর বালিশ বাঁধা থাকে। সে এও দেখে রানীর দাদা পাউরুটিতে পেরেক ঠোকে। কারো সর্দি হলে সেখানে সত্যি-সত্যিই সবাই ডিগবাজি খায়। তারপরে সে একে একে সবটাই দেখতে পায় যা যা সে ছড়াটিতে পড়েছিল। বোম্বাগড়ের এই সমস্ত ক্রিয়া-কলাপ দেখে তিতিল ভাবে, সেখানে কি সবার মস্তিষ্ক বিকৃত। তার মনের প্রশ্ন ছড়াকারকে করতে তিনি ছোট্ট তিতিলকে বলেন, মানুষের কিছু ব্যতিক্রমী ক্রিয়া-কলাপ দেখলেই তাকে মস্তিষ্ক বিকৃত বলে আখ্যা দেওয়া উচিত নয়। আসলে বোম্বাগড়ের রাজা সব সময় চায় তার প্রজারা আনন্দে থাকুক। সুখে থাকুক। তাই তিনি ওসব কার্য্যকলাপ করে থাকেন।

আসলে ওনার ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধির ধার। তাহলে তোমাকে একটা ঘটনা বলি। একদিন পিসির সঙ্গে যখন রাজা কুমড়ো দিয়ে ক্রিকেট খেলছিল, তখন হঠাৎ এক বৃদ্ধ গোছের চাষা এসে রাজাকে নতজানু হয়ে বলল, হে রাজন ! আমি ধান বিক্রি করা টাকায় আমার পত্নীর জন্য এক সেঁকরার কাছে গয়না বানিয়েছিলাম। সেই স্যাঁকরার  আমার আসল টাকার বিনিময়ে নকল গয়না দিয়েছেন। আপনি এর প্রতিকার করুন। এরপর রাজা বললেন, শোনো আগামীকাল তোমার পত্নীকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। আমি তোমাদের একটা বুদ্ধি দেব, দেখবে তাতেই কাজ হবে। পরেরদিন চাষা তার পত্নীকে রাজার কাছে নিয়ে এলে রাজা তাদের একটা চুপিচুপি পরামর্শ দেন। আর এই পরামর্শকে সফল করতে তাদের কিছু টাকা কড়িও দেন।

তারা রাজার বুদ্ধি শুনে তাদের গ্রামের সেই দুষ্টু শাখাটিকে নিমন্ত্রণ করে। সে ভয়ে ভয়ে নিমন্ত্রণ খেতে আসে। সেভাবে আমি তো ওদের ঠকিয়েছি কিন্তু ওদের এত ঘটা করে আমাকে নিমন্ত্রণ খাওয়ানোর মানেটা কি? সেঁকরা স্বকৌতুকে জানতে চায়- কিসের জন্য এত ঘটা নিমন্ত্রণ। চাষা আর চাষার বউ দুজনেই বলে, আগে তো খাওয়া-দাওয়া হোক তারপর না হয় কারণটা জানা যাবে। এলাহী খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল- লুচি, মাংস, বরফি, পান্তুয়া, মিষ্টি কোনোটারই অভাব রাখেনি চাষা।

খাওয়া-দাওয়ার শেষে সেঁকরা সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করে, এবার আসল কারণ বলতো তোমরা? চাষার বউ বলে, শুনুন তাহলে- আমরা এক সন্নাসীর আশীর্বাদে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন একটা গরু পেয়েছি। যার থেকে আমরা যখন খুশি ইচ্ছে মতো দুধ-ঘি-মাখন পাই। সেই গরুটির কথা রাজার কানে পৌঁছতে, রাজা আমাদের অনেক টাকা দিয়েছেন গরুটি নেওয়ার জন্য। তাই সেই টাকা দিয়ে ভাবলাম আপনার মতো গুনি সেঁকরাকে একটু নিমন্ত্রণ করে খাওয়াই। সেঁকরা বললেন, সত্যি! তাই আবার হয় নাকি! চাষার বউ বলল, বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে যান না, গোয়ালে গিয়ে দেখে আসুন ঘড়া ঘড়া সব দুধ-ঘি-মাখন রাখা আছে। আর গরুটির রাজপোশাক দেখেই বুঝতে পারবেন, গরুটি আর পাঁচটা সাধারণ গরুর মতো নয়।  স্যাঁকরা পরখ করে,  চাষা দম্পতি মিথ্যে বলেনি।

গরুটিকে পাওয়ার জন্য সাঁকরার ভারি লোভ হয়। যেন-তেন প্রকারে গরুটিকে পেতে চায় সেঁকরা। নিজের লোভ সংবরন করতে না পেরে সরাসরি গরুটি যেকোনো মূল্যে কেনার জন্য প্রস্তাব দেয়। চাষা দম্পতি বলে ওঠে, না-না এখনই রাজপেয়াদা এসে দেখে যাবে গরুটিকে। রোজ রোজ ওদের পাঠিয়ে দুধ-ঘি-মাখন নিয়ে যান। রাজকুমারের জন্মদিনের উপহার দেবেন তিনি।

এরপর এই সত্যি-সত্যিই রাজপেয়াদা এসে গরুটিকে দেখে যায় আর দুধ-ঘি-মাখন নিয়ে যায়।

সেঁকরার বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়। তিনি বলেন, এই গরুটিকে আমার চাই-ই চাই। গরুটিকে পেতে তিনি চাষা দম্পতিকে ১০ ভরি সোনার গয়না দিতে রাজি হন।

চাষা দম্পতি বলে, তাহলে আপনি একটা কাজ করুন ১০ভরি গয়নার সঙ্গে আমাদের জন্য ভিন গাঁয়ে থাকারও ব্যবস্থা করে দিন। নইলে রাজার কোপে আমাদের অকালে প্রাণ হারাতে হবে। সেঁকরা তাতেও সম্মত হয়ে গেলেন।

চাষা দম্পতি গরুটাকে সেঁকরাকে দিয়ে দেয়। সেঁকরা বাড়ি ফিরে গরুটির অলৌকিক ক্ষমতা পরখ করতে গিয়ে দেখেন, সব মিথ্যে। চাষা দম্পতি তাকে বুজরুকি দিয়েছে। তখন রাজার কাছে বিচারের জন্য গিয়ে দেখেন, সেই চাষা দম্পতির সঙ্গে বোম্বাগড়ের রাজা হুক্কাহুয়া করে চিৎকার করে আনন্দ করছে। সেঁকরার মুখ চুন হয়ে যায়।

ঘুমের ঘোরে তিতিল হাততালি দিতে দিতে বলে ওঠে, বেশ হয়েছে, বেশ হয়েছে! দুষ্টু সেঁকরা জব্দ হয়েছে। মা এসে তিতিলকে ডাকেন, কি রে তিতিল স্বপ্ন দেখে এসব কি বলছিস!!

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত ছেলেবেলা । বৈশাখ ১৪১৬

 

Topic : ছোটোদের রূপকথার গল্প, Children's fairy tales, Educational stories

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ