Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

সঞ্জুর ময়না ।। প্রেম প্রতিম দাস

 

 



সময়টা শীত পেরিয়ে বসন্তের আগমন। নতুন পাতায় সজ্জিত গাছে-গাছে ঝাঁকে-ঝাঁকে ফুল। আকাশে-বাতাসে কোকিলের কলতান, আর সেই কলতানে ঘুম ভেঙে গেল সঞ্জুর। আজ সরস্বতী পুজো। তাই সঞ্জু হাতে সাজি নিয়ে ছুটল ফুলের সন্ধানে। নীলফুল, সাদাফুল, গাঁদা, বেল, জুঁই। সঙ্গে তার বন্ধু অপুও।

ফুল তুলছে আর ডাল ভাঙছে। হঠাৎ দেখতে পেল একটা পাখি। পাখিটা তাদের দেখে ভয় পাচ্ছে, কিন্তু উড়ে যাচ্ছে না। পাখির ডানায় ক্ষত চিহ্ন। তাই সে উঠতে পারছে না। সঞ্জু পাখিটাকে ধরতে গেলে অপু তাকে মানা করল। বলল, আরে কামড়ে দেবে। তবু সঞ্জু পাখিটাকে তার ফুলের ঝাঁপিতে ভরে নিল। বলল, একে বাড়িতে নিয়ে যাব।

বাড়ি পৌঁছে মা'কে বলতেই, মা চিৎকার করে উঠল, যা ওকে বাইরে ছেড়ে দিয়ে আয়।

সঞ্জু নিজের মুখটা একটু কুঁচকে বলল, তোমায় কতবার বলেছিলাম আমায় একটা ময়না কিনে দাও। কিন্তু তুমি কিছুতেই দিলে না। আমি ওকে ছাড়ব না মা। পাখিটাকে খাবার-জল দিয়ে ঝুড়িতে দিয়ে চাপা রাখল।

আজ সরস্বতী পুজো। তাড়াতাড়ি স্কুলে যেতে হবে। তাই সকাল-সকাল সঞ্জু স্নান সেরে নিল। মা তাকে পাঞ্জাবি পরিয়ে দিল। সঞ্জুর তাই ভীষণ আনন্দ। ইতিমধ্যে ফুল নিয়ে তৈরি হয়ে চলে এসেছে অপু। সঞ্জুও ফুল নিয়ে চলল স্কুলের পথে।

স্কুলে পৌঁছতেই দিদিমণি জিজ্ঞেস করলেন, এত দেরি কেন? সঞ্জু, অপু দুজনেই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল। দিদিমণি বললেন, তাড়াতাড়ি যাও, দেখো পুজো শুরু হয়ে গেছে।

এদিকে পুজো চলছে আর ওদিকে সঞ্জু, অপু অন্যসব বন্ধুদের কানে-কানে বলছে পাখির গল্প। বন্ধুরাও পুজোর পর ওদের বাড়ি গিয়ে পাখিটাকে দেখতে চাইল।

পাখিটা এখনও ভীষণ ভীত। ডানাটা নিয়ে কষ্ট পাচ্ছে। বন্ধুরা কেউ বলছে, ওর লেগেছে, ডেটল লাগাতে হবে। কেউ বলছে, না-না ডাক্তার দেখাতে হবে। আবার কেউ বলছে, ওকে খাঁচায় রাখ। অনেক জল্পনা-কল্পনা চলছে পাখিটাকে নিয়ে।

ওদিকে মা উঠোনে বসে সোয়েটার বুনছে। হঠাৎ সঞ্জুর ডাক পড়ল। সঞ্জু গিয়ে মায়ের সামনে দাঁড়াতেই মা তার গলার মাপটা নিয়ে বলল, পাখিটা নিয়ে বেশি দুষ্টুমি করবে না। সঞ্জু চলে যেতে-যেতে মায়ের দিকে ফিরে তাকাল। হঠাৎ ফিরে এসে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরল। মা জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে, খিদে পেয়েছে?

না।

তাহলে?

মা একটা জিনিস চাইব, দেবে?

কি?

বাপিকে বাজার থেকে একটা খাঁচা আনতে বলবে? ময়নাকে খাঁচায় রাখব। ঝুড়ি চাপা থাকলে ও মরে যাবে।

ঠিক আছে। ভালো করে পড়াশোনা করলে বাপিকে বলবখন।

আর একটা জিনিস-

আবার কি?

ডেটলটা একটু পেড়ে দেবে?

মা তাড়াহুড়ো করে উঠল, হাতের কাজটা ছেড়ে দিয়ে সঞ্জুকে ধরে বলল, কি হয়েছে! দেখি কোথায় লেগেছে!

আমার লাগেনি তো।

তাহলে ডেটল কি হবে?

পাখিটার ডানায় লেগেছে তো, দাও না মা ডেটলটা পেড়ে।

পাখিদের ডেটল লাগায় না। চল, একটু হলুদ বেটে লাগিয়ে দিই। ঠিক হয়ে যাবে।

পাখিটা খাওয়া-দাওয়া করছে নতুন খাঁচার ভেতর। এখন সে একটু সুস্থ। সঞ্জু স্কুল থেকে ফিরে রোজ তার সঙ্গে কথা বলে। বন্ধুদের নিয়ে এসে তার সঙ্গে খেলা করে। বন্ধুরাও তাদের পাখি বন্ধুটির জন্য পাকা ফল, ছোলা, আতপ চাল নিয়ে আসে। সঞ্জুর খুব আনন্দ। তবে ময়না এত ডানা নাড়ায় কেন! ও যেন খাঁচার ভেতর থেকে বের হতে চায়। বন্ধুরা বলল, ওকে বার করলে উড়ে চলে যাবে।

ময়না আগের মতো সঞ্জুর সঙ্গে কথা বলে না। ওর সঙ্গে খেলা করে না। ও যেন খাঁচার ভেতর অসুখী।

সঞ্জুকে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে মা জিজ্ঞাসা করল, কি হয়েছে রে? ময়নার সঙ্গে খেলছিস না যে?

না মা, ময়না আর আগের মতো আমার সঙ্গে কথা বলে না। ও সবসময় উড়ে যেতে চায়।

মা সঞ্জুর মাথায় হাত বোলাতে-বোলাতে বলল, শোনো, আসলে ওরও তো ইচ্ছে করে বাড়ি ফিরে যেতে। বাচ্চাদের কাছে যেতে। আমি বাড়িতে না থাকলে তুমি যেমন থাকতে পারো না। কান্নাকাটি করো। তেমনি ওর বাচ্চাগুলোও নিশ্চয়ই মায়ের জন্য কাঁদছে। তোমার কিন্তু ওকে ছেড়ে দেওয়া উচিত।

সঞ্জু হঠাৎ করে মায়ের গলাটা জড়িয়ে ধরল। বলল, সে আর ময়নাকে খাঁচায় আটকে রাখবে না। ছেড়ে দেবে। এই বলে সে খাঁচার কাছে গিয়ে খাঁচার দরজাটা খুলে দিল। ময়না ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে এল। উড়ে যাওয়ার আগে যেন সে সঞ্জুকে বলে গেল, থ্যাংক ইউ বন্ধু।

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত- ছেলেবেলা । মাঘ ১৪১৫

Topic : অনুভবের গল্প, Feeling story, পাখি পোষার গল্প, মুক্তির গল্প, মুক্ত করার গল্প, ছোটদের গল্প, ছোটদের পত্রিকা চিরকালের ছেলেবেলার গল্প, বোধের গল্প, ময়না কথা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ