Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

সোনাই আর শুঁয়োপোকা ।। দীপালি রায়




সেদিন আট বছরের ছোট্ট সোনাই হঠাৎ একটা শুঁয়োপোকা দেখতে পেয়ে প্রথমে খুব ভয় পেল। পরে একটা কাঠি দিয়ে সেই শুঁয়োপোকাকে মারতে লাগল। দু-একবার মারার পরেই সে শুনতে পেল, কেউ যেন কাঁদছে, আর বলছে, আমাকে মেরো না, আমাকে মেরো না, আমি তো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি। শুধু খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম।

সোনাই খুব ঘাবড়ে গেল। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না যে, শুঁয়োপোকা কথা বলছে। তবুও সাহস করে শুঁয়োপোকাকে বলল, বারে! তোমাকে মারব না কেন? তুমি যে আমাদের ঘরের মেঝেতে ঘুরছ। তোমার পায়ে কাঁটা ভর্তি। আমি এখানে খেলা করছি। খেলতে-খেলতে যদি তোমার গায়ে আমার হাত-পা লেগে যায়! তবে আমার ভীষণ চুলকোবে! ফুলে যাবে! তাতে বুঝি আমার ক্ষতি হবে না?

শুঁয়াপোকা তখন বলল, ওই কাঁটাগুলো আমাদের প্রাণ রক্ষা করে। আমরা ছোট্ট। তোমরা, মানুষরা দেখলেই আমাদের টিপে মেরে ফেলবে, কিন্তু গায়ে কাঁটা থাকায় আমাদেরকে ধরতে পারবে না।

সোনাই বলল, তোমরা যদি মানুষের ঘরে ঢুকে যেখানে-সেখানে চলতে থাকো, তবে তো মানুষ তার সুবিধার্থে মেরে ফেলবেই।

মেরে ফেলবে কেন? কিছুতে করে তুলে বাইরে রেখে আসবে। আমরা তো আর ইচ্ছে করে তোমাদের ঘরে ঢুকি না। আমরা, গাছের পাতা খেয়ে জীবন কাটাই। আজকাল তো গাছ সেরকম-একটা চোখেই পড়ে না। যেদিকে তাকাই, সেদিকেই খালি বড়ো-বড়ো বাড়ি আর বাড়ি। তাই তোমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ি। যদি কিছু খাবার পাই! তোমাদের ঘরের টেবিলে রাখা ফুলদানির ফুলের পাতা বা ফুলের পাপড়ি খাব বলে। তুমি জানো না, আমরা তোমাদের কত উপকার করি।

সোনাই বলল, তুমি আমাদের উপকার করো? সেটা কীরকম শুনি?

শুঁয়োপোকা বলল, আমি এখন শুঁয়োপোকা আছি। ক'দিন পরে প্রজাপতি হয়ে যাব। প্রজাপতি কার না ভালো লাগে বলো? তোমার ভালো লাগে না?

সোনাই বলল, তাই নাকি? তুমি প্রজাপতি হবে? বাঃ! কি মজা! কিন্তু এতে উপকারের কী হল?

শুঁয়াপোকা বলল, তুমি যখন বড়ো হবে তখন সব জানতে পারবে। তাও তোমায় বলে রাখি, প্রজাপতি হলে আমি এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াব। একবার এ-ফুলে, একবার ও-ফুলে বসব। কি খুশি হব তখন আমি! সারাদিন শুধু নেচে-নেচে বেড়াব!

সোনাই এবার প্রায় রেগেই বলল, চুপ করো। তুমি এত মিথ্যে কথা বলো! এতে মানুষের উপকার কি হল? তুমি শুধু তোমার জীবনী শুনিয়ে যাচ্ছ।

শুঁয়োপোকা বলল, রাগ করছ কেন বন্ধু? আগে তো সবটা শোনো।

সোনাই বলল, ঠিক আছে বলো। তবে তাড়াতাড়ি। মা এখুনি পড়তে ডাকবে।

শুঁয়োপোকা বলল, আমরা যখন প্রজাপতি হয়ে ফুলে-ফুলে ঘুরে বেড়াই, তখন আমাদের পায়ে-হাতে ফুলের রেণু লেগে যায়। আবার যখন আর একটা ফুলে গিয়ে বসি, তখন সেই ফুলের রেণু ওর সঙ্গে আমার পায়ে-হাতে লেগে থাকা রেনু মিশে যায়। এইভাবে পুরুষ ফুলের রেণু স্ত্রী ফুলের রেণু সঙ্গে মিশে যায়। তবেই সেই ফুল থেকে ফল হয়। জানো তো, আমরা না থাকলে কোনো ফল হবে না। তখন তোমরা কি খাবে? কি খেয়ে বাঁচবে?

সোনাই এবার হেসে ফেলল। বলল, তুমি কি পাগল নাকি? যা-তা বকছ তখন থেকে! শুধু-শুধু আমার খেলার সময় নষ্ট করছ।

শুঁয়াপোকা বলল, এখন তুমি জানো না। তাই হাসছো। যখন বড়ো হবে, অনেক-অনেক বই পড়বে, তখন সব জানতে পারবে।

সোনাই বলল, বন্ধু আমাকে ক্ষমা করো। আমি না জেনে, তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি। আর কোনোদিন তোমাদের মারব না। আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু। চলো, তোমাকে আমাদের ছাদে, যেখানে বনসাই আছে, সেখানে রেখে আসি। তুমি যখন প্রজাপতি হবে, তখন রোজ আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। কি, মনে থাকবে তো?

শুঁয়াপোকা সোনাইয়ের কাঠির ঘায়ে যতটা কষ্ট পেয়েছিল, তার থেকে অনেক বেশি এখন খুশি, সোনাইয়ের মতো বন্ধু পেয়ে। সে বলল, ঠিক মনে থাকবে বন্ধু।

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত- ছেলেবেলা । শরৎ ১৪১৬ (অক্টোবর ২০০৯)

 

Topic : পরিবেশের গল্প, মিষ্টি সুন্দর গল্প, ছোটদের গল্প, ছোটোদের পত্রিকা চিরকালের ছেলেবেলার গল্প, মজার গল্প, শিশু কিশোর গল্প

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ