Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বীরপুরুষ ।। অজিতা বসু

 

 



ইস্কুলের গরমের ছুটি পড়লেই নতুন বাড়িতে চলে যেতে হবে। কথাটা শুনে অবধি রুকুর মন খুব খারাপ। সরকারি কোয়ার্টারে ছোটো দু'খানা ঘরে বড়োদের নাকি খুব অসুবিধে হচ্ছে। কিন্তু এই ছোট্ট বাড়িটায় বাবা-মা-দিদির সঙ্গে ওর যে কি ভালো লাগে, সেটা কেউ বুঝতে চাইছে না। পিকলু, বুবাই, নেহা এখানে ওর কত বন্ধু। তাদের সঙ্গে পিকনিক, ফুটবল-ক্রিকেট এসব ফেলে রুকু কোথাও যেতেই চায় না। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে, ভেজা চোখে বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসতেই হল নতুন বাড়িতে।

আনন্দপুর জায়গাটায় সবেমাত্র বসতি গড়ে উঠেছে। কিছুটা দূরে-দূরে ছোটো একতলা-দোতলা রঙিন বাড়িগুলো ছবির মতো। গাছপালাও অনেক। গাড়িতে আসবার সময় গোলপোস্ট লাগানো বড়ো একটা মাঠও রুকুর চোখে পড়েছে। ওরা পৌঁছবার কিছুক্ষণের মধ্যেই দূরের হলুদ দোতলা বাড়িটা থেকে রায়কাকু, কাকিমা আর দীপু-তপুকে নিয়ে হৈ-হৈ করে চলে এলেন। বড়োরা পুজোর জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, আর রুকু ওর নতুন বন্ধুদের পেয়ে মেতে উঠল খেলায়। সারাদিন আনন্দেই কাটল। সন্ধেতে কাছাকাছি বাড়িগুলো থেকে প্রতিবেশিরা এলেন, নতুন আসা লোকদের পরিবারের সঙ্গে ভাব জমতে।

কিছুদিনের মধ্যে পুরোনো বন্ধুদের ছেড়ে আসার দুঃখ ভুলে গেল রুকু। ওদের নতুন বাড়িতে দিদির আর ওর আলাদা ঘর। মা-বাবার ঘর আর তিনতলায় ঠাকুর ঘরের পাশে ঠাম্মার ঘরটা ওর ভীষণ পছন্দ হয়ে গেল।

গরমের ছুটি, তাই স্কুল যাওয়ার বালাই নেই। সারাদিন খেলার ফাঁকে হোমওয়ার্ক অবশ্য রুকু নিজেই করে ফেলে। সাহায্যের দরকার হলে মা-দিদি তো আছেই। গতকাল দীপক-তপুর মামা এসেছেন মিরাট থেকে। ভূতের গল্প শুনে সারা সন্ধে কাটল। বাড়ি ফেরার সময় একটু গা ছমছম করছিল। আজ তপুরা মামাকে নিয়ে শহর দেখাতে বেরিয়েছে, তাই রুকু একা। ওদিকে দিদিকে গানের স্কুল থেকে আনতে মাও বিকেলে বেরিয়ে গেছে। রুকু এই ফাঁকে নিজের হোমওয়ার্ক সেরে নিচ্ছিল। অংক কষতে ওর ভারী ভালো লাগে। নিজের মনে কাজ করতে-করতে কখন সন্ধে হয়েছে খেয়াল করেনি। শাঁখ বাজতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে বাতিটা জ্বলে বসল। বাকি আংক ক'টা শেষ করেই গল্পের বই নিয়ে বসবে। যাঃ! লোডশেডিং হয়ে গেল। চারিদিক নিস্তব্ধ। ঘুটঘুটে অন্ধকার। নতুন বাড়ি। মোম-দেশলাই কোথায় জানে না। হঠাৎ খুব ভয় পেয়ে গেল রুকু। বার দুয়েক ঠাম্মাকে ডেকে সাড়া না পেয়ে আরো ঘাবড়ে গেল। হঠাৎ জানলার বাইরে চোখ পড়তেই মনে হল, সাদা কাপড় পরে কে যেন দাঁড়িয়ে।

ভয়ে চোখ বন্ধ করল। গলা শুকিয়ে কাঠ। অনেক কষ্টে চোখ খোলার চেষ্টা করল। আবার দুলে উঠল সাদা কাপড়। চোখ বন্ধ করে রুকু প্রাণপনে চেচিয়ে উঠল, ভূ...ত।  গোঁগাঙানির বেশি কিছু বের হল না। তারপর আর কিছু মনে নেই...

হঠাৎ দিদির ঠেলায় চোখ খুলে দেখল। মা, ঠাম্মা, সকলে জানতে চাইল, কি হয়েছিল? কেন এত ভয় পেয়েছে?

রুকু কোনোরকমে জানলার দিকে দোদুল্যমান সাদা ছায়ার দিকে আঙুল দেখিয়ে ''ভূত'' শব্দটা উচ্চারণ করতেই, দিদি হি-হি করে হেসে উঠল। ততক্ষণে আলো এসে পড়েছে। সেই আলোয় রুকু দেখতে পেল, বিকেলে গা ধুয়ে ছাতে মেলে দেওয়া ঠাম্মার সাদা কাপড়টা তখনও হাওয়ায় উড়ছে।

সকলের হাসিমুখের দিকে চেয়ে ভারী লজ্জা পেয়ে গেল রুকু। মনে মনে ভাবল, আর কখনও তপুর মামার কাছে ভূতের গল্প শুনতে চাইবে না।

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । শরৎ ১৪১৮

 

Topic : হাসি মজার গল্প, Fummy story, ছোটোদের গল্প, ছোটোদের পত্রিকা চিরকালের ছেলেবেলার গল্প, ভূতে ভয় পাওয়ার গল্প, Best children story in Bengali, অন্ধকারে ভূতে ভয়, ভয়ঙ্কর ভূতে ভয়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ