![]() |
হ্যালো, টোকন তাড়াতাড়ি চলে আয়। খুব ইম্পরট্যান্ট একটা কথা আছে। বলে লখুকাকা ফোনটা কেটে দিল।
রবিবার সকালবেলা বিছানা থেকে উঠিনি তখনও। এমন সময় লখুকাকার এরকম ফোন পেয়ে একেবারে চমকে গেলাম। ইম্পরট্যান্ট কথাটা যে কী, তা আমি ভেবেও পেলাম না। লখুকাকারা তো বংশপরম্পরায় মোটা, ভুঁড়িওয়ালা লোক। ভুঁড়ি কমানোর জন্য চেষ্টার ত্রুটি নেই তার। গত সপ্তাহে আমাকে মর্নিংওয়াকের কথা বলেছিল। মনে হয়, মর্নিংওয়াকে যাওয়ার কথাই বলবে।
হাত-মুখ ধুয়ে সাইকেলটা নিয়ে লখুকাকার ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আসলে লখুকাকা এক সময় ছিল আমাদের ফ্ল্যাটের রেসিডেন্সি। গড়িয়াতে। বছরখানেক হল ফ্ল্যাট চেঞ্জ করেছে। এখন থাকে রাসবিহারীতে। কাকার একটাই ছেলে, ইঞ্জিনিয়ার। থাকে আমেদাবাদে। সংসারে থাকে বলতে কাকা আর কাকিমা। আমাকে মাঝে মাঝে ডাকে। দুজনেই আমাকে ছেলের মতো ভালবাসে।
ফ্ল্যাটে পৌঁছে ডোরবেল বাজাতেই লখুকাকা সহাস্যে দরজা খুলে ভেতরে নিয়ে এল। কাকিমা তখন রান্নাঘরে ব্রেকফাস্ট তৈরিতে ব্যস্ত। দেখে মনে হল, লখুকাকার মুড এখন প্রিয়া মারির মতোই ফাটাফাটি। কাকা, আমি দুজনেই সোফাতে বসলাম। আমি কৌতুহলে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ব্যাপার বলতো? আজ তোমাকে এত খুশি-খুশি লাগছে। এত সকাল-সকাল ডেকে পাঠানোর কারণই বা কী?
লখুকাকা মোটা গোঁফ নাচিয়ে উত্তর দিল, লটারি জিতেছি রে। লটারি।
লটারি জিতেছ? কত টাকার?
১0 লাখ।
১০ লাখ! কি বললে, ১০ লাখ! কবে, কোন কোম্পানির টিকিট কেটেছিলে?
ধ্যুর! ভাগ্যে থাকলে টিকিট কাটতেও লাগে না, বুঝেছিস।
মানে? কি বলছ? একটু ঝেড়ে কাশো তো।
শোন, কাল সন্ধের সময় অফিস থেকে ফিরে বিশ্রাম নিচ্ছি, এমনসময় একটা ফোন এল। ফোন তুলতেই একজন বলল, আমি এস. বি. এল কোম্পানি থেকে বলছি। আপনি আমাদের কোম্পানি থেকে ১০ লাখ টাকার লটারি জিতেছেন। শুনে তো হার্টবিট বেড়ে গেল। ঢোক গিলে কোনোরকমে বললাম, আমি তো কোনো লটারির টিকিট কাটিনি।
আপনি কাটেননি ঠিকই, কিন্তু আমাদের কোম্পানি থেকে একটা কনটেস্ট চলছিল। যার নাম লাকি মোবাইল নম্বর কোনটেস্ট। সেখানে দু'হাজার মোবাইল নম্বরের মধ্যে আপনার নম্বরটি লটারিতে উঠে এসেছে। এখন আপনার নাম ও বাড়ির ঠিকানাটা বলবেন? আগামীকাল সকালে আপনার বাড়িতে আমাদের কোম্পানির লোক পৌঁছে যাবে।
আমি নাম আর বাড়ির ঠিকানা বললাম।
আর হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের কোম্পানির লোক এসে পড়বে। লখুকাকার কথা শেষ হতে না হতেই কলিংবেলটা বেজে উঠল। লখুকাকা একরকম দৌড়ে গিয়েই দরজা খুলে একজন বয়স্ক লোককে ভেতরে নিয়ে এল। ভদ্রলোকের ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, মাথায় পাতলা চুল আর গায়ে একটা পুরোনো কালো কোট।
ভদ্রলোক কাকার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি নিশ্চয়ই শ্রী লক্ষ্মীকান্ত সরকার।
উত্তরে কাকা মাথা নাড়ল।
আমার নাম ঘটিয়াল ভটচাজ। এস. বি. এল কোম্পানির একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী। ভদ্রলোক পান খাওয়া লালচে দাঁত বের করে হাসলেন। ঘটিয়াল ভটচাজ কেমন যেন চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলেন। কথা বললে মনে হয় যেন চালভাজা চিবোচ্ছেন। কাকা ওনাকে সোফাতে বসতে বলল। আমাদের সবাইকে কাকিমা গরম গরম চা ও টোস্ট দিয়ে গেল।
আচ্ছা আপনাদের এস. বি. এল কোম্পানির নাম তো আগে কখনো শুনিনি। নতুন কোম্পানি নাকি? লখুকাকা জিজ্ঞাসা করল।
একদম ঠিক ধরেছেন মশাই। একেবারে নতুন কোম্পানি। সবে মাত্র ছ'মাস হল মাথা তুলেছে। এরই মধ্যে সারা ভারতে তিরিশ খানা ব্রাঞ্চ খুলে ফেলেছে। একটা মাল্টিলেভেল কোম্পানি মশাই। একসময় দেখবেন সারা পৃথিবীতে আমাদের কোম্পানি ব্যবসা চালাবে, ঘটিয়ালবাবু বললেন।
বাঃ তাহলে তো মস্ত বড়ো কোম্পানি। আপনাদের কোম্পানির পুরো নামটা কি?
সর্বহাট বিজনেস লিমিটেড। তবে কি জানেন, অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে আমাদের কোম্পানির পার্থক্য হল, অন্যান্য কোম্পানির মতো আমাদের কোম্পানি কোনো বিজ্ঞাপন দেয় না। আমরা সবসময় কাস্টমারদের বেশি সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করি। কাস্টমাররা খুশি হলে কোম্পানির নাম মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়বে।
ঠিক বলেছেন, তাছাড়া বিজ্ঞাপনের পেছনে টাকা নষ্ট করে কী লাভ?
যেমন আপনি এই যে আমাদের কোম্পানি থেকে ১০ লক্ষ টাকার লটারি জিতলেন, এতে আমাদের কোম্পানির কত বড়ো লাভ হল জানেন?
সেটা কী রকম?
আপনি আমাদের কোম্পানি থেকে ১০ লক্ষ টাকা জিতলেন। এরপর থেকে আপনি আমাদের কোম্পানির নাম সারা জীবন মনে রাখবেন। আপনার আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবদের কাছে আমাদের কোম্পানির প্রশংসা করবেন। এভাবেই আমাদের কোম্পানির নাম ছড়িয়ে পড়বে বলে ঘটিয়ালবাবু দাঁত বের করে হাসলেন।
টাকাটা কি চেকের মাধ্যমেই দেবেন?
নিশ্চয়ই। তবে আমাদের কোম্পানির কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। প্রথমে আপনাকে দুশো টাকা দিয়ে একটা ফর্ম ফিলাপ করতে হবে। বলে, ঘটিয়ালবাবু ব্যাগ থেকে একটা ফর্ম বার করে কাকার দিকে এগিয়ে দিলেন। কাকা সেটা ফিলাপ করে দুশো টাকা দিল।
এবার তাহলে চেকটা কেটে নিন।
ধ্যুর মশাই! অত সহজ নাকি? এবার আপনাকে আরো একটা কাজ করতে হবে। আপনাকে আজ সন্ধের সময় শ্যামবাজারের অমলেট রেস্টুরেন্ট-এ আসতে হবে। সেখানেই আমাদের কোম্পানির ম্যানেজার স্বয়ং আপনার হাতে চেকটা তুলে দেবেন। সব টিভি চ্যানেলে খবর দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকরা আসবেন। আপনাকে সরাসরি চেক তুলে দেওয়া অবস্থায় ছবি নেবে তারা। আপনাকে তারা কিছু প্রশ্নও করবে। এত টাকা লটারি দিতে কেমন লাগছে? ইত্যাদি। আপনি হাসিমুখে আপনার মন্তব্য জানাবেন। দেখবেন, সমস্ত টিভি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ দেখাবে।
লখুকাকা তো একেবারে আনন্দে উচ্ছ্বসিত।
তাহলে ঠিক সন্ধে সাতটার সময় শ্যামবাজারের অমলেট রেস্টুরেন্টে চলে আসবেন। এই বলে ঘটিয়াল ভটচাজ কাকাকে নমস্কার জানিয়ে বিদায় নিলেন।
ঘটিয়াল ভটচাজ চলে যাবার পর আমি বললাম, কাকা ঘটিয়াল ভটচাজের কথা শুনে তুমিও কি ছিটিয়াল হয়ে গেলে?
মানে, কি বলতে চাইছিস তুই?
মানে, লোকটাকে আমার কেমন যেন সাসপিসাস লাগছে।
লখুকাকা আমাকে ধমকের সুরে বলল, টোকন, তোর সব জায়গাতেই খালি সন্দেহ। এবার পরিষ্কার বুঝতে পারছি, কেন প্রত্যেকবার ইউনিট টেস্টে তুই কুড়িতে দু-তিন নম্বর কম পাস। পরীক্ষার হলে সামনের বেঞ্চের বন্ধুর খাতা দেখে টুকে লিখিস, সেখানেও সন্দেহ করিস।
কাকার কথা শুনে আমার রাগ হল। আমি পরীক্ষাতে দুই-তিন নম্বর পাই ঠিকই, কিন্তু তাই বলে কখনো কারো টুকে লিখি না। আমি চুপ করে গেলাম।
লখুকাকা এবার নরম গলায় বলল, টোকন তুই তো জানিস, আমার টাকা পয়সার অভাব নেই। তাই কী ঠিক করেছি জানিস? ১0 লাখ টাকা পাবার পর সব টাকাটাই গুরুজীর আশ্রমে দান করে দেব।
কী বললে কাকা? সব টাকা গুরুজীর আশ্রমের দান করে দেবে?
সব টাকাগুলো গুরুজীর আশ্রমে দান করে দেব। আমার গুরুজী বলেছেন, ''ত্যাগই জগতের পরম ধর্ম''। ত্যাগের মধ্যেই আসল আনন্দ, ভোগের মধ্যে কোন আনন্দ নেই।
যদি তাই হয়, কাকা, তাহলে তুমি ১০ লাখ পাবার আশা ত্যাগ করে দাও।
আঃ! বড্ড বকিস। হাতের লক্ষ্মী পায়ে ফেলতে নেই। শোন, আজ বিকেলে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে নিয়ে সোজা শ্যামবাজারের অমলেট রেস্টুরেন্টে যাব। সেখান থেকে গুরুজীর আশ্রমে। সেখানে রাতটুকু কাটিয়ে সকালে সব টাকা আশ্রমে দান করে গঙ্গাস্নান সেরে গুরুজীর আশীর্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরব। তোর কাকিমা একা থাকবে। তুই বরং আজকের রাত্রিটা এখানেই থেকে যাবি।
বিকেলে কাকা ট্যাক্সি নিয়ে শ্যামবাজারে চলে গেল। আমি কাকার কথা মতো সেদিন কাকার বাড়িতেই থেকে গেলাম। সন্ধে সাতটা বাজতে না বাজতেই টিভি খুলে বসলাম। কখন ব্রেকিং নিউজ দেখাবে তার অপেক্ষায়। আমি চ্যানেল ঘোরাতে লাগলাম। কিন্তু কোন চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজে কাকাকে দেখতে পেলাম না। শেষে বিরক্ত হয়ে খেয়ে-দেয়ে কাকিমার পাশের ঘরে শুয়ে পড়লাম।
হঠাৎ কলিংবেল বাজার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। দেখি সকাল হয়ে গেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি, পাঁচটা বাজে। কাকিমা তখনও ঘুমোচ্ছে। ঘুম-ঘুম চোখে দরজা খুললাম। খুলেই তো আমি অবাক! দেখি, লখুকাকা দাঁড়িয়ে আছে। লখুকাকার পায়ে জুতো নেই। এত তাড়াতাড়ি গুরুদের আশ্রম থেকে ফিরে পড়লে? কথাটা বলতে গিয়েও বলা হল না। লখুকাকা আমাকে বলল, কাকিমাকে বল আলমারি থেকে ৫০০ টাকা দিতে। বাইরে ট্যাক্সিওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে।
আমি কাকিমাকে ঘুম থেকে ডেকে ৫০০ টাকা চাইলাম। কাকিমা আলমারি খুলে বের করে দিল। আমি সেটা লখুকাকাকে দিতে কাকা ট্যাক্সিওয়ালাকে টাকাটা দিয়ে এল।
ঘরে ঢুকে লখুকাকা সোফার ওপর ধপ করে বসে পড়ল। এক হাত মাথার ওপর রেখে বলল, সর্বনাশ হয়ে গেল রে।
কী সর্বনাশ হয়ে গেল? আমি জানতে চাইলাম।
কাকিমাও একই কথা জিজ্ঞাসা করল। লখুকাকা এবার বলতে শুরু করল, কাল সন্ধ্বেবেলা সাতটা সময় শ্যামবাজারের অমলেট রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঘটিয়ালবাবুর টিকিটাও দেখতে পেলাম না। আমি রিসেপশনিস্ট কাউন্টারের সামনে, চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। বসে থাকতে থাকতে প্রায় আটটা বেজে গেল। অধৈর্য্য হয়ে রাস্তার দিকে বারবার তাকাচ্ছি, এমন সময় দেখলাম একটা বাদুরঝোলা বাস থেকে ঘটিয়াল ভটচাজ নেমে প্রায় ছুটতে ছুটতে রেস্টুরেন্টের দিকে আসছেন। কাঁধে একটা কালো ব্যাগ রয়েছে। পেছনে রোগা প্যাকাটিমার্কা একটা লোক ছুটতে ছুটতে আসছে। তার হাতে একটা ঢাউস ক্যামেরা।
সামনে আসলে আমি দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলাম। ঘাটিয়ালবাবু বললেন, আর বলবেন না মশাই, ম্যানেজারের প্রাইভেটকারে আসছিলাম। এমন সময়, ম্যানেজারের ফোন এল। তাঁকে এক্ষুনি মুম্বাই যেতে হবে। সেখানকার কোম্পানির একটা ব্রাঞ্চের লেবাররা ধর্মঘট করেছে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে উনি গাড়ি নিয়ে ফ্লাইট ধরতে দমদম ছুটলেন। তারপর আমরা সেখান থেকে শ্যামবাজারে আসার ট্যাক্সি না পেয়ে ভিড় বাসের মধ্যেই উঠে পড়লাম।
ঘটিয়ালবাবু প্যাকাটিমার্কা লোকটিকে দেখিয়ে বললেন, ইনি হলেন 'ঝালাপালা টিভি' চ্যানেলের ফটোগ্রাফার নেপচুন হালদার। অন্যান্য চ্যানেলের ফটোগ্রাফাররা এক্ষুনি এসে পড়বে। চলুন তাড়াতাড়ি হোটেলর একটা রুম বুক করে ফেলি।
এরপর ঘাটিয়ালবাবু আমার নামেই রুম বুক করলেন। রিসেপশনিস্ট ভদ্রলোকটি রুম বুকিংয়ের ৮০০ টাকা চাইলেন। ঘটিয়ালবাবু আমাকে বললেন, দিয়ে দিন টাকাটা।
আমি বললাম, দিয়ে দিন মানে? এরকম কথা তো ছিল না। রুম বুকিংয়ের টাকা আমি কেন দেব?
আপনি তো মশাই আচ্ছা কুঞ্জুস লোক দেখছি। ১০ লাখ টাকার লটারি জিতেছেন, আর কিনা ৮০০ টাকা দিতে পারছেন না।
আমি আর পকেট থেকে ৮০০ টাকা বের করে দিলাম।
রুমের মধ্যে আমরা তিনজনে একটা গোল টেবিলের চারদিকে চেয়ার নিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পরে হোটেল বয় তিনজনকেই মিষ্টি জল দিয়ে গেল। আমার খুব খিদে পেয়েছিল। আমি মিষ্টিগুলো খেলাম। ঘটিয়ালবাবু আর ফটোগ্রাফার নেপচুন হালদারও খেলেন। খাবার পর গ্লাসের জল খেতে যাব, এমন সময় ঘটে ঘটিয়ালবাবু বললেন, এই জল খাবেন না, অ্যাকোয়াগার্ডের জল আছে। বলে, ব্যাগ থেকে বোতল বার করে দিলেন। সেই জল খাবার তিরিশ সেকেন্ডের মধ্যেই আমার অ্যাকশান শুরু। চোখে ঝাপসা দেখতে থাকলাম। ব্যাস, আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান ফিরল, তখন দেখলাম রুমের মধ্যে আমি একা। ঘটিয়াল ভটচাজও নেই আর নেপচুন হালদারও। বুঝলাম, অনেক রাত হয়েছে। সময় দেখার জন্য আমি হাত ঘড়ির দিকে তাকালাম। দেখি, হাতঘড়িটা নেই। পাঞ্জাবির এক পকেটে নগদ ছ'হাজার টাকা আর আরেক পকেটে মোবাইল ফোন ছিল। দেখলাম, যুবক একটি ফাঁকা ডান হাতের মাঝের আঙুলে নীলা বসানো রুপোর আংটিটাও নেই। কেসটা তখন আমার কাছে জলের মতো পরিস্কার হয়ে গেল। হতভাগারা দু'সপ্তাহ আগে কেনা আমার দামী বাটার জুতোটারও লোভ সামলাতে পারেনি।
লখুকাকা এবার থামল। কাকার চোখ ছল-ছল করছে। এরকম ঘটনা শুনে আমার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে। বললাম, তারপর কী করলে কাকা?
তারপর হোটেল থেকে সোজা বাইরে বেরিয়ে এলাম। দেখি ট্যাক্সিটা তখনও দাঁড়িয়ে আছে। ট্যাক্সিওয়ালা গাড়ির কাচ তুলে দিয়ে ঘুমোচ্ছে। তাকে ডেকে, তুলে ট্যাক্সিতে চেপে বসলাম।
কাকিমা এবার রেগে-মেগে বলল, ব্যাস! হল তো? এবার বোঝো, তোমাকে কাল টোকন কত করে যেতে বারণ করল। শুনলেনা। চিটিংবাজগুলোর পাল্লায় পড়ে টাকা-পয়সা সব গেল।
লখুকাকা ধমক দিয়ে বলল, আরে ছাড়ো তো। কী হবে টাকা-পয়সা? ত্যাগ করতে শেখো। ত্যাগেই আসল আনন্দ, বুঝলে?
আমি, কাকিমা দুজনেই লখুকাকার মুখের দিকে স্রেফ ক্যাবলার মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।
অলংকরণ- অমর লাহা
প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । মে ২০১২
Topic : ছোটোদের গল্প, মজার গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, লটারি জেতার গল্প, লখুকাকার গল্প,Children stories, Funny story, Educational story, Lottery winning stories
0 মন্তব্যসমূহ