Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বোকা ভূত ।। প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়



ভুতুরের মা তাকে বকা দিয়ে বলল, তোর দ্বারা আর কিস্যু হবে না, তুই হলি গিয়ে ভূতের পো।অথচ একটু বুদ্ধি নেই! বললাম বড়ো হচ্ছিস, একটু ভয় দেখাতে শেখ, না হলে সারা জীবন কীভাবে চলবে? মা তো আর চিরদিন থাকবে না। তা নয়, কে কার কথা শোনে। শুধু হেরে চলে আসিস। তোর বয়সি অন্য ভূতের পোগুলোকে দেখ। কি চালাক তারা! আর তুই বোকার হদ্দ। মায়ের কথায় খুব দুঃখ পেল ভুতুরে। তার বাবা নেই, মা-ই একমাত্র ভরসা। আর মা-ই কিনা এসব বলছে। সে মাকে বলল, আজ কাজ দাও আমি ঠিক করবো। কেউ আমায় বোকা বানাতে পারবে না। মা বলল, বেশ, যা তো বাজারে। একটু মাছ জোগাড় করে আন। দুজনে খাব আজ।  কিন্তু মাঝরাত করবিনা, তাড়াতাড়ি ফিরবি। ভুতুরে হাওয়া শরীর নিয়ে সাঁ করে বেরিয়ে গেল। কিছুটা যাবার পর রাতের একটা বাজার পড়ে। সেখানে অনেক বাজার করে। ভুতুরে সেই বাজারে হাজির হল। সার সার লোক মাছ নিয়ে বসেছে। আলো পড়ে মাছের গা চকচক করছে। তার জিভে জল এসে গেল। সে জানে, সে ভূত। তাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না। সে ঝট করে একটা জায়গা থেকে একটা বড় কাতলা মাছ তুলে নিল। তারপর বুকে জড়িয়ে সাঁ সাঁ করে বাড়ির দিকে দৌড় লাগাল। ওদের বাড়িতে একটা খুব পুরোনো বট গাছের মোটা ডাল। সেখানেই ও আর ওর মা থাকে। বাতাসে উড়ে আসতে আসতে ও বারবার মাছের গন্ধ শুকতে লাগল। কি মিষ্টি আঁশটে গন্ধ। ভাবল, কখন বাড়ি ফিরবে। মাও খুশি হবে মাছটা দেখে। তাকে আজ আর কেউ বোকা বানাতে পারবে না।

এমন সময় কে যেন বলল, এই ভুতুরে দাঁড়া দাঁড়া। ভূতের পিছন ফিরে তারই মতো একটা ভূতকে দেখতে পেয়ে বলল, দাঁড়াবার সময় নেই। দেখছ তো হাতে একটা বিশাল মাছ। যা বলার বলো। পিছনের ভূতটা বলল, কে বলেছে ওটা মাছ? হ্যাঁ, মাছ ঠিকই কিন্তু ঘোলা জলের মাছ। এ মাছ  খেলে নির্ঘাত মৃত্যু। কথাটা শুনে দাঁড়িয়ে গেল ভুতুরে। তারপর বলল, সে আবার কী? এটা তো বাজার থেকে ঝাড়লাম। দারুন টেস্ট ফুল মাছ।

তোর মাথা! এই মাছ ভূত জগতের যে খায় সেই অক্কা পেয়ে আবার মানুষ হয়ে গেছে। বাবার কথা শুনে ভুতুরের চোখে জল চলে এল। বলল, বলো কি? তাহলে কী হবে? অন্য ভূতুরে বলল, ফেলে দে। খবরদার! বাড়িতে নিয়ে যাসনি। খেলে তোর মাও মারা যাবে। ভুতুরের বুকের ভিতরটা চমকে উঠল। সে মায়ের মরণ দেখতে পারবে না। বাতাসে ছেড়ে দিল মাছটাকে। আর সঙ্গে সঙ্গে অন্য ভূতটা লুফে নিয়ে বলল, এই বোকা ভুতুরে শোন, এটা সত্যিই ভালো মাছ। এর নাম কি জানিস? কাতলা। খুব টেস্টি মাছ। বোকা কোথাকার! বলেই সে কামড় বসালো মাছের গায়ে। ভুতুরে আর কী করে? খুব দুঃখ পেল। তার মা নিশ্চয়ই খুব বকবে। আবার সে বোকামি করে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে আবার বাজারের দিকে দৌড় লাগাল ভুতুরে। কিন্তু বাজারে পৌঁছাতেই দেখল বাজার অন্ধকার। কেউ কোথাও নেই। বাজার শেষ হয়ে গেছে। খুব মনের দুঃখে ও মায়ের কাছে ফিরে এল।

ওকে দেখেই মা বলল, কী রে মাছ কোথায়? ভুতুরে কোনো কথা বলল না। ওর মা এবার রেগে গিয়ে বলল, কী রে মাছ কোথায়? ভুতুড়ে মিনমিনে গলায় বলল, অন্য একটা ভূত আমায় ঠকিয়ে নিয়ে নিয়েছে। মা রেগে গিয়ে বলল, এত বোকা তুই! সেই তো কে ঠকালো! বলেই, ভুতুরেকে দূ'ঘা দিয়ে দিল। ভুতুরে সুর করে কাঁদতে আরম্ভ করে দিল। ওর মা দাবড়ানি দিয়ে বলল, খবরদার কাঁদবিনা। মেরে একেবারে মানুষ করে দেব। বোকা কোথাকার!

পরদিন  ভুতুরের মা ছেলেকে আদর করে বলল আজও এক জায়গায় তোকে পাঠাবো কিন্তু খবরদার কোন বোকামি করবি না। আমি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকব। তুই যাবি আর গরম গরম মাছ ভাজা নিয়ে চলে আসবি। কারোর কোন প্রলোভনে পড়বি না। আস্তে আস্তে অন্ধকার গারো হল, ভুতুরের মা বলল, যা দক্ষিণপাড়ার বোসদের বাড়ি। ওদের ছোট মেয়ের বিয়ে। বাড়ির পূর্ব দিকে যাবি। গেলেই মাছ ভাজার গন্ধ পাবি। ওখানে ভ্যান বসেছে। গরম গরম মাছ ভাজা নিয়ে আসবি। ভুতুরের খুব আনন্দ। গরম মাছ ভাজা ওর প্রিয় খাবার। সে সাগরে নির্দিষ্ট জায়গায় চলে যেতে লাগল। গিয়ে দেখল, মা একেবারে ঠিক খবর দেয়। তখন রাঁধুনির দল মাছ ভাজছে, আর পাশের একটা নৌকায় রাখছে। এমন সুভাষ যে, ওর জিভে জল চলে এল। হাওয়ার শরীর নিয়ে ঝপঝপ বেশ কয়েকটা মাছ ভাজা তুলে নিতে গিয়ে দেখল, খুব গরম ওর পাশেই একটা প্যাকেট পড়েছিল। তার ভিতর পুরে নিল। তারপর মনের আনন্দে মাছ ভাজার গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে বাড়ি ফিরতে লাগল। ভাবল, কখন বাড়ি গিয়ে মাকে দেবে! মা খাবার দিলেই খেতে শুরু করবে।

এমন সময় কারা যেন ফিসফিস করে বলে উঠল, ইস! পচা গন্ধ ছাড়ছে কোথা থেকে কথাটা কানে গেল  ভুতুরের। সে পাত্তা দিল না। আশপাশ চেয়ে দেখল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। সে আবার সাঁ সাঁ করে চলতে লাগল। পরক্ষনেই কারা যেন আবার বলে উঠল, কি মুশকিল! এতো পচা গন্ধ আসছে কোথা থেকে? এবার একটু থমকে গিয়ে ভুতুরে নিজের হাতের প্যাকেটটা শুঁকে দেখল? আর তখনই ওর মনে হল কই আগের মত মাছ ভাজা থেকে সুবাস ছাড়ছে না কেন! তবে কি মাছ ভাজাগুলো ভালো নয়! সে যেতে যেতে ভাবল, যাই মাকে তো দিই। এমন সময় তারা বললযা মার খাবে না। পচা মাছ ভাজা নিয়ে যাচ্ছে ছিঃ ছিঃ। ছেলেটার কোনো আক্কেল নেই। এবার ভুতুরে সত্যিই দমে গেল। শেষবারের মতো মাছ ভাজাগুলো শুঁকে দেখল সত্যিই তেমন সুভাষ আর নেই। ঠান্ডাও হয়ে গেছে। ও ছুঁড়ে মাছ শুদ্ধু প্যাকেটটা ফেলেদিতেই কারা যেন লুফে নিয়ে হিঃহিঃ করে হেসে উঠল। এবার ভুতুরে একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পেল, ওদেরই পাড়ার তিনজন ওর পরিচিত ভূতগুলো মনের আনন্দে খাচ্ছে আর বলছে, বড্ড বোকা। এরকম তাজা মাছ ভাজা অনেকদিন আমরা খাইনি রে। ভুতুরের রাগ হতে হতে খুব কান্না পেয়ে গেল। ভাবল এতই বোকা সে। সে কাঁদতে শুরু করে দিল।

মাঝরাতে মায়ের কাছে ফিরল কাঁদতে কাঁদতে। মা ওকে দেখেই ব্যাপারটা বুঝতে পারল। তবে এবার আর বকাঝকা করল না। বলল, যা ঘরে খাবার আছে খেয়ে শুয়ে পড়। কাল দেখছি কি করা যায় তোকে নিয়ে! আজও একই ভুল করলি। এত বোকা হলে কী করে? তোর বাবা কত চালাক ভুত ছিল। আমি একা একা কত বুদ্ধি করে তোকে মানুষ করার চেষ্টা করছি। আর তুই! বয়স যত বাড়ছে ততোই বোকা হচ্ছিস। যা শুয়ে পড়। ভুতুড়ে শুয়ে পড়ল। আজ আর ওর মা ওর মাথায় হাত বুলালো না, চুলে বিলি কেটে দিলো না। ভুতুরে বুঝতে পারল, মা ভীষণ দুঃখ পেয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে শুয়ে পড়ল। তারপরে দেখল ভূত সমাজে একটা স্কুল হয়েছে। সেই স্কুলে একটা সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়েছে। সেখানে বড়ো বড়ো করে লেখা আছে চালাক হবার স্কুল। ভুতুরে হিঃ হিঃ করে হেসে উঠল। যাক বাবা! সমস্যা মিটলো। ও স্কুলে ভর্তি হয়ে চালাক হয়ে উঠবে। এমন সময় বুঝতে পারল, কে যেন ওর শরীর ধরে নাড়াচ্ছে! ও ধরফর করে উঠে বসতেই দেখল, ওর দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে ওর মা। ও বসতেই ওর মা বলল ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হিঃ হিঃ করে হাসছিলি কেন? কী স্বপ্ন দেখছিলি? ভুতুরে মায়ের কানের কাছে মুখ রেখে বলল, আরো কাছে এসো। কেউ যেনো শুনতে না পায়। তারপর বলল, জানো তো মা আমাদের সমাজে চালাক হবার একটা স্কুল হয়েছে। আমায় ভর্তি করে দেবে? ওর মা ওর কান মুলে দিয়ে বলল, এখনো ভোর হয়নি। ঘুমোও। ঘটে বুদ্ধি না থাকলে আর হদ্দ বোকা হলে কোনো স্কুলই চালাক করতে পারে না বাবা। চালাক নিজে থেকেই হতে হয়। বাস্তব বুদ্ধি খাটাতে হয়।

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । জানুয়ারি ২০২০

 

Topic : Best Ghost stories for children, Stupid ghost stories, ছোটোদের গল্প, ছোটোদের পত্রিকার গল্প, ছোটোদের ভূতের গল্প, বোকা ভূতের গল্প, মজার ভূতের গল্প

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ