Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

মেলার ময়দানে দাদু-নাতি ।। মানিক চন্দ্র মান্না


ঘুম থেকে উঠেই বায়না ধরল দুই নাতি, মলয় ও মৌলিক।

দাদু, দাদু আমাদের দুর্গাপুজোর মেলায় নিয়ে চলো না।

ঠিক আছে ঠিক আছে নিয়ে যাব। হাতের কাজটা সেরে নিই।

ওসব এখন থাক। পরে হবে। বলেই, মৌলিক দাদুকে চেপে ধরল। অগত্যা তাড়াতাড়ি করে দুই নাতিকে নিয়ে দাদু বেরিয়ে পড়ল। পরনে ফুলশার্ট জামা ও ধুতি। মেয়েদের পোশাক বর্তমান সময়ের তালে তাল মিলিয়ে এক অভিনব রূপ। শ্যুট প্যান্ট-হাওয়াই শার্ট। হাসিখুশি মনে তিনজনেই পা বাড়ালো। গুরুজনদের প্রণাম করে নিল। এটা এই পরিবারের নীতি। কোথাও বেরোতে হলে গুরুজনদের সবাইকে  পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে হয়। হঠাৎ দাদুর মনে পড়ে যায় তার সেই ছেলেবেলার কথা। বয়স যখন দশ বারো  বছর। পুজো মানে দুর্গা পুজো। মনে সে কি আনন্দ আকাশে-বাতাসে আগমনী সুর, চারিদিকে কাশফুলের সমাগম সকলের সে কি উৎসাহ। সবাই হাঁক-ডাক করে বেরিয়ে পড়ে। না, পকেটে খুব একটা বেশি পয়সা নেই। চার আনা থেকে বড়োজোড় একটাকা, তাতেই কিস্তিমাত।

খুড়ো, ভাইপো সবাই প্রায় সমবয়স্ক। জ্ঞানদা জিজ্ঞেস করে, কী রে বিভূতি কত আছে? আমার আট আনা, আমার কাছে বারো আনা। চল ওতেই হয়ে যাবে। তাই তো সেদিন মেলায় গিয়ে দুই আনার ভেঁপু বাঁশি। সে কী আনন্দ! সারামেলা যেন কাঁপিয়ে  বেড়াচ্ছে। পাঁচ আনার ছোলা সিদ্ধতে অনেক বন্ধু মিলে হৈ-হল্লা। মেলার শেষে ফিরতি পথে তবু তো পাঁচ-দশ আনা থেকেই যায়। হিসাবের কোন বালাই নেই। হঠাৎ মৌলিকের ডাকে সম্বিত ফিরে এল দাদুর। দাদু দেখো, কি সুন্দর সুন্দর গাড়ি! আমায় একটা কিনে দাও। দাদুর মাথায় হিসাবের বস্তা চাপানো সময়ের তালে-তালে প্রতিটি জিনিসের যেন আকাশ ছোঁয়া দাম। বৌমা যদিও একশত টাকার নোট দিয়েছে তবুও কোথায় যেন একটা খবরের বাধা বাধা ভাব। সত্যিই শিশুদের মনেও তেমন কোনো আনন্দ নেই। পূজার আকাশ-বাতাস যেন ম্রিয়মাণ। চারিদিকে মাইকের আকাশ কাঁপানো শব্দ প্রকৃতির বুকে শব্দ দূষণের প্রভাব ফেলেছে। রঙিন আলোর রোশনাই সজ্জিত হলেও, অতীত দিনের পুজো মণ্ডপের কাছে এ যেন অনেকখানি নগণ্য।  গরদের শাড়িতে মা, মাসিদের ভিড় খুব একটা দেখা যায় না। রঙিন শাড়ির ঘোমটা বধূদের ভক্তিহীন সাজসজ্জা, নৈবেদ্য ডালির প্রাচুর্যের মধ্যেও কোথাও যেন অতীত দিনের একটা ঘাটতি রয়েছে।

পুজোর কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ব্যস্ততার মধ্যেও যেন নিজের সংসারের একটা ভীষণ চাপ। সংসার সমুদ্রে সবাই যেন আজ হাবুডুবু খাচ্ছে। দাদু, ও দাদু ওইদিকে চলো না। একটা গল্পের বই কিনে আনি। মলয় একপ্রকার জোর করেই দাদুকে টেনে নিয়ে গেল। টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে দশ টাকা জমা করেছে তিনজনে মিলে সুন্দর একটা গল্পের বই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর 'টুনটুনি কথা' বই কিনে ফেলল। দু'নাতি বেজায় খুশি। কিন্তু দাদু ভাবছে, কিন্তু বৌমা ভাববে না তো! ওই এককোণে নাগরদোলা। না, আগের মত নেই। হাতি, ঘোড়া বাঘ, হরিণ প্রায় সবই খালি পড়ে আছে। অথচ একসময় দু-এক আনাতেও চড়া যেত। আজ অর্থনৈতিক মানদণ্ডে সবাই যেন দণ্ডিত। মেলা দেখা প্রায় শেষের পথে। দাদুর হাত ধরে দু'নাতি বাড়ির পথে পা বাড়াল। একসময় বিসর্জনের বাজনা বাজল। বিসর্জনের কান্নার বাজনায় যে কান্নার সুর খুঁজে পাওয়া যেত তাও আর আগের মতো মর্মস্পর্শী নয়। বর্তমান কম্পিউটারের যুগ সবাই কম্পিউটারের মতো ব্যস্ত সমাজ-সংসারে। ইন্টারনেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত- ছেলেবেলা ।। শরৎ১৪১৬

 

Topic : Children best stories,  feeling story, story of visiting the fair in Worship, ছোটোদের গল্প, ছোটোদের পত্রিকার গল্প, অনুভবের গল্পপুজোয় মেলায় ঘুরতে যাওয়ার গল্প


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ