Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বিচিত্রানুষ্ঠান ।। বাসুদেব মণ্ডল

বন্যায় চারিদিকে জল থৈ-থৈ করছে। ভাগ্যিস, চৈতিদের দোতলা বাড়ি। তা না হলে, গ্রামের স্কুলে গিয়ে থাকতে হত। কত লোকের ঘর-বাড়ি ডুবে গেছে, সবার মন খারাপ। চৈতির মনও। খুব খারাপ। ঠিক এই  সময়টাই বন্যা হতে হল! পুজোর পরে বন্যা হতে পারত। নতুন জামাগুলো আর পরা হবে না। অন্যান্য বছর চৈতি এই সময়ে পুজোর নতুন জামাগুলো একে-ওকে দেখিয়ে বেড়ায়। কোনটা মামা দিয়েছে, কোনটা কাকা দিয়েছে, কোনটা মাসি দিয়েছে, মা কি দিয়েছে, বাবা কি দিয়েছে, কোনটা, কবে পরবে ইত্যাদি। একবার করে পাড়ার প্যান্ডেলে গিয়ে দেখে আসত সে। কতটা প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছে। সারাদিন এসব করেই কেটে যেত।

পুজোর আর মাত্র তিন দিন বাকি। পরশুর পরের দিনই ষষ্ঠী। যত দিন এগিয়ে আসছে ততই চৈতির কান্না পাচ্ছে। চৈতি ক্লাস থ্রিতে পড়ে। বন্যার জন্য স্কুল ছুটি। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারছে না। সারাদিন যেন, আর কাটতেই চায় না। সেদিন চৈতি পড়তে বসে এইসবই ভাবছিল। মা রান্নাঘরে, কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ তালগাছটার দিকে চোখ যেতেই দেখতে পেল, বাবুই পাখি বাসা বাঁধছে। চৈতির কী মনে হল! বাবুইকে ডেকে বলল, বাবুই তুমি তো খুব সুন্দর বাসা বানাতে পারো। চলো না, আমরা প্যান্ডেল তৈরি করি। দুর্গাপুজো হবে। বাবুই বলল, ঠিক আছে। কিন্তু একা-একা তো আর প্যান্ডেল করা যায় না। আমি আর-সবাইকে ডেকে আনি।

ডাক পড়ল কাকের। সমস্ত রাস্তাঘাট, আবর্জনা পরিষ্কারের দায়িত্ব দেওয়া হল তাকে। বাবুই যখন বারবার খড়কুটো আনতে যাচ্ছিল, তখন হাতি দেখতে পেয়ে বলল, কী ব্যাপার বাবুই? তুমি এত ব্যস্ত হয়ে খড়কুটো বয়ে চলেছ যে, রাজপ্রাসাদ বানাবে নাকি? বাবুই বলল, না-না রাজপ্রাসাদ নয়। দুগ্গাপুজো হবে গো। চৈতিদিদি বলেছে, প্যান্ডেল বানাতে। হাতি বলল, তা আমিও যাব নাকি তোমাদের সঙ্গে? বাবুই খুশি হয়ে বলল, সে তো খুব ভালো কথা। চলো, সবাই মিলে খাসা একখানা প্যান্ডেল বানাই।

প্যান্ডেল বানানো শেষ। হাতি কোথা থেকে একটা দুর্গা ঠাকুরের পট জোগাড় করে নিয়ে এল। এই পুজোয় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাঘমামা, সিংহমামা, ময়ূর, অজগর, জিরাফ আরো অনেককেই। শুধু পুজো নয়, একটা সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজনও করা  হল। বাঘমামা ফিতে কেটে পুজোর উদ্বোধন করল। সেই অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হল শেয়াল পণ্ডিতকে। জোনাকিরা আলো দিয়ে সাজালো মঞ্চ। চৈতি ঠিক করল, কে কি করবে। শুরু হল বিচিত্রা অনুষ্ঠান। কোকিল গাইল উদ্বোধনী সংগীত। ''আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে...''। একে একে বক্তব্য রাখল হাতি, বাঘ, সিংহ। রবীন্দ্র সংগীতে পেখম তুলে নাচল ময়ূর। ''মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে তাতা থৈ থৈ...''। গানটায় তা থৈ, তা থৈ নাচল গঙ্গাফড়িং। কাকাতুয়া আর তোতাপাখি কবিতা পাঠ করল। মৌমাছিরা সমবেত সংগীত গাইল ভনভন করে। ম্যাজিক শো করল বানরগ্রুপ।

ভালোই জমে গেল। বনের সব পশুপাখিই খুশি। এমন অনুষ্ঠান তারা নাকি কোনোদিন দেখেনি। খুশি চৈতিও। তার সব আশাই পূর্ণ এবার। এমন সময় জোরে ঝাঁকুনি খেল চৈতি। কিরে ঘুমিয়ে পড়েছিস নাকি? ওঠ, খেয়ে নিবি চল। চৈতি চোখ খুলে দেখল মা সামনে দাঁড়িয়ে। তখনও চারিদিকে জল থৈ-থৈ করছে। জল থৈ-থৈ করছে চৈতির চোখেও।

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । শরৎ ১৪১৮

 

Children environmental story in Bengali, Nature story, Best Children story, ছোটোদের গল্প, পরিবেশের গল্প, পশুপাখির গল্প, পুজোর গল্প, ছোটোদের পত্রিকার গল্প

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ