Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বিদেশিনি হয়েও এই দেশকে ভালোবেসে ছিলেন ।। পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

কোথাও মানুষ দুর্গত হয়েছে, বিপন্ন হয়েছে শুনলেই তাঁর মন কেঁদে উঠত। দুর্গত-বিপন্ন মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। ভারতবর্ষ তাঁর নিজের দেশ নয়, উত্তর আয়ার্ল্যান্ডে জন্ম। কিন্তু কখনোই নিজেকে ভিনদেশি ভাবেননি। এ দেশকে ভালবেসে ফেলেছিলেন। এদেশের মানুষ তাঁর বড়ো আপনজন হয়ে উঠেছিল। মায়ের  স্নেহসুধায় সবাইকে ভরিয়ে দিয়েছিলেন।

বরিশালের মানুষ তখন বন্যা কবলিত, দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা রয়েছে, এই সংবাদ জেনে তখনই বরিশালে পৌঁছে গেলেন। বাখরগঞ্জে বক্তৃতা দিয়ে, সভা করে কিছু টাকা তুললেন। সেই টাকায় হাজার পাঁচেক লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হল। শুধু জল, চারপাশ জলমগ্ন। দুর্গত মানুষের দুয়ারে পৌঁছবেন কী করে? একটি বজরা করে পৌছলেন দূরের গ্রামগুলিতে। বজরা থেকে নেমে জল-কাদায় ভরা গ্রামের পর গ্রাম ঘুরলেন। একটুও ক্লান্তি নেই, বরং মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। মানুষের হাতে তুলে দিলেন খাবার, পোশাক-আশাক। করুণাময়ী তিনি, তাঁকে পাশে পেলে বিপন্ন মানুষ বরাবরই ভরসা পায়।

কদিন খুব দুর্ভোগ সইতে হল। কলকাতায় ফিরে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ধুম জ্বর। ম্যালেরিয়ায় শয্যাশায়ী। এরই মাঝে খবর এল দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে ওড়িশায়। নিজের অসুস্থতার কথা ভুলে ছুটলেন ওড়িশায়।

মানুষের দুঃখ-দুর্দশা সইতে পারতেন না বলেই নিজের অসুস্থতা অগ্রাহ্য করে এইভাবে ছুটে গিয়েছেন, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

কলকাতায় তখন ভয়ঙ্কর প্লেগ। বস্তিতে বস্তিতে ঘুরে সেবায় পরিচর্যায় অসুস্থ মানুষদের সুস্থ করে তুললেন তিনি। জাতপাত মানতেন না। তথাকথিত নীচুজাতের একটি ছেলে একদিন তাঁর কোলেই মারা যায়। মৃত্যুর আগে মা মনে করে যেভাবে তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিল ছেলেটি, তা স্বচক্ষে দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কবি তাঁকে বলতেন, 'লোকমাতা'। করুনার প্রতিমূর্তি তিনি, তিনি ভগিনী নিবেদিতা।

ভগিনী নিবেদিতার আসল নাম মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর তাঁর জন্ম। পিতা স্যামুয়েল রিচমন্ড নোবেল, মাতা ইসাবেল নোবেল।

১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে এক আলোচনা সভায় বিবেকানন্দের সঙ্গে ওদেশেই নিবেদিতার প্রথম পরিচয়। বিবেকানন্দের আলোচনা তাঁকে মুগ্ধ করে, যেন তাঁকে পথ দেখালেন স্বামীজি। তাই স্বামীজীর আহবানে নিবেদিতা চলে আসেন ভারতে, ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে। স্বামীজিই তাঁর নামকরণ করেন ভগিনী নিবেদিতা।

ভারতবর্ষে এসে নিবেদিতা মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদন করেন। অসুস্থ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন, বাগবাজারের বোসপাড়ায় মেয়েদের জন্য স্কুল খুলেছিলেন, আজ যার নাম 'রামকৃষ্ণ সারদা মিশন সিস্টার নিবেদিতা স্কুল'

ভারতবর্ষের পরাধীনতা তাঁকে কষ্ট দিত। জন্মসূত্রে বিদেশিনী হয়েও এদেশের পরাধীনতা মেনে নিতে পারেননি। আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। অখন্ড এক ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন নিবেদিতা। পথের মোড়ে মোড়ে বক্তৃতা দিয়ে জনতাকে বুঝিয়েছিলেন বিলিতি জিনিস বর্জন করা কেন জরুরি।

রবীন্দ্রনাথ ও জগদীশচন্দ্র বসুর সঙ্গে নিবেদিতার মধুর সম্পর্ক ছিল। ভারতবর্ষের প্রতি নিবেদিতার নির্মুল ভালোবাসা কবিকে মুগ্ধ করেছিল। আচার্য জগদীশচন্দ্রও তাঁর ভারতপ্রেমে মুগ্ধ হয়েছিলেন। শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ ও নন্দলাল বসুর সঙ্গেও নিবেদিতার মধুর সম্পর্ক ছিল। ভারতীয় শিল্পকলার প্রতি তাঁর আগ্রহ আকর্ষণ অবনীন্দ্রনাথ ও নন্দলাল বসুকে অভিভূত করেছিল। নিবেদিতা অরবিন্দ ঘোষ বা বিপিনচন্দ্র পালের বিপ্লবীদের পাশে থেকেছেন, আন্দোলন-সংগ্রামের শরিক হয়েছেন।

জগদীশচন্দ্র তখন দার্জিলিঙে। নিবেদিতাও গিয়েছিলেন। কটা দিন ভারি আনন্দে ছিলেন। দার্জিলিঙেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। জগদীশচন্দ্রের ডাক পেয়ে কলকাতা থেকে দেখতে পেলেন ডাঃ নীলরতন সরকার। নিবেদিতা বুঝি বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর বিদায় আসন্ন, সে কথা জগদিশ পত্নী অবলাকে বারবার বলতেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন অবলা দেবী। মুখে তাঁর সান্ত্বনা বাণী, এখন মরবে কেন? কি এমন বয়স তোমার?

নিবেদিতা তখন চুয়াল্লিশে পড়ার  মুখে হাসতে হাসতে বলতেন তিনি, স্বামীজি মাত্র উনচল্লিশ বছরে মারা গেছেন। আসলে নিবেদিতা বুঝতে পেরেছিলেন, সত্যিই তাঁর মৃত্যু আসন্ন। কদিন পরই ১৯১১খ্রিস্টাব্দের ১৩ই অক্টোবর প্রয়াত হন তিনি। জন্মসূত্রে বিদেশিনি হয়েও এদেশের মাটি ও মানুষকে যেভাবে ভালোবেসেছিলেন তিনি, সত্যি তা ভোলার নয়।

 

প্রকাশিত-চিরকালের ছেলেবেলা ।। আগস্ট ২০১১

Topic :  Biography of Bhogini Nivedita, ভগীনি নিবেদিতার ছেলেবেলার কথা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. Casino no deposit bonus codes | GAMBLERSNO!
    sol.edu.kg casino-no-deposit-casino-no › casino-no-deposit-casino-no You can also play slot games on slot machine worrione.com games at one of the gri-go.com many online nba매니아 casino sites, 1xbet 먹튀 such as the casino.com.

    উত্তরমুছুন