Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

ও প্রজাপতি রে ।। বিজন মজুমদার


একদিন হঠাৎ করে একটা প্রজাপতি ঢুকে পড়ল আমাদের ঘরে। দরজা খোলা ছিল, তাই হয়তো পথ ভুল করে সে আমাদের ঘরে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু পথ ভুলের কারণ কী? আমাদের ঘর তো আর ফুলের বাগান নয় যে বাগানে ফোটা ফুলের আকর্ষণে সে আমাদের ঘরে ঢুকে পড়বে। তবে এটাও ঠিক, ঘরের দেয়ালে অনেক ফুলের ছবি শোভা পাচ্ছে। জানি না বাবা, ছবির ফুলের টানে প্রজাপতি এমন কাণ্ড করল কী না। আচ্ছা, ছবির ফুলের আবার গন্ধ থাকে না কি? এ সব হাজার চিন্তা ও সম্ভবনা আমাকে অস্থির করে তুলল। আচ্ছা, প্রজাপতি ঢুকেছে তো ঢুকেছে, এ সব নিয়ে মাথা ঘামানোর মানে হয়!

হয়, মানে হয় বৈকি। তোমরাই বলো, কী গরমটাই না গেল এবার। লোডশেডিং হলে বুঝি, গরম কাকে বলে! এখন প্রজাপতি তো আর ঘরে ঢুকে শান্ত হয়ে বসে নেই। একবার এ দেয়ালে তো একবার ও দেয়ালে গিয়ে বসছে। মোট কথা, চড়কি বাজির মতো পাক খাচ্ছে মাথার ওপর দিয়ে। কখনো কখনো দেয়ালে গিয়ে ধাক্কাও খাচ্ছে। রাতকানা না কি রে বাবা, এদিকে গরমে ঘামছি। ফ্যানটা যে চালাব, উপায় নেই। মানে? মানে আর কি! ফ্যান চালাই আর প্রজাপতি ফ্যানের গায়ে ধাক্কা খেয়ে ইহলোক সাঙ্গ করুক আর কি! হোক না প্রজাপতি, তা বলে ওকে অবহেলা করব, প্রাণটা কেড়ে নেব, এতটা নিরস ও প্রাণহীন আমি নই। প্রজাপতির মতো সুন্দর আর কে আছে বল?

তা প্রজাপতি যখন ঢুকেই পড়েছে ঘরে, ইচ্ছে হল, কয়েকটা ছবি তুলে রাখি। ক্যামেরা ছিল হাতের কাছেই। কিন্তু ছবি তুলি কার সাধ্যি! ব্যাটা যে একটু চুপ করে দেয়ালে বসছেই না! খালি ডানা ঝাপটাচ্ছে আর উড়ছে। একটু শান্ত হয়ে বস না বাবা। একটু ছবি তুলতে দে না ভাই। কে শোনে কার কথা! দেয়ালে দেয়ালে গুঁতো খাবে, তবু একটু স্থির হয়ে বসবে না। মানে হয়!

কি আর মানে হবে! মানেই যদি থাকত, তাহলে কি প্রজাপতি ফুলের বাগান ছেড়ে আমাদের ঘরে আসে! আচ্ছা, এমন নয়তো, গরমে কাবু হয়েই প্রজাপতি আমাদের ঘরে ঢুকে পড়েছিল একটু ফ্যানের হাওয়া খেতে!

কিন্তু ফ্যান যে ওর যম, এ বুদ্ধি কি ওর আছে! ওই প্রজাপতির জন্যই আমরা ঘরে বসে দরদর করে ঘামছি। ঘরের সব দরজা জানলা খুলে দিলাম যাতে ও সহজে বাইরে যেতে পারে। কিন্তু যা বুঝলাম, ও একটি হাঁদারাম। বাইরে বেরোনোর এত পথ, একটা পথও খুঁজে পাচ্ছে না। দেয়ালে গুঁতো খাচ্ছে, তবু বেরোতে পারছে না। আচ্ছা, ওর কোনো গোপন উদ্দেশ্য নেই তো! না, মানে, ও কোনো ছদ্দবেশি ড্রাকুলা নয়তো! ও! ভাবতেই গায়ে কেমন কাঁটা দিয়ে উঠছে। ধুত্তুর! আমিও যেমন বোকারাম! একটা প্রজাপতিই তো, তাকে নিয়ে ভেবে ভেবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছি কলসি কলসি। একে তো গরম, ঘাম, প্রজাপতির ঘাম, এ যে ঘামে ঘামে বেঘোরে মারা যাব।

আচ্ছা, কী করে ওকে বাইরে পাঠানো যায়! একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম, ও বারবার আলোর দিকে ছুটে যাচ্ছে। এ ঘটনা আমার চোখ খুলে দিল। আমি করলাম কী, হঠাৎ করে আলোটা নিভিয়ে দিলাম পাঁচ দশ মিনিটের জন্য। তারপর আবার আলো জ্বেলে দেখি, প্রজাপতি ভ্যানিশ। অবাক কাণ্ড, ব্যাটা প্রজাপতি, তুমি আলোতে দেয়ালে গুঁতো খাও আর অন্ধকারে দিব্যি ঘর ছেড়ে বাইরে যেতে পারো। অন্ধকারে তুমি যে ভালো দেখ, এটা তো জানতাম না। তা বাবা প্রজাপতি, গেছ, ভালো করেছ। এখন ফ্যানটা একটু চালাই। আলোটা একটু জ্বালাই। ওরে প্রজাপতি, জ্বালাতে আর আসিস না রে ভাই।

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । ডিসেম্বর ২০১২

Topic : The story of the environment in Bengali, Children Story of environment, Kids Story of environment. Butterfly's Story, Best Kids and Children's Story  পরিবেশের গল্প

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ