![]() |
হাওড়া থেকে যাত্রী নিয়ে বর্ষা রাতের কালো অন্ধকার চিরে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার। রাতের এই ট্রেনে সাধারণত ভিড় কম হয়। কিছু ব্যবসায়ী আর অফিসের কাজে আটকে পড়া নিত্যযাত্রী ছাড়া কেইবা রাত এগারোটার ট্রেন ধরবে। আর থাকে মাছ, সবজি বিক্রেতারা। হাওড়া থেকে মাল নিয়ে ওঠে, গন্তব্য এই লাইনের বিভিন্ন ছোটো ছোটো গ্রাম। দিনেরবেলা পুরুলিয়া যাওয়ার এই রেল যাত্রা বেশ মনোরম। দু'ধারে জঙ্গল, আর তার মধ্যেই ছোটো ছোটো গ্রাম। রুক্ষ লাল মাটির বুক চিরে টিলা, আর শাল, মহুয়া, পলাশের জঙ্গল। কিন্তু এখন সেসব কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বাইরে অবিরাম বর্ষণ, আর বিদ্যুতের ঝলকানি এই প্রায় ফাঁকা কামরাটিকে কেমন রহস্যময় করে তুলেছে।
ধুর, খুব বোর লাগছে, বলে ওঠে রিজু। রিক বলে, তোর এই এক দোষ, সারাক্ষণ উত্তেজনা চাই। ঘুমিয়ে পড়। সকালে দেখবি বরাভূম পৌঁছে গেছি।
আপনারা কি বেড়াতে যাচ্ছেন? অযোধ্যা পাহাড়?
আচমকা প্রশ্ন শুনে দুই বন্ধু একসঙ্গে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে দূরে ওদের ডান দিকের সিটে একটি ফ্যামিলি বসে। মা, বাবা ও বছর দশেকের একটি ছেলে। প্রশ্নটি ওধার থেকেই এসেছে।
এরা আবার কখন উঠল? ঋজু রিককে জিজ্ঞাসা করতেই ভদ্রলোক বলে উঠলেন, আরে আমরা তো গড়বেতা থেকে উঠলাম। এই ঝড় বৃষ্টির জন্য আপনারা বোধহয় তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দুই বন্ধু চুপ করে থাকে, সত্যিই ট্রেনে উঠে তাদের চোখ লেগে গিয়েছিল কিছুক্ষণের জন্য।
বললেন না তো কোথায় যাচ্ছেন? আবার প্রশ্ন।
আমার মামাতো বোনের বিয়ে। ভরাভূমে ওরা থাকে। ওখানেই যাচ্ছি, বলে রিক।
নির্জন কামরায় পরস্পরের আলাপ জমে ওঠে, বিষয় ভূত। ভদ্রলোক বেশ সিরিয়াস ভাবেই ভূতের গল্প বলা শুরু করতেই ওরা দুজনে হেসে ওঠে। এর মাঝেই বাচ্চা ছেলেটি বাথরুম যাবে বলে উঠে গিয়েছিল, কখন ফিরল ওরা খেয়াল করেনি।
হাসবেন না কাকু, ভূত সত্যিই আছে। ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলার এই কথায় ওরা চমকে তাকাতেই দেখে সেই বাচ্চা ছেলেটির মুখটা রক্তে মাখামাখি, একটা চোখ যেন কেউ খুবলে নিয়েছে। বিভৎসভাবে হাসতে হাসতে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। কামরার আলোগুলোও দপ দপ করে নিভে গেল। বাইরে তখন তুমুল ঝড়। ভীতু ঋজু সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারাল। রিক মোবাইলের আলোতে দেখল ছেলেটির মা, বাবা দুজনের মুখই একইরকম রক্তে মাখামাখি। ভয়ানক হাসিতে সারা কামরা ভরে যাচ্ছে, কেমন একটা মিষ্টি গন্ধ। রিকও জ্ঞান হারাল।
নাও নাও, তাড়াতাড়ি মালগুলো ব্যাগে ভরে নাও। মুখের রক্ত মাখা মেক-আপ নিয়েই মহিলাটি তাড়া লাগাল। পুরুষটি বলে উঠল, এবার ভালো দাঁও মারা গেছে। সেই কলকাতার গয়নার দোকান থেকে ব্যাটাদের পিছু নিয়েছি। মহিলাটি বলে, পাঁচ লাখ টাকাও আছে। এবার কিছুদিন গা ঢাকা দেব। গতবারের সেই ছেলেটার মারা যাওয়াটা পুলিশ মোটেও ভুতুড়ে কাণ্ড হিসেবে দেখছে না। মহিলাটি বলে, কী করব বল, বাচ্চাটা হঠাৎ বাধা দেবে বুঝতে পারিনি। নিজেকে বাঁচাতে ওকে মারতে হল। এবার আমাদের পালাতে হবে। সামনের হল্টে গাড়ি স্লো হলেই লাফাব সবাই।
ওকি! বাবু তুমি এখনো হাসছো কেন? উত্তর না দিয়ে ছেলেটি একইভাবে হাসতে হাসতে তাদের দুজনের দিকে এগিয়ে আসে। তারা পেছোতে পেছোতে বাথরুমের খোলা দরজার সামনে এসেই আতঙ্কে শিউরে ওঠে। বাথরুমের ভেতরে তাদের সন্তানের মৃতদেহ। মুণ্ডুটা কেউ যেন প্রবল আক্রশে মুচড়ে দিয়েছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। সামনে তখনও ভয়ঙ্করভাবে হেসে চলেছে সেই ছেলেটি।
অন্ধকারের বুক চিরে ছুটে চলেছে অভিশপ্ত ট্রেনটি, কোনো এক অজানা গন্তব্যের দিকে। তার আওয়াজ ছাপিয়ে শোনা যাচ্ছে ভয়ঙ্কর এক হাসির আওয়াজ।
অলংকরণ- অমর লাহা
প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । জুন ২০১৯
Topic : Ghost story in Bengali, ভূত ভৌতিক গল্প, Best childrens ghost story, Chhotodre Bangla bhooter golpo, ছোটোদের ভূতের গল্প, গা ছমছমে ভূতের গল্প
0 মন্তব্যসমূহ