Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

কাঁকড়া মশায়ের উপাখ্যান ।। কৌশিক রায়

তোমরা যদি কোথাও কোনো গ্রামে, নদীর তীরে, অথবা দীঘা, পুরী, মুম্বাই, চেন্নাই-এ সমুদ্রের কাছে যাও, তাহলেই দেখতে পাবে তাদের। 'তারা' মানে কাঁকড়ারা। এমনিতে কিন্তু কাঁকড়ারা খুবই শান্তশিষ্ট প্রাণী। তবে, যদি একবার তাদের ঘাঁটাতে গেছো, তাহলে কিন্তু বেগতিক। একদম সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদের দুটো ধারালো দাঁড়া দিয়ে তোমার হাতে কামড়ে দেবে কর্কট-বাবাজি।

একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবে, কাঁকড়াদের দেহের ওপর আছে একটা মোটা, শক্ত খোলা বা 'ক্রাস্ট'। এজন্যই প্রাণীবিজ্ঞানীরা কাঁকড়াকে বলে থাকেন 'ক্রাস্টেসিয়ান'। কাঁকড়ার গিঁট বা সন্ধি থাকার জন্য (যেমন, আমাদের পায়ে হাঁটু আর হাতের কবজি ও কোনুই থাকে) কাঁকড়াকে 'আরথ্রোপডা' বলেও ডাকা হয়। মিষ্টি জলে আর সমুদ্রে প্রায় ৪৫০০ জাতের কাকড়া-র খোঁজ পেয়েছেন প্রাণীবিজ্ঞানীরা। কাঁকড়া-র কিন্তু একটা ছোট্ট লেজও আছে। তার দেহের মাঝখানের অংশে বা 'থোরাক্স'-এ গোটানো থাকে সেই লেজটা' অবশ্য কাঁকড়ার অন্যান্য জাতভাই, যেমন গলদা চিংড়ি আর বাগদা চিংড়ির লেজ বেশ লম্বা, কাঁকড়ার দেহের উপরের দিকের চওড়া খোলসের অংশটাকে বলা হয় 'ক্যারাপেস'। কাঁকড়ার দেহের প্রথম জোড়া পা-ই কিন্তু পরিণত হয়েছে দাঁড়াতে।

কাঁকড়ার কিছু প্রজাতি ডাঙাতে বাস করলেও বেশির ভাগ কাঁকড়ার বাস-ই কিন্তু মিষ্টি জলে সামুদ্রিক জলে। কাঁকড়াকে ইংরেজিতে কি বলে, সেটা অনেকেই জানো-'ক্র্যাব'। দক্ষিণ ইউরোপে 'লেনটেন ক্র্যাব' নামের এক প্রজাতির কাঁকড়াকে পৃথিবীর অনেক গরম দেশেই নদীতে দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত কাঁকড়ার ক্যারাপের নিচে দুটি গর্তের মধ্যে থাকা ফুলকা দিয়েই কাঁকড়া শ্বাসকার্য চালায়। ডাঙ্গার কাঁকড়াগুলোর দেহে ওই গর্তদুটি আকারে অনেক বড়ো। সেগুলো শ্বাসকার্যে ফুসফুসের কাজ করে।

কাকড়ার পা গুলো চ্যাপটা, অনেকটা হাঁসের পায়ের পাতা বা নৌকোর দাঁড়ের মতো। এই পা দিয়ে হামাগুড়ি অথবা পাশের দিকে হাঁটতে পারে। সব কিছুই খায় কাঁকড়ারা। ফেলে দেওয়া খাবার-দাবারকেও বাদ দেয় না এরা। কিছু কিছু কাঁকড়া আবার জলে থাকা অনেক ছোটো প্রাণীকেও খায়। জলের শ্যাওলা বা 'অ্যালগি' আর বিভিন্ন গাছের পাতাও খেয়ে থাকে কিছু কাঁকড়া।

'সন্ন্যাসী কাঁকড়া' (লিটল পি ক্র্যাব) আবার অনেক সময় বড়ো শামুক অথবা 'সী অ্যানিমোন' নামের এক ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীর সঙ্গে বাস করে। দুজনে একসাথে খাবার ভাগ করে খায়। এছাড়া প্রবাল কীট-এর সঙ্গেও বাস করে এক ধরনের কাঁকড়া। দুটো ভিন্ন ধরনের প্রাণীর এইভাবে একসঙ্গে থাকা, আর তাদের খাবার ভাগ করে খাওয়াকে প্রাণীবিজ্ঞানের ভাষাতে বলে 'মিথোজীবিতা' বা 'সিমবায়োসিস'। আবার মাকড়শা-কাঁকড়া নিজেকে আড়াল করে রাখতে নিজেকে ঢাকে বিভিন্ন সামুদ্রিক আগাছা আর স্পঞ্চ দিয়ে।

কাঁকড়াদের মধ্যে সবচেয়ে দৈত্যাকার চেহারা কিন্তু জাপান আর অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণের দ্বীপ তাসমানিয়াতে দেখতে পাওয়া দুটি জাতের কাঁকড়া। জাপানের সমুদ্রে দেখতে পাওয়া যায় কাঁকড়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ মিটারের মতো। তাসমানিয়ার কাঁকড়া অবশ্য কিছুটা খাটো-৪৬ সে.মি.র মতো। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে পাওয়া যায় এক ধরনের 'চোর কাঁকড়া'। এই জাতের কাঁকড়ারা নারকোলের শক্ত খোলা দাঁড়া দিয়ে ফুটো করে শাঁস খেয়ে এবং সেই খোলার মধ্যে আশ্রয় নেয়। বড়ো হলে ওই কাঁকড়ার তলপেটের দিকে শক্ত খোলা তৈরি হয়। তখন ওই কাঁকড়া নারকেলের খোলা ত্যাগ করে।

প্রায় সব কাঁকড়ারই জন্ম হয় ডিম ফুটে, ডিম থেকে বেরোনো কাঁকড়ার বাচ্চাগুলোকে বিজ্ঞানীরা নাম দেন 'জোইয়া'। সমুদ্রের কিনারাতে সাঁতরে বেড়ানো গোল দেহ আর পা-বিহীন এই কাঁকড়ার বাচ্চা বা লার্ভার দেহ একেবারে স্বচ্ছ কাঁচের মতো। বড়ো হওয়া পর্যন্ত কাঁকড়া, অনেকবার তার খোলস পাল্টায়। আস্তে আস্তে কাঁকড়ার পা গজায়, ধারালো হয় দাঁড়া। প্রকৃতির বুকে লড়াই করে বেঁচে থাকার জন্য তৈরি হয়ে ওঠে কাঁকড়াদের দেহ।

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । আগস্ট ২০১১

Topic :  কাঁকড়া মশায়ের উপাখ্যান, জানা অজানা, The anecdote of the crab masai, Talk about crabs for kids and Children

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ