Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

রক্ষে কর ।। হীরেন চট্টোপাধ্যায়



কথায় বলে না, বিপদ কখনো একা আসে না- সেই কথাটাই হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছিলাম তখন।

অবশ্য আমার আর এখন কিইবা টের পাবার বয়স, সবে তো ক্লাস সেভেন থেকে এইটে উঠেছি। পড়াশুনোয় যে তেমন ভালো তাও না, দাদা তো কিছু একটা বুঝিয়ে দিতে বসলেই বলে, রানুটার মাথায় কেবল তালতাল গোবর- মানদা মাসি জানলে ফাটিয়ে সব বার করে নিয়ে ঘুঁটে দিত। দাদা অবশ্যি জ্ঞানী-গুণী ছেলে, এইবারই বি.এস.সি পাস করল, বলতেই পারে, তা বলে পানুর কথায় কান দিই না আমি, দাদাও বলি না। দু-বছরের বড়ো ভাইকে কেউ দাদা বলে। পানু কথায় কথায় লাগতে আসে আমার সঙ্গে, আর বলে তোমার মেয়েকে সাবধান মাপেকে একেবারে ঝিকুরি হয়ে গেছে। দিদিমাই শুধু আমায় সাপোর্ট করে- জন্ম থেকেই দিদিমাকে আমাদের বাড়িতে দেখছি আমি, আমরা সবাই অবশ্য দিদিমাকে দিদি বলি, আমি, পানু, দাদা সবাই। কেন বলি তা জানি না। তো, দিদিই বলে, রানু আমাদের খুব বুঝদার মেয়ে, খবরদার কিছু বলবি না ওকে।

সত্যিই যে বুঝদার মেয়ে আমি, সেটা আমিও বুঝতে পারি। বাবা ফ্যাক্টরিতে দিন-রাত খাটে, সকাল থেকে সন্ধে অবধি। দুপুরে এক ঘন্টা শুধু বাড়ি এসে খেয়ে যায়। তাও আমার যে সব বন্ধু-বান্ধব আছে, আমাদের অবস্থা ঠিক যেন তাদের মতো নয়। রান্নাবান্না থেকে সংসারের সব কাজই তো প্রায় করে মা। মানদা মাসি আসে, ওই নামে মাত্র- বুড়ি মানুষ, বাসন কটা ধুতে আর ঘর মুছতেই দিন কাবার। ছুটির দিন লোকে বেড়াতে টেড়াতে যায়, আমাদের সেসব পাট নেই। একটু মাংস টাংস আনার কথা বললেও দেখি মায়ের জমানো টিনের বাক্স নাড়াচাড়া শুরু হয়ে যায়। তো, এইরকম সময় দাদার একটা সাধা চাকরি এইভাবে হাত ছাড়া হয়ে যাওয়া, এর চেয়ে বড়ো বিপদ আর কি হতে পারে আমাদের।

কিছুদিন থেকেই বাবা বলছিল মাকে, কানুটা পাশ করলেই বলব একবার বড়ো সাহেবকে, দেশে চলে যাবার আগে ছেলেটার একটা গতি করে যাও সাহেব। মা-ই সান্ত্বনা দিয়ে বলতো বাবাকে, কী বলছ, তিন-তিনটে পাস দিয়ে ওর আবার চাকরির ভাবনা! বাবা ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, চাকরির হাল তো জানো না, ওরকম পাস গ্রাজুয়েট এখন গড়াগড়ি খাচ্ছে চারদিকে।

-তাহলে উপায়?

-দেখি বলে সাহেবকে।

তা সাহেব কে বলে যে বিশেষ কিছু লাভ হয়নি সে তো বুঝতেই পারছি। নইলে রেজাল্ট বেরোবার দু-দিন পরেই দাদা ওই কলসার মতো গন্ডগ্রামে বেড়াতে চলে যায়।

ঠিক কাল দুপুরেই খেয়ে-দেয়ে রওনা হয়ে গেল দাদা। আর তারপরই ফ্যাক্টরি থেকে ফিরে বাবা একগাল হেসে বললে, যাক, ব্যবস্থা একটা হয়ে গেল বুঝলে।

-মানে? কিসের ব্যবস্থা?

-কানুর চাকরির ব্যবস্থা। বড়ো সাহেব সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে দেশে চলে যাচ্ছে পরশু, আজই আমায় ডেকে বললে, কাল সকালে নিয়ে এসো ছেলেকে- টাইম ক্লার্কের চাকরিটা করে দেব। যাক এতদিনে ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন।

-কি বলছ গো, কানু তো একটু আগেই রওনা হয়ে গেল।

-রওনা হয়ে গেল? কোথায়?

-কলসা।

কথা শুনে ধপাস করে বসে পড়েছে বাবা ওখানেই। কেন যে বসেছে তা আমিও একটু-আধটু বুঝি। বেড়াতে যাওয়া হয়ই না কোথাও, দু-বছর আগে কালী পুজোর সময় গিয়েছিলাম আমরা সবাই মিলে ওই কলসাতে। কলসা আমাদের দিদির বাপের বাড়ি। প্রতিবছর কালীপূজো হয় ভাগে, একবার দিদির ভাগে আর একবার দিদির ভাইদের ভাগে। একেবারে বেপট জায়গা। ট্রেনে করে প্রথমে যেতে হয় বর্ধমান, সেখান থেকে বেজায় ভীড় একটা বাসে চেপে কামাল। কামাল থেকে কলসা অনেক দূর, যানবাহন কিছু নেই। ক্ষেতের মধ্য দিয়ে ভাঙাচোরা রাস্তা আছে, ওরা বলে গড়ান। বাড়িশুদ্ধ সবাই গিয়েছিলাম বলে গরুর গাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল। আজব জায়গা। প্রায় সবার বাড়িই মাটির। ইলেকট্রিক লাইন নেই, দোকান বাজার নেই, এমনকি বেশিরভাগ বাড়িতে পায়খানা-বাথরুমও নেই। তো সেখানে যাওয়া মানে খবর দেবার ব্যবস্থাও কিছু নেই- টেলিফোন তো নেই-ই। মোবাইল তো ওখানে টাওয়ার নেই বলে দাদা নিয়েই যায়নি। সুতরাং কপালে হাত দিয়ে বসে পড়া ছাড়া আর উপায় কী!

উপায় একটাই ছিল, রক্ষে কর। কিন্তু ওই যে বললাম না, বিপদ কখনও একা আসে না- বিপদের ওপর এক মহাবিপদ বাধিয়েছে রক্ষে কর নিজে।

রক্ষে কর দিদিরই কীরকম কী সম্পর্কের বোনপো। বিয়ে-টিয়ে করেনি, চালচুলো নেই কোথাও, দিদির সঙ্গেই এসেছে। এসে এ বাড়িরই একজন হয়ে গেছে। অবশ্য লাভই হয়েছে আমাদের। যেকোনো কাজে লাগিয়ে দাও রক্ষে করকে, পারবে না এমন কোনো কাজ নেই। শুকনো দড়িপাকানো চেহারা, বয়সের গাছপাথর নেই, কিন্তু কাজে একেবারে দড়। এই যে পাণ্ডুয়াতে শুনেছি বাবাদের একটু চাষের জমি-টমি আছে- তার চালটা-আলুটা-গুড়টা সব ওই ঘাড়ে করে করে বয়ে আনছে রক্ষে কর। দোষ শুধু একটাই ওর, কথা নেই বার্তা নেই কাউকে কিছু না বলে হাওয়া হয়ে যায়। কোথায় যায়, কী করে কিছু ঠিক নেই, দু-চার দিন গেল, রক্ষে কর- কি গো মাসি বলে ঠিক এসে হাজির। একমাত্র সেই রক্ষে করকেই পাঠানো যেত কলসা, যাও এক্ষুনি গিয়ে দাদাকে ধরে নিয়ে এসো। কিন্তু কোথায় রক্ষে কর!

আজ সকালেই এসেছে পান্ডুয়া থেকে। নিয়ে এসেছে এক বাক্স খেসারির ডাল আর এক বস্তা পেঁয়াজ, বিক্রি করে এসেছে দশ বস্তা আলু। সে টাকাটাও রয়েছে তার কাছে, বাবার সঙ্গে দেখা হয়নি তো। বাবা যখন মিল থেকে ফিরল তখনও দেখেছি রক্ষে করকে, মনে আছে আমার- বাবা একটু জিরিয়ে মায়ের কাছে দাদার ওই কথাগুলো বলছিল, তার মধ্যেই আবার হাওয়া রক্ষে কর।

খোঁজা হলকিন্তু পাওয়া যাবে না কোথাও এটাও জানা ছিল। বাবা বলল, গেল, গেল এই বিপদের দিনে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেল গো- কম সে কম চার-পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে হাওয়া।

-থামো দিকি তুমি। দিদি ধমকে উঠল বাবাকে, টাকা পয়সার ওপর লোভ দেখেছ কোনোদিন ওর? মাথায় পোকা আছে, পালিয়েছে- ফিরে এসে পাই পয়সার হিসাব চুকিয়ে দেবে।

-তা তো দেবে, কিন্তু যখন আসবে, কাউকে ডাকতে পাঠিয়ে লাভ থাকবে! সাহেব তো ততক্ষণে পগারপার।

-সে তোমরা বোঝো, সাহেবের খবর আমরা কি জানি!

বাবাও কিছু জানে না, শুধু এটুকু জানে, কাল সকালে দাদাকে নিয়ে গিয়ে যদি হাজির করতে পারে মিলে, চাকরিটা হয়ে যাবে। লাল চামড়ার সাহেব তো, কথা যখন দিয়েছে তার কোনো নড়চড় হবে না। কিন্তু কথা হচ্ছে দাদাকে বাবা এখন পাচ্ছে কোথায়!

-একটা কাজ করো না বাপু- একটু ভয়ে ভয়েই বলল মা, দুটি মুখে দিয়ে তুমি নিজেই বেরিয়ে পড়ো না-

-মানে? কলসা?

-হ্যাঁ, মানে গিয়ে একেবারে হিড়হিড় করে টানতে টানতে-

-থামো থামো! হিড়-হিড় করে টানতে টানতে- বাবা গজ গজ করতে করতে বলল, বউয়ের পরামর্শে চলতে গিয়ে দশরথ বনবাসে দিয়েছিল রামচন্দ্রকে। আমি যে কলসা যাব, কতক্ষণ কামালের বাস আছে আমি জানি? আজকে পৌঁছাতে পারব কিনা তার ঠিক আছে? তারপর তো তাকে নিয়ে আসার চিন্তা!

-সে আজ যদি না নিয়ে আসতে পারো, কাল যখন ফিরবে-

-হয় না রে বাবা, ওসব হয় না। এসব কুলি কামারের চাকরি, হতেও যতক্ষণ যেতেও ততক্ষণ। বাথরুমে গিয়ে বেশিক্ষণ দেরি করলে চেয়ারে বসিয়ে দেয় অন্য লোককে। এখানে আমি না বলে-কয়ে দুম করে কামাই করে দেব! ছেলের চাকরি তো গেলই, এখন এই বুড়ো বয়সে নিজের চাকরিটা খুইয়েও কি আমি বুড়ো আঙ্গুল চুষব নাকি!

অগত্যা আর কিইবা করার আছে এখন! এমনিতেই দুপুরবেলা খুব একটা সময় থাকে না বাবার। খেয়ে-দেয়ে কেবল শরীরটা বিছানায় ঠেকাবার অপেক্ষা। ঘুম বাবার একেবারে সাধা, বিছানায় শরীর ঠেকল কি ফুরুত ফুরুত করে নাক ডাকার আওয়াজ। মিনিট দুয়েকের মধ্যে ওই নাক ডাকার শব্দেই ঘুম ভেঙে যাবে বাবার, উঠে পড়বে তড়াক করে। তো, সেই ভাবেই বেরিয়ে গিয়েছিল বাবা, তারপরই শুরু হল মায়ের গুজগুজুনী- বললাম এত করে, বেরিয়ে গেলেই তো হত। একবেলা না গেলে তোমার কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হত শুনি! রক্ষে করটাও পালাবার সময় পেল না- যাবি তো গায়ে হাওয়া লাগাতে দু-দিন পরে যেতে পারলি না।

অদৃষ্ট রে অপু, অদৃষ্ট! পাথরচাপা কপাল আমাদের- দিদির দুপুরে খেতে বসা মানে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, খায় কম, নাড়েচাড়ে বেশি, খেতে খেতে ঘুমিয়েও পড়ে কোনো কোনো দিন। বললে, রক্ষে করটাও হয়েছে তেমনি, জীবনে আর মানুষ হল না। ও থাকলে এখন চিন্তা।

-এখন গেল কি  একেবারেই গেল তার ঠিক কী! এতগুলো টাকা-

-না রে টাকা-পয়সার মর্ম বুঝলে সারা জীবন এমনি ফ্যা-ফ্যা করে বেড়ায়! ঠিক এসে জুটবে দেখবি দু-দিন পর।

বাবার ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা। জানে কোনো সম্ভাবনা নেই, তবু চাইছিল এদিক-ওদিক, আমিই বললাম, না বাবা রক্ষে কর আসেনি।

রক্ষে কর সকলেরই রক্ষে কর- দিদিরও তাই, আমারও তাই।

-বড়ো সাহেবের সঙ্গে কিছু কথা হল তোমার? মায়ের মনে এখনো আশা।

-পাগল! আমি তো পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি- দেখা হলে বলব কি আমি! তুমি যেচে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছ আর সে চাকরির ভয়ে মামার বাড়ি পালিয়েছে! কাল যে কী করে মুখ দেখাব আমি!

এরপর আর কিই বা বলবে মা। আমরাও সবাই চুপ, মা-বাবার গুজগুজুনিও বন্ধ হয়ে গেছে। টুকটাক যেসব মন্তব্য সেটা দিদিই করে চলেছে, অবশ্য সেরকম কথা তো দিদি সারাক্ষণ বলছে।

যেভাবে কেটেছে দিনটা, রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। শুয়ে পড়েছিলামও সকলে তাই। মাঝরাতে হঠাৎই ঘুমটা ভেঙে গেল। আচমকা ঘুম ভাঙলে, কেন ঘুম ভাঙল চট করে বোঝা যায় না। প্রথমে মনে হয়েছিল মেঘ ডাকছে, তারপরেই মনে হল বাড়ির দরজায় দুমদুম করে ধাক্কা মারছে কেউ, তারপরেই কার যেন তীব্র চিৎকার!

-কি সর্বনাশ, ডাকাত পড়েছে নাকি বাড়িতে!

আমি, দিদি আর মা শুই একঘরে। তাড়াতাড়ি উঠে দেখি ভয়ার্ত মুখে মা চেয়ে আছে। ও ঘরে পানু ডাকছে বাবাকে, বাবা ও বাবা- শোনো না কি হচ্ছে!

পানুর মিনমিনে গলা ছাপিয়ে দড়াম-দড়াম করে দরজার আবার ধাক্কা, আর সেই তীব্র চিৎকার, কি হল কী- এই সন্ধেবেলাতেই সব ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?

সন্ধেবেলা! ঘরে একটা ওয়ালক্লক আছে, সেদিকে চোখ পড়ল। সাড়ে বারোটা বেজে গেছে। রাত সাড়ে হল কিনা-

আমার ভাবনা-চিন্তার মধ্যেই হঠাৎ নড়ে উঠেছে দিদির শরীর, যেমন বিড়বিড় করে তেমনি করে বললে, ওমা, এ যে রক্ষে করের গলা।

-রক্ষে কর! এই মাঝরাতে! মা আঁতকে উঠেছে, ডাকাতের দলবল নিয়ে এল নাকি?

-কি যে বলিস অপু, দিদি উঠে বসেছে, যা যা, তালাটা খোল। রক্ষে কর এসেছে তাতে ভয়ের কি আছে!

 -হ্যাঁ, কিন্তু এত রাতে! বাবাই উঠে এসেছে চাবি হাতে, কী মতলব সেটা না জেনে-

-খোলো দিকি দরজা! ব্যাটাকে এমন শিক্ষা দেব- দিদি একটা হাই চেপে বলল, রাতদুপুরে একি উৎপাত বাপু তোর।

দিদির কথা শেষ হতে না হতে আবার এক চিৎকার, কি গো মাসি ও জামবাবু, তোমাদেরও কি ঘুম ভাঙছে না নাকি!

সকলে মিলেই এবার এগোলাম দরজার দিকে, বলতে কি একটু ভয়ে ভয়েই। তালা-টালা খুলে দরজার পাল্লা সন্তর্পনে একটু ফাঁক করতেই দু-হাতে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে দরজা রক্ষে কর। আর রক্ষে করের পাশে যাকে দেখতে পেয়েছি তাকে দেখে আমাদের চক্ষুচড়কগাছ!

-কানু!

-দাদা!

-এ কী রে তুই?

-ওমা কানুকে কোথায় পেলি?

একসঙ্গে একরাশ প্রশ্ন ঝাঁপিয়ে পড়ল রক্ষে করের ওপর। ওইরকম হুড়মুড়িয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল বলল, দাঁড়াও বাবা, একটু রেস্ট নিই। লাস্ট বর্ধমান-হাওড়া ধরেছি, এটা মিস করলে সারারাত পড়ে মশার কামড় খেতে হত ওই বর্ধমান স্টেশনেই।

-তার মানে, তুই কলসা গিয়েছিলি? দিদির গলায় খুব একটা বিস্ময় ছিল না।

-অ্যাঁ! সেকি! বাবা বললে।

যাব না? যে মুহূর্তে তোমার মুখে শুনেছি কানুকে সকালে  হাজরে দিতে হবে মিলে, সঙ্গে সঙ্গে ছুটেছি।

-তুমি শুনলেই বা কী করে? তোমাকে তো কই দেখেছি বলে আমার মনে পড়ছে না!

-আমি তো দেখেছি। কথাগুলোও শুনেছি। এরপর আর ওয়েট করতে পারি! হাজার হোক, ছেলেটার চাকরি বলে কথা!

-বসো বসো এখানে- মা এবার তাকাল দাদার দিকে, কী কাণ্ড! কিছু খেয়ে টেয়ে এসেছিস কি তোরা?

-আমি খেয়েছি, জোর করে খাইয়ে দিয়েছে মামারা, রক্ষে করই কিছু খায়নি।

-খাইনি বলো না দাদা, ঝালমুড়ি খেয়েছি, চা-বিস্কুট খেয়েছি। এবার রাত দুপুরে তোমার মা ভাত বসাবে,হপহপিয়ে মেরে দেব।

-আরে এক্ষুনি দিচ্ছি-কা কাজ তুমি করেছ বল তো! কানুটাকে ধরে এনে হাজির করেছ-

-করতেই হবে, নইলে আমার নাম রক্ষে কর কেন! রক্ষে কর জামাটা গা থেকে খুলে খুলে ফেলে বলল, ও পৌঁছে যাবার আধঘণ্টার মধ্যেই ধরেছি গিয়ে ওকে আমি। মামাদের বলেছি, একটুও সময় নেই, যা হোক করে ফিরতে হবে আজ।

-তারপর?

-দুই মামাই সাইকেলে করে কামালে পৌঁছে দিল। বাস তো আার আসে না- অজপাড়া গাঁ বলে কথা- শেষ পর্যন্ত ওই লাস্ট ট্রেন ছাড়ার আগের মুহূর্তে-

-দুগগা-দুগগা! হাত মাথায় ঠেকিয়ে দিদি বললে, আমিও খানিকটা আন্দাজ করেছিলাম এই রকমই- আজি পাণ্ডুয়া থেকে এলি, খাওয়া-দাওয়া না করে যাবি কোথায়! তা হতভাগা একটু জানিয়ে যেতে কী হয়েছিল তোমার অ্যাঁ? সঙ্গে অতগুলো টাকা!

-অ! ভাবলে রক্ষা কর টাকা নিয়ে হাওয়া। খ্যাক খ্যাক করে হেসে বলল, ওটাকা আমি জামবাবুর হাতবাক্সয় রেখে গেছি। ওরকম অবস্থায় টাকার কথা আর কারো মনে থাকে, বল!

-নাও-নাও, হাত মুখ ধুয়ে নাও। মা বললে, কী বাঁচালে যে তুমি! খোকার চাকরি বলে কথা-

-তবে! সেই জন্যই তো এত দৌড়াদৌড়ি! রক্ষে কর আর এক দফা হাসির পাট চুকিয়ে উঠে পড়ল, দিদির দিকে চেয়ে বলল, আরে আমার নামটা তোমরা কি  দিয়েছিলে সেটা তো দেখতে হবে! রক্ষে কর যদি রক্ষে না কর করে তো কে করবে শুনি!

আর একবার হেসে উঠতে যাচ্ছিল রক্ষে কর, তার সুযোগ না দিয়েই বাবা জড়িয়ে ধরল ওকে।

 

অলংকরণ- রাহুল মজুমদার

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । শারদীয়া ১৪২০

Topic : Best Social story for childrens in Bengali, সামাজিক গল্প, Social story in Bengali, Bangla Social short story, Best children's story

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ