Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

রাখালিয়া বাঁশি ।। বিপ্লব রায়



একটা মস্ত বড়ো গ্রাম। অনেক মানুষের বাস সেই গ্রামে। গ্রামের সব বাড়ির মাটির দেওয়াল আর খড়ের চাল। শুধু মাঝখানে হেমু চৌধুরীর মস্ত বড়ো ইঁটের দোতলা বাড়ি। চৌধুরীবাবু ভীষণ কৃপণ ও লোভী ব্যক্তি। চাষিদের কম পয়সায় কাজ করানো তাঁর নিত্যদিনের অভ্যাস। কী করে লোক ঠকাবে সেই চিন্তা সারাদিন মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়। সেরেস্তায় বসে হিসেবের খাতা উল্টে পাল্টে দেখেন আর ফন্দি আঁটেন কোন চাষের জমিতে ভালো ফসল হয়েছে। চাষিরা যতই ঋণ পরিশোধ করুক না কেন চৌধুরীবাবুর খাতায় ঋণের পরিমাণ কিছুতেই কমে না। কিছুদিন হল তাঁর চোখ পড়েছে হেলার উপর। বাপ মরা ছোট্ট ছেলেটি লোকের বাড়ির ফাইফরমাশ খাটে। চৌধুরীবাবু একদিন তাকে ডেকে বলেন, হেলা আমার গরুটিকে মাঠে নিয়ে ঘাস খাওয়া। ওর পেট ভরলে রোজ পাঁচ টাকা দেব।

হেলা তো ভীষণ খুশি। অন্যের গরু ছাগল চরালে বড়ো জোর দু-বেলা খাবার দেবে। সেখানে রোজ পাঁচ টাকা! এক কথায় রাজি। পরের দিন ভোর হতেই গামছায় মুড়ি বেঁধে সে বেরিয়ে পড়ে চৌধুরীবাবুর গরু নিয়ে। সারা দিন ঘুরে গরুকে ঘাস খাওয়ায়, গাছের কচি পাতা ভেঙ্গে মুখে ধরে। সারা শরীরে হাত বুলিয়ে আদর করে। গরুটির তৃষ্ণা পেলে খাড়ির পাড়ে নিয়ে জল খাওয়ায়। মাঝে মাঝে গরুটির পেটের দিকে তাকিয়ে দেখে নেয় পেট ভরেছে কি না। গরুটিকে ঘাস খাওয়ানোর ফাঁকে ফাঁকে নিজেও খেয়ে নেয়। মুড়িতে কি আর পেট ভরে! খিদায় পেট চোঁ-চোঁ করে সারাদিন। আকাশের দিকে তাকিয়ে বেলা দেখে, আর ভাবে সন্ধে হলেই পাঁচ টাকা পাবে। হ্যাঁ, গরুটি বুঝিয়ে দিলেই পাঁচ টাকা। এর মধ্যে নিশ্চয়ই গরুটি পেট ভরে যাবে।

দেখতে দেখতে সোনালি আবির ছড়িয়ে সূর্য ডুবতে চলেছে। গরুটির পেটের দিকে তাকিয়ে হেলা ভীষণ খুশি। পেটটা পুরোপুরি ভরে গেছে। ওর মুখেও অরুচি, ঘাসে আর মুখ দেয় না। পরম আনন্দে হেলা মেঠো পথ ধরে গান গাইতে গাইতে চৌধুরীবাবুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাস্তায় সন্ধ্যা গাঢ় হয়ে আসে। বৈঠকখানার বারান্দায় একটা ইজি চেয়ারে বসে চৌধুরীবাবু আয়েস করে গড়গড়ি টানছেন। চারিদিকে আলো ঝলমল করছে। হেলাকে দেখে সোজা হয়ে বসেন তিনি। বারান্দা থেকেই গরুটিকে নিরীক্ষণ করে হেলার উদ্দেশ্যে বলেন, গরুটির পেট ভরেনি, আরো বেশি করে খাস খাওয়াতে হবে। না হলে পাঁচ টাকা দেব কী করে!

-গরুটির তো পেট ভরেছিল বাবু। ঘাস আর খেতে চাই ছিল না। মাথা চুলকে উত্তর দেয় হেলা।

-আজে-বাজে ঘাস দিলে কি গরু খায়! এই নে দু'টাকা। কাল গরুর পেট ভরলে পাঁচ টাকা দেব।

উপায়আন্তি না দেখে দু-টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরে হেলা। এইভাবে কয়েকদিন কেটে যায়। গরুর পেটও ভরে না, আর সে পাঁচ টাকা মজুরিও পায় না। সারাদিন না খেয়ে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়ায়। কাছে পিঠে ভালো ঘাস পাওয়া যায় না। একদিন গরুকে ঘাস খাওয়াতে খাওয়াতে মাঠের পর মাঠ পার হয়ে সে অনেক দূরে চলে যায়। চারিদিক ধু-ধু করছে। কোথাও কোনো মানুষের নাম গন্ধ নেই। ফাঁকা মাঠের মধ্যে একটি মস্ত বড়ো বটগাছ। আর সেই গাছের সামনে একটি সরোবরে অনেক পদ্ম ফুল ফুটে আছে। পুকুরের পাড়ে নরম সবুজ ঘাসের গালিচায় নানা রঙের ফুল ফুটে আছে। আর ফুলের আশেপাশে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রজাপতি আর ফড়িং উড়ে বেড়াচ্ছে। হরেক রকম রং তাদের। বটগাছের ডালে কিচিরমিচির করছে কত ধরণের পাখি। হেলা অবাক চোখে তাকিয়ে ভাবে কোথায় এলাম। গরুটিও পরমানন্দে ঘাস খেতে থাকে সেখানে। খিদে আর ক্লান্তিতে বটগাছের ছায়ায় শরীর এলিয়ে দেয় হেলা। কিছুতে স্বস্তি পায় না সে। খিদেয় ছটফট করতে থাকে। তবু চোখ বুজে শুয়ে থাকে। হঠাৎ কে যেন বটগাছের উপর থেকে বলে,

দশ-পা দূরে আছে পড়ে

রাখালিয়া বাঁশি

সেই বাঁশিতে তুললে সুর

দুঃখ যত হবে দূর।

চমকে ওঠে হেলা। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। একটু দূরে দেখে একটা বাঁশি পড়ে আছে। অবাক হয়ে ভাবে বাঁশিটি কোথা থেকে এল। বাঁশি দেখলে কার না বাজাতে ইচ্ছা করে। হেলা দেরি না করে বাঁশিটি হাতে নেয়। যেই বাঁশিটি বাজাতে যাবে, কে যেন আবার বলে-

করলে লোভ পড়বে কোপ

রাখবি সদা মনে

রাখালিয়া বাঁশির কথা

কেউ যেন না জানে।

আবার এদিক ওদিক তাকায়। না কেউ নেই। হেলা খুব সাহসী। নইলে ফাঁকা মাঠে একা একা গরু চরাতে পারে! পেটের খিদে নিয়ে যেইনা বাঁশিতে সুর ধরেছে অমনি আকাশ থেকে নানা ধরণের খাবার তার সামনে এসে পড়ে। একদম গরম গরম। ভাত, ডাল, মাছ, মণ্ডা, মিঠাই আরো কত কি! হেলা অবাক হয়ে ভাবে স্বপ্ন দেখছি না তো! কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না সে কোথা থেকে খাবারগুলো এল।

পেটে খিদে, কারণ খুঁজে কি হবে। তাড়াতাড়ি সে খেতে বসে। এত খাবার আগে কোনোদিন দেখেনি। পেট ভরে খায়। খাবার পর আবার বটগাছের নিচে শুয়ে ভাবে খাবারের সঙ্গে একটা জামা কাপড় পেলে বড়ো ভালো হত। সবই ছিঁড়ে গেছে। ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে বটগাছের ডালপালার দিকে তাকায়, দূরে নীল আকাশের দিকে তাকায়- না, জামা কাপড় উড়ে এসে পড়ে না।

বাঁশিটি হাতে নিয়ে আবার ফুঁ দিয়ে সুর তুলতেই ঝুপ করে নতুন জামা-কাপড় সামনে এসে পড়ে। হেলার দারুণ মজা লাগে। ছেঁড়া জামা কাপড় পাল্টে নতুন জামা-কাপড় পরে সে। গরুটি তখনও আপন-মনে ঘাস খাচ্ছে। কোনো বন্ধু নেই হেলার। ভাবে, বটগাছে থাকা পাখিদের সঙ্গে খেললে ভালো লাগত। বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে সুর তুলে সে পাখি, ফড়িং আর প্রজাপতিদের বন্ধু বলে ডাকে খেলার জন্য। অমনি সবাই উড়ে আসে তার সামনে।

টিয়া, কাকাতুয়া, ময়না, বক, চিল আরো কত পাখি। কয়েকশো নানা রঙের প্রজাপতি আর ফড়িং একবার তাকে ছুঁয়ে দূরে চলে যায় আবার ফিরে আসে। টিয়াদের মধ্যে কয়েকজন আবার শূন্যে ডিগবাজি খায়। ময়না মধুর গান ধরে। কাকাতুয়া অমনি গানের সঙ্গে পা মিলিয়ে নাচতে শুরু করে। আনন্দে কখনো হেলা হাততালি দেয়, কখনো আবার শূন্যে দু-হাত তুলে নাচে। এত আনন্দের মধ্যে কখন যে দুপুর গড়িয়ে গেছে বুঝতে পারেনি সে। আকাশটা লাল করে একটা সোনার থালা সরোবরের পশ্চিম পাড়ে নেমে আসছে। এক ঝাঁক সাদা বক তখন শূন্যে ডানা মেলে হেলাকে বলে,-

এখন বাড়ি যাও বন্ধু

সন্ধে নামে ওই

পথ চেয়ে ভাবছে মা

রাখাল ছেলে কই

হেলা ভাবে, তাইতো সন্ধে নেমে আসছে! এতটা পথ সে যাবে কীভাবে! বাঁশিটি নিয়ে ফুঁ দিয়ে আবার মনের কথা বলতেই আর এক অবাক কাণ্ড। কাছেই চৌধুরী বাড়ির দালান দেখা যাচ্ছে। দেরি না করে বাঁশিটি বটগাছের কোটরে রেখে হেলা বন্ধুদের কাছে বিদায় নেয় সেদিনের মতো। ভীষণ আনন্দ আর উদ্দীপনা নিয়ে এক মুহূর্তে পৌঁছে যায় চৌধুরীবাবুর বাড়ি। নতুন জামা গায়ে হেলাকে দেখে চৌধুরীবাবুর চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। গরুটির পেটও ভরে উঁচু হয়ে আছে। অন্যদিনের মতো চৌধুরীবাবু আবার বলে, গরুটির পেট আজও ভরেনি, দু-টাকাই নে।

হেলা খুশি মনে দু-টাকা নিয়ে আনন্দে নাচতে নাচতে বাড়ি যায়। নতুন জামা গায় দেখে হেলার মা ভাবে চৌধুরীবাবু দিয়েছেন। মনে মনে আরো ভাবে, চৌধুরীবাবুর মতো মানুষ হয় না। গাঁয়ের লোকে মিছিমিছি তার বদনাম করে।

প্রতিদিন সকাল হতেই হেলা বটগাছের তলায় এসে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করে। খিদে পেলে বাঁশি বাজিয়ে খাবার চায়। বাঁশি বাজিয়ে আরো নতুন বন্ধু চায়। অমনি বক ও চিলদের সঙ্গে দূর দেশ থেকে উড়ে আসে অনেক বালি হাঁস। তারাও হেলার খেলার সঙ্গী। বালি হাঁসদের রাজা হেলাকে পিঠে নিয়ে দূর আকাশে ঘুরে বেড়ায়। নীল শামিয়ানার নিচে টুকরো টুকরো সাদা মেঘের মধ্যে দিয়ে ভেসে যায় ওরা বহুদূরে। হাত দিয়ে সরিয়ে দেয় সে সাদা সাদা নরম তুলোর মতো মেঘ। আকাশের নিচে কখনো দেখা যায় সবুজ বন। কখনো আবার বিস্তৃত নীল জলরাশি দেখে বালিহাঁসের রাজাকে সে জিজ্ঞেস করে, ওটা কী?

-সাগর, নীল সাগর। তুমি যাবে? বালি হাঁসের রাজা জিজ্ঞেস করে।

-হ্যাঁ, যাব। আমাকে নিয়ে যাবে? জিজ্ঞেস করে হেলা।

অমনি বালি হাঁসের রাজা হেলাকে নিয়ে যায় নীল সাগরের মাঝে ছোট্ট একটা সবুজ দ্বীপে। খুব সুন্দর সেই দ্বীপ। হেলাকে দেখে সমুদ্রের সাদা ফেনিল ঢেউ আছড়ে পড়ে পাড়ে। ভিজিয়ে দেয় ওর সারা শরীর। আনন্দে পাগল হয়ে যাবার জোগাড়। ঢেউ সরে যেতে সে দেখে অনেক ঝিনুক আর রঙিন পাথর পড়ে আছে। দু-হাতে কুড়িয়ে নেয় সে ওর ছোটোবোন আর বটতলার বন্ধুদের জন্য। বালি হাঁসের রাজার পিঠে চড়ে আবার ফিরে আসে সে বটতলায়। বন্ধুদের উপহার দেয়। সবাই ভীষণ খুশি। এইভাবে বেশ আনন্দে কাটে হেলার দিন।

সব সময় নতুন জামা গায় রাজকুমারের মতো দেখতে লাগে হেলাকে। চৌধুরীবাবু কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না এত নতুন জামা সে পায় কোথা থেকে। মনে মনে ঠিক করেন তিনি হেলার উপর নজর রাখবেন।

সেদিন বটতলায় মনমরা হয়ে বসে আছে হেলা। দুচোখের কোনে জলের ধারা। প্রজাপতি পাখি বন্ধুরা সবাই চিন্তিত। একে অপরকে জিজ্ঞেস করে, বন্ধুর কী হয়েছে? কেউ কিছু বলতে পারে না। সবাই হেলাকে ঘিরে বসে আছে। ওর জন্য সবারই মন খারাপ। টিয়া পাখিরা নানা অঙ্গভঙ্গি করে, হেলাকে হাসানোর জন্য, কিন্তু পারে না। প্রজাপতিরা আলতো করে রঙিন পাখা ঝাপটা দেয় ওর মুখে। তাতেও কিছু হয় না। অবশেষে হেলার মনের ভাষা পড়ে নেয় ময়না। সে সকলের উদ্দেশ্যে বলে, বন্ধুর মায়ের খুব অসুখ। চিকিৎসার টাকা নেই। তাইতো বন্ধুর মন খারাপ।

সেই কথা শুনে সবাই ব্যকুল হয়। ফুলেরা মূর্ছা যায়। কিন্তু কিবা করার আছে। ওদের কাছে তো টাকা নেই। সবাই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, বন্ধু, তোমার মা ভালো হয়ে যাবে। কিছুতে বুঝে উঠতে পারে না সে কোথা থেকে মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা আনবে।

এমন সময় বটগাছের ভেতর থেকে কে যেন আবার বলে-

চিন্তা কেন করিস মিছে

আছে রাখালিয়া বাঁশি

চাইলে পরে টাকা পাবি

মায়ের মুখে ফুটবে হাসি।

হেলা ভাবে, তাইতো, বাঁশি বাজিয়ে টাকা চাইলে মন্দ হয় না। অমনি রাখালিয়া বাঁশিতে সুর তুলে কাতরভাবে মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা চায় সে। মুহূর্তের মধ্যে একটা দমকা হাওয়ায় বট গাছের ডালপালাগুলি কেঁপে ওঠে। আর সঙ্গে সঙ্গে ওই গাছের ডাল থেকে ঝুরঝুর করে শুকনো পাতার মতো মাটিতে খসে পড়ে একের পর এক টাকার নোট। অনেক-অনেক টাকা। হেলা তো অবাক। ফুল, প্রজাপতি, ফড়িং ও পাখিরা সবাই খুশি হয়। হেলার সঙ্গে ওরাও টাকাগুলি এক জায়গায় জড়ো করে। তারপর গামছায় পুঁটলি করে টাকাগুলি নেয়। কাকাতুয়া তখন হেলাকে বলে, আর দেরি করো না বন্ধু। এখন বাড়ি যাও। মা যে তোমার কষ্টে আছে। টিয়া, ময়না সবাই কাকাতুয়ার কথায় সম্মতি জানায়।

হেলা প্রতিদিনের মতো বট গাছের গোড়ায় রাখালিয়া বাঁশিকে শুকনো পাতা দিয়ে ঢেকে রাখে। কেউ যাতে দেখতে না পায়। তারপর চৌধুরীবাবুর গরুটি নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয় সে। প্রজাপতি, ফড়িং ও পাখিরা সবাই মিলে একসঙ্গে তাকে বলে, আবার এসো বন্ধু।

আড়াল থেকে চৌধুরীবাবু হেলার কাণ্ডকারখানা অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছিলেন। সবকিছু দেখে তিনি তো অবাক। নিজের চোখ দুটিকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেন না। ভাবেন, স্বপ্ন দেখছি না তো। এতো যেমন-তেমন বাঁশি নয়। এ যে জাদুকরী বাঁশি! এ যে সাত রাজার ধন মানিক! ছুটে গিয়ে বটগাছের গোড়ায় হুমড়ি খেয়ে পড়েন। দুই হাত দিয়ে শুকনো পাতা সরাতেই জাদুকরী বাঁশিটি দেখতে পেয়ে হাতে তুলে নেন। খুশিতে তাঁর মন তিড়িং-বিড়িং করে নাচতে থাকে। ভাবেন, পৃথিবীর সব ধন এখন তাঁর। বিড়বিড় করে বলতে থাকেন, টাকা চাইব, না-না শুধু টাকা না, সোনা, হীরে, মানিক সব চাইব! অমনি বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে কখনো টাকা চান, আবার কখনো সোনা, হীরে, মানিক চান।

কিন্তু কিছুতেই বাঁশিটি বাজাতে পারেন না আর। বাঁশিতে ফুঁ দিতে দিতে তাঁর চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। ক্লান্ত হয়ে ঘনঘন নিশ্বাস নিতে থাকেন। হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়েন মাটিতে। একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বাঁশিতে ফুঁ দিতে থাকেন। না, অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বাঁশিটি বাজাতে পারেন না। অবশেষে বিরক্ত হয়ে বাঁশিটিকে মাটিতে সজোরে আছাড় মারেন। অমনি বাঁশিটি শূন্যে ভাসতে থাকে। তিনি বাঁশিটিকে দুই হাত দিয়ে ধরতে চেষ্টা করেন, পারেন না। বাঁশিটি ধীরে ধীরে বটগাছের সঙ্গে মিশে যায়। কে যেন আবার বটগাছের ভিতর থেকে বলে ওঠে-

মনের ভিতর লোভের বাসা

হিংসা ভরা হাসি

তোর ডাকে দেবে না সাড়া

রাখালিয়া বাঁশি।

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা ।  মে ২০১১

Topic : A Fairy tales in Bengali, রূপকথার গল্প, Fairy tales stories, Bangla Fairy Tales, রাখালের গল্প, জাদু বাঁশির গল্প, পাখি, প্রজাপতি, ফড়িং, ফুলের বন্ধুর গল্প

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ