Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

সাইকেল রেস ।। অভিষেক সেনগুপ্ত



চোখের সামনে দিয়ে যেন কয়েককটা প্রজাপতি উড়ে গেল। দুটো লাল। তিনটে সবুজ। দুটো বেগুনি। একটা সাদা। সাইকেলগুলো সত্যি প্রজাপতির মতো দেখতে। চালকদের মাথায় রঙিন তেকোনা হেলমেট। জ্বলজ্বলে সবুজ-লাল-নীল টি-শার্ট। পায়ে বাহারি স্নিকার। অনেকদিন আগে আকাশের রং-এর বন্যা দেখেছিল মালু। তখন ওর বয়স আরো কম। হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। মা বলেছিল, ওটারে রামধনু কয়!

সাইকেলগুলো রামধনুতে চোবানো মনে হচ্ছে মালুর। প্রজাপতির মতো রংবাহারি পাখা মেলে উড়ছে। ভাল্বের মুখটা বাঁ হাতে চেপে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখেছিল সে। এরকম একটা সাইকেল যদি থাকত তার।

মালু, অ্যাই মালু, হতভাগা লিকগুলো সারলি? আর কতক্ষণ লাগবে রে তোর?

ধমকের চোটে চমকে উঠল মালু। তপনদা গজগজ করছে। কাজে মন দিল মালু। এই মুহূর্তে একটা লরঝরে সাইকেল ওর সামনে পড়ে। হ্যান্ডেলটা বেঁকে গেছে। সামনের আর পেছনের চাকার মাডগার্ড দুটো চালুনির মতো ফুটো ফুটো। বদলাতে হবে। রি দুটোতে জং ধরেছে। টাল ভাঙতে হবে। স্পোকগুলো বাঁকাচোরা। ক্ষয়ে গেছে টায়ারদুটো। পেছনের চাকায় তিনটে লিক পেয়েছে মালু। সামনের চাকাটাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এগুলো সেরে জায়গায় জায়গায় গ্যাটিস দিয়ে টায়ারটাকে ঘিরে টিউব ভরবে। সাইকেলটার সমস্ত নাট-বল্টু টাইট দেবে। তারপর পোড়া মোবিল দিয়ে গা-গতর মুছে দিলে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা সাইকেলটা আর চেনা যাবে না। রদ্দির দরে কেনা জিনিসটা তপন বেচে দেবে হাজারখানেক টাকায়। নিউটাউনের জোড়া শিবতলায় তপনের সাইকেলের দোকান রমরম করে চলে। সেকেন্ড হ্যান্ড মাল কেনার জন্য খদ্দেরদের ভিড় লেগেই আছে।

মালু শোন? তপনের ডাকে প্রমাদ গুণল মালু।

সকাল আটটা থেকে সন্ধে পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা খাটতে হয় মালুকে। চুন থেকে পান খসলেই চড়-থাপ্পড়। আজ সকাল থেকে শুধু এই সাইকেলটা নিয়ে পড়ে আছে সে। সাড়ে দশটা বাজে। এখনো কাজ শেষ হয়নি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তপনের দিকে এগিয়ে গেল মালু। তার মতো আরও চারজন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কাজ করছে। মালু গিয়ে দাঁড়াল তপনের সামনে। এমনিতেই কালো চেহারা। কালিঝুলি মাখা ছেঁড়া স্যান্ডো গেঞ্জীতে পোড়া কাঠের মতো লাগছে মালুকে। হিসেবের খাতায় চোখ বোলাচ্ছে তপন।

মুখ না তুলেই বলল, কি ব্যাপার তোর? একটা সাইকেল সারতে কতক্ষণ লাগে? দাওয়াই দিতে হবে নাকি?

আজ মালুর শরীরটা ভালো নেই। কাল রাত থেকে জ্বর। তবু কাজে এসেছে। বাবা মারা যাওয়ার পর তাকেই সংসার টানতে হয়। তিন ভাইবোনের মধ্যে সেই সবচেয়ে বড়ো। মা কয়েক বাড়ি বাসন মাজার কাজ করে। তবে আজকাল আর পারে না। বয়স হয়েছে। ষোলো বছরেই মালুই ভরসা তাদের। সে কাজে না গেলে দু'মুঠো জুটবে কি করে! পায়ের নখ দিয়ে মাটি খুঁটছিল মালু।

তপন আবার বলে উঠল, শোন, সাইকেলটা পরে সারবি। তুই সি-এস ব্লক চিনিস?

ওই যেখানে বিরাট মুদিখানার দোকান হয়েছে? বলল মালু।

হ্যাঁ, স্পেন্সার্সের পিছনে একটা দুতলা বাড়ি আছে। চুয়াল্লিশ নম্বর বাড়ি। ওখানে গিয়ে আমার নাম করবি ।ওদের বাড়িতে একটা রেসিং সাইকেল আছে। নিয়ে চলে আয়।

নিউটাউন জায়গাটা হু-হু করে বদলে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও এখানে গরু চরত। বিস্তীর্ণ জলাভূমি ছিল। এখন সেসব লোপাট। হাইরাইজ ছেয়ে গেছে। ওয়েবলটা ক্রস করলে আর চেনাই যায় না। বৃহৎ কলকাতা ক্রমশ গিলে নিচ্ছে নিউটাউনকে। বন্ধুদের সঙ্গে সাইকেলে করে একবার সল্টলেকে ঘুরতে গেছিল মালু। ছবির মতো সাজানো সমস্ত বাড়ি দেখেছিল। খুব ভালো লেগেছিল তার। রাজারহাটে সি-এস ব্লকটাও সেইরকম। জোড়া শিবতলা থেকে হেঁটে মিনিট পনেরো দূরত্ব। মালুর লাগল অনেক বেশি। কী করবে, তার ডান পা-টা তো আর বাকিদের মতো নয়। পোলিওর জন্য পা-টা লিকলিকে। একদম জোর নেই। পাঁচটা আঙ্গুল ঢুকে গেছে চেটোতে। হাত মুঠো করলে যেমন দেখতে লাগে তেমন। পায়ের মুঠোয় ভর করে হাঁটতে হয় তাকে। সে যখন জন্মেছিল তখন নাকি স্বাভাবিক ছিল ডান পা-টা। পোলিও না খাওয়ানোয় এমন হয়েছে। মালুর মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় বাবা-মার ওপর। এটুকু করতে পারত। তাহলে তাকে প্রতিবন্ধী জীবনটা ট্রেনে বেড়াতে হত না। থোকা থোকা সবুজে ঘেরা  সি-এস ব্লকটা। বাগানগুলোতে ফুল ভরে রয়েছে। রাস্তার দুই পাশে ফুটপাথে ঝাউ, পাতাবাহার গাছ। নিউটাউন পুরসভা এগুলো দেখভাল করে। নিয়ম করে জল দেয় দুবেলা। এই দুপুর ছুঁই ছুঁই সকালেও সি-এস ব্লকে এসে মন ভরে গেল মালুর। তপনের বলা চুয়াল্লিশ নম্বর বাড়িটা সামান্য খুঁজতেই পেয়ে গেল। বিশাল দোতলা বাড়িটা যেন ঘুম থেকে উঠেছে সবে। অধিকাংশ বাড়ি বাংলো টাইপের। তবুও এই বাড়িটা ঝলমল করছে দিনের আলোয়। দুধ সাদা রং। মালুর আক্ষেপ হল, এইরকম কোনো বাড়িতে কেন জন্মাল না সে।

কলিংবেল বাজাতে লুঙ্গি পরা এক বুড়ো দরজা খুলল। এই বাড়ীতে কাজ করে বোধহয়। মালু তাকে বলল, তপনদা পাঠিয়েছে সাইকেলটা নেওয়ার জন্য।

মালুকে দাঁড় করিয়ে রেখে ভেতরে চলে গেল লোকটা। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাড়ির ভিতরটা দেখতে লাগল। সাদা মার্বেল পাথরের মেঝের ওপর বাদামি সোফাসেট। হালকা গোলাপী রঙের দেওয়ালে কী সব ছবি ঝুলছে। মাথার ওপর একটা ঝাড়বাতি। এটাকে বোধহয় বসার ঘর বলে।

ভেতরে আয়, বুড়োর ডাকে চটক ভাঙল মালুর। সে মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে গেল। ড্রয়িংরুম ছাড়িয়ে করিডরের সামনে একটা ঘর। বুড়ো লোকটা উল্টো দিকের দরজাটা খুলতেই হুড়মুড় করে সবুজ আলো ঝাঁপিয়ে পড়ল মালুর ওপর। কয়েক পা হেঁটেই বাগানে নামতেই রেসিং সাইকেল দেখতে পেল। সামনের চাকাটা দোমড়ানো-মোচড়ানো। বোধহয় কোনো গাড়ি এসে মেরে দিয়েছিল। বাগানের শিরিষ গাছের গায়ে হেলিয়ে রাখার সাইকেলটা। এরকম সাইকেল সে নিউটাউনের রাস্তায় দেখেছে। প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়ায়। এগুলো গিয়ার বদলে স্পিড বাড়ানো যায়।

বুড়োটা বলল, দাঁড়া ছোটোবাবুকে ডাকি। তারপর নিয়ে যাস।

সাইকেলটা দীর্ঘদিন বোধ হয় এভাবেই পড়ে রয়েছে। পুরু ধুলোয় হলদে-সবুজ রংটা চাপা পড়ে গেছে। সিট কভারটা ছেঁড়া। সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝুলছে একটা বেগুনি রঙের তেকোণা হেলমেট। মালু ভাবল, একটা রিক্সা নিয়ে এলে ভালো করত। জোড়া শিবতলা পর্যন্ত এটাকে টেনে নিয়ে যাওয়া তার পক্ষে মুশকিল। সাইকেলটাকে টেনে সোজা করতেই একটা ক্যাঁচ-ক্যাঁচ আওয়াজ ভেসে এল পেছন থেকে। মালু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, একটা হুইলচেয়ারে বসে একটা ছেলে। তার থেকে বয়সে একটু বড়োই হবে ছেলেটা। একমাথা কোকড়ানো চুল। ভীষণ ফরসা। কোল থেকে একটা সাদা চাদর পা পর্যন্ত ফেলা। দুটো উদাসী-মায়া ভরা চোখে ছেলেটা তাকিয়ে রয়েছে সাইকেলটার দিকে। কী হয়েছে ওর? একটা ভাঙা সাইকেল কেন এভাবে দেখছে, বুঝতে পারল না সে!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলেটা বুড়ো লোকটাকে জিজ্ঞেস করল, সাইকেলটা কি এই ছেলেটা কিনবে?

বুড়ো লোকটা বলল, না ছোটো বাবু জোড়া শিবতলায় তপন পুরনো সাইকেল কেনা-বেচা করে। ওর সঙ্গে কথা বলেছি। তপন ওকে পাঠিয়েছে সাইকেলটা নিয়ে যাওয়ার জন্য।

চোখদুটো বোধহয় ছল ছল করে উঠল ছেলেটার। কাঁপা গলায় বলল, আমাকে ঘরে নিয়ে চলো ফিঙেদা।

ছোটোবাবুকে রেখে এসে ফিঙেদা বলল, চল তোকে গেটটা খুলে দিই।

সাইকেলের সামনের চাকা উঁচিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে মালু জিজ্ঞেস করল, সাইকেলটা কি ওই বাবুর?

ফিঙেদার চোখে জল দেখতে পেল মালু। বলল, সাইকেলটার জন্যই রোহন দাদাবাবুর এই অবস্থা। ওটা প্রাণ ছিল। দিনরাত এই সাইকেলে চড়ে বেড়াত। সাইক্লিস্ট ছিল। সাইক্লিস্ট কাদের বলে জানিস? যারা সাইকেল রেসে নামে। নিউটাউনের রাস্তাতে রোজ ভোর বেলায় সাইকেল চালানো প্র্যাকটিস করত। আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম। ছোটোবাবু উড়ে যেত চোখের সামনে দিয়ে। একদিন একটা গাড়ী এসে মেরে দিল ছোটোবাবুকে। হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। বেঁচে ফিরে এল, কিন্ত পাদুটো নষ্ট হয়ে গেল।

মালু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল ফিঙেদার দিকে।

সায়েন্স সিটির সামনেটা ভিড়ে থৈথৈ করছে। মালুর সামনে প্রায় শ-পাঁচেক সাইকেলের একটা ভীড়। সবে ভোরের আলো ফুটেছে। রাস্তার দু'পাশে বাঁশের ব্যারিকেড করা। বাঁ দিকে উঁচু মঞ্চ থেকে একটা লোককে ঘনঘন ঘোষণা করছে প্রতিযোগীদের নাম। যাদের নাম বলা হচ্ছে, তারা একে একে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে স্টার্টিং পয়েন্টে। মলয় দাস নামটা এই প্রথম শুনল সে। ওটা যে তার নাম, ভুলেই গেছিল মালু। একটা অদ্ভুত ভালো লাগা ছড়িয়ে আছে তার মনে। জীবন কি এভাবেই পাল্টে যায় হঠাৎ করে!

সেদিন রোহন দাদাবাবুর বাড়ি থেকে একটা রিক্সায় চাপিয়ে ভাঙ্গা সাইকেলটা নিয়ে দোকানে ফিরেছিল মালু। ফিঙেদা এসে হাজির হয়েছিল তার কিছুক্ষণ পর। বলেছিল, রোহন দাদাবাবু সাইকেলটা বিক্রি করতে চায় না। ওটা মালুকে দিয়ে দিয়েছে।

শুনে অবাক হয়েছিল মালু। সে এইরকম একটা সাইকেলের স্বপ্ন দেখত। সেটা সত্যি হতে পারে, ভাবেনি। সাইকেলটা তার! কিন্তু কেন? তপনদাও খুব অবাক হয়েছিল। রাগও হয়েছিল বোধহয়। কিন্তু কিছু বলেনি। ফিঙেদা যাওয়ার সময় তাকে বলেছিল, তোর একটা পা খোঁড়া। হাঁটতে অসুবিধা হয় বলে তোকে ওটা দিয়েছে ছোটবাবু। সামলে রাখিস। আর এটা নে, সাইকেলটা সারিয়ে নিস। দু-হাজার টাকার একটা লালচে নোট দিয়েছিল ফিঙেদা।

সাইকেলটা নিজে হাতে যত্ন করে সারিয়েছিল মালু। কিন্তু সে চালিয়ে দেখেনি। রোহনদাদাবাবুর জিনিসটা সে চালাবে না। ফিরিয়ে দিয়ে আসবে। এক বিকেলে নিয়ে গেছিল সিএস ফোর্টিফোরে। রোহনদাদাবাবুকে নিয়ে তখন বাগানে ঘুরছিল ফিঙেদা। সাইকেলটা দেখেই একগাল হেসেছিল রোহনদাদাবাবু। তার নিষ্পাপ হাসিটা দেখে ভীষণ কষ্ট হয়েছিল, কেঁদে ফেলেছিল মালু। নিজেকে সামলে কোনোরকমে বলেছিল, দাদাবাবু আমি সাইকেলটা চালাইনি। ওটা তোমার জিনিস। তুমিই রেখে দাও। আমি মাঝে-মাঝে এসে সার্ভিসিং করে দিয়ে যাব।

রোহনদাদাবাবু  মায়াবি চোখ দুটো বড়ো-বড়ো করে তাকিয়ে দেখেছিল মালুকে, অনেকক্ষণ ধরে। তারপর বলেছিল, তুই সাইকেল চালাতে পারিস? সে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলেছিল। রোহনদাদাবাবু বলেছিল, চালিয়ে দেখা দেখি।

সাইকেলে চড়ে বসলে বোঝা যায় না মালুর ডান পা-টা খোঁড়া। বাতাস কেটে সাঁইসাঁই করে উড়ে যায় সে। মনে হয় সাইকেল নয়, মালু যেন মোটর বাইক চালাচ্ছে।

হুইলচেয়ারে বসে থাকা রোহনদাদাবাবুকে বাড়ির সামনে রাস্তাটাতে নিয়ে এসেছিল ফিঙেদা। তার সাইকেল চালানো দেখে রোহনদাদাবাবু অবাক হয়ে গেছিল। বলেছিল, তুই কোথায় শিখলি, এইরকম সাইকেল চালানো?

মালু তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছিল। ছেলেবেলা থেকে তো এভাবেই সাইকেল চালায়। কেউ শেখায়নি। এতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে!

রোহনদাদাবাবু বলেছিল, রোজ বিকেল চারটেয় আসবি। ছটা পর্যন্ত তোর ট্রেনিং হবে। তখনও সে বোঝেনি কেন তাকে ডাকছে। ট্রেনিং কাকে বলে, তাও মালু জানত না। গত তিন মাস ধরে বুঝেছে। এই তিন মাসে সে চোস্ত সাইক্লিস্ট হয়ে গেছে। সে এখন ঘন্টার পর ঘন্টা একই গতিতে সাইকেল চালাতে পারে। গতিতে হারিয়ে দিতে পারে মোটরবাইককেও। সব সম্ভব হয়েছে রোহনদাদাবাবুর জন্য।

আজ সেই দিন। মালুর আসল পরীক্ষা আজ। ডিসেম্বরের শুরুতে কলকাতায় এই বড়ো সাইকেল রেসটা হয়। সারা দেশ থেকে নামি সাইক্লিস্টরা আসে। সায়েন্সসিটি থেকে রেস শুরু হয়ে পার্কস্টিট, ময়দান, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, শ্যামবাজার, খান্না, উল্টোডাঙা হয়ে সেন্ট্রাল পার্কে গিয়ে শেষ। ২৫ কিমি এই রেসটা যে জিতবে সে পাবে ৫০ হাজার টাকা। এখানেই অংশগ্রহণ করতে চলেছে মালু। রোহনদাদাবাবুর সাইক্লিং ড্রেস, সানগ্লাস, হেলমেট, আঙ্গুলকাটা গ্লাভস, স্নিকার পরার পর নিজেকে চিনতেই পারছিল না। তার মনে হচ্ছে, সাইকেলের দোকানে কাজ করা কোনো মালু নয়, যেন অন্য কেউ!

উঁচু মঞ্চটা থেকে মাইকে যে রেডি বলল, তাকে স্টাটার বলে। অন ইয়োর মার্ক বলার তিন সেকেন্ড পর গুড়ুম করে রিভলভারের ট্রিগার টিপে দিল। ভীড় ভেঙে সামনের সাইকেলগুলো হুড়মুড় করে তীরের গতিতে ছুটতে শুরু করে দিল। যেন অসংখ্য প্রজাপতি উড়ে যেতে দেখল মালু। তার কুঁকড়ে থাকা ডান পা-টা প্যাডেলের ওপর। রাস্তা ছুঁয়ে রয়েছে বাঁ পা। স্টার্টিং লাইনের একপাশে বাঁদিকে ব্যারিকেডের ধারে হুইল চেয়ারে বসে রয়েছে রোহনদাদাবাবু। মালু এক পলকের জন্য তাকাল তার দিকে। রোহনদাদাবাবু ফিসফিস করে বলে উঠল, গো, মালু গো। ধীরে ধীরে এক্সিলেট কর নিজেকে।

ডান প্যাডেলে মোলায়েম চাপ দিয়ে বাঁ পা-টা ধীরে ধীরে তুলে নিল মালু। দূরে একঝাঁক প্রজাপতি উড়ছে। যেন রামধনু রঙ ধরেছে ভোরের কলকাতায়। বাতাস কেটে সেদিকে উড়ে গেল মালু।

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । ফেব্রুয়ারি ২০১৯

Topic : real motivational stories, best motivational story in Bengali, inspirational stories for children, inspiring short stories on positive attitude, অনুভবের গল্প

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ