Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

দেবদূত ।। শিখা রায়



দীপ্ত চোখ খুলেই দেখতে পেল দু-টো মুখ ওর দিকে ঝুঁকে আছে। চারপাশটা তাকাল, ঘরটা ওর চেনা নয়। মাথাটা কেমন ঝিম ধরে রয়েছে। অস্ফুটে ও জিজ্ঞাসা করল, আমি কোথায়?

ডান দিকের লম্বা মতো লোকটা হ্যা হ্যা করে হেসে বলল, তুমি এখন বেহেস্তে।

আঃ আব্দুল  চুপ করো। কে যেন ধমকে উঠল। চকিতে তাকাল দীপ্ত। গলাটা চেনা, হ্যাঁ, ওইতো শঙ্করকাকু পেছন ফিরে জানলার দিকে তাকিয়ে আছে। হ্যাঁ এবার মনে পড়েছে, স্কুল থেকে বেরিয়ে ও স্কুল বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। নবকাকু বাসটা ব্যাক করছিল, আর ও বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিল। হঠাৎ একটু দূরে শঙ্করকাকু কে দেখতে পেল। হাত নেড়ে ডাকছে। দৌড়ে কাছে যেতেই শঙ্করকাকু বলল, দীপ্ত নিকোপার্ক যাবি? ওই দেখ, আমার নতুন গাড়ি। তোকে এই গাড়ি করেই আবার পৌঁছে দেব। দীপ্তদের সঙ্গে শঙ্করকাকুদের অনেক দিনের আলাপ। দীপ্তর বাবার কারখানাতেই শঙ্করকাকু কাজ করত। কিন্তু এখন কাজ ছেড়ে দিয়েছে। কেন, ও জানে না। দীপ্ত বলল, দাঁড়াও নবকাকুকে বলে আসি, নইলে মা চিন্তা করবে। দীপ্ত দৌড়তে যাবে ঠিক সেইসময় মনে হল কে যেন একটা রুমাল ওর নাকে চেপে ধরেছে। ওর সামনে একটা বড়ো পলাশ গাছ। ও স্কুল গাড়িটাকে দেখতে পাচ্ছিল না। একটা ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে এল। তারপর আর কিছুই মনে নেই ও বুঝল শঙ্করকাকু ওকে ধরে এনেছে।

কিন্তু ওকে বললে ও তো এমনিতেই আসত। এভাবে আনলো কেন? এই বিশ্রী লোকগুলোই বা কারা? দীপ্ত চিন্তিত হয়ে পড়ে। ও ক্লাস সিক্সে পড়লে কি হবে, এরমধ্যে অনেক থ্রিলার আর অ্যাডভেঞ্চার গল্প পড়ে ফেলেছে।

তবে কি শঙ্করকাকু ওকে কিডন্যাপ করে এনেছে! দীপ্ত শিঁউরে উঠল।

এবার দীপ্ত আস্তে-আস্তে উঠে বসল। চারদিকে তাকাল। টিনের চাল মাঝখানে একটা কম পাওয়ারের বাল্ব ঝুলছে। বিছানার চাদরটা পরিষ্কার, তবে জায়গায় জায়গায় ছেঁড়া। একটা সুন্দর গন্ধ আসছে। হঠাৎ ঘরের কোণে চোখ পড়ল দীপ্তর। একটা ছোট্ট টুলের ওপর নানারকম ঠাকুরের ছবি। ধূপ জ্বলছে। সেখানে ওর মায়ের বয়সী একটা মাসি হাতজোড় করে ঠাকুর প্রণাম করল। পূজো সেরে একটা থালা হাতে নিয়ে এসে দীপ্তকে বলল, প্রসাদ নাও। দীপ্ত হাতে নিয়ে মুখে দিল। মাসি পুজো করা ফুল নিয়ে দীপ্তর মাথায় ছোঁয়াল।

বেঁটে লোকটা হ্যা হ্যা করে হেসে উঠে বলল, বৌদি বলির আগে ছাগলটাকে ফুল ছোঁয়াচ্ছে গো শঙ্করদা।

আরতি, ওকে কিছু খেতে দাও। আছে কিছু? শঙ্করকাকুর গলা শোনা গেল।

দেখি কি আছে! বলল, মাসিটা। বোধহয় শঙ্করকাকুর বউ। কি সুন্দর দেখতে, পরনের শাড়িটা ছেঁড়া, কিন্তু পরিষ্কার। কপালে লাল বড়ো টিপ। কিছুক্ষণ বাদেই মাসিটা একটা অ্যালুমিনিয়ামের থালায় চারটে রুটি আর হালুয়া আনলো। দীপ্তর খিদে পেয়েছিল। একটু রুটি ছিঁড়ে হালুয়া দিয়ে মুখে পুরল। বাপরে! কি বাজে খেতে! হালুয়ায় মিষ্টি নেই, ঘি-এর গন্ধ নেই। সীতা মাসি কি ভালো হালুয়া রাঁধে। ঘি চপচপে, কিসমিস-কাজু দেওয়া। রুটিগুলোতেও কেমন গন্ধ।

বাবু খেয়ে নাও। বলল মাসি। খুব সুন্দর কথা বলে মাসিটা।

না, আমি খাব না। দীপ্ত মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তারপর হঠাৎই দুম করে শুয়ে পড়ে। এরকম খাবার খেতে ইচ্ছে করছিল না দীপ্তর। ওদের কথাগুলো শোনার জন্য দীপ্ত চোখ বন্ধ করে অজ্ঞান হবার ভান করে রইল।

শঙ্করকাকু ওকে ধরে ঝাঁকাচ্ছে, এই দীপ্ত কি হল ? ওঠ। সানি তোকে বললাম না, ডোজটা একটু বেশি হয়ে গেছে। কিছু যদি হয়ে যায় ?

শোনো গুরু ও যখন তোমাকে চিনে গেছে, তখন টেসে যাক না। শুধু ওর বাবার কাছ থেকে লাখখানেক ঝেড়ে নাও।

ছিঃ, উনি তোমার অন্নদাতা। একথা বলতে তোমাদের লজ্জা করছে না ? এমন দুধের শিশুটাকে মেরে ফেলবে ?

আরতী মাসির  মমতাভরা কথাগুলো শুনে চোখে জল এল দীপ্তর।

তো কি ? তোমার ওই ঠাকুর কিছু করতে পারল ? দিনরাত তো পুজো করছ। আমার একটা চাকরি হল ? তবে একেবারে মারব না। শালা, মুম্বাইতে চালান করে দেব। শঙ্করকাকুর কথাগুলো শুনেই দীপ্ত বুঝল ওকে নিয়ে ওরা কি করতে চায়। মাথায় নানারকম বুদ্ধি খেলতে থাকল। মাসিটা মুখে-চোখে জলের ছিটে দিতে লাগল। দীপ্ত ইচ্ছে করেই আস্তে-আস্তে চোখ খুলল। তারপর চুপ করে শুয়ে পড়ল।

একটু রাতের দিকে আরতী মাসি একটা থালায় লাল-লাল ভাত আর কি একটা তরকারি, এক বাটি ডাল নিয়ে ওর কাছে রাখল।

খেয়ে নাও সোনা। মাসির মমতা ভরা গলা শুনে দীপ্ত থালাটা টেনে নিল। খিদেও পেয়েছে খুব। বাড়ির কথা মনে পড়ল দীপ্তর। ধবধবে সাদা ভাত আর সীতা মাসির রান্না চিকেন। আজকে আবার মা ফিসফ্রাইও করবে। কোনোরকমে খাবারটা গলাধঃকরণ করে মুখ তুলল দীপ্ত। দেখল শঙ্করকাকু সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

আমাকে এখানে ধরে এনেছে কেন কাকু ? আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করল দীপ্ত।

কেন ধরে এনেছি ? তোমার বাবার অনেক টাকা সোনা, তার থেকে কিছু নেব বলে। দেখি, ফোনও তো করেছি।  কাল টাকা পেলে তোমায় ছেড়ে দেব।

দীপ্ত সব শুনেছে, ও  জানে ওকে মুম্বাইয়ে পাঠিয়ে দেবে। সিনেমায় দেখেছে, ছেলে ধরে নিয়ে গিয়ে ওখানে চুরি-ডাকাতি করায়। ভাবতেই দীপ্তর শরীর হিম হয়ে গেল।

ওরা দুজনেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আলোটা নিভিয়ে দিয়ে মাসি বলল, তুমি শোও। আমি বাসনগুলো ধুয়ে আসছি। পালাবার চেষ্টা করো না যেন।

আরতী মাসি চলে যাবার পর দরজাটা একটু ফাঁক করে দীপ্ত দেখল শঙ্করকাকু দরজা জুড়ে শুয়ে বিড়ি টানছে। আরতী মাসি কাকুকে কি যেন বলল। দীপ্ত কান পাতল।

-আজ তুমি ঘুমের ওষুধ খাবে না ?

-না। তাহলে বেশি ঘুমিয়ে পড়ব। ছেলেটা পালাতে পারে। তোমার যা ঘুম!

দীপ্ত তাড়াতাড়ি দরজাটা বন্ধ করে ভেতরে আসে। টেবিলে একটা টর্চ দেখে ছিল, হাতড়ে টর্চটা জ্বালে। খুঁজতে থাকে কিছু। একটা ছোট্ট কাগজের বাক্স দেখতে পায় দীপ্ত, একেবারে টেবিলের এক কোণে। অনেক ওষুধের মধ্যে সেই গোলাপী রঙের ওষুধটা খুঁজে পায়। নামটাও পড়ে ফেলে।

হ্যাঁ এটাই তো সেই ওষুধ। রোজ বাবা খায়। এটা না খেলে বাবার ঘুমই আসে না। এই ওষুধটার বেশ দাম, শঙ্করকাকু পায় কি করে! ভীষণ গরিব তো! চারিদিকে তাকাতে-তাকাতে গোটা তিনেক ওষুধ মোড়ক থেকে ছিঁড়ে নিয়ে টেবিলে রাখা জলের জায়গাটার মধ্যে ফেলে দেয়, আর পকেট থেকে পেনটা নিয়ে ঝটপট গুলিয়ে দেয়। কাজটা তাড়াতাড়ি সেরে নিয়েই বিছানায় গিয়ে আবার শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর আরতী মাসি ঘরে ঢোকে। খানিকটা জল খেয়ে জলের জায়গাটা নিয়ে বাইরে যায় আবার ফেরতও আসে। দীপ্ত আরষ্ট হয়ে শুয়ে থাকে। হঠাৎ দীপ্ত মাসিকে প্রশ্ন করে, মাসি, শঙ্করকাকু আমাকে ধরে এনেছে কেন ?

-চাকরিটা গিয়ে তোমার কাকুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বোঝই তো আজকালকার দিনে চাকরি গেলে কি কষ্ট যে হয়! তোমার বাবা সামান্য কারণে ওকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করল। নাও, তুমি ঘুমাও বাছা।  আমাকে আবার ভোর-ভোর উঠতে হবে। পাঁচ-পাঁচটা বাড়ির কাজ...

বলতে-বলতে মাসির গলা জড়িয়ে আসে। দীপ্ত বোঝে ওষুধে কাজ হয়েছে। কিছুক্ষণ পর দীপ্ত মাসিকে ঠেলা দিয়ে দেখে, মাসি ওঠে না। আস্তে-আস্তে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায় দীপ্ত। সতর্কতার সঙ্গে দরজা খুলে শঙ্করকাকুর মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে। হাঁ করে ঘুমোচ্ছে। আস্তে-আস্তে ডিঙিয়ে বারান্দা থেকে নেমে ছুট লাগায়। অন্ধকার-অচেনা রাস্তা, কুকুরের ঘেউ-ঘেউ ডাক। কিছুতেই দীপ্তর ভয় নেই এখন। একটাই চিন্তা পালাতে হবে, নইলে মুম্বাই।

কিছুটা পথ আসার পরই দীপ্তর খেয়াল হল ওর পিছনে-পিছনে কেউ আসছে। কারোর গলার শব্দ পাওয়া গেল। সর্বনাশ, কেউ ওকে দেখে ফেলেছে। সানি নয়তো আব্দুল হবে। সামনে কতকগুলো ঘর। একটা ঘরের দাওয়ায় জনাকয়েক চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। দীপ্ত দৌড়ে এসে সেই বারান্দায় উঠে গিয়ে দেখল দড়িতে কয়েকটা শাড়ি মেলা, তারই একটা টেনে নিয়ে মুড়ি দিয়ে ওদের পাশে শুয়ে পড়ল। মুখটা ফাঁক করে দেখল লম্বা মতো লোকটা দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে ওকেই খুঁজছে। দীপ্ত শক্ত হয়ে প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ করে শুয়ে রইল।

কিছুক্ষণ পর লোকটা চলে যেতেই দীপ্ত আবার উঠে দৌড়তে থাকল। একটা চওড়া রাস্তায় এসে দেখল, ছোট্ট একটা পার্ক। পার্কের পাশের ফুটপাতে সার দিয়ে কতগুলো লোক শুয়ে আছে। হাঁপাতে-হাঁপাতে দীপ্ত সেখানে এসে বসে পড়ল। এবার দীপ্তর কান্না পেল। ভীষণ কান্না। মায়ের জন্য মন কেমন করতে লাগল। মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকল দীপ্ত।

একটা গাড়ির শব্দে দীপ্তর ঘুম ভেঙে গেল। কাঁদতে-কাঁদতে কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাকিয়ে দেখল সামনেই একটা পুলিশের গাড়ি। মনে পড়ে গেল, বাবা বলে, এরা টহলদারি পুলিশ। রাতের কলকাতাকে পাহারা দেয়। একজন পুলিশকাকু নেমে এল।

-এই যে খোকা, কে তুমি? এখানে কি করছ? স্কুলের ইউনিফর্ম পরা, দেখে তো কোনো ভদ্রলোকের ছেলে বলে মনে হচ্ছে।

-আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন কাকু?

দীপ্ত গড়গড় করে ওর বাড়ির ঠিকানা আর ফোন নম্বর বলে দিল।

বাড়ির কাছে গাড়িটা এসে থামতেই, এক লাফে নেমে দৌড়ে গিয়ে কলিং বেলটা বাজাল দীপ্ত। বাবা-মা, জেঠু-জেঠিমা, মামা সবাই জেগে বসে আছে। দু-জন পুলিশের লোকও আছে। দীপ্ত দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল। মায়ের আকুল কান্না এসে মিশল দীপ্তর চোখের জলে। গায়ে-মাথায় কপালে চুমা দিয়েই চলেছে মা।

ব্রেকফাস্টের টেবিলে ওকে সবাই প্রশ্নবানে ঘিরে ধরল। কে তোমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল? তুমি কি কিডন্যাপড হয়েছিলে? ওরা টাকা চেয়ে ফোন করেছিল? কারা ওরা?

বাবা ওকে ধরে ঝাঁকাতে থাকল, পুলিশকে তুমি মিথ্যে কথা বলেছ। সত্যি কথাটা বলো। মা কান্না ভেজানো গলায় বলে উঠল, বল দীপ্ত, সত্যি কথা বল।

দীপ্ত চুপ। শুধু আরতী মাসির কথা মনে পড়ছে। ধীরে ধীরে দৃঢ়তার সঙ্গে উঠে দাঁড়ায় দীপ্ত। আমাকে কতগুলো লোক ধরে নিয়ে গিয়েছিল। আমি ওদের কাউকে চিনি না। একটা অন্ধকার ঘরে আমাকে আটকে রেখেছিল।

-তারপর? তারপর কি করলি? মায়ের উদ্বিগ্ন গলা।

ভাবনার মধ্যে ডুবে যায় দীপ্ত। অন্ধকার হতেই আমি পালিয়ে একটা রাস্তা ধরে ছুটেছিলাম। হঠাৎ দেখি শঙ্করকাকু। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করে, তারপর বড়ো রাস্তায় নিয়ে আসে। পার্কটার সামনে বসিয়ে তোমাকে ফোন করতে গিয়েছিল, কোনো এক বন্ধুর মোবাইল থেকে। বন্ধুকে জাগাতে হবে তো তাই দেরী হচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে পুলিশের গাড়িটা চলে আসে।

-অত রাতে শঙ্কর কোথা থেকে ফিরছিল? বাবা জিজ্ঞাসা করে।

-ওই তো রাস্তাটায় পাইপ বসানোর কাজ চলছিল। কাকু বলল, কাকু এখন ওই কাজই করে। রাতের ডিউটি সেরে ফিরছিল কাকু। জানো বাবা, শঙ্করকাকু না থাকলে আমি হয়তো উল্টোপাল্টা রাস্তাতেই চলে যেতাম।

-হুঁ। বাবা চিন্তিত মুখে কি যেন ভাবতে থাকে।

-একটা কথা বলব বাবা? নিচু গলায় দীপ্ত বাবাকে জিজ্ঞেস করে।

-হ্যাঁ বল। দীপ্তর দিকে তাকায় বাবা।

-রাস্তায় আস্তে আস্তে শঙ্করকাকু বলছিল, তুমি নাকি কাকুর চাকরিটা... তুমি কাকুর চাকরিটা ফিরিয়ে দাও না বাবা।

বাবা সস্নেহে দীপ্তর মাথায় হাত রাখে।

বস্তির সামনে ইনোভা গাড়ি এসে দাঁড়াতেই শঙ্করের সারা শরীর যেন অবশ হয়ে গেল। পালাতে হবে, আরতিকে নিয়েই, সে কারণেই দেরি। ওদিকে সানা, আব্দুল পালিয়েছে। শঙ্করের গোছগাছও প্রায় শেষ। কিন্তু এর মধ্যেই যে মালিক প্রতিম রায়চৌধুরী এসে পৌঁছে যাবে সে ভাবতেও পারেনি। আর পালাবার কোনো পথ নেই। ধরা দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই তার কাছে।

-শংকর বাড়ি আছো?

নিথর হয়ে বসে আছে শঙ্কর। জেলে গিয়ে পচতে হবে তাকে। আরতিটার যে কি হবে! ঠাকুর ঘরে সে স্বামীর পাপ ক্ষয়ের জন্য করজোড়ে বসে প্রার্থনা করে চলেছে।

-কাল আমার ছেলের জন্য তুমি যা করেছ। ও আমাকে সব বলেছে। ওকে তুমি বড়ো রাস্তা চিনিয়ে দিয়েছিলে, আমাকে ফোন করবে বলে বন্ধুর বাড়িতে ঢুকেছিলে। সেই সময় পুলিশের গাড়ি সামনে এসে গিয়েছিল। ওরা ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। আমাদের জন্য তুমি যা করলে, আর আমি…!! আমি তোমার কষ্টের কথাও সব শুনেছি। তুমি কাল থেকেই কারখানায় যাবে। প্লিজ শঙ্কর।

হতবাক শঙ্করের দু-চোখে কান্না নামে। চলে যাওয়া গাড়িটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে পাথর হয়ে যায়। আরতী এসে শঙ্করের বা হাতটা ধরে দাঁড়ায়। মুখ ফিরিয়ে দেখে শঙ্কর। আরতি বলে ওঠে, ছেলেটা দেবদূত গো।

 

অলংকরণ-  অমর  লাহা

প্রকাশিত- ছেলেবেলা । শরৎ ১৪১৭


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ