Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

তাঁর কলম আমাদের মন্ত্রের মতো শক্তি জোগায় ।। দীপালি রায়

প্রিয় ছোট্ট বন্ধুরা,

আশা করি সকলে ভালো আছো। আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। এই দিনটা বাঙালির জীবেন একটি বিশেষ দিন। অন্যান্য বছর সকাল থেকে তাঁর জন্মিদন পালনের তোড়-জোর শুরু করে দিই আমরা। স্কুলে-কলেজে-ক্লাবে বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে চারিদিকে সাজো-সাজো রব পড়ে যায়। কোথায় তাঁর ছবিটা রাখা হবে, ছবিতে কোন মালাটা পরানো হবে, কে কোন নাচ-গান-আবৃত্তি করবে। সে এক হৈ-হৈ রৈ-রৈ ব্যাপার। আমরা আবেগে ভেসে যাই সারাদিন।

কিন্তু এই ''করোনা'' মহামারির কারণে এই দু'বছর আমরা এসব কিছুই করতে পারছি না। এখন রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভার্চুয়াল। কিন্তু এতে কি বাঙালির মন ভরে।

মহামারি এর আগেও হয়েছে অনেকবার। নানান সময়ে মহামারির বিভৎস রূপ দেখেছে এই বাংলা। কলেরা, প্লেগ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কালাজ্বরের মতো মহামারির খবর উঠে এসেছিল তখনকার সংবাদপত্রগুলোতে।

বিংশ শতকের শুরুতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল প্লেগ। রবীন্দ্রনাথও নেমেছিলেন আর্তসেবার কাজে। গড়ে তুলেছিলেন হাসপাতাল। সেই সময়ে সঙ্গে ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভগিনী নিবেদিতা। পাড়ায় পাড়ায় পর্যবেক্ষণ করতেন। সঙ্গে থাকতেন ডাক্তার, না্র্স। আর থাকত চুন। জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে দিতেন।

''চতুরঙ্গ'' উপন্যাসে জগমোহনের মৃত্যুর বিবরণ দিতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ প্লেগের ভয়াবহতা তুলে ধরেছিলেন। শুধু ''চতুরঙ্গ''ই বা কেন ? রবি ঠাকুরের অনেক গল্প উপন্যাসেই তখনকার আরো অনেক মহামারির ভয়াবহতা উঠে এসেছে।

তখন হয়তো লকডাউন ঘোষণা হয়নি, কিন্তু প্লেগের ভয়াবহতা এমনই ছিল যে, দোকানপাট বন্ধ, রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া নেই, এমন কি মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল।

মৃত্যু মিছিল চলেছিল তখনও। এই প্লেগেই মারা যায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দশ বছরের কন্যা। মহামারি বৃটিশদেরও ছাড়েনি। অনেক বৃটিশও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। কারণ তখনও প্লেগের কোনো চিকিৎসা ছিল না, ছিল না কোনো ওষুধও। প্লেগ ঠেকাতে টিকাকরণের ব্যবস্থা করেছিল ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু তখন ইংরেজ বিদ্বেষ, অন্দরমহলে বাইরের লোকের প্রবেশ আরো নানাকারণে সাধারণ মানুষ টিকা নিতে চায়নি।

মানুষকে সচেতন করতে রামকৃষ্ণ মিশন থেকে প্রচারপত্র বিলি করা হয়। তার জন্য মঠের সন্ন্যাসীদের আক্রমনের মুখেও পড়তে হয়।

সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও উদ্যোগী হন। এই উদ্যোগে সামিল হয়েছিলেন ঠাকুরবাড়ির অনেক সদস্যই।

ইনফ্লুয়েঞ্জা যখন মহামারির আকার ধারণ করেছিল, তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিরাজের ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি তৈরি করেছিলেন 'পঞ্চতিক্ত' পাঁচন। এই পাঁচন ছিল- নিম, গুলঞ্চ, বাসক, পলতা ও কন্টিকারির মিশ্রণ। সাবধান হতে আগে থেকেই বাড়ির সবাইকে খাওয়াতে শুরু করেছিলেন এই পাঁচন।

মহামারির সময় তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মানুষের জন্য। অসহায় মানুষের পাশে থেকেছেন। সাহস জুগিয়েছেন। শুধু স্বশরীরে নয়, তাঁর কলমও মানুষকে অনেক আশাবাদী করে তুলেছিল।

হঠাৎ বৃষ্টিতে আমরা যেমন ছুটে গিয়ে গাছের তলায় দাঁড়াই, ঝড়-ঝঞ্ঝায় যেমন নিরাপদ স্থানের খোঁজ করি, বিপদে ঈশ্বরের নাম জপি, আজকের সঙ্কটজনক এই মহামারির সময়ে আমরা আশ্রয় পেতে পারি সেই মহামানবের কাছেই। শুধুমাত্র মহামারি-বিপর্যয়ই নয়, তাঁর জীবন জুড়েও ছিল নানান দুঃখ, যন্ত্রণা, কষ্ট, বিয়োগব্যথা। তারই মাঝে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, ছিল তাঁর সৃষ্টিস্রোত। তাঁর জীবনযাপনের দিকে ফিরে তাকালে আমরা ভরসা পাই- কঠিন থেকে কঠিনতম সময়েও। তাঁর কলম আমাদের মন্ত্রের মতো শক্তি জোগায়- কঠ

''আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।।

তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।

তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা,

বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে।।''

ভালো থেকো বন্ধুরা, অনেক-অনেক ভালোবাসা রইল তোমাদের জন্য আর রইল শ্রদ্ধা-প্রণাম আমাদের যাঁরা বড়ো তাঁদের প্রতি।

 

দীপালি রায়

সম্পাদক- চিরকালের ছেলেবেলা

২৫শে বৈশাখ ১৪২৮ (৯ই মে ২০২০)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ