Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

চড়াই কাহিনি ।। রুমা সিনহা



একটু পরেই সন্ধ্যা হবে, সূর্য ডুবে গেছে। পশ্চিমের আকাশ কালো হয়ে এসেছে, ঝড় উঠল বুঝি। চড়াইবৌ এবং তার জামগাছের ছোটো বাসা থেকে উঁকি দিতে থাকে আর ভাবে কর্তা তো এখনো এল না!

ওই গাছেরই অন্য ডালে বাসা বেঁধে আছে কয়েকটা বুলবুলি। চড়াইবৌ হেঁকে জিজ্ঞাসা করে, কই গো তোমরা সবাই এসে গেছো? বুলবুলিরা সাড়া দেয়, হ্যাঁ গো বৌ, তোমার কর্তা এসেছে? চড়াইবৌ বলে, না গো। পশ্চিমের আকাশ ভালো ঠেকছে না, এখনি ঝড় উঠবে মনে হয়।

এক বুলবুলি বলে, গাছে থেকে আর ভরসা পাচ্ছি না। কোথায় বা যাই! মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিলে তো স্বাধীনভাবে থাকতে পারব না। ধরতে পারলে খাঁচায় পুরে রাখবে। তোমাদের অবশ্য সে ভয় নেই, মানুষেরা চড়াই পাখি পোষে না।

চড়াইবৌ বলে, তা ঠিকই বলেছ। ভাবছি ওই বড়ো বাড়িটার ঘুলঘুলিতে বাসাটা সরিয়ে নেব। বলতে বলতে চড়াইকর্তা মুখে করে একটা পোকা নিয়ে উড়ে এল। চড়াইবৌ তাড়াতাড়ি পোকাটাকে খেয়ে নিল আর কর্তাকে বলল, আমাদের ডিম তিনটেকে খুব সাবধানে রাখতে হবে, ঝড় বৃষ্টি এখনই শুরু হবে।

দেখতে দেখতে ঝড় উঠল। চারিদিক দিয়ে হাওয়া আর ধুলোয় ভরে গেল। ওরা দিশেহারা হয়ে পড়ল। দুটো ডিম পড়ে গেল। ওরা হাহাকার করে উঠল। এরপর বৃষ্টি শুরু হল। চড়াইবৌ তার ডানা দিয়ে বাকি ডিমটাকে আগলে রাখল।

সকাল হতেই চড়াই আর চড়াইবৌ গাছের তলায় ডিমগুলোকে দেখে কেঁদে ফেলল। বুলবুলিরা এসে ওদের সান্ত্বনা দিয়ে গেল। ঝড়ে ওদের গাছের ডালটা অনেক কাৎ হয়ে গেছে। কিন্তু ওই একটা ডিমকে তো বাঁচাতেই হবে। তাই এখন একজন বাসায় থাকে আর একজন খাবারের খোঁজে যায়।

কয়েকদিন পর ডিম থেকে সুন্দর একটা ছানা বের হয়ে এল। চড়াইরাও দুঃখ ভুলে গিয়ে আনন্দে মেতে উঠল। ছানাটি চারিদিক পিটপিট করে দেখতে থাকে আর ওরা দুজন যে যখন পারে একটু একটু করে ছানাটির মুখে খাবার দিতে থাকে। মাঝে মাঝে বুলবুলিরাও এসে ছানাটিকে দেখে যায়।

একদিন কয়েকটা লোক দা-কুড়ুল নিয়ে এসে হাজির জাম গাছটার তলায়। বলাবলি করতে থাকল, কাৎ হয়ে যাওয়া ডালটা ওরা কেটে ফেলবে। কথাটা শুনে বুলবুলিরা চিৎকার করে বলতে থাকল, আপনারা যদি ডালটা কাটেন তো চড়াইরা ওই ছানাকে নিয়ে কোথায় যাবে এখন? ছানাটা তো এখনও উড়তেই শেখেনি। চড়াই দুজন কাঁদতে থাকল।

লোকেরা ওদের ভাষা বুঝল না। একজন গাছে উঠে ডালটা কাটতে শুরু করল। ঝাঁকুনি খেয়ে ছানাশুদ্ধ বাসাটা মাটিতে পড়ে গেল। চড়াইছানার বাঁ পায়ে ব্যথা লাগল খুব। চড়াই আর চড়াইবৌ বাসার চারপাশ ঘিরে কাঁদতে কাঁদতে উড়তে থাকল। বুলবুলিরা দেখতে এল। বলল, ছানাটাকে এভাবে ফেলে রাখা ঠিক হবে না। কাক নয়তো বেড়াল এসে পড়তে পারে! দুষ্টু ছেলের দলও যখন-তখন আসতে পারে। তোমরা একদিন বলেছিলে না, ওই বাড়ির ঘুলঘুলিতে বাসাটা সরিয়ে নেবে, আমরা বলি কি, সেখানেই চলে যাও।

চড়াইবৌ অভিমানে বলে উঠল, মানুষের তৈরি বাসাতে আমরা আর থাকব না। মানুষেরা গাছটা কাটল বলেই তো আমাদের এই দশা। পশ্চিম দিকে সূর্য যেখানে অস্ত গিয়ে লাল আভা ছড়ায়, সেখানে একটা জঙ্গল আছে, আমরা ওখানে চলে যাব।

বুলবুলিরা বলল, আমরা তোমাদের এগিয়ে দিয়ে আসব জঙ্গল পর্যন্ত।

বিকেল গড়িয়ে এল। সূর্য ডুবল লাল আভা ছড়িয়ে। দুই বুলবুলি চড়াইছানার ডানা দুটি ঠোঁটে আটকে নিয়ে উড়তে শুরু করল। সঙ্গে ছানা চড়াইয়ের বাবা-মা। ডানা মেলে ওরা উড়ে গেল সূর্যের লাল আভা ছড়ানো দূরের সেই জঙ্গলের দিকে। চড়াই ছানাকে বড়ো করার স্বপ্ন নিয়ে। বুলবুলিরা চড়াইছানাকে ছেড়ে আসার সময় চোখের পাতা ভিজে এল। চড়াইবৌ বলল, তোমরা এসো মাঝে মাঝে দেখা করতে। বুলবলিরা আবার আসবে কথা দিয়ে ফিরে গেল। চড়াই আর চড়াবৌ ছানাটাকে মাটিতে একটা শুইয়ে রেখে, নতুন বাসা তৈরি শুরু করল।

 

অলংকরণ-  অমর লাহা

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । জানুয়ারি ২০১২

Topic : The Story of the environment in Bengali

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ