Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

চেনা জানা ভূতের ছানা ।। জয়ন্ত দে



অনেকে অনেক কিছু পোষে কিন্তু সে কিছু পোষে না। এই কথাটা একদিন আবিস্কার করল বগলাচরণ।ফলে তার মাথার ভেতর তোলপাড়। চুলগুলো সেই যে খাড়া হল অনেক তেল-জল খাইয়েও সে চুলকে শোয়ানো গেল না।

বগলাচরণ ভাবল কার্তিকের ময়ূর আছে। গণেশের ইঁদুর। সব দেব-দেবতাদেরই কোনো না কোনো বাহন আছে। শুধু তার কেউ নেই। যদিও সে ঠাকুর নয় তবু। তাছাড়া তার চেনা-জানা মানুষজনেরও কোনো না কোনো পুষ্যি আছে। এই যেমন পুঁটুদার টম। খেন্তিমাসির মেনি। গজকাকার কত পায়রা।

সেদিন আবার ভ্যাবলাদা ইতিহাস বই খুলে দেখাল, রানা প্রতাপের একটা ঘোড়া ছিল। তার নাম চৈতক। তখনই বগলাচরণ ঠিক করে ফেলল সে কিছু একটা পুষবে। সে কার্তিক, গণেশ, রানা প্রতাপ না হোক, সে বগলাচরণ হয়েই পুষবে। প্রয়োজনে পুঁটুদার টম, কিংবা গজাকাকার পায়রা হলে মন্দ কী! কিন্তু কী পোষে ?

পুঁটুদা বলল, কুকুর পোষ। কুকুরের মতো প্রভুভক্ত জীব আর একটাও নেই! আমার টমকে দেখ। আমাকে যেন চোখে হারায়! আমার গায়ে কারো হাত দেওয়ার ক্ষমতা আছে ? তাকে আমার টম দেখে নেবে।

বগলাচরণ ভাবল তবে সে কুকুরই পুষবে। কিন্তু তার কুকুর পোষার কথা শুনে জনে-জনে বলল, পুঁটুর কুকুরের মতো বজ্জাত কুকুর পোষার তাল করছিস, ভালো হবে না কিন্তু। খেন্তিমাসি এক পা এগিয়ে এসে বলল, খবরদার, যদি কুকুর পুষেছিস তবে তোরই একদিন কি আমারই একদিন। একে ওই পুঁটুর কুকুরের জ্বালায় আমার মেনিটা তিষ্ঠতে পারে না। তার চেয়ে আমার মেনির ছানা হলে তোকে একটা দেব। তুই বরং বেড়াল পোষ। আমার মেনিটা কি আহ্লাদ করে বল তো ? কোলের কাছে যখন গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকে তখন বুক জুড়িয়ে যায়। কী ভালো, কী ভালো। বগলাচরণ ভাবল সত্যিই সে বিড়াল পুষবে।

কিন্তু সেখানেও বাধা। সবাই ডেকে-ডেকে তাকে বলল, খেন্তিমাসি পাড়ায় একটা চোর পুষে রেখেছে। তুই আবার একটা চোর পুষবি ?

সেদিন আবার গজাকাকা ধমকে বলল, বাবা বগলাচরণ তুমি শুনলাম বেড়াল পুষছ ? ভালো। তবে তোমার বেড়াল যদি আমার পায়রার ঘরে উঁকি মারে আমি তোমার কান ছিঁড়ে পকেটে দিয়ে দেব। তারপর অবশ্য গজকাকা নরম সুরে বলল, বরং আমার কথা শোন, তোর বাবার কাছ থেকে টাকা ম্যানেজ করে নিয়ে আয়। আমি তোকে ক'টা ভালো জাতের পায়রা কিনে দেব। পায়রা ওড়ানোর মজাই আলাদা।

বগলাচরণ ঠিক করল পায়রা পুষবে। পায়রা নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ নেই। আকাশে ওড়াও আর হাততালি দাও।

কিন্তু ঘন্টা এসে তাকে অন্য কথা বলল।

ঘন্টা বলল, অমন ভুল করিসনি বগা। আজ তোকে গজাকাকা পায়রা কিনে দেবে কাল নিজের পায়রা উড়িয়ে সে পায়রা লুটে নেবে। তারপর আলতা মাখিয়ে বলবে আমার পায়রা। আমাকে দিয়ে কম পায়রা কিনিয়েছে। আর এখন দেখ সে পায়রাগুলো সব নিজের করে নিয়েছে। তার চেয়ে আমার মতো দুটো ব্যাঙ পোষ। ব্যাঙ পোষার কোনো খরচ নেই। জানিস কত লোকে ফেংশুই-এর মাটির ব্যাঙ ঘরে রাখে। আমরা নয় জ্যান্ত ব্যাঙ রাখলাম। পুরোপুরি জ্যান্ত ফেংশুই। ডবল ভালো। এসব শুনে পানুমামা বলল, বাঃ, ব্যাঙ পুষবি এ তো খুব ভালো খবর। তাহলে তুই ক'টা বেশি করে পুষিস। আমার বায়োলজি ক্লাসে কাটার জন্য ব্যাঙ লাগে। তোর কাছ থেকে তবে সাপ্লাইটা পাওয়া যাবে তখন মনের সুখে ব্যাঙ কাটা বাড়িতেও প্র্যাকটিশ করা যাবে। দাঁড়া তোকে আমি ব্যাঙের পৌষ্টিতন্ত্র চিনিয়ে দেব।

বগলাচরণ ভাবল সে গুড়ে বালি! আমি ব্যাঙ পুষব আর তুমি কাটবে, ওটি হবে না। বগলাচরণ কুকুর, বিড়াল, পায়রার সঙ্গে ব্যাঙও ক্যানসেল করে দিল। কিন্তু কী পোষে এই চিন্তায় তার পাক্কা দেড় দিন ঘুম হল না।

তখন টেঁপিদিদি বলল, লেখাপড়া তো করলি না, করলে জানতে পারতিস শরৎচন্দ্রের রামের সুমতির রাম দুটো মাছ পুষতো।

বগলাচরণের মা বলল, অমন কাজ করিস নে বগা। তোর বাবা জানতে পারলে কি আর ওই মাছ জলে থাকবে ? কখন কড়ায় উঠে ঝাল, ঝোল, অম্বল হয়ে যাবে।

ফলে মাছ বাদ। আর ঠিক তখনই বগলাচরণ দেখল কালুয়া মাথুয়া মাথায় একটা বাঁদর বসিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তবে বাঁদর পোষেন ছোটোবাবু। এ বহুত বড়িয়া চিজ। পিঠ চুলকে দেবে, মাথা সে ভি পোকা নিকলে দেবে। শিখিয়ে নিলে চায় ভি খেলাও দেখাবে।

বগলাচরণ ঠিক করল তবে সে বাঁদরই পুষবে। কালুয়া তাকে একটা বাঁদরও এনে দেবে। কিন্তু তার বাঁদর পোষার খবর কি করে যেন বগলাচরণের বাবা জেনে গেল। বাবা বগলাচরণের কান দুটো ভালো করে রগড়ে দিয়ে বলল, বাঁদরামো হচ্ছে! লেখাপড়ায় মন নেই, তুই নিজেই তো একটা বাঁদর! বাবার কাছে কান-মলা খেয়ে মনের দুঃখে বগলাচরণ গেল নদীর ধারে। শুনশান দুপুর। চারদিকে কেউ কোত্থাও নেই। এমন সময় বগলাচরণ শুনল পাঁকুড় গাছের কাছে কে যেন বক-বক করছে। বগলাচরণ এগিয়ে এসে দেখল গ্রামে আসা এক নতুন সাধুবাবা।

সাধুবাবার গায়ে ছাই ভস্ম মাখা। মাথায় জটা। তিনি পাঁকুড় গাছের নীচে আশ্রয় নিয়েছেন। বগলাচরণ ভাবল একা-একা সাধুবাবা বকবক করেন কেন ? কথাটা ভেবেই তার মনে পড়ে গেল, সাধুবাবা যে ভূত প্রেতের সঙ্গে কথা বলেন। ওরা সব সাধুবাবার পোষা জীব। সাধুবাবা ভূত পোষেন। বাঃ ভারী মজা তো! পোষা জীব নিয়ে সাধুবাবার কোনো ঝক্কি ঝামেলা নেই। বগা ঠিক করে ফেলল তবে পোষা যাক একটা ভূতের ছানা। তার তো একটা চেনা-জানা ভূতের ছানা আছে। তাকেই তবে বগলাচরণ পুষ্যি নেবে।

বগলাচরণ এগিয়ে এসে খপ করে চেপে ধরে সাধুর পা। বললেন, পা ছাড়, পা ছাড় ব্যাটা। তুই কে ?

বগলাচরণ বলল, আমি বগা। ভালো নাম বগলাচরণ।

সাধুবাবা বললেন, কী চাস তুই ?

বগলাচরণ বলল, আমাকে ভূত পোষার মন্ত্র শিখিয়ে দাও। আমার একটা চেনা-জানা ভূতের ছানা আছে তাকেই আমি পুষ্যি নেব। এবার থেকে সে যেন আমার কথা শোনে। শান্তশিষ্ট হয়ে চলে। এমন মন্ত্রে তাকে বশ করে দাও। তখন সাধুবাবার মেজাজ শরিফ ছিল, বললেন, বটে ভূত পুষবি। তবে দাঁড়া তোর চেনা-জানা ভূতের ছানাটাকে আগে আমি ধরি। টিপে-টুপে দেখি ভূতের ছানাটা ঠিক ভূত তো নাকি অন্য কিছু।

এবার সাধুবাবা মন্ত্র পড়ে হাত বাড়িয়ে কপ করে ধরে ফেললেন ভূতের ছানাকে।

আর তাকে দেখেই চিনতে পারে বগলাচরণ। সে হই-হই করে বলে, হ্যাঁ বাবা এই চেনা-জানা ভূতের ছানা। সাধুবাবা হাসেন। বলেনএ তো ব্রহ্মদৈত্য গোত্রের ভূত। খুব শান্তশিষ্ট ভূত রে। আমারই ছিল আগে। কিন্তু একে আমার সঙ্গে শ্মশানে-মশানে চলে না। ব্যাটা বড়ো ভয় পায়। একে নিয়ে বড়ো সমস্যায় ছিলাম। তাই ছেড়ে দিয়েছিলাম বনে। তবে ওকে তুই-ই পোষ। তোর সঙ্গে থাকবে, দুধ ভাত খাবে, ভালোই হবে। বগলাচরণ বলল, তবে বাবা ওকে আমার পোষ মানিয়ে দাও। সাধুবাবা দিলেন মন্ত্র পড়ে। বললেন, নে ব্যাটা, দিলাম মন্ত্র পড়ে। এই মন্ত্রে ভূতেরা সব শান্তশিষ্ট হয়ে যায়। যা, তবে তুই একে নিয়ে যা।

ভূত পেয়ে বগলাচরণ ভারী খুশি। আপন মনে পুষ্যিটাকে নিয়ে ঘোরে ফেরে। কথা বলে। খেলা করে। কিন্তু দুদিন যেতে না যেতেই কথাটা চাউর হয়ে গেল চারিদিকে। সবাই জানল বগলাচরণ ভূত পুষেছে। আর সে ভূত নাকি শান্তশিষ্ট।

বগলাচরণ তার ডাক নাম বগার সঙ্গে মিলিয়ে ভূতের নাম রাখে গবা।

একদিন জটা ওঝা জঙ্গলে শিকড়বাকড় খুঁজছিল। সে সময় নাকি ঘুরতে-ঘুরতে এসে পড়ে বগলাচরণ আর তার পোষা ভূত গবা। কিন্তু এসেই নাকি জটা ওঝাকে দেখে বগলাচরণের ভূত দিল চোঁ-চোঁ দৌড়! জটা ওঝা হেসেই খুন। হাসতে-হাসতে জটা ওঝা বলল, ওটা ভূত না ভীতুর ডিম! সবাই বলল তা তোমায় ভয় পায় কেন ?

জটা ওঝা বলল, ভয় কি আর এমনি পায় ? ভয় পাওয়ার বিস্তর কারণ আছে। আমার চোদ্দোটা গোরুর তিন মাসের গোবর জমে ছিল। একদিন ওই ভূতটাকে ধরে সেই জমা গোবরের ঘুঁটে দিইয়ে ছিলাম দেওয়াল ভরে।

সবাই বলল, তা তোমার আছে বলতে তো সাকুল্যে দুটো গোরু। তুমি চোদ্দোটা গোরু পেলে কোথায় ?

সে আছে। সব কথা কি তোমাদের বলতে হবে ? বলে জটা ওঝা হন-হন করে চলে যায়। কিন্তু জটা ওঝা গেল তো গেল পুঁটুদা যে আছে।

পুঁটুদা বলল, আরে বগার ভূতটা আমার টমকে দেখলেই ভয়ে মরে। পালিয়ে পথ পায় না। তাও তো আমার টম ওই ভীতুর ডিম ভূতকে না দিয়েছে কামড়ে, না দিয়েছে ঘেউ করে। শুধু একদিন একটু দাঁত দেখিয়েছিল।

না, পুঁটুদার কথায় কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি। যদি কুকুর লুলিয়ে ছু-ছু করে। পুঁটুদাকে বিশ্বাস নেই। টমকে নিয়ে ওর বড়ো হম্বিতম্বি। খেন্তিমাসি বলল, অমন ভীতু ভূত আমি বাপের জন্মে দেখিনি। আমার মেনিকে দেখে লেজ গুটিয়ে কাঁপতে থাকে আর আমার মেনিটা ওর দুধ ভাত চেটে পুটে খায়।

সবাই বলল, বেড়াল পুষেছ, খাওয়ানোর মুরোদ নেই, সেটা নিয়ে আবার গলাবাজি করছ ?

গজকাকা আরও সরেস। একদিন চায়ের দোকানে বলেই বসল, কাল বগার ভূত গবাকে আমার একটা লক্কা পায়রা দিয়ে লুটে নিয়ে এসেছিলাম। ভাবলাম ডানা ছেঁটে আলতা মাখিয়ে পোষ মানিয়ে রেখে দিই। কিন্তু বগার জন্যে ভারী দুঃখ হল। ও যে জানতে পারলে বিস্তর কান্নাকাটি জুড়বে। তাই ছেড়ে দিলাম।

সব শুনে-টুনে ঘন্টা বলল, যাই বলো তোমরা বগার ভূতটা খুব ভালো। আগে যখন আমার সোনা ব্যাঙ দুটো বন-বাদাড়ে থাকত। তখন ওদের খেলার সঙ্গী ছিল ওই ভূতটা। ওরা তিনজন মিলে হা-ডু-ডু খেলত। তবে শুনেছি, ব্যাটা নাকি ব্যাঙ দুটোর কাছে রোজই হারত।

একদিন পানুমামা বগলাচরণকে ডেকে বলল, ব্যাঙ কেটে-কেটে বোর গেয়েছি। এবার ভাবছি একটা ভূত কাটব। ভূতের পৌষ্টিকতন্ত্রটা বড়ো দেখার ইচ্ছে আছে।

এমনতর নানান কথা শুনতে-শুনতে বগলাচরণ যেন মরমে মরে গেল। ছিঃ-ছিঃ, সে কি না পুষ্যি নিল এমন একটা প্রাণীকে যাকে নিয়ে সবাই হাসি মস্করা করে।

সে মনের দুঃখে গেল সাধুবাবার কাছে। আজ সে ভূতটাকে ত্যাজ্য করে দেবে। চাই না ভূত পোষার মন্ত্র। দরকার নেই তার ভূত পোষার।

মনে দুঃখ নিয়ে বগলাচরণ হাজির সাধুবাবার কাছে। সেই পাঁকুড় গাছের তলায়। সব শুনে সাধুবাবা বলল, বটে ভালো-মানুষ-ভূত পেয়ে সকলে যা ইচ্ছে বলছে। যা ইচ্ছে করছে। আসলে কি জানিস বগলাচরণ ভূত পোষা সহজ নয়। ভূতেরা ভীষণ ত্যাঁদর হয়। তাই আমি তোর ভূতটার নাকে ভালুকের কায়দা করে দিয়েছিলাম। নাকের ভেতর গর্ত করে দড়ি পরিয়ে দিয়েছিলাম। দুষ্টুমি করলে মন্ত্রগুণে ওই দড়িতে টান পড়ত। আর টান পড়লেই বাছাধন চিঁ-চিঁ করত। নড়তে-চড়তে পরত না। নে তবে ওই মন্ত্র দিলাম কেটে। তোর ভূতের নাকের দড়িও গেল খুলে। যা এবার তোর ভূতকে তুই মন্ত্র ছাড়া পোষ।

বগলাচরণ তার ভূত গবাকে নিয়ে বাড়ি ফেরে এবং যথারীতি সেকথা সবাই জেনেও যায় কেমন করে। সবাই বলল, এবার মজাটি টের পাবে পুঁটুদা। কেউ বলল, গজাকাকা কি কম কথা বলেছে ? কেউ বলল, খেন্তিমাসির ওই চোর বেড়ালটাও ছাড় পাবে না। কিছু একটা হবেই।

এরমধ্যে হঠাৎ একদিন দেখা গেল, পুঁটুদার কুকুর টমের লেজে কে কালিপটকা বেঁধে দিয়েছে। টম দৌড়চ্ছে আর কালিপটকা ফাটছে।

মনে-মনে অনেকেই ভাবল, এ-পাড়ার কোনো বিচ্ছু ছেলের কাজ। কিন্তু অনেকেই বলল, এ বগলাচরণের ভূত গবার কাজ। ও ছাড়া কার এত সাহস হবে ?

তারপর খেন্তিমাসির বিড়ালের কাঁধে দেখা গেল কামড়ের দাগ। অনেকেই বলল, ওটা পুঁটুর কুকুরের কীর্তি। কিন্তু খেন্তিমাসি বলল, না-না, পুঁটুর টমের সঙ্গে আমার মেনির এখন খুব ভাব। ও কামড়াতেই পারে না। ওটা বগলাচরণের ভূত-গবার কম্ম।

এবার গজাকাকার পায়রার খোপ তচনচ। সবাই বলল, এ কাজ খেন্তিমাসির মেনির। কিন্তু গজাকাকা বিশেষজ্ঞের মতামত দিল। বলল, মোটেই না। মেনি তো এখন পায়রাগুলোর সঙ্গে ভাব পাতিয়ে আকাশে ওড়ার চেষ্টা করছে। এ কাজ বগার ভূত গবার।

তারপর আরো একদিন একটা পাতি কাক ঘন্টার নিখোঁজ সোনা ব্যাঙটার বডি এনে ফেলল চায়ের দোকানের কাছে। সবাই হাঁ করে দেখল সোনা ব্যাঙটার বুক চেরা। চার পায়ে আলপিন বেঁধানো। নির্ঘাত পানুমামা ব্যাঙটার পৌষ্টিকতন্ত্র দেখেছে।

ঘন্টা বলল, সোনা ব্যাঙের খুনি পানুমামা নয়। পানুমামার ব্যাঙে অরুচি।

তবু তার নামে এমন অভিযোগ উঠেছে শুনে পানুমামা চায়ের দোকানে গর্জন করে উঠল। ছোঃ, আমি পানু মিত্তির, আমি কাটব ব্যাঙ ? আমি কোথায় একটা বড়ো-সড়ো বায়োলজি বক্সের খোঁজ করছি। আমি এখন ভূতের পৌষ্টিকতন্ত্র দেখব। ঠিক করেছি আমাদের বগলাচরণের ভূত-গবার পৌষ্টিকতন্ত্রটা দিয়ে ভূতের পৌষ্টিকতন্ত্র দেখার অভিযান শুরু করব। আমি তক্কে-তক্কে আছি শুধু গবা-ভূতটাকে ধরতে পারি একবার।

পানুর কথা শেষ হল না, দূরে দেখা গেল বগলাচরণকে। সে বীর বিক্রমে হেঁটে আসছে আর তার পিছনে-পিছনে হেঁটে আসছে গবা। বগলাচরণের পোষা ভূত। তার কাঁধে বিশাল এক বায়োলজি বাক্স। দূর থেকে বগলাচরণ চিৎকার করে বলল, পানুমামা দাঁড়াও। গবা তোমার পৌষ্টিকতন্ত্রটা দেখবে। পানুমামা বগলাচরণের কথা শুনে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। সব্বোনাশ আমার পৌষ্টিকতন্ত্র দেখলে যে আমি মরে যাব!

বগলাচরণ হাসতে হাসতে বলে, আমার গবা অবশ্য তোমার পৌষ্টিকতন্ত্র দেখে কাটা পেট জুড়েও দেবে বলেছে।

কিন্তু পানুমামা কি দাঁড়ায় ?

পানুমামা এখন ছুটছে। তার পৌষ্টিকতন্ত্রটা যদি কোনোক্রমে বাঁচানো যায়! উরে-বাবা কত বড়ো বায়োলজি বাক্স ওই ভূতটার ঘাড়ে!

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । জুলাই ২০১২

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ