Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

দুষ্টু ভূতের খোঁজে ।। পিন্টু পোহান



-তখন থেকে দেখছি আপনি এখানে ঘুর-ঘুর করছেন। ব্যাপারটা কী বলুন তো মশাই ?

-ঘুর-ঘুর করছি, কে বলল আপনাকে ? আমি আমার কাজ করছি।

-একবার এদিক, একবার ওদিক, এটা আবার কাজ ? তাও আবার মাঝরাত্তিরে!

-যেমন কাজ তেমনভাবেই তো করতে হবে। মাঝরাত্তিরই হোক বা ভোরদুপুর।

-ঠিকই তো, ঠিকই তো! তা মশাই আপনি কি তেনাদের কেউ ?

-তেনারা! তেনারা মানে ?

-ওই যারা রাত্তিরে বের হয় তাদের কথা বলছি। আমার কাছে লজ্জার কিছু নেই। আমাকে আপনি বন্ধু ভাবতে পারেন। বলুন না দাদা, আপনি কি তেনাদের কেউ ?

-এ তো মহা জ্বালাতন দেখছি ! বুঝলামই না তেনারা কারা, আপনি তখন থেকে...

-রাগ করছেন কেন! তেনারা মানে আমি চোরেদের কথা বলছি। একমাত্র রাতেরবেলা তাদেরই তো কাজ থাকে।

-না, মশাই! আমি চোর নই। আমি দারোয়ান। এই বাড়িটা পাহারা দিচ্ছি।

-এই পোড়ো বাড়িটা! হাঃ হাঃ হাঃ।

-হাসির কী আছে ? পোড়ো বাড়ি বলে কি পাহারা দিতে নেই।

-তা পাহারা দেওয়া যাবে না কেন! অবশ্যই যাবে। কিন্তু বাড়িটার ভেতরে যে শ-খানেক বাদুর আর চামচিকে ছাড়া আর কিছুই নেই। এমন কি জানলা-দরজাগুলোও পাড়ার বদ-ছেলেরা ভেঙে নিয়ে গেছে। কী আছে ভেতরে যে পাহারা দিচ্ছেন ?

-ভেতরে অনেক ভূত আছে।

-ভূত ?

-হ্যাঁ, ভূত।

-আর আপনি সেই ভূতেদের পাহারা দিচ্ছেন ?

-হ্যাঁ। আপনাকে বললাম না যার যা কাজ তাকে তাই করতেই হবে। তা মশাই, এত রাতে আপনি এখানে কী করছেন ? আপনার মতলবটা তো সুবিধের মনে হচ্ছে না!

-আমাকে ভয় পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। সন্দেহ করারও কিছু নেই। আমি একজন লেখক।

-লেখক! তা লেখকবাবু আপনি এত রাতে এখানে...?

-আর বলবেন না। এক নাছোড়বান্দা সম্পাদকের পাল্লায় পড়েছি। ভূতের গল্প চেয়ে-চেয়ে সে আমাকে নাজেহাল করে দিচ্ছে। যত বলি আমার স্টক শেষ। সে কিছুতেই আমার কথা শোনে না। সেই জন্যই ভূত খুঁজতে বেরিয়েছি। কাল সকালেই সে আসবে আমার কাছে গল্প নিতে। এদিক-ওদিক চারিদিক ঘুরছি মশাই। ঘুরতে-ঘুরতে শেষে এখানে এলাম।

-ঠিক জায়গায়ই এসেছেন লেখকবাবু।

-বলছেন, ঠিক জায়গায়ই এসেছি।

-হ্যাঁ। একদম ঠিক জায়গায়। তবে আপনাকে গোপন কথাটা বলেই দিই, এই পোড়ো বাড়িটাতেই একমাত্র ভূতের হাট বসে। আজও বসেছে।

-ভূতের হাট ?

-হ্যাঁ, মশাই!

-কী কী বিক্রি হয় হাটে ?

-বললাম তো ভূতের হাট! ভূত ছাড়া আর কী বিক্রী হবে ?

-ভূত বিক্রী হয় ?

-হ্যাঁ! সেজন্যই তো আপনাকে বললাম ঠিক জায়গায়ই এসেছেন।

-তা মশাই, ভূত কারা কেনে ? একটা জনপ্রাণীও দেখতে পাচ্ছি না আশেপাশে, তাই জানতে চাইছি।

-ভূতেরাই কেনে। মানে ধনী পয়সাওয়ালা ভূতেরা।

-ধনী ? মানে ভূতেদের মধ্যেও গরিব-বড়োলোক আছে ?

-তা থাকবে না কেন ? ভূতেরাও তো একসময় মানুষ ছিল। এভারেজ ষাট বছর তারা কাটিয়েছে মানুষ হয়ে। সে সব অভ্যাস যাবে কোথায় ?

-কিন্তু মারা যাবার পর এ এক অন্য জগত। কেউ তো সঙ্গে করে ধনসম্পত্তি নিয়ে আসতে পারে না, তাহলে...

-ধনসম্পত্তি সঙ্গে করে নিয়ে আসে না, ঠিক কথা ! কিন্তু চাইলেই এখানে নতুন করে সবকিছু করে নেওয়া যায়। মানে গায়ের জোরে। যাদের অন্যদের থেকে বড়ো হওয়ার আকাঙ্খা থাকে তারা নিজেদের জন্য ভালো-ভালো জায়গা, খাবার-দাবার সবই দখল করে নেয়।

-কাদের কাছ থেকে দখল করে ?

-গরিব আর দুর্বল ভূতেদের কাছ থেকে।

-এটা তো ঘোর অন্যায়! যাদের অনেক আছে তাদের কাছ থেকে নিক। গরিব আর দুর্বল ভূতেদের কাছ থেকে লুটপাট করার কোনো মানে হয় ?

-বুদ্ধিমানেরা তাই করে, কারণ শক্ত মাটিতে গর্ত করা শক্ত কিনা। ওরা শুধু গরিব ভূতেদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি লুটেপুটে নেয় তা না, কখনো-কখনো তাদের বন্দি করে হাটেও নিয়ে আসে বিক্রি করতে। ওদের চাপেই তো হাট বসাতে হল।

-বেশ! বেশ! তা ভূতেরা ভূত কিনে কী করে ?

-ভূতের বেগার খাটায়। গা-হাত-পা টেপায়। ঘরের কাজ করায়। কখনো-কখনো আমার মতো কারোকে দারোয়ান করে দাঁড় করিয়ে রাখে।

-মানে ? আপনিও ভূত ?

-হ্যাঁ! আমিও ভূত। ভূত না হলে ভূতেদের পাহারা দিই ?

-নমস্কার! আমি লেখক মলয়কান্তি মজুমদার। আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে ভালোই হল। আপনার মতো ভূতের খোঁজই করছিলাম এতদিন। আপনার নাম ?

-আমার নাম নিখিল তেওয়ারি।

-তা নিখিলবাবু, আমি ভেতরে যেতে পারি ?

-না, এখানে ভূতেদের প্রবেশ অবাধ, কিন্তু মানুষের প্রবেশ নিষেধ। সেজন্য আপনি ভেতরে যেতে পারেন না।

-কিন্তু আমার যে একটা ভূতের খুব দরকার ছিল।

-কেন ? ভূত নিয়ে আপনি কী করবেন ?

-ওই যে বললাম, এক নাছোড়বান্দা সম্পাদক আমাকে নাজেহাল করে যাচ্ছে একটা ভূতের গল্প চেয়ে-চেয়ে। সে ব্যাটা রাত পোহালেই আমার কাছে আসবে গল্প নিতে। ঠিক করেছি গল্পের বদলে তাকে একটা আস্ত ভূত দিয়ে দেব।

-সম্পাদককে ভূত-টুত দেওয়ার কথা ভুলে যান মশাই। এখানে কেউ কোনো মানুষকে ভূত বিক্রি করবে না। মানুষকে ভূত বিক্রি করা আমাদের সংবিধানে নিষিদ্ধ।

-ছাড়ুন তো মশাই ওসব আইন-টাইনের কথা! আমি জানি, আপনি চাইলে সবকিছুই হতে পারে।

-বলছেন ?

-হ্যাঁ, বলছি।

-দাঁড়ান একটু। দেখি আমি কী করতে পারি। দাম কিন্তু ডবল দিতে হবে।

-তা দেব। শুধু দেখবেন ভূতটা যেন খুব দস্যি আর দুষ্টু হয়। আসলে আমি এমন একটা ভূত চাইছি যার অত্যাচারে সম্পাদক লেখকদের ভূতের গল্পের জন্য চাপ দেওয়া তো দূরের কথা, ভূতের নাম নিতেও ভয় পাবে।

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । জুলাই ২০১২

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. All winning bank palms are charged a 5% commission. You can now touch and minimize the 코인카지노 cards again at Table Games! Southland’s spacious new gaming floor is the place to play — with dozens of reside table video games, friendly and educated dealers, and the hottest liked|the most popular} blackjack and craps tables around. Whether you’re a seasoned pro or a rookie, you’ll find your game here. Ultimate Texas Hold'em features head-to-head play against the vendor and an optional bonus wager that pays odds if the player's final five-card hand is a three-of-a-kind or higher.

    উত্তরমুছুন