Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

কেউ ছোটো নয় ।। দিলীপ কুমার মিস্ত্রী


 

বিলের কানে আওয়াজটা অনেকক্ষণ ধরে আসছে। আবার আওয়াজটা যে তার স্কুল ব্যাগের ভেতর থেকেই আসছে সেটাও বুঝতে পারল সে। বিলে ব্যাগের কাছে এল। কান খাড়া করে, কিছু সময় সেটা বোঝার চেষ্টা করল।? তারপর, ব্যাগের মুখটা খুলতেই তার চোখ এক্কেবারে ছানাবড়া।

সে দেখল, তার ব্যাগের ভেতরে তার লেখার কাঠপেন্সিল আর বলপেনের মধ্যে প্রায় মারামারি লেগে যাবার উপক্রম। জোর তর্কাতর্কি চলছে দুজনের মধ্যে- কে সবার চেয়ে বড়ো। কাঠপেন্সিল বলছে আমি বড়ো আবার বল পেন আরো গলা চড়িয়ে বলছে, আমি বড়ো। আর ব্যাগের মধ্যে এক কোণে, ব্যাগের দেওয়ালে মাথা কুটে কাঁদছে নরম চকপেন্সিল। সে নিজেই রাগে-দুঃখে তার নিজের হাত-পা ভেঙে বসে আছে।

চকপেন্সিলের করুণ অবস্থা দেখে বিলের মনে ভীষণ দুঃখ হল। সে তাকে তুলে, বুকে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করল। বলল, অন্যের ওপর রাগ করে  কেন মিছিমিছি নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ বন্ধু ? ওদের কথায় কি এসে-যায়। তুমিই আমার প্রথম দিনের বন্ধু। আমার সবচাইতে ভালো, প্রিয় বন্ধু। তুমিই তো আমাকে পথ চলতে শিখিয়েছ। ওদের কথায় তুমি একদম কান দিও না। প্লিজ  বন্ধু, তুমি কান্না  থামাও। না হলে, এবার কিন্তু আমি কাঁদতে শুরু করব বলে দিচ্ছি। বিলের কথায় চকপেন্সিলের কান্না থেমে গেল।

কিন্তু ব্যাগের ভেতরে কাঠপেন্সিল আর বলপেনের ঝগড়া ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিলে তাদের দুজনকে কোনোভাবেই থামাতে পারছে না। অগত্যা সে মা স্বরসতীর কাছে প্রার্থনা জানাল। বলল, মা সরস্বতী, তুমি শিগগির এসে এদের ঝগড়া থামাও। তা না হলে, আমার লেখাপড়া যে বন্ধ হয়ে যাবে। প্লিজ মা, আমাকে একটু হেল্প করো।

আশ্চর্য কাণ্ড, বিলের ডাকে মা সরস্বতী এসে হাজির হল নিমেষে। মা দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে, প্রথমে তাদের দুজনের ঝগড়া থামাল। তারপর বলল, তোমরা দুজনেই খুব বোকা। তাই অযথা ঝগড়া করছ। আরে বাবা, জল ছাড়া ভাত হয় না, আবার চাল ছাড়াও ভাত হয় না।  তাহলে তোমরাই বলো, চাল আর জলের মধ্যে কে বড়ো ? চাল না জল ?

কাঠপেন্সিল এবং বলপেন দুজনেই চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের মুখে আর একটিও কথা নেই। দুজন-দুজনের মুখে বারবার চেয়ে দেখে, আর মা স্বরস্বতীর চোখের দিকে বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। ওদের দেখে, মা সরস্বতীর মনে কষ্ট হয়। তিনি বুঝতে পারেন, কাঠপেন্সিল ও বলপেন তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে।

এখন মা সরস্বতী চকপেন্সিল, কাঠপেন্সিল, বলপেন তিনজনকেই খুব আদর করল। তারপর বলল, তোমরা কেউ কারো চেয়ে ছোটো নও।  তোমরা সবাই বড়ো। তোমরা তিনজন একসঙ্গে মিলেমিশে থাকলে, কেউ কোনোদিনই তোমাদের ছোটো করতে পারবে না।

তিনজনকে মিলিয়ে দিয়ে মা সরস্বতী চলে গেলেন। আনন্দে বিলে চিৎকার করে বলে উঠল, ইয়াহু! তার চিৎকারে মায়ের ঘুম ভেঙে গেল। মা তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো, মা, ও কিছু নয়, স্বপ্ন দেখছিলাম। দেখছিলাম, আমার স্কুল ব্যাগের ভেতরে চকপেন্সিল, কাঠপেন্সিল আর বলপেনের মধ্যে ঝগড়া চলছে, ওদের মধ্যে কে বড়ো সেই নিয়ে। শেষমেশ মা সরস্বতী এসে বিচার করে গেলেন। ওরা সবাই সমান। কেউ ছোটো নয়।

বিলের কথা শুনে মা হাসতে-হাসতে হাই তুলল। তারপর, বিলেকে আরো নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল, রাত শেষ হতে ঢের দেরি। এখন ঘুমিয়ে পড়ো তো সোনা।

 

অলংকরণ- অমর লাহা

প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । জুলাই ২০১৯

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ