আচ্ছা তোমরা জানো কি যে, বাংলা মাসের নামকরণ কিভাবে হয়েছিল ?
বাংলা সনের বারোটি মাসের নামকরণ হয়েছে এক-একটি নক্ষত্রদের নামে। যেমন- বিশাখা থেকে এসেছে বৈশাখ আবার জ্যেষ্ঠা থেকে এসেছে জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়া থেকে আষাঢ়, শ্রবণা থেকে শ্রাবণ, ভাদ্রপদা থেকে ভাদ্র, আশ্বিনী থেকে আশ্বিন, কৃত্তিকা থেকে কার্তিক, পুষ্য থেকে পৌষ, ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন এবং চিত্রা নক্ষত্র থেকে চৈত্র মাসের নাম হয়েছে।
শুধুমাত্র অগ্রহায়ণ মাসের নাম কোনো নক্ষত্রের নামে হয়নি। আগে অগ্রহায়ণ মাস ছিল বছরের প্রথম মাস। অগ্র মানে পূর্ব বা আগে এবং আয়ন মানে বর্ষ, বছরের প্রথম মাস বলে অগ্রহায়ণ নাম হয়।
এইভাবে সপ্তাহের সাতদিনের নামকরণও হয়েছিল। সম্রাট আকবরের সময়কালে মাসের প্রতিটি দিনের আলাদা-আলাদা নাম ছিল। কিন্তু ৩০ বা ৩১ দিনের নাম মনে রাখা খুব কষ্টকর ছিল। তাই সম্রাট শাহজাহানের সময় আবার এ পদ্ধতি পাল্টে ফেলা হয়। তখন একটি মাসকে ৪ ভাগে ভাগ করে ৭ দিনে এক সপ্তাহ গোনা শুরু হয় এবং এই সাতদিনের নামকরণ করা হয়।
সম্রাট শাহজাহানের দরবারে আসা পর্তুগিজ মনীষীদের পরামর্শ মতে গ্রহরাশির নাম অনুযায়ী ৭টি দিনের নামকরণ করা হয়। যেমন- সান বা সূর্য থেকে রবি, মেনাম অর্থাৎ থেকে মন থেকে আসে সোম, মার্স থেকে মঙ্গল, মার্কারি থেকে বুধ, জুপিটার থেকে বৃহস্পতি, ভেনাস থেকে শুক্র, স্যাটার্ন থেকে শনি।
এবার আসি বাংলা সাল বা বর্ষর কথায়। কেননা এই বাংলা সাল শুরু হওয়ার সময়কার দিন ও মাসের কথা বললাম, কিন্তু সালের কথা তো বললাম না। তা কি করে হয়।
তোমরা অনেকেই জানো যে, পৃথিবী নিজের অক্ষরেখার ওপর পাক খেতে-খেতে সূর্যের চারদিক ঘুরে আসতে সময় নেয় ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড আর চাঁদের সময় লাগে ৩৫৪ দিন ৮ ঘন্টা ৪৮ মিনিটের একটু বেশি।
সূর্য পরিক্রমা হিসেবে যে বর্ষ গণনা করা হয় তাকে বলে সৌর সন বা সৌর বর্ষ, এবং চন্দ্র পরিক্রমা হিসেবে যে বর্ষ গণনা করা হয় তাকে বলে চান্দ্র সন বা বর্ষ। আবার এই বছরের মাছগুলোকে যথাক্রমে সৌরমাস এবং চান্দ্রমাস বলে।
তখনকার দিনের রাজা-বাদশারা নিজের-নিজের রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় নিজেদের নাম অনুযায়ী এক-একটা অব্দ বা সাল গণনা করেছিলেন। যেমন- গুপ্ত সাম্রাজ্যের আমলে চালু ছিল গুপ্ত সংবৎ। সেন রাজবংশের আমলে চালু হয়েছিল শকাব্দ আবার মুসলমানদের শাসনকালে হিজরি সন চালু ছিল।
সম্রাট আকবর যখন সিংহাসনে বসেন তখন শকাব্দ, কলাব্দ, বিক্রমাব্দ, গুপ্ত সংবৎ, শালিবাহন অব্দ, হর্ষাব্দ, পালাব্দ, লক্ষণ সংবৎ, জালালি সন, সিকান্দর সন ইত্যাদি সনের প্রচলন ছিল। এগুলোর কোনোটারই সর্বভারতীয় স্বীকৃতি ছিল না। এজন্য সম্রাট আকবর রাজজ্যোতিষী ও পণ্ডিত আমির ফাতেহ উল্লাহ সিরাজিকে সৌরবছর ভিত্তিক ফসলি সন প্রবর্তনের নির্দেশ দেন।
সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি (হিজরি ৯৬৩) দিল্লির সিংহাসনে বসেন। এই দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য আমির সিরাজি ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ই এপ্রিলকে পয়লা বৈশাখ ধরে ৯৬৩ ফসলি সন গণনা করার রীতি চালু করেন। পরবর্তীকালে এরই নাম বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন হয়।
এর মানে যে বছর বঙ্গাব্দের জন্ম হয় সে বছরই তার বয়স ৯৬৩ বছর। সেই কারণে হিজরি থেকে ৯৬৩ বর্ষ পর্যন্ত বঙ্গাব্দের প্রথম স্তর ধরা হয়।
প্রকাশিত- ছেলেবেলা । বৈশাখ ১৪১৬ (এপ্রিল ২০০৯)
0 মন্তব্যসমূহ