Coraciiformes বর্গের কিছু পাখি, যাদের প্রায় সকলেই দারুণ মাছ শিকার করে। এর জন্য এই বর্গের সব পাখিদের ইংরেজিতে বলা হয় কিংফিশার- বাংলায় যাদের নাম মাছরাঙা। জলাশয় এর আশেপাশে মাছরাঙাদের দেখা যায়। আবার অনেকে থাকে গভীর জঙ্গলে।
মাছরাঙা দেখতে খুব সুন্দর। এদের সারা শরীরে দেখা যায় নানা রঙের খেলা। আমরা সচরাচর যে মাছরাঙাদের দেখি তাদের ডানা এবং লেজের রং হয় উজ্জ্বল নীল। মাথায় বাদামী রঙের ছোঁয়া। পেটের দিক সাদা। লাল টুকটুকে ঠোঁট আর পায় এদের ভীষণ ভালো লাগে। তবে সব মাছরাঙা একই রকম দেখতে নয়। আকারে কেউ বড়-কেউ বা খুবই ছোট। পৃথিবীর নানা দেশে দেখা যায় অনেক প্রজাতির মাছরাঙা। আফ্রিকার ডোয়ফ কিংফিশার দৈর্ঘ্যে প্রায় চার ইঞ্চির কাছাকাছি হয়। অন্যদিকে জায়েন্ট কিংফিশার-এর দৈর্ঘ্য দেড় ফুট ছাড়িয়ে যায়।
মাছরাঙা বাসা বাঁধে নদীর পাড়ে, জলার ধারে মাটির নিচে সুড়ঙ্গ তৈরি করে। বাসায় যাতে জল না ঢোকে তার জন্য এরা সুরঙ্গ খোঁড়ে জল থেকে বেশ উঁচুতে। সুড়ঙ্গের একদম শেষ প্রান্তে এরা থাকে। কারোর কারোর সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য এত বড় হয় যে তাদের ধরাই যায় না। কোনো-কোনো মাছরাঙা গাছের উঁচু জায়গায়-উইঢিবি বাসা বানায়।
মাছরাঙার দৃষ্টিশক্তি প্রখর। জলের ধারে গাছের ডালে বসে বড়-বড় চোখে এরা মাছের সন্ধান করে। চোখ যতটা সম্ভব স্থির রেখে মাথা ঘুরিয়ে এরা শিকারকে লক্ষ্য করে। শিকার হিসেবে মাছরাঙা আস্তে চলা মাছটাকেই বেছে নেয়। তারপর সুযোগ বুঝে হঠাৎ আক্রমণ। মুহুর্তের জন্য দেখা যায় একটা নীল আলোর ঝলক। অগভীর জলে ডুব দিয়ে এরা নির্ভুলভাবে শিকার ধরে। জলে ডুব দেবার আগে মাছরাঙার চোখ বন্ধ হয়ে যায়।
মাছ ধরেই মাছরাঙা ফিরে আসে গাছের ডালে। জ্যান্ত মাছ গিলে খেতে তার ভীষণ ভয়- যদি গলায় কাঁটা বেঁধে। খেলার আগে মাছরাঙা তাই গাছের ডালেই আছাড়ে মারে মাছটিকে। দূর থেকে শোনা যায় সেই আছড়ানোর আওয়াজ। মাছটিকে ধরা থাকে তার শক্তিশালী ঠোঁটে। যেটা দেখতে অনেকটা ছুরির মতো এবং বেশ লম্বা। মাছটি মরে গেলে মাছরাঙা সেটিকে মাথার দিক থেকে গিলতে শুরু করে।
মাছ ছাড়াও মাছরাঙার খাদ্যতালিকায় আছে কাঁকড়া, ব্যাঙ, টিকটিকি, কেঁচো, চিংড়ি এবং আরও অনেক রকম ছোট-ছোট প্রাণী। খুব অল্প কয়েকটি প্রজাতির মাছরাঙা মাছ খায় না। এদের ঠোঁট ছোট এবং একটু চড়া হয়। এরা সাধারণত গভীর জঙ্গলে থাকে। পোকামাকড় আর ছোট-ছোট প্রাণীদের খেতে এরা ভালোবাসে। তবে হাতের সামনে মাকড়সা বা গঙ্গাফড়িং দেখলে কেউই মুখ ফিরিয়ে নেয় না।
প্রকাশিত- চিরকালের ছেলেবেলা । শরৎ ১৪১৮
0 মন্তব্যসমূহ