Ticker

20/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

ফুলটির নাম রাফ্লেসিয়া ।। শুকদেব চন্দ

ফুলটির নাম শুনেই নিশ্চয়ই তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগছে আমাদের চারপাশে জবা, গাঁদা, টগর প্রভৃতি এত সুন্দর সুন্দর ফুল থাকতে হঠাৎ রাফ্লেসিয়া কেন ?তার কারণ তো একটা নিশ্চয়ই আছে। এসো বলি সেই কথাই।

রাফ্লেসিয়া হল ফুলেদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফুল। এই ফুল পৃথিবীর বৃহত্তম ফুল।  এবার নিশ্চয়ই তোমাদের জানতে ইচ্ছে করছে ? চলো, আর দেরি না করে মূল প্রসঙ্গে ঢুকে পড়ি।

বৃহত্তম ফুলের জন্ম দেয় সুমাত্রা দ্বীপের একটি উদ্ভিদ যার বিজ্ঞানসম্মত নাম রাফ্লেসিয়া আরনলভাই(Rafflesia ar noldi R.Bv)।  নামটা একটু অদ্ভুত তাইনা আসলে লাতিন নাম তো, তাই  একটু খটমট।  তবে এই দ্বীপে ফুলটির স্থানীয় নাম ক্রবাট''

১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে  স্যার থমাস স্ট্যামফোর্ড রাফেলস (Sir Thomas Stamford Raffles) এবং  ডঃ যোসেফ আরনল্ড (Dr. Joseph Arnold)সুমাত্রার (ইন্দোনেশিয়া) বেনকোলেন জঙ্গলে ফুলটি আবিষ্কার করেন।  সে সময় রাফেলস ছিলেন লন্ডনের রয়েল সোসাইটির সভাপতি এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সুমাত্রায় কর্মরত গভর্নর।  আরনল্ড ছিলেন প্রকৃতিবিজ্ঞানী এবং রয়েল সোসাইটির একজন সদস্য। ফুলটি আবিষ্কারের কয়েকদিন পর আরনল্ড সাহেব সুমাত্রার জঙ্গল অনুসন্ধানে অত্যাধিক শারীরিক চাপের ফলে জ্বরে মারা যান।  পরে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে  এক ইংরেজ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী রবার্ট ব্রাউন উক্ত দুই ব্যক্তির সম্মানে গাছটির নাম রাখেন।

এই গাছটির প্রকাণ্ড ফুল হয় আরোহী বৃক্ষের  মূলে।  আবার কিছু কিছু রাফ্লেসিয়াগাছের মূলে না হয়ে মাটির উপরে অর্থাৎ কাণ্ডে হয়।  সবুজকণা বিহীন এই উদ্ভিদটি  পরজীবি এবং  ফুলসর্বস্ব অর্থাৎ  কেবল ফুলেই এর অস্তিত্ব। গাছ বলতে আমরা যা বুঝি কাণ্ডশাখা-প্রশাখাআদর্শ পাতা  এসব কিছুই নেই এর।  কেবল আছে সরু সরু সুতোর মতো অংশ যেগুলো অপর কোনো পোষক সপুষ্পক আরোহী বৃক্ষের মূল কাণ্ড থেকে সরাসরি  পুষ্টি সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে।  আঙুর জাতীয় উদ্ভিদেরা রাফ্লেসিয়ার  প্রিয় পোষক।

ফুলটি ফোটে বর্ষাকাল বিদায় নিলে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। ওজন ১০-১৫ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হয়। আর ৫০সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার পর্যন্ত এর ব্যাস। ফুলের সাধারণত ৫ টি দল বা পাপড়ি থাকে। এর রং হয় ইঁটের মতো গাঢ় বাদামি, যার মাঝে মাঝে হালকা হলুদ এর ছাপ থাকে। ফুলটি অবৃন্তক, একলিঙ্গ, ভিন্নবাসী। প্রতিটি পুষ্পপুট প্রায় এক ইঞ্চি পুরু, রসালো হয়। তবে মজার কথা কি জানো ? রূপবতী রাফ্লেসিয়া ফুলের গন্ধ গোলাপ, জুঁই বা রজনীগন্ধার মত মিষ্টি নয়, পচা, একেবারে পচা মাংসের মতো। কাজেই এই ফুলের পরাগযোগের দায়িত্ব নেয় সুখী মৌমাছি নয়শবাহারি মাছি। এই মাছিরা ফুলে ডিম পাড়ে, মধু খায়। হাতির মলের কাছাকাছি এই ফুলের আবির্ভাব অপেক্ষাকৃত বেশি। এই ফুল কুঁড়ি থেকে ফুলে পরিণত হয় খুব ধীর গতিতে। দেখা গেছে, একটি ১.৫ সেন্টিমিটার ব্যাস যুক্ত কুঁড়ি ৪ সেন্টিমিটারে পৌঁছতে সময় লাগে ১৮৮ দিন। আবার ৪ সেন্টিমিটার ব্যাস যুক্ত একটি কুঁড়ির পূর্ণবিকাশ ঘটতে সময় লাগে ৩১০ দিন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় দুই-তিনদিনের মধ্যেই ফুল ঝরে পড়ে।

রাফ্লেসিয়া ফুলের পাপড়িগুলোর মাঝখানে মুকুটের মত একটি বলয় থাকে। একে করোনা'' বলে।

আগেই তোমাদের বলেছি, ফুলগুলো হয় একলিঙ্গ অর্থাৎ পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা। পুরুষ ফুলে পুংকেশর থাকে, এরা চক্রাকারে সজ্জিত থাকে। পরাগধানীগুলো বৃত্তহীন হয় এবং পরাগের আকৃতি গোলাকার। পুংকেশরের ঠিক ঠিক গঠন জানা না গেলেও এর প্রস্থচ্ছেদ করে এর নলাকার আকৃতি দেখা গেছে। একটি পুংকেশরের প্রায় ৪০টি রেণুধার (Pollen Chamber) আছে।

স্ত্রী ফুলের ক্ষেত্রে পুষ্পপুটটি কাপের মতো হয়। গর্ভদণ্ডগুলি এক সঙ্গে মিলিত হয়ে এই গঠনটি তৈরি হয়।  এর ভিতরে ডিম্বক থাকে। এই ডিম্বকটির একটিমাত্র কক্ষ থাকে। কিন্তু ডিম্বকোষ থাকে অনেকগুলো। ফুলটি বেশ বড়  এবং সরস হয়। এর  অনেক গুলো  কক্ষ থাকে। যার মধ্যে অসংখ্য বীজ থাকে। বীজ হয় অনেক, যাদের বিস্তারণ ঘটায় ছোট-বড় বন্যপ্রাণীরা। রাফ্লেসিয়ার  আরও  অন্তত ৪-৫টা ভিন্ন প্রজাতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার  সুমাত্রাজাভাকের্নিও  এবং ফিলিপিনস  দ্বীপপুঞ্জে জন্মায়।  অত বড় না হলেও এদের ফুল ছোট হয়। তবে দূর দ্বীপবাসীনি এই ফুলেরা সবাই মন্দ গন্ধের হলেও কিন্তু অপরূপা।

 

প্রকাশিত- ছেলেবেলা । জুলাই ২০১০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ